ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মকে উপলক্ষ করে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে বেশ ধুমধামের সাথে পালন করা হয়ে থাকে যে উৎসবটি সেটিই জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত– একথা আমরা সকলেই জানি।শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিটি মূলত ব্যাপকভাবে উদ্যাপিত হয়ে থাকে উত্তর ভারতে।ছোট্ট কৃষ্ণের জন্মদিনটিকে উপলক্ষ করে আবার অনেক মা–বাবারাও এমনকি এই অনুষ্ঠানের দিনটিতে তাদের শিশু সন্তানকেও শিশু কৃষ্ণের মত করে সাজিয়ে তুলতে পছন্দ করেন।আপনিও যদি সেই সকল মা–বাবাদের দলেরই একজন হয়ে থাকেন এবং আপনার নিজের সন্তানটিকেও শ্রীকৃষ্ণের মত করে সাজিয়ে তুলতে চান, তবে সেক্ষেত্রে আপনার মনে রাখার প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু পরামর্শ এখানে দেওয়া হল।
আপনার ছোট্ট সোনাকে ছোট্ট কৃষ্ণ বা মাখন চোর গোপালের মত করে সাজানো শুরু করার আগে আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে পারেনঃ
আপনার বাড়ির ছোট্টটিকে কৃষ্ণের মত করে সাজানোর সময় নীচের এই সকল বিষয়গুলির ব্যবস্থা রাখার কথা মাথায় রাখুনঃ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মত দেখানোর জন্য পোশাকের পাশাপাশি মাথার একটি মুকুটও কিন্তু একটা বড় ভূমিকা রাখে।এই ধরণের মুকুটগুলি বাজারে সহজেই মেলে, তবে সেক্ষেত্রে কেনার সময় তার গুণমানের সাথে যেন আপোস করবেন না, কারণ সস্তা দামের মুকুটগুলি আপনার সন্তানের সূক্ষ্ম ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।আর আপনার মধ্যে যদি একটি সৃজনী প্রতিভা থাকে, তবে বাড়িতেই একটি অসাধারণ সুন্দর মুকুট তৈরী করে আপনি তা কাজে লাগাতে পারেন অভিনবত্বের ছোঁয়ায় আপনার শিশু সন্তানের জন্য মুকুটের মধ্যে একটু নতুনত্ব এনে।সেক্ষেত্রে এর জন্য আপনার যা কিছু প্রয়োজন হতে পারে তার মধ্যে রাখুন নরম কার্ডবোর্ড এবং ঝলমলে কিছু সোনালী কাগজ ও জরির ফিতে, লেস, রঙ–বেরঙের পুঁতি ইত্যাদি।
আপনার ছোট্ট কানাইয়ের জন্য নিয়ে আসুন একটা সুতি অথবা সিল্কের ছোট ধুতি কারণ এই দুই ধরণের ফেব্রিকগুলিই হয় ভীষণ নরম ও কোমল আর তা আপনার ছোট্ট সোনার পক্ষে আরামদায়কও হবে।এছাড়াও আপনি আবার এর জন্য আপনার পুরোনো কোনও সিল্কের ওড়না বা শাড়িকে কেটেও নিতে পারেন আপনার ছোট্টটির জন্য একটা সুন্দর ধুতি তৈরী করার জন্য।এটি যদি আপনার বাচ্চার উপর আপনি সুন্দরভাবে প্রয়োগ করার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করতে পারেন তবে তা সবচেয়ে ভালো একটি বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।অন্যথায় এর বিকল্পরূপে আপনি মার্কেট থেকেও একটি রেডিমেড ধুতি আনার ব্যবস্থা করতে পারেন, এগুলি সহজেই সরাসরি পরার মত করে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে আর মনকাড়া নানান স্পন্দনশীল রঙে উপলভ্য হয়ে থাকে।
গোপাল বা কৃষ্ণের সাজে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আদর্শগতভাবে আপনার শিশুকে যেকোনও ধরণের একটি টপ বা টি–শার্ট পরিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না, কিন্তু আপনার বাচ্চাকে খালি গায়ে রাখতে বা বুকটা খোলা রাখতে যদি আপনি একটু অ–স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তবে আপনি সেক্ষেত্রে তার ধুতির সাথে ম্যাচ করে কিম্বা কন্ট্রাস্ট করে কোনও সুন্দর রঙের একটা অসাধারণ টপ কিনে পরানোর দিকে যেতে পারেন।
ময়ূরের একটি পালক হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে সমার্থক, আর সেই কারণেই যে সকল শিশুদের শ্রীকৃষ্ণের মত করে সাজিয়ে তোলার কথা ভাবা হয় তাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক হল এই ময়ূরের পালকখানি।আপনি এই পালকটিকে আপনার বাচ্চার জন্য শ্রীকৃষ্ণের সাজের সরঞ্জাম হিসেবে আনা বা তৈরী করা মাথার মুকুটটির সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে বা স্টেপল করে দিতে পারেন।আর যদি সেটি মুকুটের সাথে আটকানো সম্ভব না হয় তবে আপনি আরেকটি যে কাজ করতে পারেন তা হল আপনার শিশুর মাথার চুলগুলিকে নিয়ে একটা ছোট্ট পনিটেল বেঁধে দিয়ে তার মধ্যে পালকটিকে গুঁজে দিন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাখন খেতে অত্যন্ত ভালোবাসতেন, এই মাখন চুরি করতে গিয়ে না জানি কতবারই তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে শাস্তি পেতে ও বকুনি খেতে হয়েছিল, আর তাই মাখনের একটি ছোট্ট হাঁড়ি ব্যতীত আপনার সন্তানের শ্রীকৃষ্ণের এই সম্পূর্ণ সাজটিই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।তার কাছাকাছি মাটির একটি মাখনের হাঁড়ি রেখে দিন।কিন্তু শুধু একটা হাঁড়ি রাখলেই কি হবে? সেটিকে উজ্জ্বল রঙের কিছু ভেলভেট কাগজ এবং ছোট ছোট আয়না, জরি সহযোগে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলুন যাতে আপনার ছোট্টটির পাশাপাশি সহজেই তা সকলের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।মাখনের মত দেখতে লাগার জন্য আপনি তার মধ্যে কিছুটা তুলো ঢুকিয়ে রাখতে পারেন। আপনার বাচ্চা যদি ‘যেমন খুশি সাজো‘ এর মত কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে মাখন চোর গোপাল সাজিয়ে তুলতে ব্যবহারের জন্য এটি বেশ ভাল একটি সামগ্রী হয়ে উঠতে পারবে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবার ‘মুরলীধর‘ হিসেবেও অভিহিত হয়ে থাকেন, যার অর্থ হল যিনি মুরলী বা বাঁশি বা বংশী ধারণ করেন।তাই একটি বাঁশি ব্যতীতও শ্রীকৃষ্ণের সাজটি থেকে যায় অসমাপ্ত।আপনার সন্তানের জন্য আপনি কাঠের কিম্বা প্লাস্টিকের একটি বাঁশি সহজেই পেয়ে যেতে পারেন।তবে তাই বলে ভারী কোনও ধাতুর বাঁশি যেন নিয়ে আসবেন না কারণ সেটি দিয়ে আপনার সোনা অজান্তে নিজেই নিজেকে কিন্তু আঘাত করে বসতে পারে।আপনি কিছু সোনালী কাগজ ও জরি দিয়ে সেই বাঁশিটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন।আপনার সন্তান যদি বাঁশিটিকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে কোনও আগ্রহ প্রকাশ না করে তবে সেটির প্রতি তার আকর্ষণ বাড়ানর জন্য আপনি সেই বাঁশির এক প্রান্তে কিছু ঘুঙুর বেঁধে ঝুলিয়ে দিতে পারেন, যার ঠুং–ঠাং আওয়াজগুলি তাকে সহজেই আকর্ষণ করতে পারে, অন্যথায় আপনি বাঁশিটিকে তার ধুতির সাথে কোমরে হালকা করে গুঁজে দিতেও পারেন।
অলংকার ছাড়া শ্রীকৃষ্ণের সাজটা যেন একটু বেমানানই থেকে যায়।কিন্তু তাই বলে আপনি যদি এর জন্য আপনার বাচ্চাকে খুব বেশি অলংকারে সাজিয়ে তুলতে চান তবে সে বিরক্ত হবে, অস্বস্তিবোধ করবে এবং সারাক্ষণ ধরে ঘ্যানঘ্যান করবে।অতএব, আপনার এক্ষেত্রে খুবই সীমিত কিছু অলংকার ব্যবহার করার ব্যাপারে স্থিরচিত্ত হওয়া প্রয়োজন।এর জন্য আপনি আপনার বাচ্চাকে গলায় সোনার একটি হালকা হার, পায়ে এক জোরা নূপুর এবং হাতে হালকা বালা পরাতে পারেন।এছাড়াও আবার আপনি এর সাথে ফুলের হালকা সুন্দর কিছু গয়নাও ব্যবহার করতে পারেন শুধু খেয়াল রাখবেন যে সেগুলির কোনওটাতেই যেন আপনার ছোট্টটির কোনওরকম কষ্ট বা অসুবিধা না হয়।
বাজুবন্ধহীন কৃষ্ণ যেন একটু বেমানান। তাই আপনি আপনার ছোট্ট কৃষ্ণের দুটি কোমল বাহুর উপযোগী সোনা বা রূপোর আর তা নাহলে পুষ্পশোভিত একজোড়া বাজুবন্ধ আনতে ভুলবেন না।
কৃষ্ণের গলার মালা যার দোলায় ভুবন মোহিত হয়ে ওঠে সেটা বিনা তার সাজ যে অসম্পূর্ণ তা বলাই বাহুল্য।বাজার থেকে একটি সঠিক মাপের বরমাল্য চয়ন করা আপনার অবশ্য কর্তব্য।সবথেকে ভাল হয় আপনি যদি নিজেই মালা গেঁথে নেন। কিনুন বা বানান যাই করুন না কেন খেয়াল রাখবেন সেটার দৈর্ঘ্য এবং ওজন যেন আপনার সন্তানের অস্বস্তির কারণ না হয়।
কৃষ্ণের মত করে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার ছোট্টটিকে মেক–আপ করার প্রলোভনটি যদি আপনি কিছুতেই ছাড়তে না পারেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে, শুধুমাত্র আপনার ছোট্টটির কপালে একটি মাত্র তিলক কেটেই আপনি সে ব্যাপারে ক্ষান্ত হন।আপনার বাচ্চাকে মেক–আপ দেওয়ার ব্যাপারে বলে রাখি ছোট শিশু এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা একেবারেই ‘না‘ কারণ এটি তাদের সূক্ষ্ম ত্বকের প্রভূত ক্ষতি করতে পারে।তাছাড়াও আরেকটা ব্যাপার যেটি জানিয়ে রাখা ভালো তা হল আপনার শিশুর চোখে যেন কোনওভাবেই কোনও সুর্মা, কাজল বা লাইনার লাগাবেন না, যেহেতু এগুলি তাদের চোখে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।যদিও আগেকার দিনে বাচ্চাদের চোখে কাজল লাগানো হত তাদের চোখগুলিকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের চিন্তা–ভাবনারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমাদের জানা পুরাতন অনেক ধারনাই আজ ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত।সর্বোপরি বাচ্চাদের বিষয় বলে কথা তাই তাদের অঙ্গের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারে এমন নতুন কোনও কিছু দিয়েই পরীক্ষা নিরীক্ষা করার আগে একবার তাদের ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়াটা আবশ্যক।
এগুলি ছিল এমন কিছু প্রাথমিক বিষয় যেগুলি আপনার শিশুকে ‘ভগবান কৃষ্ণের‘ মত করে সাজিয়ে তোলার সময় মনে রাখাটা ভীষণ প্রয়োজন।বাচ্চাদের সাজ–গোজ করানোর জন্য উৎসবগুলি হল একটা দুর্দান্ত সময়।আর এ ব্যাপারে সবকিছুর উপরে আপনাকে যে কথাটা মনে রাখতে হবে তা হল, তার সাথে আপনি যাই করুন না কেন তাতে আপনার ছোট্টটি যেন স্বাচ্ছন্দ এবং আনন্দ বোধ করে।আপনার বাচ্চা যদি সে ব্যাপারে বিরক্ত হতে থাকে তবে তা নিয়ে জোর পূর্বক তাকে সেটি করতে বাধ্য করানোর বা জোর করে আরও বেশি মাত্রায় প্রয়াসের দ্বারা তার উপর তা চাপিয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এই ধারণা বা আইডিয়াটি ছিল আপনার সন্তানের সাথে কিছু মজা–আনন্দ এবং উৎসবের আমেজটিকে উপভোগ করার একটা ধারণা মাত্র, অতএব এটিকে আপনার আদরের ছোট্ট সোনাটির জন্য যথাসাধ্য সহজ এবং ঝঞ্ঝাট মুক্ত রাখুন।