শিশুদের সধারণত ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে এবং এই সময়ের পর থেকে তাদের ধীরে ধীরে শক্ত খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।এটি এমন একটি সন্ধিক্ষণ যা স্মরণীয় করা রাখতে হিন্দু পরিবারগুলিতে পরম্পরাগত ভাবে এটিকে অন্নপ্রাশণ নামক অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে উদযাপন করা হয়।
অন্নপ্রাশণ হল হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় প্রথা।আক্ষরিক ভাবে এর অর্থ হল ‘প্রথম ভাত খাওয়া শুরু করা‘,এর মধ্য দিয়ে একটি শিশুকে শুধুমাত্র তরল খাদ্য থেকে কঠিণ খাদ্য দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।অন্নপ্রাশণ অনুষ্ঠানটি সারা ভারতব্যাপী প্রচলিত,পশ্চিমবঙ্গে এটি মুখে ভাত,কেরলায় চরু,এবং হিমাচল প্রদেশের গাড়োয়াল অঞ্চলে ভাত খাওয়াই নামে পরিচিত।এই অনুষ্ঠাণের পরবর্তীকাল থেকে বাচ্চাদের বুকের দুধ ছাড়িয়ে তাদের শুধুমাত্র শক্ত খাদ্য গ্রহণ অভ্যাস করানো শুরু করা হয়।
অন্নপ্রাশণ অনুষ্ঠানটি শিশুর বৃদ্ধির পরবর্তী ধাপকে সূচিত করে।যদি বৈদিক যুগে ফিরে যাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে অন্নপ্রাশণ অনূষ্ঠানটি তখন সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া, ইরান,এমনকি পারস্যের মানুষজনেরাও পালন করতেন।অভিভাবকদের সংস্কৃতি এবং তাদের বাসস্থানের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এই অনুষ্ঠানটি শিশুদের পাঁচ থেকে নয় মাস বয়সের মধ্যে কোন না কোন সময়ে পালন করা যেতে পারে। ঐতিহ্য অনুযায়ী সাধারণত চার মাসের কম বা এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের অন্নপ্রাশণ করা হয় না।এই অনুষ্ঠনের গুরুত্ব এতই বেশি যে সকল আত্মীয় স্বজনরা আমন্ত্রিত হন,যেখানে একটি বড় জায়গায় বিরাট ভোজের আয়োজন করা হয় এবং অনুষ্ঠানটির জন্য একটা শুভক্ষণ বেছে নিয়ে পুরোহিতরা উপস্থিত থেকে অন্নপ্রাশণের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।
প্রথমদিকে অন্নপ্রাশণ অনুষ্ঠানটি বাড়িতেই সম্পাদন করা হত।তবে এখনকার দিনে,মানুষ এই অনুষ্ঠানটির জন্য সাধারণত একটি ব্যাঙ্কোয়েট বা পার্টি দেওয়ার হলের মত কোনও বড় জায়গা ভাড়া নেওয়া পছন্দ করেন।পারিবারিক বিগ্রহের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য এই অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানটি আবার কোনও মন্দিরেও সম্পাদন করা যেতে পারে।এটি সাধারণত এক দিনের অনুষ্ঠান তবে বাচ্চার মা–বাবা যদি নানান ধরনের আনন্দ–মজা এবং খেলাধূলা যোগ করে অনুষ্ঠানটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে তার বিস্তৃত উদযাপন করতে চান তবে সেটি একদিনের জায়গায় সম্প্রসারিত করে দু‘দিন করা যেতেই পারে।
অন্নপ্রাশণ অনুষ্ঠান প্রক্রিয়াটির সূচনা করা হয় সাধারণত বাচ্চাকে তার মামার কোলের উপরে বসিয়ে দিয়ে,যিনি সম্ভবত বাচ্চার মুখে প্রথম ভাত তুলে দিয়ে তার তরল থেকে শক্ত খাবার খাওয়ার প্রক্রিয়াটির সূত্রপাত করে থাকেন।প্রথম পরিবেশনটি শিশুর মুখে দেওয়ার পর পরিবারের অন্যান্য সকলে একে একে বাচ্চার মুখে আরও খাবার তুলে দিয়ে উপহার সহযোগে তাকে আশীর্বাদ করে থাকেন।অবশেষে অন্নপ্রাশনের বিধিগুলি পালন করা হয়।বেশ কিছু জিনিস যেমন মাটির দলা,সোনার গয়না,পেন,বই এবং খাদ্য সামগ্রী বাচ্চার সামনে রাখা হয় এবং সেগুলির থেকে যেকোনও একটিকে বাচ্চাকে বেছে নিতে হয়।যদিও অবোধ শিশুর কোনও কিছুই বেছে নেওয়ার মত ক্ষমতা থাকে না তথাপি অজান্তেই সে যা কিছুই খাবলে তুলে ধরে তার উপর ভিত্তি করে তার ভবিষ্যত পথের ইঙ্গিতকে অর্থ করা হয়।
অন্নপ্রাশণ অনুষ্ঠানটি উদযাপনের সময় শিশুকে ভাতের দানায় প্রথম কামড় দেওয়ানো ছাড়াও তার খাবারের থালায় অন্যান্য আরও বিভিন্ন ধরণের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়ে থাকে।সেগুলির মধ্যে কিছু হলঃ
ক্ষীর অথবা পায়েস হল এক ধরনের মিষ্টি ভাতের প্রস্তুতি যা সারা ভারত ব্যাপী ভীষণ জনপ্রিয় এবং এটিই হল শিশুদের তরল থেকে শক্ত খাবারে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে তাদের মুখে তুলে দেওয়া প্রথম শক্ত খাবার।এই অনুষ্ঠানে বাচ্চার জন্য এটি সাধারণত তার মা কিম্বা ঠাকুমা প্রস্তুত করে থাকেন এবং একটি রূপার পাত্র করে সেটিকে বাচ্চার সামনে পরিবেশন করার রেওয়াজ রয়েছে।
আপনার সন্তানটি এখনও অত্যন্ত ক্ষুদ্র থাকার কারণে তাকে প্রথম শক্ত খাবারের সাথে পরিচয় করানোর সময় যে সাবধানতাগুলি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে সেগুলি নিম্নরূপঃ
আমাদের অন্যান্য সকল অনুষ্ঠানের মতই অন্নপ্রাশণ সংস্কার অনুষ্ঠানটিও একটি নিরাপদ অনুষ্ঠান হওয়া উচিত,তাই দয়া করে নিম্নলিখিত পরামর্শ কয়টি অনুসরণ করা নিশ্চিত করুন যাতে অনুষ্ঠানটি সকলের জন্যই আনন্দদায়ক এবং মজাদার হয়ে ওঠে।
অন্নপ্রাশণ হল আপনার শিশুর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।আপনার সন্তান তার জীবনের যাত্রাপথে গ্রহণ করবে এমন বিভিন্ন পদক্ষেপগুলির মধ্যে এটিই হল তার দ্বারা গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ,যা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে সে ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।