যদি আপনি নতুন পিতামাতা হন তবে এটি বুঝতে পারবেন যে একটি ছোট্ট শিশুর যত্ন নেওয়া খুবই কঠিন কাজ।সবসময় ভয় থাকে মনে যে আপনার শিশুটির সঠিক ভাবে সঠিক বিকাশ হচ্ছে কিনা,যা আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। জেনে নিন এই নির্দিষ্ট সময়সীমায় কোন ব্যাপারগুলি আপনার মনে স্বাচ্ছন্দ্য আনবে।
আপনার শিশুটি শরীরে অতিরিক্ত তরল নিয়ে জন্মায় যা জন্মের মাস থেকেই কমতে থাকে,এর ফলে আপনার 1 মাসের শিশুটির ওজন 10% মতন কমে যায়। সুতরাং জন্মের প্রথম কিছুদিনের মধ্যে যদি আপনার শিশুর ওজন কিছুটা কমে যায়, আপনার অধীর হওয়ার কোন কারণ নেই। তাদের ওজন পরবর্তী 2 সপ্তাহ পর থেকেই বাড়তে থাকে এবং তারপর থেকে তা আরো দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। জন্মের প্রথম মাসে প্রায় প্রতিদিন তাদের 14-28 গ্রাম মত ওজন বাড়তে থাকে।
যদি আপনার শিশুর পর্যাপ্ত ওজন বৃদ্ধি না হয় তবে অবিলম্বে কোন পেশাদার স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে পরীক্ষা করান এর অন্য কিছু গুরুতর কারণ আছে কিনা ।
এক সপ্তাহ যাওয়ার পর থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশুটির বৃদ্ধি ও বিকাশ কিভাবে ও কতটা হচ্ছে। আপনার ডাক্তারবাবু আপনার শিশুটির ওজন, উচ্চতা এবং মাথার পরিধি মাপবেন তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তা নির্ধারণের জন্য।আপনিও আপনার সজাগ দৃষ্টি রাখুন অন্যান্য বিকাশগুলির উপর যেমন দৃষ্টি, শ্রবণক্ষমতা, যোগাযোগ করার ক্ষমতা এবং ভাষা বোঝার দক্ষতার উপর।
4 সপ্তাহ বয়সে আপনার শিশুটি মুখে নানা রকম শব্দ যেমন গার্গেল, ব্যাবেল ,কু –আওয়াজ সৃষ্টি করে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে । এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এই সময় আপনি অনবরত আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন আর কথপোকথন চালিয়ে যান । এটি একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ উপায় আপনার শিশুর ভাষা শিক্ষা রপ্ত ও বিকাশ এর জন্য।যেহেতু তার শ্রবণ ও দৃষ্টি ক্ষমতারও বিকাশ ঘটে তাই সে চেনা কণ্ঠ, শব্দ এবং পরিবারের মুখগুলিকে চিনতে ও বুঝতে পারবে।
আপনার শিশু টি তার পেটটিকেও সে সঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে রাখতে শিখবে যার সাহায্যে সে তার মাথাটিকেও উপরের দিকে তুলতে চেষ্টা করবে, যদিও সেটি কয়েক মূহুর্তের জন্য ঘটে। এটি অবশ্যই হওয়া উচিত কারুর দেখাশুনার মধ্যকালীন সময়ে। যখন আপনার শিশুটি এই অবস্থায় থাকবে বা অন্য কিছু নতুন করতে চেষ্টা করবে তখন কখনই তাকে একা রেখে যাবেন না। সবসময় তার সামনে কাউকে উপস্থিত রাখুন দেখাশুনার জন্য । 4 সপ্তাহে আপনার শিশু প্রায় 4 ইঞ্চি বাড়বে এবং 1 সপ্তাহের মধ্যে যে কোন সময়ে তার 140-200 গ্রাম ওজন বৃদ্ধি পাবে।
5 সপ্তাহের মধ্যে আপনার শিশুর গলা ও ঘাড়ের পেশী গুলি অনেকটা শক্ত হবে, এবং আপনার শিশুটি তার পেটের উপর ভর দিয়ে তার নিজের মাথাটিকে আগের থেকে আরো বেশী সময় ধরে উপরের দিকে তুলে ধরে রাখতে পারবে।
এই সময়েই আপনার শিশুটি তার জীবনের প্রথম মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে—হাসতে শিখে । সে রাতের বেলায় আগের থেকে আরো বেশী সময় একটানা ঘুমায় এবং একবারও না উঠে একটানা 4-6 ঘন্টা ঘুমাতে পারে।
সাধারণত শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির দৌড় শুরু হয় 4-6 সপ্তাহের মধ্যে। আপনার শিশুর 5 সপ্তাহের মধ্যে 200 গ্রাম মতন ওজন বাড়তে পারে।
এই বয়সে তাদের অপেক্ষাকৃত উন্নত দৃষ্টি ও ফোকাস এর ফলে দুচোখ দিয়েই কোন নির্দিষ্ট বস্তুকে দেখবার ক্ষমতা লাভ করবে। সে রঙের প্রভেদও করতে পারবে।
আপনার শিশুর 6 সপ্তাহে তার শ্রবণ ক্ষমতার বিকাশ প্রায় পুরোপুরি হয়ে যায় এবং সে আগের থেকে অনেক ভালো ভাবে কোন শব্দ বা কণ্ঠস্বর মনোযোগ সহকারে শুনতে ও চিনতে সক্ষম হয়। তার স্মৃতিশক্তিও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তাই আপনি আশা করতে পারেন যে আপনার শিশুটি যখনই আপনা কে দেখবে সে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠবে। এবং আপনি আরো দেখবেন যে সে কিছু মুখের অঙ্গভঙ্গীরও অনুকরণ করার চেষ্টা করছে ,যেমন ভুরু কুঁচকানো, ঠোঁট অনুসরণ ইত্যাদি।
যখন এই সময়ে তার বৃদ্ধির প্রথম দৌড়টি শেষ হয় আপনি তখন এটিও দেখবেন যে আপনার শিশুটির ওজন 6 মাসের মধ্যে1 40-200 গ্রাম বেড়ে গেছে।
আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে আপনার শিশু 7 মাসের মধ্যে কমপক্ষে 2 ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়। আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল এই সময় আপনার শিশুর ব্রেনের বিকাশও ধীরে ধীরে হয়। এই সময়টি ই হল সেরা সময় যখন আপনার শিশুটিকে সহজে কিছু শেখানোর চেষ্টা করা যায়। এই সময় তার দৃষ্টি ক্ষমতা ও ফোকাস ভালো হওয়ার ফলে সে তার থেকে কমপক্ষে 60 সেমি. এর দূরে থাকা কোন জিনিস দেখতে পায়। এমনকি সে কোন চলমান বস্তুর উপরেও আরো ভালোভাবে দৃষ্টিপাত করতে পারে।
কথপোকথন শেখানোর জন্য তাকে ব্যাস্ত রাখার এটিই সেরা সময়। তাকে গান শোনান,অথবা তাকে ছবি এবং নানারকম নক্সা দেখান তার বোধশক্তি বৃদ্ধির জন্য।
7 সপ্তাহের মধ্যে সে এটিও ভালোভাবে বুঝতে শিখে যায় যে, সে তার হাত গুলি কোন কিছু মুঠো করে ধরতে ব্যবহার করবে। তাই আপনি খেয়াল রাখবেন যে ছোটো ছোটো জিনিস গুলি তার হাতের নাগালে যাতে না থাকে যে গুলি সে অনায়াসেই মুঠো করে ফেলে। এই সময়ে যে কোন ধারালো ও আঘাত লাগতে পারে এমন ক্ষতিকারক জিনিস গুলি তার থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন।
এই সময় বেশীর ভাগ পিতামাতাই প্রায়শই ভয় পেয়ে যান তাদের শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে যদি তারা মাঝে মধ্যেই কেঁদে ওঠে। আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার শিশুটি মাঝে মধ্যেই কেঁদে উঠছে,উদাস হয়ে থাকছে, এবং পেটে যন্ত্রণার মত অনুভব করছে, আপনি এর লক্ষণগুলি খেয়াল করবেন। যখন পেটে যন্ত্রণা হয় তারা তাদের হাতগুলি মুঠো করে রাখে, তাদের হাটুগুলি বুকের কাছে তুলে রাখে এবং চোখ গুলি চেপে বন্ধ করে রাখে অথবা খুলে রাখে যখন তারা কাঁদতে থাকে। এমনকি তারা তাদের চোখমুখ কুঁচকে রাখতে পারে অথবা গ্যাস ও হতে পারে, আবার খুব কম সময়ের জন্য তারা শ্বাস–প্রশ্বাস বন্ধ করেও রাখে। সাধারণ ভাবে পেটে যন্ত্রণার লক্ষণ বুঝতে পারার তিনটি পদ্ধতি আছে—তিন ঘন্টা ধরে কাঁদে ,প্রতি সপ্তাহে তিনদিন হতে পারে,এবং যেটি প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে।
যাইহোক তবে সব কান্নার কারণই পেটে যন্ত্রণা হয় না। শিশুর কান্না হল তার যোগাযোগের সাধারণ মাধ্যম, এবং সে যে সুস্থতার সংকেতও নির্দেশ করে তার কান্না । যদি আপনার শিশু খুব বেশী কাঁদে তবে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে তার কারণ জানুন।
আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার শিশুটির কখন ডায়াপার বদলাতে হবে,কখন তার ক্ষিধে পেয়েছে, কখন সে অস্বস্থিবোধ করছে এই সব গুলির উপর।
জন্মের প্রথম মাসেই যেহেতু তার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে ওঠে না তাই আপনাকে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে সঠিক চিকিৎসার জন্য,আপনার শিশুর শরীরে প্রকাশিত জীবাণু ও সংক্রমণগুলি যথাযথ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর যতটা সম্ভব তাকে অন্য কোন সংক্রমিত ব্যাক্তির থেকে দূরে রাখতে হবে যাতে তার মধ্যেও সংক্রমণ না ছড়ায়।সবসময় ভাল করে হাত ধোয়ার পরেই আপনার শিশুটিকে ধরুন।
আপনার শিশুর মাইলফলক হল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যা আপনার শিশুর ঠিক যেভাবে বিকাশ হওয়া উচিত সেভাবেই হচ্ছে কিনা তা নির্দেশ করে। বিকাশের এই সকল মাইলফলকগুলি ভালভাবে বোঝার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার শিশুটির সঠিক ভাবে বিকাশে তাকে সমর্থন করা। কিছু সাধারণ মাইলফলক, যেগুলি আপনার শিশু প্রদর্শন করায়, এমনকি এক মাস বয়সেও।
নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জন্মানো শিশুদের বিকাশের মাইলফলক এই সময় নির্দেশিকা অনুযায়ী হয় না। তাদের বিকাশ গর্ভাবস্থা থেকে তাদের নির্ধারিত বয়স অনুযায়ী হতে থাকে। আর তারা ধীরে ধীরে তাদের নিজেদের সময় ও বশ অনুযায়ী সেই মাইলফলক গুলি ছুঁয়ে ফেলে।
আপনার শিশুটি তার একমাস বয়সেই হাসতে শুরু করতে পারে, যা হল তার অর্জিত প্রতিক্রিয়া। যাই হোক ছয় সপ্তাহের মধ্যেই আপনি তার আরো প্রতিক্রিয়াশীল হাসি দেখতে পাবেন, যেহেতু সে এইসময় থেকে সে আপনার মুখ ও কণ্ঠস্বর চিনতে পারে। এটি হল সেইসময় যখন বেশীর ভাগ শিশুরই পেটের যন্ত্রনা শুরু হয়। প্রায় কোন কারণ ছাড়াই তাদের কাঁদতে দেখা যায় ,এটি পেটের যন্ত্রণার জন্যও হতে পারে তবে যত তারা বড় হতে থাকে এটি কমতে থাকে।এই মূহুর্তে আপনার শিশুটিকে থামানোর জন্য যেগুলি করতে পারেন, সেগুলি হল–তাকে গান শোনাতে পারেন, কিছু গান বাজাতে পারেন তার সামনে, তাকে দোলা দিতে পারেন তার রাগ ও কান্না থামানোর জন্য । এই মূহুর্তটি সামাল দেওয়ার জন্য আপনাকে ধৈর্য্য রাখতে হবে, বিশেষত তখন, যখন আপনার শিশুটি এই উপায় গুলির কোনটির দ্বারাও শান্ত না হয়। এটি মনে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আপনাকে সবসময় এমন কিছু উপায় খুঁজে বের করতেই হবে যাতে আপনার শিশুটি একটি আরামদায়ক অবস্থায় থাকে।
এখানে এক মাস বয়সের একটি শিশুর কয়েকটি সুরক্ষিত এবং সহজ ক্রিয়াকলাপের কথা উল্লেখ করা হল যা তাদের বিকাশ কে বিকশিত করে।
আপনার এক মাস বয়সের শিশুটির পূর্ণ বিকাশ নির্ভর কয়রে তাদের সঠিক ও যথাযথ যত্নের ওপর। নিচে কয়েকটি যত্ন নেবার পদ্ধতির উল্লেখ করা হল আপনার এক মাস বয়সের শিশুটির জন্য যেটা আপনাকে তার যথাযথ যত্ন নিতে সাহায্য করবে।
প্রথম মাসে সাধারণত শিশুদের দিনে ছয় বার খাওয়াতে হয়। এটা দৈনিক বারো বার পর্যন্ত হতে পারে স্তন্যদুগ্ধ পান কারি শিশুদের ক্ষেত্রে।আপনার শিশু যদি সুস্থ থাকে তাহলে সে যতটা খেতে চায় ততটাই তাকে খাওয়ান। সবথেকে ভাল যখন সে ক্ষুধার্ত থাকে তখ ন তাকে খাওয়ানো।
এক মাস বয়সের শিশুরা সাধারণত দিনে চৌদ্দ থকে সতের ঘন্টা ঘুমায়। এই সম্য সীমা সারাদিনের মধ্যে ছরানো থাকে অর্থাৎ একটানা ঘুমায় না। তারা দুধ খাবার পরেই সাধারণত ঘুমিয়ে পরে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার শিশুটি যেন ঠিক মত ঘুমায়। কারণ ঘুমের মধ্যেই শিশুর বৃদ্ধি ঘটে।
আপনি নিচের পরামর্শ গুলি মেনে চলতে পারেন এটা আপনার শিশুটির যত্ন ঠিক মত হচ্ছে,এবং ঠিক মত বিকাশ হচ্ছে।
আপনার শিশুর বিকাশের প্রতিটি ধাপ খুব গুরুত্ব পূর্ণ এবং আপনি যদি তার বিকাশের ক্ষেত্রে কোনোরকম ধীরতা লক্ষ্য করেন তাহলে দেরি না করে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবার জন্য অনুরোধ জানান হল।