আপনার সকল চেষ্টা এবং কঠিন পরিশ্রম শুরু হয় শিশুটির দুই মাস বয়স থেকে। আপনার শিশুটি অবশ্য তার অবস্থার কথা তখনই জানাতে পারে না কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি তার কাছ থেকে অনেক পুরস্কার আশা করতে পারেন। তার কাছ থেকে আর ও অনেক বেশী হাসি পাবেন নানারকমের আওয়াজ পাবেন সাথে নানা অঙ্গভঙ্গি। তার সাথে আপনার মাতৃত্বের অনুভূতির বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
আপনার দুই মাসের ছোট শিশুটির এই সময়কালে তার বিকাশ ঘটবে তার বৃদ্ধি এবং ওজন বাড়ার মধ্য দিয়ে। এই সময়ে তার ওজন প্রতি সপ্তাহে প্রায় 150-200 গ্রাম বাড়তে থাকবে।যদি কোন এক সপ্তাহে প্রচুর ওজন বাড়ল কিন্তু পরের সপ্তাহে ততটা বাড়ল না এতে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। ওজন হল বৃদ্ধির একটা ভাল নির্দেশক- এটা মনে রাখতে হবে। এছাড়াও অনেকগুলো বিষয় রয়েছে এর মধ্যে আছে দৈর্ঘ্য, মাথার পরিসর, সার্বিক স্বাস্থ্য, খিদে বাড়ার হার, ঘুমানোর ধরণ ইত্যাদি এই গুলির পরিমাপও ওজন যন্ত্রে ওজন মপার মতই গুরুত্ত্বপূর্ণ।তবে আপনার বাচ্চার ওজন প্রতি সপ্তাহে না মেপে কয়েক সপ্তাহ ছাড়া ছাড়া ওজন মাপা ভাল।
2 মাসের শিশুর বৃদ্ধি চারটি সপ্তাহে ভাগ করে নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হয়।
এই সময়কালে আপনার শিশুর অপেক্ষাকৃত জটিল জিনিসের উপর আগ্রহ বাড়বে আগের উজ্জ্বল রঙিন বস্তুর তুলনায়। এই সময় আপনাকে তার সাথে পরিচয় ঘটাতে হবে সফট খেলনার সাথে, নরম বল, এবং জীবজন্তুর আকৃতি বিশিষ্ট বালিশের সাথে। ওকে ছেড়ে দিতে হবে সেগুলো ধরবার জন্য।
শিশুটি অন্যান্য শব্দের থেকে আপনার কথা আলাদা করে বুঝতে পারবে, সাথে সাথে শব্দের উৎসের দিক নির্ণয় করতে পারবে। আপনি ওর সাথে কথা বলতে থাকুন যদিও কোন উত্তর পাবেন না। আপনার শিশুটি আপনার নড়াচড়া এবং অভিব্যক্তি গভীর ভাবে লক্ষ্য করতে পারে।
এই সমইয়ে আপনার শিশুটি যে সব জিনিস সে দেখতে পাবে সেগুলোকে সে হাতের আঙ্গুল বা পায়ের আঙ্গুলের সাহায্যে মুখের ভেতর ঢোকাতে চাইবে। যেহেতু প্রচুর লালা তার মুখে থাকে তাই এই সময় জিনিস গুলোকে মুখে নিয়ে ড্রোল করতে শুরু করবে। যাইহোক দাঁত উঠতে এখনো তিন মাস দেরি। সেই জন্য সে ড্রোলিং করতে চাইবে কোনো জিনিস মুখে ঢোকাবার জন্য। শিশুর ড্রোল এ রোগ প্রতিরোধকারী প্রোটিন ভর্তি থাকে যা তার খেলনা বা অন্যান্য জিনিসে লেগে যায়।
এই সময় আপনার শিশুটি দীর্ঘ সময় ধরে একটানা ঘুমাবে আর দু-এক ঘন্টা জেগে থাকবে। দুই থেকে চার খেপে সে ঘুমাবে এবং মোটামুটি 10 ঘন্টা সে জেগে থাকবে এটাই হল এই সময়ের নিয়ম।
এই সপ্তাহে থেকে শিশুটি নিজে নিজে চিৎ হয়ে শোওয়া থেকে পাশ ফিরে শোবার চেষ্টা করবে, আপনি লক্ষ্য করবেন আবার সে উল্টোটাও করতে চাইবে। যেহেতু তখন তার ঘাড়ের এবং বাহুর মাংস পেশী সম্পূর্ণ ভাবে গঠিত হয়নি তাই পুরোপুরি উল্টাতে আরো এক মাস সময় লাগবে। সে এখন তার বিছানার চার দিকে নড়াচড়া করতে শিখেছে তাই তাকে একা বিছানায় রাখা যাবে না।
10 সপ্তাহ বয়সে আপনার শিশুটি মসৃণ ভাবে অঙ্গগুলো সঞ্চালন না করতে পারলেও সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে বিক্ষিপ্ত ভাবে নড়াচড়া করার জন্য। তার হাত পা ছড়াবার জন্য যথেষ্ট জায়গা দিতে হবে। তাকে মাদুর কিম্বা কম্বলের ওপর রেখে দিয়ে এই স্বাধীনতা দিতে হবে।তার শক্তি বাড়তে থাকছে এই সঞ্চালন গুলো তার ছোট্ট মাংস পেশী গুলোকে মজবুত করবে।এই সময় সে তার পেটের উপর ভর করে উপুর হয়ে পা দুটো দিয়ে উপরের দিকে উঠতে চেষ্টা করবে।
দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন, তার উজ্জ্বল হাসি দেখে যখন কেউ তাকে কোলে নেবে বা তার সাথে কথা বলতে চাইবে। এই সময়েই আপনার শিশুটির গ্রহণ করার ক্ষমতা খুব ভাল হ্য় তাই আপনি অন্য লোকেদের সাথে ওর পরিচয় ঘটান বিশেষত যারা পরবর্তিকালে তার সাথে সময় কাটাবে।
এই পর্বটি হল আপনার শিশুর নিতান্তই আবিষ্কারের সময়, সে এই সময় নিজের হাত ধরে কোন জিনিসের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সেগুলো কে মুখে ঢুকিয়ে চুষতে থাকা হল তার একটা প্রিয় সময় কাটাবার উপায় যতক্ষন না সে অন্য আর একটার দিকে নজর যায়।সে কতবার এটা করছে সেটা দেখে ঘাবরাবেন না,এটি শুধু রুটিন মাফিক কাজ থেকে মুক্তি দেয় না শিশুটির আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়।
11তম সপ্তাহে আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার শিশুটি তার মাথা টিকে আগের থেকে অনেকক্ষন বেশি সময় ধরে তুলে রাখতে পারছে। সে তার মাথাটা কে সোজা করে রাখে যদি আপনি তাকে বসিয়ে দেন।
আপনার শিশুটিকে টীকা দিন তার দুই মাস বয়স থেকে। তাই আপনি এখন থেকে ক্যালেন্ডারে মার্ক করুন এবং মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন যাতে আপনি ভুল না করেন। আপনার শিশুর প্রথম টীকাকরণ খুব জরুরী,এটাকে অবহেলা করবেন না।বেশ কয়েকটি টীকা সরকারের বা মিউনিসিপালিটির পক্ষ্য থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয় , আপনি তার সুযোগ নিতে পারেন।পাশাপাশি আপনার শিশুর ডাক্তারবাবু তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাকে টীকা দিতে পারেন।সবথেকে ভাল একটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রেকর্ড ডায়েরি রাখা যাতে সমস্ত ভ্যাক্সিনেশনের তারিখ, ডাক্তারবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় লিখে রাখতে পারবেন, আপনার মোবাইলের ক্যালেন্ডারটিকে এই কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।প্রয়োজনে তাতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে পারবেন। দুই মাস বয়সের শিশুটির ওজন নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিতে হবে এবং যদি কোন কিছু অস্বাভাবিক লক্ষ্য করেন তাহলে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করবেন।
এটাই হচ্ছে আপনার ফসল তোলার সময়। যে দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভধারনের পর প্রসব এবং তার পরবর্তিকালে রাত জাগার সুফল আপনি এবার পাবেন।দেখুন কিভাবে আপনার সন্তান টি নতুন নতুন মাইলফলক গুলো পেরিয়ে যাচ্ছে।
যখন আপনার সন্তানের বয়স 2 মাস হবে তার কান্নার আওয়াজ তখন আগেকার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দেবে। বেশীর ভাগ পিতামাতা এই অতিরিক্ত কান্না শুনে ভয় পান কিন্তু এতে ভয় পাবার কিছু নেই।আপনি তার সমস্ত চাহিদা পুরণ করেছেন,তাই এই ধরনের কান্নার খুব সামান্য বা কোন কারন-ই নেই। এটা হতে পারে সে খুব ক্লান্ত বা কাউকে কোন কারনে কাছে চাইছে। এই সময় তার স্নায়ুতন্ত্র বিকাশ লাভ করতে থাকে, সান্ত্বনা খোজার জন্য কাঁদতে পারে। এই সময়ে শিশুটির চাহিদাগুলো বোঝার জন্য আপনি আপনার প্রেরণার ওপর গুরুত্ব দেবেন।একজন মা হিসাবে আপনি ভাল বুঝবেন যে তাকে কোলে নিলেই চুপ হয়ে যাবে, না কি তাকে কোলে করে নিয়ে জানালা দিয়ে আকাশ দেখাতে হবে। আপনার সোনাটি সবসময় আপনার স্পর্শ চাইবে বা আপনার চেনা গন্ধ চাইবে শান্তশিষ্ট হয়ে থাকার জন্য।
এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ করুন যখন আপনার সন্তানের বয়স দুই মাস।
এই মুহুর্তে জন্য নিচের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হল
এই মাসটিতে আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার শিশুটি একটি নির্দিষ্ট ঘুমের প্যার্টান বানিয়ে নিয়েছে। আপনার ছেলে বা মেয়ে টি তার দৈনিক নির্দিষ্ট ঘুমের সময়ের থেকেও 1 থেকে 3 ঘন্টা বেশী ঘুমাচ্ছে। সব থেকে ভাল হল তার খাবার 30 থেকে 60 মিনিট পর ঘুম পারানো। খাবার পর পর সে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পরে ফলে এটাই তার ঘুমানোর আদর্শ সময়, তাকে তার বিছানায় শুইয়ে দিন।2মাস বয়সে 24 ঘন্টার মধ্যে 10-18 ঘন্টা সে ঘুমাবে যেটা এই বয়সে স্বাভাবিক ব্যাপার।
শিশুর 2 মাস বয়স হবার ফলে তার কাছে নতুন জগৎ খুলে যাবে। তার খাবার ইচ্ছা অনেক বেড়ে যাবে। হলে আপনাকে দিনের বেলায় তাকে বেশি করে খাওয়াতে হবে। শিশু তার খাওয়ার সময় জানিয়ে দেবে সে যখন চাইবে তখন তাকে খাওয়াতে হবে। এই সময় তাকে দুটি স্তন থেকেই খাওয়াতে হবে। আপনি যে দীর্ঘ দিন রাতে ভালো করে ঘুমান নি তা এই সময় পুষিয়ে নিতে পারেন তবে রাতে খাওয়াতে ভুলবেন না। সে এই সময় একটানা 5 থেকে 6 ঘন্টা ঘুমাবে এই বিরাট সময়টাতে আপনি এবং আপনার সঙ্গী হারিয়ে যাওয়া ঘুম ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
মনে রাখবেন আপনার শিশুটি কিন্তু অনন্য তাই আপনার শিশুটির বিকাশ আপনার পড়শির শিশু বা আপনার বন্ধুর শিশুর বিকাশের মত হবে না।আপনার শিশুর তুলনা অন্য কারুর সাথে কখনো করবেন না, যদি আপনি কোন বড়সড় খামতি না দেখেন তাহলে জানবেন আপনার সন্তানের বৃদ্ধি ও বিকাশ সুন্দর ভাবেই হয়ে চলেছে।