জীবনের বিভিন্ন ধাপে আপনার শিশুটির বৃদ্ধির বিকাশ বুঝতে পারা সত্যই কঠিন কাজ। কিভাবে আপনার শিশুটি বেড়ে ওঠে তা বুঝতে, তার বয়সী অন্য শিশুর তুলনায় সে তার বৃদ্ধিচক্রের কোন পর্যায়ে আছে , তার বৃদ্ধি স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা সেটি ঠিক করে বোঝার মত যে কোন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আপনি প্রস্তুত হন, যা আপনার জীবন পথে আসতে চলেছে।
তার জীবনের এই পর্বে প্রতিটা সপ্তাহ অতিক্রমের সময় তার অভূতপূর্ব শারীরিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় তার দৈহিক ,শক্তির এবং তার গতিশীলতার উপর। আপনার শিশুর এই বয়সে যখন তার বৃদ্ধি পর্যালোচনা করবেন তখন যে পরিমাপগুলি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে সেগুলি হল—
শিশুর বৃদ্ধির এই পর্বে মনে রাখার মত একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল তার প্রয়োজন হয় সামাজিক হওয়ার। এই বয়সে আপনার শিশু সচেতন হতে শুরু করে তার চারিপাশ সম্পর্কে এবং অন্যান্য বাচ্চা ও বড়োদের সাথে সে যোগাযোগ করার চেষ্টা ও শুরু করে। আবার এই সময় থেকে সে আপনাকে ও আপনার সঙ্গীকেও চিনতে পারে তার প্রাথমিক দেখভালের অভিভাবক হিসেবে।শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি হল—তার ডায়েট,খাওয়ানোর সময়সীমা, ঘুম, ক্রিয়াকলাপের ধরণ এবং দৈহিক স্বাস্থ্য। আপনার বাচ্চার ডাক্তারবাবুই আপনাকে শিশুর বিকাশের মাইলফলকের একটি চার্ট দিয়ে দেবেন যেটি থেকে আপনি মাস অনুযায়ী তার বিকাশের ধারাটি বুঝতে পারবেন। যদি আপনার বাচ্চা এখুনি সে ইমাইলফলক গুলি ছুঁতে না পারে তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। প্রতিটা শিশুর বিকাশই তাদের নিজদের ধারা অনুযায়ী হয়ে থাকে।
শিশুর বিকাশের মাইলফলকের চাবিকাঠি হল এই 20 সপ্তাহ, যখন আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের ধারাটি সহজেই অন্যদের চোখে পড়তে থাকে। জীবনের এই পর্বে এসে আপনার বাচ্চাটি বুঝতে পারে আপনি কে, সে জানে কখন আপনার গলা সে শুনতে পাবে এবং এই সব কিছুর ক্ষেত্রে সে তার প্রতিক্রিয়া দেখাবে হেসে বা মুখে নানারকম আওয়াজ করে।
এই সপ্তাহ টি আপনার বাচ্চার জন্য খুবই সংকটপূর্ন। সে যেকোন দিকে ঘুরে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে অনেক বেশী মুখে আওয়াজ করে কথা বলার চেষ্টা করবে, ধীরে ধীরে তার চারপাশের আওয়াজ গুলি অনুধাবন করে সে দিকে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করবে, বিশেষত যখন সে আপনার ও আপনার সঙ্গীর গলার আওয়াজ পাবে।
এই সপ্তাহে তার বিকাশ বিশেষভাবে উত্তেজনা পূর্নময় হয় যেহেতু এই সময়ে তার গলা বা ঘাড় থেকে পা এর পাতা পর্যন্ত মাংসপেশীগুলি অনেক বেশী শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময়ে আপনি এটিও আশা করতে পারেন যে খাওয়ানোর সময় আপনি তার দেহের উপরিভাগ তুলে ধরে খাওয়াতে পারবেন।
তার দৈহিক বিকাশের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সপ্তাহ। এই সময়ে আপনার শিশু কিছু সাপোর্টের সাহায্যে বসতে শিখবে।এই সময়ে আপনি তার থেকে আশা করতে পারেন আরো বেশী অঙ্গ সঞ্চালনা এবং এই পর্বেই সে আরো অনেক বেশী মুখর হয়ে উঠবে। আপনার শিশুর এই সকল মাইলফলক গুলি ভাল করে পর্যালোচনা আপনার শিশুর যত্ন নিতে ও তাকে সেই সকল মাইলফলক গুলিতে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।এই পরিস্থিতে যদি আপনার শিশুটি ওই মাইলফলকগুলির উল্লেখযোগ্য সীমারেখার মধ্যে পৌঁছোতে না পারে তবে সেটি তার অনিয়মিত বিকাশকেই চিহ্নিত করে, সেক্ষেত্রে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সূচক, আপনার শিশুর বিকাশের অভাবের ফলে তাদের স্বাস্থ্যে কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। এইজন্য এই সময়ে আপনার শিশুর দৈহিক অঙ্গ সঞ্চালনার দিকে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখা একান্ত প্রয়োজন। দেখুন সে কম মাত্রায় অঙ্গ সঞ্চালনা করছে কিনা, যদি সেটিই ঘটে তাহলে সেটি নির্দেশ করে যে কিছু সমস্যা আছে। পাঁচ মাস বয়সের একটি শিশু এই সময়ে তার অঙ্গ সঞ্চালনার মাত্রা আরো বেশী মাত্রায় বাড়িয়ে তুলবে, তার চারিপাশে যেসব শব্দ শুনবে সেগুলি অনুকরণ করার চেষ্টা করবে। সারা বাড়ি জুড়ে সে একটা হৈচৈ বাধিয়ে রাখবে।
লক্ষ্য রাখুন আপনার বাচ্চা যদি সাধারণের থেকে বেশী মাত্রায় কাঁদতে থাকে। এটি আপনার শিশুর আপনাকে বোঝানোর ভাষা যে তার কিছু সমস্যা হচ্ছে। যাইহোক এই বয়সের বাচ্চারা প্রায়ই কাঁদে, কিন্তু যদি তার কান্নার বিরতি কমে কান্নার পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকে তবে তার সাথে কিছু সমস্যা হচ্ছে এটিই নির্দেশ করে।
এই বয়সে শিশুদের বিকাশের মাত্রা চিহ্নিত করা যায় তাদের নানা ধরণের কাজকর্মের মধ্য দিয়ে। এখানে পাঁচ মাসের শিশুর কিছু ক্রিয়াকলাপ উল্লেখ করা হল যা তার বিকাশের মাত্রা পরিমাপ করতে সাহায্য করবে।
আপনার শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে আপনি তার সাথে ব্যাস্ত থাকবেন–এটি সব থেকে বেশী গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। এটি হল সেই সময় যখন প্রচুর সংস্থা এসে চেষ্টা করবে নানাধরণের শিক্ষা মূওক খেলনা বা জিনিস পত্র আপনার কাছে বিক্রি করতে যা আপনার বাচ্চার বিকাশের সহায়ক। এটি জরুরী যে,আপনি সেই পথে যাবেন না।এই মুহূর্তে আপনার বাচ্চা তার স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়ে উঠবে এবং সেই খেলনা গুলির প্রতি আকর্ষিত ই হবেনা যেগুলির সাথে তার কোন পরিচয় নেই। আপনার বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ বৃদ্ধি পেতে পারে তার সাথে সামাজিক সংযোগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে যেমন ,তার সাথে সময় কাটিয়ে, তার সাথে কথা বলে কিম্বা খেলা করে। এটি হল সেই বয়স যখন আপনার বাচ্চা কারুর প্রতি সংযুক্তি প্রদর্শন করাতে পারে, সেটি কোন মানুষের বা খেলনার সাথে ও হতে পারে। এটি তার মানসিক সংবেদনশীলতা ও আবেগ প্রবণতার স্বাভাবিক ও সুস্থ বিকাশের লক্ষণকেই চিহ্নিত করে। কখনো কখনো এই সময় তার মাথায় এমন কিছু ঢুকে যায় তার ঘুমানোর সময়ে সে জিনিস গুলি বিপদ ডেকে আনে, টেডিবিয়ার, কম্বল, বালিশ এগুলি সেই তালিকায় পড়ে। এই জিনিসগুলি এবং আরো কিছু বস্তু যে গুলি আপনার বাচ্চার মুখ ঢেকে ফেলে সেগুলি খুবই বিপজ্জনক যেহেতু এর ফলে তার দম আটকে যেতে পারে, শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হতে পারে ।তাই তাকে আরাম করে শোয়ানোর জন্য এটি অবশ্যই মানতে বলা হয় যে,যখন আপনার বাচ্চাকে শুয়ে ঘুম পাড়াবেন তখন তার চারিপাশ সম্পূর্ণ ফাঁকা ও পরিস্কার রাখুন।
এখানে কিছু ক্রিয়াকলাপের উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনি আপনার ছোট্ট সোনার সাথে করতে পারেন তার স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে।
আপনার শিশুর যত্ন নেওয়াটা এই সময়ে খুব প্রয়োজন।কিছু কাজকর্ম এই সময়ে তার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এখানে সেই রকমের কয়েকটির উল্লেখ রইল তার বিকাশের এই পর্যায়ের জন্য।
আপনার বাচ্চাটির বিকাশের প্রয়োজনীয় যত্নের ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করুন।
এই পর্যায়ে আপনার শিশুর বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এখন সে বেবি ফুড খেতে শিখেছে তবু তাকে শক্ত খাবার দেবার আগে ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে তাকে তা দেওয়া প্রয়োজন। পাঁচ মাস বয়সে আপনার বাচ্চার পুষ্টির প্রধান উৎস হল আপনার বুকের দুধ। এই সময়ে আপনি বাইরের খাবারের সাথে তার পরিচয় ঘটাতে পারেন।এই সময় আপনার শিশু বুঝতে পারবে তার সত্যি কারের খিদে পেয়েছে নাকি সে সামান্য আরাম চাইছে। তার খাবার সময় কাল নির্ধারনের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন না করাই ভাল,চেষ্টা করুন তার ঘুমের সময় এবং খাবার সময়ের মধ্যে ফাঁক থাকে।শিশুর ওজনের মান লিপিবদ্ধ করার জন্য চার্টে লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া বজায় রাখুন,এবং প্রতিমাসে শিশুটির বিকাশ চিহ্নিত করুন যাতে বুঝতে পারেন আপনার শিশুটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে না।
এই সময় আপনার শিশুটি পাশ ফিরে শুতে চাইবে। আপনি এই বিষয় টিতে লক্ষ্য রাখবেন এবং তদের চিৎ করে শুইয়ে দেবেন। মনে রাখবেন দুপুরের ঘুমানোর সময় আপনি তাকে জাপটে ধরে রাখবেন এর ফলে তার পেটের ওপর চাপ দিয়ে ঘুমানো বন্ধ হবে। পেটের ওপর চাপ দিয়ে ঘুমানো বিপজ্জনক কারন এর ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পরে।
এখানে কয়েকটি পরামর্শ রইল শিশুর বিকাশের জন্য।
মনে রাখবেন এই সব মাইলফলক গুলো হল গাইডলাইন এর মত কাজ করে, আর আপনার শিশুটি তার নিজস্ব গতিতে বেড়ে ওঠে।আপ্নার বাচ্চার চাহিদা, মাইলফলক গুলো টপকানো,এবং তার পরিচর্যা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করা দরকার। খোলা মনে আপনার সঙ্গী অথবা অভিজ্ঞ শুভানুধ্যায়ী অন্যান্যদের সাথে শিশুর যত্নের ব্যাপারে আলোচনা আপনাকে সমৃদ্ধ করবে।