শিশুরা প্রকৃতই দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে,সেই ছোট্ট মিষ্টি খামখেয়ালী আচরণকারী ক্রমশ পরিণত হতে থাকে টলমল পদাচারণকারী শিশুতে,এরপর সে হয়ে ওঠে প্রাক বিদ্যালয়ের উপযোগী,সেখান থেকে ক্রমে কৈশোরে প্রবেশ করে এবং আপনি বুঝতে পারার আগেই সে একদিন কলেজ জীবনেও পদার্পণ করে ফেলে।এখন আপনার পুচকি সোনা তার প্রথম জন্মদিন থেকে প্রায় তিন মাস দূরত্বে অবস্থান করছে,আপনি কি জানেন তার বিকাশ ও বৃদ্ধি সঠিক মাপকাঠি অনুযায়ী হচ্ছে কিনা? আপনার শিশুর সকল গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোনগুলো অর্জনের জন্য আপনি তাকে কীভাবে সাহায্য করবেন?জেনে নিন একটা শিশুর কীভাবে বিকাশ ও বৃদ্ধি সম্পন্ন হয় তার 37 সপ্তাহ বয়সে।
একটা শিশু তার জীবনের প্রথম বছরে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে থাকে,এবং একটা শিশুর জন্য তার জীবনের 36 সপ্তাহের মধ্যে বৃদ্ধির দৌড়ের অভিজ্ঞতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার।সাধারণত এই বয়সে একটা শিশুপুত্রের ওজন প্রায় 19 পাউন্ড এবং একটা শিশুকন্যার ওজন প্রায় 18 পাউন্ডের কাছাকাছি হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতানুযায়ী, 37 সপ্তাহের মধ্যে একজন শিশুপুত্রের উচ্চতা হতে পারে প্রায় মোটামুটি 28 ইঞ্চির মত এবং একজন শিশুকন্যা ঐ একই বয়সে প্রায় 27 ইঞ্চির মত উচ্চতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।একটা গড় হিসেবানুযায়ী, শিশুরা তাদের জন্মের নবমতম মাসে মোটামুটি ভাবে 3-5 আউন্সের মত ওজন এবং প্রায় 0.5 ইঞ্চির মত উচ্চতা অর্জন করতে পারতে পারে।প্রতিটা শিশু বেড়ে ওঠে বিভিন্ন গতিধারায় এবং যদি আপনার সন্তান বৃদ্ধির এই মাপকাঠির খুব নিকটেই অবস্থান করে,তবে সে তার একদম সঠিক অবস্থানেই রয়েছে।
এখানে লিপিবদ্ধ করা হল আপনি আপনার 37 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে তার থেকে যা কিছু প্রত্যাশা করে থাকেন সেই সকল বিষয়গুলি।
এই 37 সপ্তাহে আপনি আপনার বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস ও তার খাদ্য–সময়সূচীর ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন।এই বয়সের সাথে সে অনেকটা স্বাধীন হয়ে উঠতে পারে এবং সে নিজেই ধরে রাখতে চাইতে পারে তার ফিডিং বোতলটিকে অথবা তার প্রিয় সিপি কাপটিকে। একটা গড় হিসাবানুযায়ী,আপনার বাচ্চার একদিনে প্রয়োজন হতে পারে প্রায় 700-900 ক্যালোরি এবং এর অর্ধেক ক্যালোরিই তার পাওয়া উচিত বুকের দুধ থেকে,তার অর্থ হল আপনার বাচ্চার প্রয়োজন হতে পারে আনুমানিক মোটামুটি ভাবে 700 মিলিলিটার দুধ দৈনিক ভিত্তিতে। এটিই একদম সঠিক বয়স হতে পারে আপনার বাচ্চাকে বোতলের থেকে সিপার কাপে খাওয়ার অভ্যাসে রূপান্তরিত করার।যদিও প্রথমেই এটিতে তারা বাধা দিতে পারে, যা বাচ্চাদের জন্য একদম স্বাভাবিক ব্যাপার,আপনি তাকে কাপে করে জল দেখিয়ে তারপর তা ধীরে ধীরে দুধে পরিবর্তন করে দিতে পারেন চালাকির সাথে।এছাড়াও এই পর্যায়ে প্রথমে বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধ অনুসরণ করার পর আপনার বাচ্চাকে অন্য খাবার দেওয়া উচিত।এই সময়ে আপনার বাচ্চাকে সারা দিনে তিনবার ভারী খাবার এবং দুবার অল্প করে হালকা খাবার খাওয়ানো উচিত।আপনি তাকে নানান ধরণের খাবার দেওয়া শুরু করতে পারেন যেমন মিষ্টি আলু,কলা,আপেল,আভোকাডো,টফু ইত্যাদি। আপনার বাচ্চার খাওয়া বা তাকে খাওয়ানো ভালোভাবে ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য তার ময়লা করে ফেলা ডায়াপার গুলোর উপর লক্ষ্য রাখুন।সে সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য তার ওজনের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।
বেশীর ভাগ বাবা–মায়েরাই তাদের সন্তানের ঘুমের ধরণ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন।সুখবর হল এই যে,এই বয়স থেকে আপনার সন্তান একদিনে 14-15 ঘন্টাও ঘুমাতে পারে।এটা দুটো ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে,রাত্রিকালীন ঘুম প্রায়10-12 ঘন্টা সময়ব্যাপী এবং এক বা দুটি খেপে দিবা–ঘুম, যার প্রতিটির সময়সীমা প্রায় 1-2 ঘন্টা।বেশীর ভাগ শিশুর (প্রায় 70%) ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে,তারা এই বয়সে রাতের বেলায় কোনোরকম বিঘ্ন না ঘটিয়ে একটানা 8-12 ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারে।সে শান্তিপূর্ণ ভাবে নাও ঘুমাতে পারতে পারে,যদি সে অস্বস্তিতে থাকে বৃদ্ধির দৌড়ের কারণে বা সাধারণ দাঁত কিড়মিড়ের মত সমস্যার কারণে।যাইহোক, যদি আপনার বাচ্চা রাত্রে না ঘুমায় বা যতক্ষণ তার ঘুমে উদ্বিগ্নতা দেখা দেয় ততক্ষণ আপনাকে বিরক্ত করে ও কষ্ট দেয় তবে সেক্ষেত্রে আপনি ঘুম–প্রশিক্ষণ প্রয়োগের জন্য চেষ্টা করতে পারেন।কারণ এই বয়সে আপনার বাচ্চা ঘুমের সবধরণের সাথেই মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।আপনি তার জন্য একটা ঘুমের রূটিন প্রস্তুত করতে পারেন যেমন–মালিশ করা,স্নান করানো,ঘুম পাড়ানি গান শোনানো ইত্যাদির মাধ্যমে তাকে সংকেত দিতে পারেন যে এটি এখন তার ঘুমের সময়। যদি আপনার সন্তানের সাময়িক ঘুমের সমস্যা থাকে তবে সে ক্ষেত্রে বড়ো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, সেটিকে খুব শীঘ্রই সে কাটিয়ে উঠবে।
এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল যেগুলি আপনি আপনার 37 সপ্তাহ বয়সী শিশুর পরিচর্যায় ব্যবহার করতে পারেন।
একটি সুস্থ শিশু হল একজন সুখী শিশু, এবং ঠিক এইকারণের জন্যই কখনই আপনার বাচ্চার শিশু–চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার বাদ দেওয়া উচিত নয়।আপনার বাচ্চাকে দেখাতে যাওয়ার ফলে আপনার ডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চার ওজন,উচ্চতা এবং অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন যে আপনার পুচকু সোনার আশানুরূপ শারীরিক বিকাশ সঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা।এখানে নিম্নে কতকগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকার উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনার ডাক্তারবাবু আপনার সোনার জন্য সুপারিশ করতে পারেন।
আপনার বাচ্চার অ্যানেমিয়ার কোনো লক্ষণ আছে কিনা তা দেখার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু রক্তপরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন।মায়ের বুকের দুধে আয়রণের ঘাটতি হলে এই বয়সে বাচ্চাদের মধ্যে অ্যানামিয়া দেখতে পাওয়াটা সাধারণ ব্যাপার,যার ফলে সেই অভাব পূরণের জন্য বাচ্চাদের অন্যান্য খাদ্য উৎসের উপর নির্ভর করা প্রয়োজন হয়।যদি আপনার বাচ্চা একজন দ্রুত ভোজনকারী হয়ে থাকে, সেক্ষত্রে তাদের রক্তে আয়রণের মাত্রা নিম্নমানের হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।এছাড়াও সীসা জনিত কোনো বিষক্রিয়ার লক্ষণ রয়েছে কিনা তা জানার জন্যও পরীক্ষা করানো হয়।
যদি আপনার বাচ্চার 6 মাস বয়সে তাকে হেপাটাইটিস B এর তৃতীয় শট–টি দেওয়া হয়ে গিয়ে থাকে তবে পরবর্তী নির্দিষ্ট শট–টি দেওয়ার এটিই সঠিক সময় হতে পারে।
এখানে কিছু খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের উল্লেখ করা হল যেগুলো আপনার সন্তানকে আচ্ছন্ন করে রাখবে এবং তার দক্ষতার বিকাশে সাহায্য করবে।
এখানে এমন কিছু সমস্যার উল্লেখ করা হল যেগুলো অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগের সঞ্চার করতে পারে এবং প্রয়োজন হতে পারে ডাক্তারের পরামর্শ।
যদি কোনো ধরণের বিকাশের অবক্ষয় আপনার আদরের সোনার মধ্যে লক্ষ্য করে থাকেন তবে আপনার একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
এই বয়সে আপনার বাচ্চাটি পরিণত হতে পারে একজন ছোট্ট অণ্বেষণকারীতে,আমরা আপনাকে পরামর্শ দিয়ে থাকি তাকে অণ্বেষণ করতে দেওয়ার, আপনার ঘনিষ্ঠ নজরের মধ্যে রেখে।সেইজন্য সেখানে উপস্থিত থাকুন এবং আপনার সোনাকে একজন স্বাধীন ও আত্মপ্রত্যয়ী শিশু হিসেবে গড়ে তুলুন।