38 সপ্তাহ বা নয় মাস বয়সী একটি শিশুর মধ্যে দেখা যায় জীবন পরিবর্তনকারী উন্নয়ন মাইলস্টোনগুলি। এই পর্যায়ে ঘটে নির্দিষ্ট কিছু বিকাশ যেমন মাতৃ স্তনদুগ্ধ ত্যাগ করানোর মাধ্যমে অন্য খাবার খাওয়ানোর অভ্যেসে প্রবেশ করানোর প্রয়াস,বিস্ময় সৃষ্টি হওয়া। এখানে আমরা 38 সপ্তাহ বয়সী শিশুর সম্ভাব্য বিকাশ এবং তার যত্ন নেওয়ার কিছু উপায় ও পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব।
বয়সের এই পর্যায়ে শিশুদের বিকাশ পুরোপুরি স্পষ্টভাবেই দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে,38 সপ্তাহ বয়সী শিশুর মাইলস্টোনগুলি অর্জন করাটা পুরোপুরি নির্ভর করে প্রতিটা শিশুর বৃদ্ধির হারের উপর।এগুলি কিছু শিশুর মধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে হতে দেখা যায় কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে আবার সেরকম স্পষ্ট ভাবে নাও ঘটতে পারে। এটা একটা প্রাকৃতিক পদ্ধতি ।আপনার বাচ্চা এই সকল মাইলস্টোনগুলি অর্জন করবে হয় খুব শীঘ্র নতুবা কিছুটা দেরীতে।
এই বয়সে আপনার শিশুর বিকাশের দৌড় সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে আমাদের পরামর্শের পাশাপাশি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথেও এ বিষয়ে একটু আলোচন সেরে নেবেন।
উন্নয়নের এই মাইলস্টোন গুলিকে বিভিন্ন সেটে ভাগ করা যেতে পারে।সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুলি আমরা চিহ্ণিত করেছি।
আটত্রিশ সপ্তাহ বয়সী শিশুর উন্নয়নমূলক মাইলস্টোনগুলিকে ভাগ করা যেতে পারে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক উন্নয়ন এবং ডাক্তারী প্রয়োজনীয়তায়।
উপরের সবগুলিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ এবং শিশুর 38 সপ্তাহ বয়সে তার বৃদ্ধির দৌড়ের সময় তাকে দুধ খাওয়ানোর কৌশল,তার খাওয়া এবং ঘুম এই সকল বিষয়েই বাবা–মায়ের অগ্রাধিকার বেশী থাকে।এখন প্রথমেই আলোচনা করা যাক তাদের খাওয়ানো এবং ঘুমানোর বিকাশের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে।
এটা হল সেই সময় যখন শিশুরা তাদের ছোট ছোট আঙ্গুলের সাহায্যে কোনো কিছু তুলতে চেষ্টা শুরু করে।সুতরাং আপনি এমন খাবার তাকে দেওয়া শুরু করতে পারেন যেগুলো সহজে ধরে আঙ্গুলে তুলে খাওয়া যায়, এবং সহজে তাদের হজম হয়,যেমন নরম পাউরুটির টুকরোবিশেষ, ভালো করে সিদ্ধ করা ডিমের সাদা অংশের টুকরো, সেদ্ধ করা আলুর টুকরো ইত্যাদি।
এটা আবার বাচ্চাকে সেই সকল খাবার গুলো দেওয়ার সেরা সময় যেগুলো তাদের মুখে সহজেই গলে যায়,যেমন নানা রকম ফলের যেমন কলা, পেঁপে, আভোকাডো দাঁত দিয়ে ভাঙ্গা যায় এরকম বিস্কুট এবং কিছু কুড়মুড়ে খাবার যেগুলো সহজেই দ্রবীভূত হতে পারে এরকম নরম পিউরি বা মন্ড।
এটা আবার শিশুদের উপর নতুন খাবার প্রয়োগ করে পরীক্ষা করারও ভালো সময়।এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার বাচ্চার সাথে পাস্তা, মাছ ,মাংস ইত্যাদি ধরণের খাবারের সাথে পরিচয় করানো শুরু করাতে পারেন।এমন কিছু তত্ত্ব আছে যেখানে পরামর্শ দেওয়া হয় যে, খাবারের প্রতি এলার্জি কমাবার জন্য প্রতি 3-5 দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চার সাথে নতুন খাবারের পরিচয় করানো উচিত।আবার অন্য এক গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতি 1-3 দিনে নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করানোটা ঠিক।
বাচ্চারা আপনার সাথে তাদের খাবার ভাগ করে নিতে পছন্দ করবে।যেহেতু এই সময় বাচ্চারা তাদের পছন্দের কথা জানাতে পারে তাই সেই অনুযায়ী খাবার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
এই সমস্ত রকম খাবার নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি আপনি এখনো আপনার সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়ে যেতে পারেন।যাইহোক, শিশুদের খাবার চাহিদা নির্ভর করে তাদের অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের উপর, যেগুলির উপর তাদের উৎসাহ থাকে, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়।অর্থাৎ তাদের ঘুম যদি ঠিকমত হয় তবে তাদের খাবার চাহিদাটাও ঠিক থাকবে।এইসময় তাদের ঘুম চক্রটিও পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
এই সময় শিশু নতুন নতুন কার্যে পূর্ণ হয়ে ওঠে,এবং তাদের ঘুম কমে যেতে পারে এবং দিনে রাতে উভয় সময়েই সে বিরক্ত হতে পারে।যা তাদের খিটখিটে ও ক্লান্ত করে তোলে।এমনকি সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে রাতের ভয় অথবা দুঃস্বপ্নও দেখা দিতে পারে।
তাদের মধ্যে আবার নিরাপত্তার অভাবও দেখা দিতে পারে।বাচ্চা তার মা কিম্বা তার তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে ছাড়া আর কারুর সাথেই ঘুমাতে না চাইতে পারে।এই কারণে ব্যাস্ত দিনগুলোর জন্য আপনার প্রয়োজন হতে পারে বেবি ক্যারিয়ারের।
একটি গবেষণাঅনুযায়ী, “8% শিশু তাদের 6-12 মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত ভাবেই রাত্রে অন্তত একবার জেগে ওঠে, এবং 61% শিশুকে রাত্রিবেলায় কম করে অন্তত একবার দুধ খাওয়াতে হয়।” এই বয়সে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোটা একান্ত জরুরী নয়।তাদের কাছে একটা গল্পের বই পড়ে কিম্বা তাদের গল্প শুনিয়েও ঘুম পাড়ানো যেতে পারে।
তাদের শারীরিক ও মানসিক দ্রুত বিকাশের কারণে এই সমস্ত কিছুই ভীষণ স্বাভাবিক হয়ে থাকে।
এই পর্যায়ে শিশুদের বিশেষ কিছু যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
বয়সের এই পর্যায়ে শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে ডাক্তারী প্রয়োজনীয়তাগুলোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ,যেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
ভারত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক দ্বারা সুপারিশ করা হয় শিশুর নয় মাস বয়সে হামের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার জন্য।তাদের 12 মাস বয়সে এটা দেওয়া হয় ভিটামিন A ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ মুখে খাওয়ানোর সাথে। জাপানিস এনসিফ্যালাইটিস ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজটিও বিবেচনার মধ্যে ধরা হয়।
ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স দ্বারাও সুপারিশ করা হয় শিশুদের নয় মাস বয়সে মুখে খাওয়ার পোলিওভাইরাস ভ্যাক্সিন IPV 2, হামের টিকা, মাম্পসের টিকা এবং রুবেলা ভ্যাক্সিন MMR-1 দেওয়ার।এছাড়াও তাদের 9-12 মাস বয়সের মধ্যে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাক্সিন দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর নির্দেশিকা অনুযায়ী সুপারিশ করা হয় যে শিশুদের 9 মাস বয়স থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাস ভ্যাক্সিন ( HVP ) দেওয়ানো উচিত। 9-12 মাসের মধ্যে তাদের হামের টিকার পাশাপাশি ইয়ালো ফিভার ভ্যাক্সিনটিও দেওয়ানো প্রয়োজন। 9-18 মাসের মধ্যে দেওয়ানো দরকার মেনিনজোকক্কাল MenA কঞ্জুগেট ভ্যাক্সিন এবং 9-23 মাসের মধ্যে প্রয়োজন কোয়াড্রিভ্যালেন্ট কঞ্জুগেট দেওয়ানোর।
অন্যান্য সুপারিশ অনুযায়ী, শিশুদের 6-18 মাস বয়সের মধ্যে দেওয়ানো যেতে পারে তৃতীয় হেপাটাইটিস B এর টিকা (HBV) এবং তৃতীয় পোলিও ভ্যাক্সিন (IPV) এবং বার্ষিক ফ্লুটিকা–টিকা দেওয়ানো উচিত।
এই টিকাকরণের জন্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, তাই এই টিকাগুলো আপনার শিশুকে দেওয়ানোর আগে দয়া করে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিন।
যে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলিও করানোর প্রয়োজন
বিভিন্ন ধরণের খেলা ও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের সাথে শিশুদের পরিচয় করানোর জন্য এটি মোক্ষম সময়। এই সময় যেগুলি তার জন্য আদর্শ সেগুলি হল–
যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে ব্যাস্তও থাকেন,আপনি অবশ্যই ডাক্তারের সাথে নিয়মিত ব্যবধানে আলোচনাও করবেন।এবং আলোচনার জন্য আপনি যেগুলো অবশ্যই করবেন–
38 সপ্তাহ বয়সী শিশুরা নতুন নতুন বিকাশে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।তাদের পাশাপাশি আপনারও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, সুতরাং যখন আপনি আপনার শিশুর যত্ন নেবেন দয়া করে নিজেরও খুব ভালোভাবে পরিচর্যা করুন।আপনার শিশুকে ভালো করে বড় করে তোলার জন্য প্রয়োজন হবে আপনার সবরকমের শক্তি ও ভালো স্বাস্থ্যের।