আপনার সন্তান কি পরিশেষে 41 সপ্তাহ বয়সে পৌঁছে গেল?অভিনন্দন! আপনার ছোট্ট সোনা অনেকটা দূর পেরিয়ে এসেছে , কিন্তু এখনও অনেকটা দূর যেতে হবে।41 সপ্তাহ বয়সে আপনার সন্তান সাধারণ বাক্যাংশ এবং সহজ শব্দ গুলো বুঝতে শুরু করবে,সুতরাং এই সময়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার সন্তানের সাথে অনবরত কথা বলতে থাকুন।তার মস্তিষ্ক এখন অতিরিক্ত সময় জুড়ে কাজ করবে,যেহেতু তার সুক্ষ্ম ও স্থূল অঙ্গ সঞ্চালনার দক্ষতাগুলি বিকাশ পেতে থাকে তার দৈহিক বৃদ্ধি এবং মানসিক উন্নয়ন সঞ্চালিত হওয়ার কারণে।এই পর্যায়ে তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন উদ্বিগ্নতা দেখা দিতে পারে এবং ঘুম ভেঙে যেতে পারে দাঁত সংক্রান্ত বিষয় চরমে ওঠার কারণে,কিন্তু এই সময়ে উত্তেজনাপূর্ণ আরো অনেক ধরণের বিকাশ শিশুদের মধ্যে ঘটে যেগুলো আপনি আপনার ছোট্ট সোনার মধ্যেও লক্ষ্য করতে পারেন।
এই পর্যায়ে আপনার শিশু তার কণ্ঠ্য দক্ষতা প্রকাশের জন্য চেষ্টা করতে থাকবে।সুতরাং বাচ্চাদের মত আধো আধো করে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব পূর্ণবাক্যে সাড়া দিতে তাদের সেই অস্ফুট কলধ্বনির।যেমন আপনি বলতে পারেন “সত্যি?” অথবা “এটা আকর্ষণীয়” ইত্যাদি এই ধরণের ছোট ছোট বাক্যগুলি, যখন সে তার মুখে নানান কলকাকলী করে আপনাকে কিছু বলবে।আপনার বাচ্চাটি হেসে উঠবে এবং আরো বকবক করতে থাকবে,বাক্যাংশগুলোকে বুঝতে পারার ও শব্দগুলোকে সঠিকভাবে আয়ত্ত করার এটা একটা দূর্দান্ত উপায়, যা আপনার সন্তানের ভাষার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও এই সময়ে আপনি তার দৈহিক বৃদ্ধিতেও একটা চমৎকার পরিবর্তন দেখতে পাবেন।হ্যাঁ, এটা খুব দ্রুত হতে পারে,সুতরাং তার এই দ্রুত বৃদ্ধির সাথে মানিয়ে নিয়ে আপনার বাচ্চার জন্য বড়ো মাপের জামাকাপড় কেনার এটাই সময় হয়ে উঠতে পারে।সে আরো বেশী সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং নিজেকে টেনে উপরে তোলারও চেষ্টা শুরু করতে পারে,দাঁড়াবে,চলতে শুরু করবে এবং পুনরায় আগের অবস্থানে বসে পড়তে পারবে।একজন শিশু তার 41 সপ্তাহ বয়সে অনবরত নড়াচড়া করতে থাকবে।
নিচে 41 সপ্তাহ বয়সী শিশুদের কিছু মাইলস্টোন উল্লেখ করা হল যেগুলো আপনি আপনার সন্তানের মধ্যে লক্ষ্য করতে পারেন।
41 সপ্তাহ বয়সের বেশীর ভাগ শিশুরাই আগে যে সকল শক্ত খাবারগুলো খেতে পছন্দ করত, যেমন পিউরি বা মণ্ড অথবা আপনি যদি তাদের শিশু প্রযোজ্য কোনো দুধ পান করাতেন, এই পর্যায়ে এসে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা শুরু করতে পারে।বিভিন্ন ধরণের খাবারের সাথে আপনার সন্তানের পরিচয় করানোর এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়, কিন্তু আপনি দেখতে পাবেন যে তার পছন্দের তালিকায় খুব ছোট হবে।যদিও আপনি ভয়ার্ত হয়ে উঠতে পারেন এই ভেবে যে,আপনার সন্তান তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পাচ্ছে না,কিন্তু আপনি আশ্বস্ত হতে পারেন আপনার সন্তানের প্রথম 12 মাসের জন্য, যখন বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধ খাওয়ানো হয় আপনার শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি পরিপূরকের যথেষ্ট–এর থেকেও বেশী পেয়ে যায়। আপনার সন্তানের খাদ্য পছন্দ অনুযায়ী তাকে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন অন্যথায় সে ভীষণ ভাবে চিৎকার করে উঠতে পারে।খাবারের কিছু নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্য থেকেই তাকে তার পছন্দের খাবার নির্বাচনের অনুমতি দিন এবং যে পরিমাণ খাবার আপনি তাকে পরিবেশন করেন কোনোরকম ভয় না পেয়ে সে তার থেকে যতটুকু খেতে চায় সেটাই খেতে দিন।নতুন দাঁত ওঠার যন্ত্রণার কারণেও তারা খাবার খাওয়া প্রত্যাখ্যান করতে পারে,সুতরাং নরম,ঠান্ডা এবং চটকানো খাবার তাদের খেতে দিন যাতে তারা যন্ত্রণা থেকে কিছুটা উপশম পাবে।দাঁত ওঠার যন্ত্রণায় ঠাণ্ডা তরমুজ খুবই আদর্শ।এগুলো ছাড়াও আপনি তাকে মাছ বা মুরগীর মাংসের নরম টুকরো–ও দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।তার কোনগুলি খেতে সুবিধা হবে সেটা খুঁজে বের করুন এবং সেগুলিই তাকে খেতে দিন।
41 সপ্তাহ বয়সে আপনার সন্তান আরো বেশী ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করবে বিশেষ করে তার ঘুমের সময়ে।এই সময় সে নানা কারণে যেমন দাঁত ওঠার যন্ত্রণায় ও অস্বস্তিতে,এছাড়াও আরো অনেক কারণের জন্য সে বিরক্ত হয়ে উঠতে পারে এবং বেশ কিছু অনিশ্চিত রাত্রির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।যদিও তার এই যন্ত্রণায় আপনি নিজেও বেশ কষ্ট পেতে পারেন তবুও দ্রুত যন্ত্রণা কমাবার জন্য কোনোরকম জেল বা ওষুধ ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।দাঁত ওঠার লক্ষণগুলো হল–কোনো কিছুকে সে কামড়াতে চায়, মুখ থেকে লালা পড়ে,চোখগুলো ঘষে,মুখে ফুসকুড়ি বেরোতে পারে, ক্ষুধামান্দ্যতা, অনিদ্রা, এবং হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে।আবার কিছু উপসর্গ যেগুলি দন্তক্ষয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত নয় যেমন–পাতলা মল,সর্দি–কাশি,নাকবন্ধ,শরীরেরফুসকুড়ি,বমি এবং জ্বর–এগুলিও আপনার সন্তানের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।যদি আপনি না জানেন যে এই উপসর্গ গুলো আপনার সন্তানের শরীরে কেন দেখা দিয়েছে তবে একবার আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চেকআপের জন্য তাকে নিয়ে যেতে পারেন।
এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল 41 সপ্তাহ বয়সী শিশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য।
অনেক ডাক্তার বাচ্চার বয়সের এই পর্যায়ে নিয়মিত চেক–আপের
সময় সূচী নির্ধারণ করেন না, কিন্তু আপনি ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করতে পারেন যদি আপনার কোনো উদ্বেগের কারণ থাকে।
আপনার শিশুর ডাক্তারবাবু বাচ্চার উচ্চতা এবং ওজন পরীক্ষা করে দেখবেন যে সে তার বিকাশের সঠিক সীমার মধ্যে আছে কিনা।তিনি আপনার বাচ্চার রক্ত পরীক্ষা করাতে পারেন তার রক্তে হিমোগ্লোবিন,আয়রণ এবং সীসার মাত্রা চেক করার জন্য।
আপনার বাচ্চাকে তার 41 সপ্তাহ বয়সে অথবা তার কিছুদিনের মধ্যেই তার হেপাটাইটিস B ভ্যাক্সিনটি দিয়ে দেওয়ানোর প্রয়োজন।এই পর্যায়ের মধ্যেই আবার পোলিও–এর টিকার (IPV) তৃতীয় ডোজটিও দেওয়ার প্রয়োজন।শিশু বিশেষজ্ঞরা আবার এই সময়ে বাচ্চাদের ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দেওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন।
আপনি নিম্নোলিখিত খেলাগুলো আপনার 41 সপ্তাহ বয়সী শিশুর সাথে খেলতে পারেন।
অন্য আরেক জন ব্যক্তির সাথে আপনি মুখোমুখি হয়ে বসুন এবং আপনাদের মধ্য থেকে একজনের পর আরেক জন শিশুকে উৎসাহিত করুন হাঁটার জন্য তাকে এরূপ বলে ‘হাঁটি–হাঁটি পা–পা ‘। যদি সে এই সময়ে হাঁটতে না পারে,তাকে হামা দিতে দিন অথবা তার হাত দুটি ধরে বা কোনো কিছুকে ধরে তাকে হাঁটাবার চেষ্টা করুন।এই প্রক্রিয়াটি আপনার সন্তানের প্রধান পেশীগুলোর বিকাশে সাহায্য করে এবং তার হাঁটার গতির অনুশীলনেও সাহায্য করে।
এখন থেকে আপনার পাশাপাশি আপনার বাচ্চাও পিকাবু খেলাটি খেলতে সক্ষম হয়ে উঠবে এবং এই খেলাটির জন্য সে সক্রিয় ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাবে।
কিছু গান চালিয়ে দিন,আপনার ছোট্ট সোনাটিকে তুলে দাঁড় করিয়ে দিন এবং তার সাথে কিছু সময় ধরে নানান ভঙ্গীমায় নাচ করুন।এই পর্যায়ে বাচ্চারা গানের তালে তালে দুলতে ভালোবাসে।
আপনি আবার এই সময়ে আপনার বাচ্চার সাথে লুকোচুরি খেলাও শুরু করতে পারেন। যাইহোক, খেলার সময় তাকে কখনই এক মিনিটের বেশী একা ছেড়ে রেখে দিয়ে কোথাও চলে যাবেন না এই বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
নিচের বিষয়গুলির জন্য আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে পারেন।
আপনার 41 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশের একটা ট্র্যাক রাখুন।সবচেয়ে বেশী আপনি লক্ষ্য করবেন যে বয়সের এই পর্যায়ে তাদের প্রায়ই রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের মুখে বুদবুদ কাটার প্রবণতাও বেড়ে যায়, যখন তারা শব্দ গঠন করতে শেখে এবং সেগুলো মনে রাখে।যদিও আপনার বাচ্চার সাথে সঠিকভাবে কথপোকথন করাটাকে অর্থহীন বলে মনে হতে পারে কিন্তু শিশুর ভাষা শিক্ষার বিকাশে সাহায্য করার জন্য এটা একটা সেরা উপায়।এটার মধ্যেও আপনি একটা আকর্ষণ খুঁজে পাবেন যখন দেখবেন যে যা কিছুই আপনি করেন আপনার আদরের ছোট্ট সোনাটি সেগুলি সব অনুকরণ করতে চেষ্টা করে,সুতরাং তার সাথে এই পর্বটি উপভোগ করুন।