46 তম সপ্তাহে, একটা শিশুর ভীষণভাবে উন্নতি ঘটে এবং সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোনগুলি অতিক্রম করে।সুতরাং এই বিকাশ এবং মাইলস্টোনগুলি কি? আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনার কি করা উচিত?পড়ুন এবং শিখে নিন আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর জন্য যা কিছু জানার প্রয়োজন সেই সকল বিষয়ে।
একজন শিশু তার প্রথম বছরে খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে,কিন্তু প্রথম বছরের শেষের দিকে, তার বৃদ্ধির গতি কমে যায়।হামাগুড়ি দেওয়া থেকে,সে শুরু করে কোনো আসবাব পত্র ধরে উঠে দাঁড়াতে।এমনকি কিছু বাচ্চা আবার এই বয়সেই তাদের প্রথম কয়েক ধাপ পা ফেলতে পারে হাঁটার জন্য।তাদের সংবেদনশীল এবং জ্ঞানীয় বিকাশের পাশাপাশি, আপনার বাচ্চার দৈহিক বিকাশও ঘটতে থাকে।যাইহোক, এই সময়ে আপনাকে আপনার বাচ্চার প্রতি যত্নশীল হয়ে উঠতে হবে এবং আপনার ছোট্ট সোনার দিকে আপনার সজাগ দৃষ্টি বহাল রাখতে হবে যেহেতু সে এখন একজন কৌতুহলী অন্বেষণকারী হয়ে ওঠে তাই যা কিছুই সে দেখতে পায় তুলে নিয়ে মুখে পুরে দেয়।
এই সময়ে আপনার সন্তান এক বছর পূর্ণ করার থেকে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহই পিছিয়ে।সে স্বাধীন হতে থাকে, এবং তার সার্বিক বিকাশের এক লক্ষণীয় উন্নতি ঘটে।এই পর্যায়ে,সে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন দ্রুত অর্জন করবে।
এই সময় থেকে,বাচ্চা বসতে পারে এবং কোনো কিছুকে ধরে সে উঠে দাঁড়াতেও পারে।সারা বাড়ি হামা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো সাধারণ ব্যাপার।এমনকি এই বয়সে আপনি আপনার সন্তানকে তার পায়ের প্রথম পদক্ষেপ ফেলতেও দেখতে পারেন।
এই পর্যায় থেকে, আপনার ছোট্ট সোনার হাত ও চোখের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন ও বিকশিত হতে থাকবে।সে অঙ্গুলির দ্বারা যে সকল খাবার খাওয়া যায় সেগুলির সব কিছুই খেতে সক্ষম হবে তার নিজের তর্জনী এবং বুড়ো আঙ্গুল ব্যবহার করে তার মাঝে সেই খাবার গুলিকে ধরার মাধ্যমে।তার ক্ষুদ্র পেশীগুলো তাকে সাহায্য করবে কোনো বস্তুকে তুলে নিতে যেমন তারা তাদের ব্লক,খেলনাগুলিকে তুলে নিতে পারে ও একহাত থেকে অন্য হাতে সেগুলিকে নিতে পারে,সেগুলিকে চিহ্ণিত করতে পারে এবং তার আঙ্গুলের সাহায্যে খোঁচা দিতেও পারে।
এই বয়সে,আপনি তার যোগাযোগ দক্ষতাতেও কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন।সে অঙ্গভঙ্গীগুলোকে বুঝতে সক্ষম হবে,যখন তাকে টাটা বলবেন সে হাত নাড়াবে,কিছু শব্দ যেমন–মামা,দাদা,টাটা এগুলি বলতে সমর্থ হবে এবং মুখে অনেক বিড়বিড়ানির শব্দও করবে।এছাড়াও সে যখন খেলবে তার মুখ থেকে আপনি অনেক শব্দ স্খলনও শুনতে পেতে পারেন।
যেহেতু আপনার বাচ্চা তার প্রথম জন্মদিনের মাথায় অবস্থান করে,আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে,সে বস্তুর স্থায়িত্বের ধারণা সম্পর্কে বুঝতে শুরু করবে।সে লুকানো বস্তু খুজতে আরো বেশী পারদর্শী হয়ে উঠবে।এমনকি সে আপনাকে ও অন্যদেরকে দেখে অনুকরণ করার চেষ্টাও শুরু করতে পারে।তার দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হওয়া থেকে সে রঙের প্রতি ও রঙীন ছবি সহযোগে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করবে।সে বস্তু এবং খেলনাগুলিকে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়ে উঠবে সেগুলির রঙ,আয়তন এবং আকৃতি অনুযায়ী।
46 সপ্তাহে আপনার বাচ্চা শক্ত খাবার যেমন ইডলি অথবা প্যান কেক খেতে সক্ষম হয়ে উঠবে।তাকে এগুলো নিজেকেই খেতে দেওয়ার অনুমতি দিন কিন্তু বিষম লাগা থেকে তাকে প্রতিরক্ষা করতে সে যাতে খাবারগুলো থেকে একবারে একটাই ছোটো টুকরো মুখে ঢোকায় সেটি নিশ্চিত করবেন।এছাড়াও আপনি তাকে আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া যায় এরকম খাবার যেমন সবজিকে লম্বা লম্বা ফিতের মত কেটে সিদ্ধ করে,ফল যেমন কলা,সবেদা,কমলালেবু,মিষ্টি সরবতী লেবু ইত্যাদি দিতে পারেন।তবে আপনার বাচ্চাকে খেতে দেওয়ার আগে ফলগুলিকে খোসা ছাড়িয়ে বীজমুক্ত করা নিশ্চিত করুন।
আপনার ছোট্ট অণ্বেষণকারীর হামা দেওয়া ও সক্রিয়ভাবে বাড়ির মধ্যে অণ্বেষণ শুরু করা থেকেই সে তার অনেক ক্যালোরি বা শক্তি হারাবে।সুতরাং, তাকে খেতে দিন পুষ্টিকর খাবার যেমন চটকানো ফল এবং সবজি।আপনি তাকে সবজির খিচুড়িও দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন দুপুরে ও রাত্রের খাবারে।এই বয়স থেকেই শিশুরা অ–নিরামিষ খাবার খাওয়া শুরু করতে পারে, যেমন বিশুদ্ধ রান্না করা চিকেন বা মুরগীর মাংস,সেদ্ধ করা বা ভাজা ডিমও দিতে পারেন।এছাড়াও আপনি তাকে দইয়ের লস্যি, ওট ইত্যাদি দিতে পারেন।সব কিছুর পাশাপাশি এই সময়ে আপনার বাচ্চার প্রচুর পরিমাণে জল পান করাও অপরিহার্য।আপনি এই সময়ে–ও বাচ্চাকে আপনার বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে পারেন।যাইহোক, তাকে দিনের বেলায় 3-4 বারের বেশী বুকের দুধ খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন অন্যথায় সে শক্ত খাবার খেতে পারবে না।আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে অসমর্থ হন,তবে আপনি তাকে 20-30 আউন্সের মত ফরমূলা দুধ খাওয়াতে পারেন।
এর আগে হয়ত আপনার শিশু আপনাকে অনেক নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করিয়েছে কিন্তু আর হয়ত সেটি সে করাবে না।সে দিনের বেলায় 1-2 ঘন্টার জন্য 2 টো ঘুম সেরে নিতে পারে এবং রাত্রিবেলায় সে 10-13 ঘন্টা ঘুমাবে।যাইহোক,যদি আপনার সন্তান অসুস্থ থাকে,তার ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের কিছু পরামর্শ এখানে উল্লেখ করা হল।
এই 46 সপ্তাহ বয়সে আপনার বাচ্চাকে মূলত তিন ধরণের ভ্যাক্সিন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
মৌখিক পোলিও ভ্যাক্সিন ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বাচ্চাকে নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী দেওয়ানো প্রয়োজন।শিশুর জন্মের সময় থেকে তার 46 সপ্তাহ বয়সে দেওয়া এই মৌখিক পোলিও ভ্যাক্সিনের মধ্যে এটি তার দ্বিতীয় ডোজ।
শিশুদের প্রথম এই ভ্যাক্সিনগুলো দেওয়ানো হয় তাদের এই বয়সে।নাম প্রস্তাব হিসাবে,এটি শিশুদের তিনটি রোগ যথা মাম্প,হাম এবং রুবেলা থেকে রক্ষা করে।
এই সময়েই টাইফয়েড CV এর প্রথম ডোজটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাকে দেওয়া হয়।
এটি শুধু মাত্র রোগ প্রবণ অঞ্চলেই প্রয়োগ করা হয়।
টিকাকরণ ছাড়াও আপনার শিশুর ডাক্তারবাবু তার চোখ, হৃদস্পন্দন, নাড়ি, নিতম্ব এবং তার সঞ্চালন দক্ষতা পরীক্ষা করে দেখবেন।ডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চার মাথার আকার,দৈর্ঘ্য এবং ওজন পরিমাপ করবেন।এছাড়াও ডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চার রক্ত পরীক্ষা করানোর কথাও বলতে পারেন সীসা ঘটিত বিষক্রিয়া বা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে সেটি নির্ধারণ করার জন্য।
খেলাধুলা এবং অন্যান্য কিছু ক্রিয়াকলাপগুলি হল বাচ্চাদের কিছু শেখানোর মজাদার একটা পদ্ধতি।এগুলি আপনার ও আপনার বাচ্চার মধ্যে বন্ধনকে দৃঢ় করতেও সাহায্য করে।এছাড়া আপনার বাচ্চাকে শিক্ষাও দেয়।
একটা খুব উজ্জ্বল বস্তুকে নিয়ে আপনার সন্তানকে দেখান।তারপর সেটাকে এমন ভাবে লুকান যাতে সে সহজেই সেটাকে খুঁজে পেতে পারে এবং এটিও লক্ষ্য রাখবেন যে সে যেন আপনাকে নজর করে যখন আপনি সেটা লুকাবেন।তারপরেই তার দিকে ফিরে তাকে প্রশ্ন করুন সেটা কোথায়?প্রথম প্রথম তাকে সেটি খুঁজে পেতে সাহায্য করুন।একবার সে খেলাটা বুঝতে শুরু করলে আপনি তাকে সেটি একাই খুঁজতে দিন,এমনকি বস্তুটিকে এমনভাবে লুকান যাতে সে লুকানোর সময় না দেখতে পায়।
এই খেলাটি তাকে সাহায্য করবে তার সূক্ষ্ম সঞ্চালন দক্ষতার বিকাশে এবং তার সাথে বস্তুর স্থায়িত্ব সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরী হবে।
এটা একটা অপরিষ্কার কার্যকলাপ এবং সেই কারণে আপনার যত্ন নেওয়া উচিত যাতে ময়দার গুঁড়ো আপনার সন্তানের চোখের ভিতরে না পড়ে যায়।একটা ট্রে নিয়ে তার উপরে কিছুটা ময়দা ছড়িয়ে দিন।তারপর আপনার বাচ্চাকে তার আঙ্গুলগুলির দ্বারা সেগুলিকে অনুভব করতে দিন।এমনকি আপনি আবার তার উপরে কয়েকটি ছোট গাড়ি অথবা খেলনাও রেখে দিতে পারেন।আপনার বাচ্চা এই ক্রিয়াটি করার চেষ্টা করে তার সূক্ষ্ম সঞ্চালন দক্ষতা এবং হাত ও চোখের সমন্বয়ে।
টিকাদান ছাড়াও আপনি আপনার বাচ্চার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করতে পারেন যদি নিম্নোলিখিত লক্ষণগুলো আপনি লক্ষ্য করেন আপনার সন্তানের মধ্যে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য,ভালোবাসা এবং যত্ন এগুলির সবকটিই আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজন।তাই এইসব কিছুই তাকে প্রদান করুন এবং বিকশিত হতে ও বেড়ে উঠতে দেখুন এক অমূল্য সম্পদ রূপে।