আপনার সন্তানের এখন 7 সপ্তাহ বয়স এবং আপনি এখনও এমন অনেক বিষয় সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করে চলেছেন যেগুলি আপনার আদরের ছোট্ট সোনার সাথে সম্পর্কযুক্ত।আপনি যদি প্রথমবার মা হয়ে থাকেন তবে টন টন প্রশ্ন আপনার মনে পরিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারে আপনার 7 সপ্তাহ বয়সের শিশুর সম্পর্কে।এখানে এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব আপনার 7 সপ্তাহ বয়সের শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের সময় কী কী ঘটতে পারে সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে।
জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শিশু খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সময়ের সাথে দেখতে দেখতে আপনার ছোট্ট সোনা 7 সপ্তাহের হয়ে ওঠে।এই সময়ে আপনি আপনার শিশুর মধ্যে খুঁজে পাবেন কিছু অসাধারণ পরিবর্তন।আপনার বাচ্চার ওজন প্রতি সপ্তাহে প্রায় 200 গ্রাম করে বৃদ্ধি পেতে পারে সুতরাং সেই হিসেবে আপনার শিশুর ওজন 7 সপ্তাহ বয়সে প্রায় 2-3 পাউন্ড মত বেড়ে যেতে পারে।যাইহোক,যদি আপনার শিশু এর থেকে বেশী বা কম ওজন লাভ করে, সেক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই যেহেতু প্রতিটা শিশুর ক্ষেত্রে তাদের 7 সপ্তাহে বৃদ্ধির দৌড় পরিবর্তিত হতে পারে।
এই সময়ে আপনার ছোট্ট সোনা কোনো জিনিসকে হাতে মুঠো করে ধরতে পারে কিন্তু এই মুঠো করে ধরতে পারাটা তার ইচ্ছাকৃতের তুলনায় অনেক বেশি সহজাত এবং স্বয়ংক্রিয় হয়।আপনার শিশু এই সময় থেকে বিভিন্ন বস্তুগুলিকে ছোঁড়া শুরু করতে পারে,সুতরাং এই সময় থেকেই যেকোনো বিপজ্জনক বস্তু তার নাগালের বাইরে সরিয়ে দেওয়া দরকার। তার কাছে কথা বলার,গান করার এবং গুণ গুণ শব্দ শুরু করার এটাই হল ভালো সময়। যদিও সে এগুলির কোনো একটা তার মস্তিষ্কে বুঝতে পারে সেগুলির প্রতি একটা ধারণা তৈরি শুরু করার মাধ্যমে।আপনি লক্ষ্য করতে পারবেন যে,আপনার শিশুর দৃষ্টির ও পরিবর্তন হয়েছে।এখন থেকে সে কোনো বস্তুকে তার নজরের মধ্যে ট্র্যাক করতে সক্ষমও হতে পারে।
এখানে কিছু সাধারণ মাইলস্টোনের কথা উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনি আপনার সাত সপ্তাহের শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করতে পারেন।
মোটামুটি এই বয়স থেকেই আপনার বাচ্চার খাওয়ার ধরণেও কিছুটা উন্নতি ঘটে।কীভাবে স্তনপান করতে হয় সে ব্যাপারে আপনার বাচ্চা এখন থেকে আরো বেশি সচেতন হয়ে ওঠে এবং আরো দক্ষতার সাথে সে খাবারটি গিলেও ফেলতে পারে।সে খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট ধরণের সাথে যেটা তার প্রয়োনানুযায়ী মানানসই হবে তার সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতেও চেষ্টা করতে পারে।স্তনপান করানো একজন মা হিসেবে আপনি এটিও লক্ষ্য করতে পারেন যে,এখন থেকে আপনার স্তনে দুধের সরবরাহ আপনার সন্তানের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা অনুযায়ী হয়ে থাকতে পারে।যেহেতু আপনার বাচ্চা ক্রমশ বড়ো হয়ে উঠতে থাকে,তাই আপনার 7 সপ্তাহের শিশুর খাওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায় অথবা এখন থেকে আপনার বাচ্চাকে আরো ঘনঘন খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।আপনি যদি এই ভেবে ভয় পেয়ে থাকেন যে আপনার শিশুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবেন কিনা,তবে আপনাকে সেই চিন্তা করতে হবে না।আপনার শিশুর বেড়ে যাওয়া চাহিদার সাথে আপনার দুধের সরবরাহের সামঞ্জস্য আসতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
যাইহোক, যদি আপনার বাচ্চা বোতলে খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়, তাহলে এটা পরামর্শ দেওয়া হয় যে,প্রতিবার খাওয়ার সময় আপনি কিছুটা দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন অথবা প্রয়োজন অনুসারে তার বৃদ্ধির জন্য তাকে খাওয়ানোর সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারেন।
যদি আপনি ভাবতে থাকেন যে,রাতের বেলায় আট ঘন্টার একটা সুন্দর সুখনিদ্রা যাপন করতে পারবেন কিনা, এর উত্তর হল– এই ধাপে আপনার এই স্বপ্নটা অনেকটা দূরের বলেই মনে হতে পারে।যাইহোক,যদি আপনার শিশুকে গত 24 ঘন্টার মধ্যে ভালো ভাবে খাওয়ানো হয়ে থাকে তবে আপনার সাত সপ্তাহের শিশুর ঘুম রাত্রিবেলায় কোনো রকম বিরক্তি না ঘটিয়ে একটানা 6 ঘন্টা মত হত পারে।ভালো বিষয় হল এটিই যে,এই 7 সপ্তাহ বয়স থেকে আপনার শিশুর আরো ভালো প্রত্যাশা মত একটা ঘুমের ধরণ গড়ে উঠতে পারে অথবা আপনার সাত সপ্তাহ বয়সী শিশুর ঘুমের ধরণটি এই সময় থেকে হয়ে উঠতে পারে আরো গঠনমূলক।কিন্তু গড় হিসাব অনুযায়ী,আপনার বাচ্চা রাত্রিবেলায় একটানা 5-6 ঘন্টা ঘুমাতে পারবে।আরো ভালো ঘুমের জন্য তার ঘুমের ½-1 ঘন্টা আগে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।ঘুমের সময়ের একটা রুটিন তৈরি করাও খুব ভালো একটা ধারণা হতে পারে,যার ফলে আপনার শিশু বুঝতে পারবে যে,কোনটা তার ঘুমের সময়।যদি আপনার বাচ্চা রাত্রে জেগে ওঠে,চেষ্টা করুন তাকে তার জায়গা থেকে না তুলেই তার পিঠে হালকা করে চাপড়ে শান্ত করাতে।তাতেও যদি সে না শান্ত হয় তবে আপনি তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এই সময় থেকে আপনার শিশু নানান অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে শুরু করতে পারে।প্রস্তুত হন সেই সকল আদুরে কু কু শব্দগুলো শোনার জন্য এবং জোড়া সংবর্ধনা দিন নিজেকে এর সাথে দাঁত বিহীন অনাবিল হাসিটিকেও উপলব্ধি করতে পারার জন্য।আপনি আপনার বাচ্চার সাথে কথা বলতে বা গান গাইতে পারেন যদিও সে এগুলি সম্পর্কে তার অনুভব খুব একটা প্রকাশ করতে সক্ষম হবে না,তবে সেগুলি শুনে সে নিশ্চিতভাবে উপভোগ করবে এবং এটি তার ছোট্ট মস্তিষ্কের উদ্দীপনায় সাহায্য করবে।
প্রতিদিন একটু সময়ের জন্য হলেও তাকে পেটের উপর ভড় দিয়ে শুয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।আপনার বাচ্চাকে তার পেটের উপর ভড় দিয়ে উপুড় করে শুয়ে দিলে লক্ষ্য করবেন যে সে তার মাথাটিকে তুলে রাখার চেষ্টা করে।যদিও সে এখন আগের থেকে বেশি সময় ধরে তার মাথাটি তুলে রাখতে পারে কিন্তু তবুও তার ঘাড় এখনও যথেষ্ট শক্ত হয়ে ওঠে না।আপনি আপনার বাচ্চার অধীনে একটা নরম বালিশ অথবা কম্বল প্রতিস্থাপন করা নিশ্চিত করুন।
আপনার শিশুর কান্নার মধ্যেও অনবরত পরিবর্তন আসতে থাকে।মিউ মিউ করে তীক্ষ্ণস্বরের কান্না থেকে তারস্বরে কান্নায় রূপান্তরটিও আপনার দৃষ্টি গোচর হয়ে উঠতে পারে এবং আপনি এটাও লক্ষ্য করতে পারেন যে,বিভিন্ন কারণের জন্য তার বিভিন্ন ধরণের কান্নার উপস্থিতি।খিদের জন্য কান্না, ক্লান্তির জন্য কান্না,বিরামহীন কান্না এবং ডায়পার পাল্টানোর জন্য কান্না–প্রতিটিই হতে পারে পৃথক ধরণের।আপনি দেখতে পাবেন কিছু ক্ষেত্রে কিছু সময়ের জন্য কান্নাটা স্থিতিশীল হলেও কিছুক্ষেত্রে আবার অবিলম্বে আপনার থেকে তারা প্রতিক্রিয়া চাইতে পারে।একজন অভিভাবক হিসেবে,আপনি সবচেয়ে ভালো জানেন ও বোঝেন যে, আপনার বাচ্চা কি চায় এবং সে কিরকম অনুভব করছে এইসব কিছুই।আপনার এই অভিজ্ঞতা অনুভূতির দ্বারাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এখানে আপনার সাত সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের কিছু পরামর্শ উল্লিখিত হল
যখন আপনি আপনার 7 সপ্তাহের শিশুকে নিয়ে যাবেন তার নিয়মিত রুটিন চেক আপ করাতে তখন আপনার ডাক্তারবাবু নিম্নলিখিতগুলি করতে পারেন।
আপনার ডাক্তারবাবু নিম্নলিখিত টিকাগুলিকে আপনার সন্তানের এই বয়সে তার উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
আপনার শিশুর টিকাকরণের সময়সূচি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।
আপনার সাত সপ্তাহ বয়সীর হাত ও চোখের সমন্বয় এখন আরো বেশি ভালো হয়ে ওঠে এবং সে তার চারপাশের শব্দের প্রতিক্রিয়াও আরো ভালোভাবে করতে পারে। আপনি আপনার ছোট্ট সোনাকে বিভিন্ন খেলা ও ক্রিয়াকলাপের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পারেন তার সূক্ষ্ম অঙ্গসঞ্চালনার দক্ষতা, শ্রবণ ক্ষমতা,জ্ঞানীয় দক্ষতা এবং আরো অন্যান্য দক্ষতা বিকাশে সাহায্যের জন্য।নীচে কতকগুলি খেলা ও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের উল্লেখ করা হল যেগুলো আপনার বাচ্চার জন্য অনুকূল হতে পারে।
এই কয়েক ধরণের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা আপনি আপনার শিশুকে ব্যস্ত রাখতে পারেন তার বয়সের এই সপ্তাহগুলিতে।
প্রতিটা শিশুই উপরে উল্লিখিত মাইলস্টোনগুলি অর্জন করতে পারে তাদের নিজেদের গতিতে।যাইহোক,কিছু ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে কিছু উন্নয়নমূলক সমস্যা ও অন্যান্য জটিলতা যেগুলি আপনার সন্তানের স্বভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশকে ব্যাহত করতে পারে।সুতরাং আপনার কখনই এই সকল লক্ষণগুলিকে অবহেলা করা উচিত নয় এবং যত দ্রুত সম্ভব আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন যদি আপনি নীচে দেওয়া কোনো রকম লক্ষণও আপনার বাচ্চার মধ্যে লক্ষ্য করেন।
আপনি যদি উপরে উল্লেখিত কোনও একটি লক্ষণও আপনার বাচ্চার মধ্যে আবিষ্কার করতে পারেন তৎক্ষনাৎ ডাক্তারকে দেখান।সামান্যতম পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একটা ঘনিষ্ঠ মনযোগ আপনার ছোট্ট সোনাকে বিপদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে।