আপনার আনন্দের গুচ্ছটি অবশেষে আপনার হাতের মধ্যেই–এই অবস্থায় আপনি সম্ভবত চিন্তা করছেন যে আপনার ছোট্ট সোনাটি আপনাকে চিনতে পারে কিনা! বেশ,এই বিষয়টির প্রকৃত সত্যটি হল শিশুরা স্বভাবতই মুখগুলির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে থাকে,এবং অন্যান্য সকল জিনিসগুলির মধ্যে তারা মানুষের মুখগুলিই দেখতে পছন্দ করে থাকে।নিম্নলিখিত নিবন্ধটিতে আমরা আলচনা করব যে কখন থেকে শিশুরা তাদের মা,বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চিনতে পারে।
মায়ের চারপাশে একটি নবজাত শিশু আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে কেবল মায়ের দেহের পরিচিত ঘ্রাণ এবং কণ্ঠ্যস্বরের জন্যই নয়,সারা দিন ধরেই শিশুটি সবকিছুতেই তার মায়ের আরও অন্যান্য ভূমিকাগুলিও দেখতে পায় এবং সান্নিধ্য পায় বলে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই,একটি শিশু তার পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যের তুলনায় তার মাকে অনেক বেশি সময় ধরে পায়,আর সেই কারণেই সে সবার প্রথমে তার মাকেই চিনতে পারে।একটি শিশু তার তিন মাস বয়স পার করার সাথে বিভিন্ন মুখগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং সে অপরিচিত এবং অজানা মুখগুলি থেকে সতর্ক হয়ে যেতে পারে।সুতরাং প্রশ্ন যেটি রয়ে যায়–জন্মের সময় শিশুরা কি তাদের মাকে চেনে? বেশ,যদিও এটি এখনও বিতর্কযোগ্য,তবে একজন মা অবশ্যই প্রথম কয়েক জনের মধ্যেও বিশেষ হয়ে থাকেন যিনি নবজাত শিশুর সাথে পরিচিত হন।
কখন থেকে শিশুরা তাদের বাবাকে চিনতে শুরু করে তা বিশ্লেষণ করার মত কোনও গবেষণা এখনও হয় নি।তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে,শিশুরা তাদের মায়ের গর্ভে থাকাকালীন থেকেই তাদের বাবার কণ্ঠ্যস্বরকে চিনতে পারে এবং প্রতিক্রিয়া করতে পারে।আর এই অসাধারণ কারণটির জন্যই বহু ডাক্তার গর্ভবতী হওয়ার সময় থেকেই হবু বাবাদেরকে তাদের সন্তানের সাথে কথা বলার জন্য উচ্চ মাত্রায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।শিশুরা অস্পষ্ট বা ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে এবং কয়েক সপ্তাহ বয়স হওয়ার সাথে সাথে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চা দুই বছর বয়সে পরিণত হলে) তারা তাদের মা–বাবা উভয়ের মুখগুলিকেই প্রায় সম্ভবত চিনতে পারে।
যদিও শিশুরা কখন থেকে মানুষজন সনাক্ত করা শুরু করতে পারে তা বোঝার সাহায্যের জন্য মা–বাবার কাছে সেরকম কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই,তবে কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে একটি শিশু তার জীবনের শুরু থেকে তার মায়ের মুখটিকে যেভাবে চিনতে পারে তার তুলনায় অন্যান্য মানুষ এবং জিনিসগুলিকে চিনতে সাধারণত বেশি সময় নেয়।একটি শিশু মোটামুটি প্রথম থেকেই তার মা–বাবার মুখগুলিকে চিনতে পারে কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বন্ধু–বান্ধব আত্মীয়–স্বজনদের সাথে পরিচিত হতে বেশ কয়েক মাস অথবা এমনকি এক বছর পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকে। শিশুটি দূরে থাকা পরিজনবর্গ যাদের সাথে নিয়মিত দেখা হয় না তাদের থেকে তুলনামূলকভাবে যে সকল পরিবারের সদস্যদের সাথে তার নিয়মিত সাক্ষাৎ হয়ে থাকে তাদের সাথে অপেক্ষাকৃত দ্রুত নিজেকে পরিচিত করে ফেলে।
প্রাপ্তবয়স্করা যেভাবে সুদর্শন লোকেদের প্রতি বেশি মাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে থাকে অনুরূপভাবে সুন্দর দেখতে ব্যক্তিরা শিশুদেরকেও আরও বেশি মর্মস্পর্শী করে তোলে।আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন আপনার শিশুটি একভাবে দীর্ঘ সময় ধরে সেই সব মুখগুলির দিকেই তাকিয়ে রয়েছে যাদের মুখগুলি অন্যদের তুলনায় তার কাছে বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে।এর কারণ হল শিশুরাও বিশেষ কিছু মুখের প্রতি মুগ্ধ হয়ে ওঠে।
2017 সালে পরিচালিত একটি গবেষণায়,গবেষকরা দেখেছিলেন যে, শিশুরা সেই সকল মুখমন্ডলগুলির প্রতি অনুরক্তি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সক্ষম যেগুলি তারা দেখতে পছন্দ করে এমনকি জন্মের আগে থেকেই–এই অনুরক্তিগুলি তাদের মধ্যে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময় থেকেই উপস্থিত থাকে!সমীক্ষায় 34 সপ্তাহ ধরে গর্ভধারণকারী মহিলাদের 39 টি ভ্রূণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল– মায়ের গর্ভে অভিক্ষিপ্ত 2টি ভিজ্যুয়াল উদ্দীপনা মুখের অবয়বের প্রতিনিধিত্ব করেছিল যার মধ্যে একটি উল্টানো ছিল।এক্ষেত্রে উচ্চ মানের 4-D শব্দ তরঙ্গের দ্বারা ভ্রূণের মাথার সঞ্চালনা পর্যবেক্ষণ করা গেছে।এটি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল যে ভ্রূণটি মুখের আকারের প্রক্ষেপণটি সনাক্ত করতে তার মাথা সরিয়ে নিয়েছিল, তবে অন্যটির জন্য এটি করেনি।এটি প্রমাণ করে যে ভ্রূণটি কেবল একটি নিদর্শনকে সনাক্ত করার জন্য তার মাথাটিকে ঘুরিয়ে নেয় নি তবে যে আকারটির দ্বারা সে আকৃষ্ট হয়েছে সেটির জন্যই সে তার মাথা ঘুরিয়েছে।
আপনি হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন যে আপনার বাচ্চা আপনার অথবা আপনার পরিবারের সাহচর্যে খুশী হয়ে ওঠে এবং খেলাধূলা করে কিন্তু অপরিচিতদের সামনে একটা অস্বস্তিকর অস্থির আচরণ করতে থাকে।এর কারণ হল আপনার বাচ্চাটি পারিবারিক মুখগুলির সহিত বেশ সহজশীল এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে আর অপরিচিত মুখগুলি থেকে সতর্ক হয়ে ওঠে।অপরিচিত মুখ অথবা অচেনা ব্যক্তিগুলি আপনার শিশুকে অনুসন্ধিৎসু এবং সন্দিগ্ধ করে তুলতে পারে,যার ফলে সে অস্বাভাবিক অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে।এর অর্থ অপরিহার্যভাবে এটা দাঁড়ায় না যে সে উদ্বিগ্ন অথবা ভীত,তবে অপরিচিত মুখগুলি আপনার শিশুর অস্বস্তিবোধ বাড়িয়ে তোলে।
বাচ্চারা মানুষের সাথে বন্ধনের সহজাত গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।যদিও এটি প্রমাণ করার মতো কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই তবে এটি নিশ্চিত যে শিশুরা কোনও স্থান চিনতে পারার থেকেও খুব দ্রুত মানুষদেরকে চিনতে পারে–এটি হয় কারণ তাদের দৃষ্টিশক্তি এখনও ক্রমবিকশিত। 3-4 মাস বয়স থেকে একটি শিশু তার মা–বাবাকে চিনতে পারে এবং এরপর যত মাস যেতে থাকে তার দৃষ্টি ক্রমশ উন্নত হতে থাকে।যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার বাচ্চা তার চার মাস বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও মানুষজন এবং জায়গাগুলিকে চিনতে পারছে না,আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে সেটি উল্লেখ করতে পারেন।সময়মত চিকিৎসার হস্তক্ষেপ করার জন্য যেকোনও সংবেদনশীল দৃষ্টি সমস্যাকে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ডাক্তারবাবুর নজরে নিয়ে আসা সবচেয়ে ভাল।
আপনি যদি প্রথমবার অভিভাবক হয়ে থাকেন,কখন আপনার বাচ্চা আপনাকে চিনতে সক্ষম হবে তা আপনি নিদারুণভাবেই জানতে চাইতে পারেন।সবচেয়ে ভাল জিনিস হল যেটি তা হল একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি ধৈর্য ধরে রাখতে পারেন–কয়েক মাস অতিবাহিত করার পর,আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার আনন্দের ডালিটি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসছে!