গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ – ব্যবহার, কার্যকারীতা, সুবিধা, এবং অন্যান্য

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ – ব্যবহার, কার্যকারীতা, সুবিধা, এবং অন্যান্য

মাঝে মাঝে অনেক মহিলারা সাধারণ গর্ভনিয়ন্ত্রক গুলো ব্যবহার করতে পারেন না,কারণ আগে থেকে বোঝা যায় না এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সেগুলি থেকে হতে পারার জন্য।সেই ক্ষেত্রে তারা ভ্যাজাইনাল স্পঞ্জ বা গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন।এই গর্ভনিয়ন্ত্রকটি প্রত্যাবর্তনযোগ্য।অনেক মহিলা এটা পছন্দ করেন গর্ভধারণ রোধ করতে যেহেতু এটা সহজে ওষুধের দোকানে প্রেশক্রিপশান ছাড়াই কিনতে পাওয়া যায় এবং এর ব্যবহার করা সহজ।যাইহোক যদি এটাকে কন্ডোমের সাথে তুলনা করা হয় HIV এর মত যৌন সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে এর ভূমিকা নিয়ে তাহলে ভুল হবে কারণ যৌন সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে এটা কোন কাজ করে না।

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ কি?

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ হল ডোনাট আকৃতির জন্মনিয়ন্ত্রক স্পঞ্জ এবং আকারে প্রায় দুই ইঞ্চি হয়।এই নরম গোলাকৃতির স্পঞ্জটি পলিরিথেন ফোম দিয়ে তৈরী।এটা গর্ভসঞ্চার রোধ করে স্পার্মিসাইডাল এবং বাধা দান পদ্ধতিতে।

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জটি সঙ্গমের আগে যোনির মধ্যে গভীরভাবে প্রবেশ করান হয়।স্পঞ্জটা একটা সুরক্ষিত আবরণ তৈরী করে সারভিক্সের ওপর এবং জরায়ুতে শুক্রাণুর প্রবেশ আটকায়। প্রতিটা সারভাইকাল স্পঞ্জের সাথে কাপড়ের লুপ লাগানো থাকে যা সেটাকে টেনে বের করতে সাহায্য করে। এটা পুণঃব্যবহার যোগ্য নয়, তাই ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়।

এটা কীভাবে কাজ করে?

এটার কাজ করার পদ্ধতি ডায়াফ্রামের কাজ করার পদ্ধতি একই রকমের। স্পঞ্জটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে দুই ভাবে। স্পঞ্জ টাতে একটা খাঁজ আছে যা সারভিক্সের সঙ্গে শক্ত ভাবে আটকে থেকে শুক্রাণুর জরায়ুতে প্রবেশে বাধা দেয়। স্পঞ্জটি শুক্রাণুগুলোকে শোষণ করে নেয় সেগুলো সারভিক্সে পৌঁছানোর আগেই যেটা হল যোনি এবং জরায়ুর সংযোগকারী পথ।

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জটিতে স্পার্মিসাইড থাকে সেটা হল শুক্রাণুকে ধ্বংসকারী একটা পদার্থ।যা শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্তকরণের আগেই শুক্রাণুটিকে নষ্ট করে দেয়।সঙ্গমের আগে এটা সঠিক ভাবে ব্যবহারের পদ্ধতি মহিলাদের জানতে হবে। স্পঞ্জ টাকে জল দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে যোনির গভীরে প্রবেশ করানোর আগে। আপনি যোনির গভীরে এটাকে প্রবেশ করাবেন সঙ্গমের 24 ঘন্টা আগে।

ব্যবহারের পর এটা আপনি টেনে বের করে নিতে পারেন।আপনি এটাকে শুধুই ব্যবহার করতে পারেন অথবা কন্ডোমের সাথে ব্যবহার করতে পারেন। যাই হোক কন্ডোমের সাথে এর ব্যবহার আরো বেশী ফলদায়ক গর্ভধারন রোধ করার ক্ষেত্রে।

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের কার্যকারীতা

এখানে রইল গর্ভনিরোধক হিসাবে স্পঞ্জের কার্যকারীতা

1. গর্ভসঞ্চার রোধ করতে স্পঞ্জের কার্যকর ভূমিকা

যখন আমরা বিভিন্ন জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির কথা বলি তখন গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ বাজার চলতি গর্ভনিরোধক গুলোর মধ্যে সব থেকে ভাল একথা বলা যায় না,বিশেষত যারা একবার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।যাইহোক, সঙ্গমের আগে এটাকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী এর কার্যকারীতা বজায় রাখার জন্য। পণ্যটির ব্যবহারের নির্দেশাবলী ভালভাবে মেনে চললে এবং প্রতিবার সঙ্গমের আগে এটা ব্যবহার করলে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ অনেক বেশী কার্যকর হয়ে ওঠে।তবে সত্যি কথা বলতে কি সবসময় এটার সঠিক ব্যবহার সম্ভব হয় না।

যে সকল মহিলার কোনো সন্তান হয়নি এবং যিনি নিখুঁতভাবে স্পঞ্জ ব্যবহারের সমস্ত নিয়ম মেনেছেন তার ক্ষেত্রে এটির কার্যকারীতার হার সবথেকে বেশী হলে 91% হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা 88% এর বেশী হয় না।যে সব মহিলারা একবার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হার 80% এর কম।সেই জন্য যে সকল মহিলার সন্তান আছে তাদের জন্য এটা গর্ভনিরোধক হিসাবে খুব জনপ্রিয় বিকল্প নয়।

তাই বলা যেতে পারে প্রতি 100 জন মহিলার মধ্য 9 থেকে 11 জন গর্ভবতী হয়ে পড়তে পারেন গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করেও।

2. গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের কার্যকারীতা বৃদ্ধির উপায়

প্রতিবার সঙ্গমের করার আগে ঠিকভাবে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করলে এর কার্যকর ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।প্রতিবার সঙ্গমের আগে ধারাবাহিক ভাবে এটা ব্যবহার করলে এর কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়।অন্যান্য গর্ভনিরোধক যেমন গর্ভনিরোধক পিল বা পুরুষদের ব্যবহার্য্য কন্ডোমের সঙ্গে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করলে অনেক বেশী ফল পাওয়া যায়।

আর একটা উপায় হল যদি আপনার সাথী যোনির ভিতরে বীর্য না ফেলে সেটাকে বাইরে বের করে নেন। সবথেকে ভাল হল পুরুষ কন্ডোম এবং স্পঞ্জ একসাথে ব্যবহার করা এটা যৌন সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

3. স্পঞ্জটা কি STD’s প্রতিরোধ করে?

স্পঞ্জ STD’s প্রতিরোধ করতে পারে না।উল্টোদিকে শুধুমাত্র স্পঞ্জের ব্যবহার আপনাকে HIV এর মত STD’s এর সম্ভবনা বাড়িয়ে দেবে।সহজে স্পার্মিসাইডএর কার্যকর ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় স্পার্মিসাইড যেটা স্পঞ্জের ওপর আস্তরণ হিসাবে থাকে তাতে নোনোজাইনল-9,নামে একটি রাসায়নিক থাকে যা যোনির গাত্রে জ্বলনের সৃষ্টি করে ফলে এটা অনেক বেশী ভেদ্য হয়ে ওঠে তাই STD এর জীবাণুগুলো সহজেই যোনির মধ্য দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। তাই সবথেকে ভাল নিয়মিত STD এর পরীক্ষা করানো।

কীভাবে স্পঞ্জটি ব্যবহার করতে হয়

জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহারের পদ্ধতিটি কষ্টদায়ক নয়।যদি আপনি ভাল ভাবে অভ্যাস করেন তাহলে স্পঞ্জটা লাগানো খুবই সহজ।স্পঞ্জ ঢোকানোটা অনেকটা ট্যাম্পুন প্রবেশ করানোর মত।

1. গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ প্রবেশ করানো

স্পঞ্জ ব্যবহারের সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।

  • স্পঞ্জ লাগানোর আগে হাত ভাল করে সাবান আর জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  • স্পঞ্জের মোড়ক খুলে নেবার পর সেটাকে সামান্য জল দিয়ে ভিজিয়ে নরম করে নিতে হবে।
  • স্পঞ্জটাকে চিপতে থাকুন কয়েকবার যতক্ষণ না এটা ফোমের মত হয়ে যায়।পুরো স্পঞ্জটাই ভিজে থাকতে হবে তবেই স্পার্মিসাইড কাজ করবে।
  • খেয়াল রাখবেন যেন স্পঞ্জটা শুকানো অবস্থায় চিপবেন না
  • ইন্ডেন্টাড দিকটা ওপরের দিকে থাকে। এবার ধার দুটোকে ধরে এক সাথে আনুন যাতে স্পঞ্জটা সরু লম্বা মত হবেইন্ডেন্টাড দিকটা দেহের সামনের দিকে থাকবে আর স্পঞ্জের লুপ অংশটা দেহের পিছনের দিকে মুখ করে থাকবে।আপনি দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে আরামে চেয়ারে বসুন। আপনি স্পঞ্জটি প্রবেশ করাতে পারেন শুয়ে পড়ে বা চেয়ারের ওপর এক পা তুলে দিয়ে এক পায়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে থেকে।
  • আপনার আঙ্গুলের সাহায্যে এটাকে যোনির গভীরে প্রবেশ করান। যতটা পারেন ওপরের দিকে ঠেলে দিন।এরপর ছেড়ে দিন স্পঞ্জটা আপনা থেকে খুলে যাবে এবং এটা শক্ত ভাবে সারভিক্স কে আচ্ছদিত করে দেবে।
  • আপনি আঙ্গুল দিয়ে স্পঞ্জটার ধার গুলো ঠেলে ঠেলে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এটা সারভিক্সের পুরটাতেই আটকেছে।এটাও দেখুন লুপটা স্পঞ্জের নিচেই আছে।

প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি মনে রাখার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। প্রতিটা বিষয়ই পণ্যগুলির প্যাকে ভালভাবে দেওয়া থাকে। ওই নির্দেশগুলো ভালভাবে মেনে চললেই আপনি স্পঞ্জটির ব্যবহার সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা জানতে পারবেন।

2.কখন একজন মহিলা গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ প্রবেশ করাবেন?

আপনি স্পার্মিসাইড সঙ্গম করার 24 ঘন্টা আগে স্পঞ্জটি লাগাবেন।স্পঞ্জটার স্পার্মিসাইড জলের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে এবং যোনিতে প্রবেশ করার পর পরই কাজ শুরু করে দেয়।তার ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটি যৌন সঙ্গমের অনেক আগেই কাজ শুরু করে দেয়। যোনিতে প্রবেশ করানোর পর থেকে পরবর্তী 24 ঘন্টায় আপনি বিরতি ছাড়াই যতবার ইচ্ছা সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারেন।ওই সময়ে আপনাকে স্পঞ্জটা বদলাতে হবে না।

3.কতক্ষণ পর্যন্ত আপনি স্পঞ্জটাকে আপনার যোনির ভিতরে রাখতে পারেন?

আপনি যৌন সঙ্গম করার পর থেকে কম করে 6 ঘন্টা রাখতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন সেটা যেন কখনই 30 ঘন্টার বেশী না হয়। 30 ঘন্টার মধ্যে কখন খুলতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই,তবে অবশ্যই সঙ্গম করার 6 ঘন্টার পর খুলবেন তাতে আপনি অনেক বেশী সুরক্ষিত থাকবেন।

4. গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ কীভাবে অপসারণ করবেন

আপনার হাত ভাল করে ধুয়ে নিয়ে একটা আঙ্গুল আপনার যোনিতে প্রবেশ করিয়ে দিন এবং স্পঞ্জ এর লুপটাকে ধরুন। এরপর লুপটাকে ধরে আস্তে আস্তে স্পঞ্জটাকে যোনির বাইরে আনুন। যদি আপনি লুপটা খুঁজে না পান তাহলে স্পঞ্জ টাকে শক্ত করে ধরে ধীরে ধীরে বাইরে বার করুন।স্পঞ্জ অবধি পৌঁছাতে না পারেন তাহলে ঠেলা বা ধাক্কা দিন আপনার যোনির পেশীর গুলোর সাহায্যে, যাতে আপনার আঙ্গুল স্পঞ্জ অবধি পৌঁছতে পারে। এটাকে নোংরা ফেলার বিনে ফেলে দিন কখনই ফ্ল্যাশ করবেন না।

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ কতটা সুরক্ষিত

  • সাধারণত গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার সুরক্ষিত তবে কোনো মহিলার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
  • অনেক মহিলা যোনিতে আঙ্গুল প্রবেশ করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।
  • অনেক ক্ষেত্রে স্পঞ্জটাকে যোনির ভিতরে ঠিকমত প্রবেশ করাতে পারেন না।
  • ঋতুস্রাব চলাকালীন স্পঞ্জ এর ব্যবহার এড়াতে চান অনেকে।
  • সুরক্ষিত ব্যবহার করার জন্য কোন সমস্যা হলে সবার আগে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

স্পঞ্জ ব্যবহারের ঝুঁকিগুলো কি

যদি আপনার নিম্নলিখিত শারীরিক সমস্যাগুলো থাকে, তাহলে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার এড়িয়ে যান।

  • যদি আপনার পলিরিথেন,স্পার্মিসাইড, সালফেটে অ্যালার্জি থাকে।
  • যদি আপনার চিকিৎসার ইতিহাসে TSS (টক্সিক শক সিনড্রোম) থাকে।
  • যদি সাম্প্রতিক সময়ে সন্তানের জন্ম, গর্ভস্রাব বা গর্ভপাত হয়ে থাকে।
  • যদি আপনি যোনির সংক্রমণে ভোগেন।
  • যদি যোনি দিয়ে কোনোরকম রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।

এছাড়া স্পঞ্জ ব্যবহার করার সময় যদি নিচের লক্ষণ গুলো দেখতে পান তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্পঞ্জ ব্যবহার বন্ধ করুন এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

  • অপ্রত্যাশিত তীব্র জ্বর
  • ডায়েরিয়া
  • বমি
  • রৌদ্রে পুরে যাওয়ার(sunburn) মত লালচে ভাব সাথে জ্বালা ।
  • গলায় ব্যাথা বা জ্বালা
  • সন্ধি এবং পেশীতে কালশিটে
  • ঝিমুনি এবং দুর্বলতা

জন্ম নিয়ন্ত্রক স্পঞ্জের সুবিধাগুলো

অনেক মহিলা গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করে থাকেন নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পান বলে।

  • গর্ভনিরোধক স্পঞ্জগুলির খরচ কম এবং এটা আকৃতিতে ছোটো হবার জন্য পার্স বা পকেটে করে নিয়ে যাওয়া যায়।
  • যদি সঠিক ভাবে আটকানো হয় তাহলে আপনি বা আপনার সঙ্গী কেউ কিছু অনুভব করবেন না।
  • এটা মহিলাদের স্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণে প্রভাব ফেলে না।
  • আপনি যখন আপনার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তখনও এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
  • এটা প্রেসক্রিপশান ছাড়াও যেকোনো ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।
  • আপনি কোনো অসুবিধা ছাড়াই অনলাইনে এটা কিনতে পারেন।
  • এটা ব্যবহার করতে ডাক্তারের প্রয়োজন হয় না।এটা লাগানোর জন্য কোন অস্ত্রোপচরের দরকার হয় না। যিনি ব্যবহার করবেন তিনি নিজে নিজেই এটা আটকাতে পারবেন।
  • এটা আপনাকে 24 ঘন্টা পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়।
  • এই গর্ভনিরোধক স্পঞ্জটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকে যেহেতু এটাকে সঙ্গমের অনেক আগেই যোনির মধ্যে আটকানো হয়ে যায় এবং সঙ্গমের 30 ঘন্টা পর আপনি খুলতে পারেন।
  • স্পঞ্জটা ব্যবহার করা খুব সহজ,এতে আপনি বা আপনার সঙ্গী কেউই কিছু অতিরিক্ত অনুভব করতে পারে না।
  • এটা বন্ধ করাও ব্যবহার শুরু করার মতই সহজ।যদি আপনি গর্ভবতী হতে চান তাহলে সঙ্গমের আগে এটাকে লাগাবেন না।
  • আপনার যোনিতে স্পঞ্জটা আটকানোর পর 24 ঘন্টা পর্যন্ত যতবার ইচ্ছা সঙ্গম করুন স্পঞ্জটাকে বদল না করেই।

জন্ম নিয়ন্ত্রক স্পঞ্জের অসুবিধাগুলো

অন্যান্য গর্ভনিরোধক গুলোর মত স্পঞ্জেরও কতগুলো অসুবিধা আছে।যদিও বেশীরভাগ মহিলা এটাকে সুরক্ষিত একটি গর্ভনিরোধক বলে মনে করেন তবে কেউ কেউ গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার এবং অন্যান্য অসুবিধাগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন।

  • অনেক মহিলা গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ যোনির ভিতর আটকাতে গিয়ে অসুবিধার সম্মূখীন হয়েছেন।এটা ব্যবহারের জন্য একটু রীতিমত অভ্যাসের প্রয়োজন।
  • মাঝে মাঝে স্পঞ্জের লুপটা ভেঙে যায় স্পঞ্জটাকে যোনি থেকে বের করার সময় মাঝ পথেই। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রয়োজন পরে বাকি অংশটা কে বের করার জন্য।
  • কখন কখন স্পার্মিসাইড যোনিতে জ্বলন বা চুলকানির সৃষ্টি করে।
  • কখনওবা আপনার যৌনসঙ্গমের আনন্দ নষ্ট হয়ে যায় যখন যোনিতে ঢোকানোর আগেই স্পঞ্জটা ফোমে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
  • এর কার্যকারিতা নির্ভর করে সঠিক ভাবে এটাকে লাগানোর ওপর আপনার সঙ্গমের আগে। প্রতিবার সঠিক ভাবে আটকানো সম্ভব হয় না।তাই আপনি এর কার্যকারিতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারেন না।
  • একটানা স্পঞ্জ এর ব্যবহারের ফলে অনেক সময় মহিলারা শুষ্কতা অনুভব করেন সঙ্গমের সময় যেহেতু স্পঞ্জটা যোনির তরল শুষে নেয়।
  • স্পঞ্জটাকে একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা যায় না।
  • আপনাকে প্রতিবার সঙ্গমের জন্যে বার বার নতুন স্পঞ্জ লাগাতে হবে।এই পরিকল্পনা সব সময় করা যায় না,ফলে এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
  • এটাকে সঙ্গম করার 6 ঘন্টার পর খুলতে হয় আবার এটাকে আপনি 30 ঘন্টার বেশী যোনির ভিতর রাখতে পারেন না।
  • স্পঞ্জটি আপনাকে যৌন সংক্রামক ব্যাধিগুলো থেকে সুরক্ষা দেয় না।
  • একটানা স্পঞ্জটাকে ব্যবহার করলে আপনার HIV বা এই জাতীয় অন্যান্য সংক্রমণ হবার সম্ভবনা বেড়ে যায়।কারণ এতে যে স্পার্মিসাইড থাকে সেগুলো যোনির গাত্রে জ্বলন বা চুলকানির সৃষ্টি করে ফলে এটা STD জীবাণুগুলি প্রবেশে সহায়তা করে।
  • অনেক মহিলার নোনাজাইনল-9 যা স্পার্মিসাইডে থাকে তাতে অ্যালার্জি হয় ফলে অস্বস্তি এবং চুলকানি হয়।
  • যে সব মহিলা গর্ভনিরোধক হিসাবে স্পঞ্জ ব্যবহার করেন তারা অনেক সময় একটি ভয়াবহ অসুখ TSS (টক্সিক শক সিন্ড্রোমের) দ্বারা আক্রান্ত হন।
  • স্পঞ্জের স্পার্মিসাইডের স্বাদ যদি গ্রহণ করেন তবে এটা অত্যন্ত বিশ্রী।

কোথায় এটি আপনি কিনতে পারবেন

স্পার্মিসাইড স্পঞ্জ আপনি কিনতে পারেন যেকোন ওষুধের দোকানে কোনোরকম প্রেসক্রিপশান ছাড়াই।গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ অনলাইনেও সহজলভ্য।

গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের দাম নির্ভর করে আপনি কোথায় থাকেন এবং কোনখান থেকে আপনি এটা কিনছেন তার ওপর। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আজকের দিনে চালু ভাল ব্র্যান্ডের গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের দাম আমেরিকাতে 15 ডলার। আবার বিভিন্ন কমিউনিটি হেলথ সেন্টার বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এগুলোকে বিনা পয়সায় বা স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়।

অতি অবশ্যই গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ নিয়মিত এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে এর কার্যকর ক্ষমতার সুফল সর্বাধিক বেশী পাওয়া যায় এবং এটা ভরসাযোগ্য জন্ম নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি হয়ে ওঠে।পণ্যটির সংশ্লিষ্ট নির্দেশাবলীগুলো আপনাকে স্পঞ্জটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।বারবার অভ্যাস করলে খুব সহজেই ঠিকমত ব্যবহার শিখে যাবেন। আপনার যদি এর ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থাকে তবে অন্যান্য অপেক্ষাকৃত সহজ এবং ভরসাযোগ্য গর্ভনিরোধক পদ্ধতি যেমন নানা ধরনের ইমপ্ল্যান্ট বা IUDs অবলম্বণ করুনযেকোনো অবস্থাতেই পুরুষ কন্ডোমের সাথে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ সব থেকে উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা গর্ভসঞ্চার রোধের ক্ষেত্রে এবং সাথে সাথে STD’s এর প্রতিরোধে।