In this Article
গর্ভাবস্থা হল এমন একটা সময় যখন আপনার দৃষ্টিপাত করা উচিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যের উপর।আপনার সন্তানের প্রতিপালনের জন্য আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টির সরোবরাহের জন্য একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করা হল সবচেয়ে ভাল উপায়।এখানে এমন কিছু নির্দিষ্ট খাবারের উল্লেখ করা হল যেগুলি এই সময়ে আরও বেশী করে খাওয়া উচিত যখন অন্য কয়েকটি খাবারকে সম্পূর্ণ রূপেই এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।মা এবং সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের উপকারিতার জন্য গর্ভভবতী মায়েদের খাদ্য-তালিকায় ড্রাই ফ্রুটের উল্লেখ সুপারিশ করা হয়।
গর্ভবতী অবস্থায় ড্রাই ফ্রুট খাওয়া কি নিরাপদ?
ড্রাই ফ্রুট হল ভিটামিন,খনিজ,ফাইবার বা তন্তু এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের ভাণ্ডার ঘর,যা সেগুলিকে প্রত্যাশিত মায়েদের কাছে অপরিহার্য করে তোলে।এই বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য গর্ভাবস্থা চলাকালীন সময়ে এগুলির জন্য খরচকে নিরাপদ করে তোলে কিন্তু অন্য সব কিছুর মতই প্রতিদিন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এর পরিমাণের উপর সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে থাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন-গুলি যেমন-B1-B9, C, K, E, এবং H.এগুলি আবার সহজেই ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে পারে যা গর্ভবতীকালীন সময়ে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
গর্ভধারণের সময় ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার উপকারিতা-গুলি কি
ক্যালশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম,জিঙ্ক,সিলেনিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই সব কিছুই ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে পাওয়া যায়।এগুলি ক্ষুধা নিবারণের ক্ষেত্রেও ভীষণভাবে ভাল যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটা নিখুঁত জলখাবার হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।
- খাদ্যতালিকাগত তন্তুতে সমৃদ্ধ ড্রাই ফ্রুট কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধে ভীষণভাবে সাহায্যকারী যা গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে সর্বনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে।এই কোষ্ঠকাঠিণ্যের কারণ হল হরমোনের পরিবর্তন কিন্তু আপনি এটির মোকাবিলা করতে পারেন উচ্চ তন্তু যুক্ত খাবারের সহযোগে যা আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় কিছু পরিমাণ ড্রাই ফ্রুট সংযোজনের দ্বারা পেতে পারেন।
- একটা স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হল আয়রণ এবং ড্রাই ফ্রুট যেমন শুকনো ডুমুর এবং খেজুর যা আপনার আয়রণের নিত্য প্রয়োজনীয়তার পূরণে সাহায্য করতে পারে।
- ড্রাই ফ্রুট আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন A সরবরাহ করে যা আপনার সন্তানের দাঁত ও হাড়ের বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- আবার ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে ভিটামিন C ও পাওয়া যায় যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী আয়রণ শোষণের সময় সাহায্যে করে।
- ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেশী নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।
- ড্রাই ফ্রুটে বর্তমান ম্যাগনেসিয়াম আপনার সন্তানের হাড় ও স্নায়ুর বিকাশে যথাযথ সাহায্য করে।
- ড্রাই ফ্রুটের প্রাকৃতিক মিষ্টতা সহজেই হজম হয়ে যেতে পারে এবং আপনার দেহে ভাল পরিমাণে শক্তির সরবরাহ করে।
- ড্রাই ফ্রুট যেমন আলুবোখারা এবং খেজুর জরায়ুর পেশী শক্তিশালী করার জন্য পরিচিত যা মসৃণভাবে প্রসব ঘটাতে সাহায্য করে।এছাড়াও এগুলি প্রসব-পরবর্তীকালীন রক্তপাতের সম্ভাবনা হ্রাস করে।
- এটা বিশ্বাস করা হয় যে,গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে ড্রাই ফ্রুট খেলে গর্ভস্থ শিশুর অ্যাজমা এবং ঘ্রাণকাশি হওয়ার ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে দেয়।
- ড্রাই ফ্রুট মধ্যস্থ ভিটামিন E শিশুদের কোষ এবং ফুসফুসের বিকাশে সাহায্য করে।এই ভিটামিন-টি আবার আপনার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আপনার সন্তানকে অ্যাজমা হওয়ার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার কোনো ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
যখন সংযমে খাওয়া হয়,গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে খরচের জন্য ড্রাই ফ্রুট হল সম্পূর্ণ রূপে সুরক্ষিত।যাইহোক,যদি আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রাই ফ্রুট খান আপনি নানান শারীরিক সমস্যার ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন যেমন-
- গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল বা পাকতন্ত্র জনিত সমস্যা যেমন গ্যাস,অম্বল,পেট ফুলে যাওয়া এবং ডায়রিয়া
- ড্রাই ফ্রুটগুলি প্রচুর ক্যালোরি সমৃদ্ধ হয় যা আপনার অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
- ড্রাই ফ্রুটে থাকে প্রাকৃতিক শর্করা যেমন ফ্রুকটোজ, সেগুলি দন্ত-ক্ষয়ের কারণ হতে পারে যদি আপনি সঠিকভাবে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দাঁত-গুলি ভালোভাব পরিষ্কার না করেন।
- কিছু ড্রাই ফ্রুট যেমন কিশমিশে আছে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বা সূচক যা শক্তির প্রবাহ আনে যখন রক্তের শর্করার বৃদ্ধি ঘটে এবং তখনই আবার দ্রুত শর্করার ঘাটতি ঘটে অবসাদ দেখা দেয়।
- কিছু ড্রাই ফ্রুটে বিশেষত ড্রায়েড বা শুকনো বাদাম থেকে এলার্জি প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে যা নজর এড়ানো যাবে না।
সাবধানতা-গুলি
স্বাস্থ্যবান হিসাবে তাদের মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে,গর্ভাবস্থা কালীন সময়ে ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার সময় তাদের কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
- কারখানায় প্রস্তুত ড্রাই ফ্রুটের তুলনায় রোদে শুকনো করা গুলিই নির্বাচন করুন। এই উপায়ে বিষ-গুলি এড়িয়ে চলা যাবে যেগুলি অ্যাক্রিলামাইড নামে পরিচিত, যেগুলি অতিরিক্ত সময় ধরে গরম করা খাদ্যের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।এটি একটি কার্সিনোজেন এবং স্নায়ুতন্ত্রে ও প্রজননের ক্ষেত্রে প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।
- চেক করে দেখে নেবেন যে আপনার কেনা ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে বাইরে থেকে অতিরিক্ত মিষ্টি সংযোজন করা হয়েছে কিনা। ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রাকৃতিক মিষ্টি কিন্তু কিছু ব্র্যান্ড তাও বাইরে থেকে ড্রাই ফ্রুটগুলির সাথে অতিরিক্ত মিষ্টির সংযোজন ঘটায়, এবং এগুলি অবিশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
- সাময়ের সাথে,যথেষ্ট পরিমাণে প্রিজারভেটিভ যুক্ত ড্রাই ফ্রুট এবং বাদাম পাওয়া যায়।যেগুলির মধ্যে সালফার ডাই অক্সাইড থাকতে পারে যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা এলার্জি প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।
- এই ফল-গুলিকে যে পদ্ধতিতে শুকনো করা হয় তাতে এগুলির ক্যালোরি বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।সুতরাং আপনার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন প্রতিদিন কত পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করবেন সে ব্যাপারে।
- চেষ্টা করুন নামী প্রতিষ্ঠিত দোকান থেকে জৈব এবং প্রিজারভেটিভ ছাড়া ড্রাই ফ্রুট কিনতে শুধুমাত্র ততটাই যে পরিমাণ আপনি একমাসে খেতে পারবেন।
- যদি স্থানীয় দোকান থেকে কেনেন চেক করে নিন তাতে কোনো পোকা,ময়লা এবং পচা-গলা আছে কিনা।কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি এক পিস টেস্ট করেও নিতে পারেন।
- ড্রাই ফ্রুট-গুলিকে পরিষ্কার এবং শুকনো জারের মধ্যে মজুত করে ফ্রিজের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখুন সেগুলিকে পচে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে।
কতটা ড্রাই ফ্রুট আপনি একদিনে খেতে পারেন?
ড্রাই ফ্রুট এর মধ্যে অনেক বেশী ক্যালোরি থাকে তাজা ফলের তুলনায়।তাই আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে আপনি কি খাবেন বিশেষত গর্ভবতী থাকার সময়।এটা বলা হয়ে থাকে যে আপনি দৈনিক 100গ্রামের বেশী ড্রাই ফ্রুট খাবেন না এই সময়ে।উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আপনি চার থেকে সাতটি আমন্ড,সাড়ে চার খানা আখরোট,দুটো খেজুর, আটটি পেস্তা একসাথে খেতে পারেন।এটাও আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনি ড্রাই ফ্রুট গুলো মধ্যাহ্ন ভোজের আগেই খেয়ে নিন এতে তাদের পুষ্টিকর পদার্থগুলো শররীরে বেশী করে শোষিত হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য যে ড্রাই ফ্রুটগুলি সুপারিশ করা হয়
সমস্ত ধরণার ড্রাই ফ্রুটস খাওয়া যায় যখন আপনি গর্ভবতী কিন্তু আপনি নিশ্চিত ভাবেই নীচে বলা ফল গুলিকে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় রাখবেন আপনার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে।
ড্রাই ফ্রুট | পুষ্টি পদার্থ | ক্যালরি/কাপ | কীভাবে সাহায্য করে |
আমন্ড | ক্যালশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,প্রোটিন,রাইবোফ্ল্যাবিন, ভিটামিন E | 529 |
|
শুকনো খুবানি | ফাইবার,ভিটামিন A,কপার
ভিটামিন E |
381 |
|
কিশমিশ | লোহা এবং ফাইবার | 488 |
|
আখরোট | ওমেগা 3 ফ্যাট | 720 |
|
কাজু বাদাম | ফসফরাস | 640 |
|
শুকনো আপেল | ফাইবার, পটাশিয়াম | 208 |
|
পেস্তা বাদাম | কপার বা তামা | 330 |
|
খেজুর | ফাইবার | 502 |
|
শুকনো ডুমুর | ফাইবার | 371 |
|
মটরশুঁটি | প্রোটিন | 828 |
|
শুকনো কলা | ভিটামিন C | 360 |
|
পাইন বাদাম | ভিটামিন k |
|
ড্রাই ফ্রুট খাওয়ার পরামর্শ
যদি আপনি প্রশ্ন করেন কোন ড্রাই ফ্রুট খাবেন, উত্তর নির্ভর করবে কাকে আপনি প্রশ্নটা করছেন তার উপর।এর কারণ হল নানা ভুল ধারণা এবং লোক কথা প্রচলিত আছে ড্রাই ফ্রুট বা শুকনো ফল সম্পর্কে।কাজু বাদাম, আমন্ড, খুবানি, কিশমিশ, আলুবোখরা, খেজুর, আখরোট এবং পেস্তা আপনি গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন।যেহেতু ড্রাই ফ্রুট পুষ্টিতে ভরপুর তাই এটাকে আপনি আপনার প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করুন।এখানে রইল কয়েকটি উপায় যেভাবে আপনি সেটা করতে পারে।
- বেশীরভাগ ড্রাই ফ্রুট কাঁচাই খাওয়া যায় গর্ভাবস্থার সময়,এটা একটা ভাল স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স হতে পারে যখন আপনি খুব ক্ষুধার্ত বোধ করবেন গর্ভধারণকালীন সময়ে।
- এটাকে আপনি স্যালাডের সাথে বা স্যান্ড-উইচ কিম্বা পুডিং বা কাস্টার্ড এর সাথেও খেতে পারেন।
- ড্রাই ফ্রুট মর্নিং সিকনেস কিছুদুর পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে, তাই কিছু পরিমাণ ড্রা ইফ্রুট দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন যেটি গা গোলানো,বমি বমি ভাব এবং বমির প্রবণতা কমাতে পারে।
- ড্রাই ফ্রুট এর পরিমাণ সম্পর্কে ভয় কমাবার জন্য আপনি এগুলোকে একটা সসপ্যানে নিয়ে গরম জল দিয়ে আধঘন্টা ধরে ফুটিয়ে সিরাপ তৈরী করে নিন। এইবার এই জলটা সারাদিন ধরে পান করতে পারেন।
- আপনি আপনার নিজস্ব ড্রাই ফ্রুট ক্যান্ডি বানিয়ে নিন ড্রাই ফ্রুট এর সাথে কিছুটা কুড়ানো নারেকেল মিশিয়ে সেটাকে রোল করে।এটাকে রেফ্রিজারেটারে রেখে দিন এবং দশ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন।
- কিছু ড্রাই ফ্রুট আছে যেগুলো কামড়াতে বা চিবোতে বেশ শক্ত লাগে।সেগুলোকে দশ মিনিট ফুটন্ত জলে ভিজতে দিন তারপর খান।
গর্ভাবস্থার সময়টি হল এমন এক সময় যখন আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে আপনার ভাল থাকার পাশাপাশি আপনার গর্ভস্থ শিশুকে ভাল রাখার জন্যে।আপনার খাবার পছন্দের সময় আপনি বিহ্বল হয়ে পড়বেন না।আপনাকে কি খেতে হবে আর কি খেতে হবে না এই বিষয়ে আপনার পরিবারের সদস্যরা,বন্ধুবান্ধবরা অগণিত উপদেশ দেবে।আপনি আপনার ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলে আপনার জ্ঞানবৃদ্ধি করে নাবেন কোনটা আপনার আর আপনার সন্তানের জন্য সবথেকে ভাল সেই বিষয়ে এবং সেই অনুযায়ী চলবেন।