গর্ভাবস্থায় বমি হওয়া

গর্ভাবস্থায় বমি হওয়া

গা গুলানো, বমি হওয়া এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতা- এগুলি হল গর্ভাবস্থায় প্রায়শই হয়ে থাকা স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।যদিও সকলেরই এগুলি হয় না তবে গর্ভদশায় এগুলির অভিজ্ঞতা হওয়াটা পুরোপুরি স্বাভাবিক।

গর্ভাবস্থাকালে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা

প্রাতঃকালীন অসুস্থতাটি গর্ভদশার একেবারে প্রাথমিক সংকেতগুলির একটি হয়ে থাকতে পারে এবং গর্ভদশার প্রায় 6তম সপ্তাহের মধ্যে এটি প্রথম দেখা দেয় এবং 8’ম ও 9’ম সপ্তাহে তা ভালভাবে প্রকট হতে থাকে।প্রাতঃকালীন অসুস্থতা সাধারণত 12 তম সপ্তাহের মধ্যে হ্রাস পেতে থাকে এবং সম্ভবত মোটামুটি 14 তম সপ্তাহের মধ্যে তা সম্পূর্ণ রূপে বিলীন হয়ে যায়।দিনের যেকোনও সময়েই বমি হতে পারে যেমন অনেক মহিলাই জানিয়েছেন যে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাবটি সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় যায় ভোরবেলায় যদিও অন্যরা আবার হয়ত এটিকে সারাদিন ধরেই অনুভব করতে পারেন।এর তীব্রতা এক মহিলার থেকে অন্য মহিলার ক্ষেত্রে পৃথক হতে পারে এবং বমন উদ্রেকটি কোনওরকম সতর্কতা ছাড়াই যাওয়া আসা করতে পারে।

এই অস্বস্তিজনক অনুভূতিটি ছাড়াও, প্রাতঃকালীন অসুস্থতাটি কিম্বা এমনকি হালকা ধরণের গা গুলানো বমি বমি ভাবটিও আবার আপনাকে পরিশ্রান্ত অনুভব করানোর জন্য যথেষ্ট এবং তা আপনাকে খুব দ্রুত ক্লান্ত ও অবসন্ন করে তুলতেও পারে। সমীপবর্তী প্রাতঃকালীন অসুস্থতার চিন্তায় হবু মায়েদের করুণ অবস্থা হয়ে ওঠে এবং দিনের শুরুতেই বমি করার অন্যান্য পর্যায়গুলির আতঙ্কে নিরতিশয় অপছন্দ করেন শয্যা ছেড়ে উঠতে।

গর্ভদশায় বমি হওয়াটা কি স্বাভাবিক?

যদিও প্রাতঃকালীন অসুস্থতাটি কোনওভাবেই ভীষণ আনন্দদায়ক একটি অভিজ্ঞতা নয়, তবে একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে এটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। গর্ভদশা সম্পর্কিত এই অবস্থাটি অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলাকেই প্রভাবিত করে, সময়ের সাথে সাথে এর লক্ষণ বা উপসর্গগুলি হ্রাস পাওয়ার সাথে।তবে আপনার বমি করার তীব্রতা এবং পুনরাবৃত্তির হারটি যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে, আপনার অবিলম্বে ডাক্তারের সংস্পর্শে আসা উচিত।যদি সারাদিন ধরে অবিরতভাবে কোনও মহিলা বমি করে থাকেন এবং তার ওজন হ্রাস পায়, তার মধ্যে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি দেখা দিয়ে থাকে।আবার এই অবস্থাটিকে যদি অবজ্ঞা করা হয় কিম্বা চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয় সেক্ষেত্রে তা মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের সাথে আপোস করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার কারণগুলি কি?

যদিও গর্ভাবস্থায় বমি হওয়া এবং গা গুলানো বমি বমি ভাবের জন্য কোনও একক কারণ দায়ী নয়, তবে এর মধ্যে এমন বেশ কিছু কারণ আছে যেগুলি বেশ সাধারণ এবং অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলাকে প্রভাবিত করে।গর্ভদশায় বমি হওয়ার অন্যতম একটি সাধারণ কারণ হল hCG হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।এছাড়াও আরেকটি কারণ হল পাচনতন্ত্রেরপেশীগুলিশরীরেরউচ্চমাত্রারইস্ট্রোজেনএবংপ্রজেস্টেরনগুলিরসাথেশিথিলহওয়ারকারণেহজমক্ষমতা কমতে থাকে তার ফলে বমি হতে পারে।গর্ভাবস্থা আবার মহিলাদের মধ্যে তাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে আরও বেশি সক্রিয় ও কার্যকর করে তোলে যার দরুণ আপনার চারপাশের অসহ্য গন্ধগুলিতেও প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আপনার বমি হতে থাকে।এই সময়গুলিতে আবার আপনার খাবারের প্রতি অনীহাবোধ দেখা দেওয়ার কারণে তা আপনাকে বমি বমি ভাব এবং শূণ্যতাবোধ অনুভূতবোধ হওয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

আসুন গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণগুলি বিশদ ভাবে পরীক্ষা করা যাকঃ

1.hCG এর মাত্রা বৃদ্ধিঃ গর্ভদশার প্রাথমিক পর্যায়ে, হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (hCG) হরমোন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।hCG এর উত্থান গা গুলানো বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া উভয়ের সাথে যুক্ত হতে পারে কারণ উভয় ঘটনার সময়কালও বেশ কাছাকাছিই হয়, বিশেষত বমি বমি ভাবটি ঐ একই সময়ে শীর্ষে হওয়ার কারণে।

2.একাধিক গর্ভধারণঃ যমজ কিম্বা তিনটি সন্তান গর্ভে ধারণ করার কারণে তা hCG এর মাত্রাকে উচ্চ করার ক্ষেত্রে চাপ দেয়, যা বমি বমি ভাব বা বমির প্রকোপের দিকে পরিচালিত করে।

3.ইস্ট্রোজেনঃ অন্যান্য হরমোনের মতই ইস্ট্রোজেনের মাত্রাও বেড়ে যায় বিশেষ করে গর্ভদশার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে এবং তা প্রাতঃকালীন অসুস্থতার একটি সম্ভাব্য কারণ হয়ে ওঠে।

4.ঘ্রাণ শক্তি এবং দুর্গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধিঃ সদ্য গর্ভবতী মহিলারা প্রায়শই দূর থেকে জিনিসগুলিকে ঘ্রাণ নিতে পারেন এবং সুগন্ধে অভিভূত হয়ে ওঠেন যা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কণ্ট্যরোধের অভিব্যক্তির দিকে পরিচালিত করতে পারে। গবেষণা উল্লেখ করে যে এটি ইস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রার ফলাফল হতে পারে।

5.সংবেদনশীল পাচনতন্ত্রঃ অল্প কিছু সংখ্যক মহিলাই তাদের গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে হওয়া পরিবর্তনগুলিকে নিজেদের মধ্যে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়ে থাকেন, বিশেষত যখন তাদের পাচন তন্ত্রটি সব ধরণের খাদ্য এবং সেগুলির স্বাদের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।আর তাছাড়াও অন্ত্রে উপস্থিত হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটিরিয়া বমি হওয়াকে উদ্দীপিত করে যার ফলে বমি বমি ভাব অনুভূত হয়।

6.মানসিক চাপঃ বমি হওয়া এবং গা গুলানো বমি বমি ভাবটি আবার তীব্র মানসিক চাপের পরিণতি স্বরূপও হয়ে থাকতে পারে অথবা সেটি আবার মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া বিশেষও হয়ে থাকতে পারে।যে সকল মহিলা আবার মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা হওয়ার সম্ভাবনা পোষণ করেন তাদের মধ্যে অন্যদের তুলনায় এটির অভিজ্ঞতা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

7.মায়ের বংশগতিবিদ্যা বা জিনতত্ত্বঃ যে সকল মহিলার মায়েদের প্রাতঃকালীন অসুস্থতার অভিজ্ঞতাটি হয়ে থাকে, তাদের মেয়েদের মধ্যেও সেই অভিজ্ঞোতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

8.গতি অসুস্থতার পূর্ব ইতিহাসঃ যে সকল মহিলা গতি অসুস্থতায় এবং মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় ভুগে থাকেন তাদের প্রাতঃকালীন অসুস্থতাতেও ভোগার সম্ভাবনা বেশি।

9.করপাস লুটিয়ামের অবস্থানঃ আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা সূচিত করে যে করপাস লুটিয়াম যদি ডান ডিম্বাশয়ের মধ্যে অবস্থান করে সেক্ষেত্রে বমি বমি ভাব এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতার অভিজ্ঞতাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

10.উচ্চ মাত্রায় ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থ গ্রহণঃ গর্ভধারণের পূর্বে যে সকল মহিলা উচ্চ মাত্রায় অসম্পৃক্ত ফ্যাট গ্রহণ করে থাকেন, তাদের বমি বমি ভাব এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতার অভিজ্ঞতাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এটি কি আপনার শিশুকেও প্রভাবিত করে?

হবু মায়েরা প্রায়শই চিন্তিত হয়ে ওঠেন এই ভেবে যে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া সম্ভবত তাদের শিশুদেরও প্রভাবিত করে কিন্তু সাধারণত হালকা বা কম মাত্রায় বমির প্রকোপ গর্ভে ক্রম বর্ধিত ভ্রূণের কোনও ক্ষতি করে না।তবে যদি গর্ভাবস্থার 14 তম সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরেও এই সকল উপসর্গগুলি অব্যহত থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশ যে কোনওভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে না তা নিশ্চিত করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে একবার পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করাই হল এ ব্যাপারে সবথেকে ভাল সিদ্ধান্ত।

হাইপ্রেমেসিস গ্রাভিডারাম অথবা প্রাতঃকালীন অসুস্থতার তীব্র প্রকোপ অবর্নণীয় ওজন হ্রাস এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ব্যহত হওয়ার কারণ হয়ে ওঠে তীব্র বমি হওয়ার জন্য।যখন এটি হয় সব থেকে ভাল হল ডাক্তারবাবুকে তা অবহিত করা, কারণ চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে তা আপনার গর্ভস্থ শিশুটির ক্ষতি করতে পারে।

গর্ভদশায় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া কীভাবে বন্ধ করা যেতে পারে?

গর্ভবতী মহিলাদের বমি করা কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে-এটি হল এমন একটি প্রশ্ন যা হবু মায়েদের ভোগান্তির কারণ এবং গর্ভবতী মহিলাদের এই মারাত্মক অস্বস্তি এবং বমনোদ্রেক অনুভূতিটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।এর চিকিৎসা পদ্ধতিটিকে প্রাকৃতিক এবং ওষুধের দ্বারা এই দুটি বিকল্পে বিভাজিত করা যেতে পারে, আর উভয় পদ্ধতিই পরিচালিত করার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব সুবিধাগুলির প্রাধান্য দেওয়া হয়।প্রাতঃকালীন অসুস্থতা লাঘব করতে এবং জীবনকে আরও কিছুটা সহনীয় করে তুলতে নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলি চেক করে নিনঃ

গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাবের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি

একটি আরামদায়ক রুটিন অনুসরণ করুনঃ গর্ভবতী মহিলারা ইতিমধ্যেই প্রচুর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে থাকেন, তাই সারাদিনের মধ্যে খুব বেশি জিনিস অতিরিক্ত ভাবে তাদের রুটিনে আর চাপিয়ে না দেওয়াই ভাল, সুতরাং চেষ্টা করুন আপনার সারাদিনটি একটা সুন্দর গতিতে পরিচালিত করতে।মানসিক চাপ এবং ক্লান্তিবোধ আপনার অভিজ্ঞতাটিকে আরও খারাপ করে তুলবে, অতএব কাজে অব্যহতি টেনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ আপনার নিজেকে এ ব্যাপারে সহায়তা করতে বাধ্য।

এড়িয়ে চলুনঃ রন্ধনশালাকে পারতপক্ষে

কিছু শুকনো বিস্কুট কিম্বা কুকিজ চিবানোর মধ্য দিয়ে আপনার দিনের সূচনাটি করুন এবং আপনার দৈনিক রুটিন মাফিক দিন যাপন শুরু করার আগে আরও কিছুটা সময় বিছানায় বিশ্রাম নিয়ে অতিবাহিত করুন।বারংবার উঠে রন্ধনশালার দিকে গমন করাকে এড়াতে আপনার শয্যার পাশেই কিছু তাজা টোস্ট জাতীয় কিম্বা বিস্কুট মজুত রাখুন।গর্ভবতী হন কিম্বা না হন মহিলাদের রন্ধনশালার বাইরে দেখতে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব, কিন্তু রন্ধনশালা কিম্বা খবারের গন্ধ যদি তাদের বমি বমি ভাবের প্রকোপটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, সেক্ষেত্রে বাইরের সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন(একজন রাঁধুনি এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল বিকল্প হতে পারে)।

সেগুলিই সেবন করুন যেগুলিতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনঃ

যতক্ষণ আপনি খাবারটি পরিমাপ পুষ্টি মত কিন্তু অল্প পরিমাণে সেবন করতে সক্ষম হবেন আপনার গর্ভস্থ শিশুটিও ততটাই সুরক্ষিত এবং নিরাপদ থাকবে।তেল-মশলা সমৃদ্ধ ফ্যাট যুক্ত খাবারগুলিকে এড়িয়ে চলুন, এগুলি আপনার বর্তমান অবস্থাটিকে আরও খারা্পের দিকে পরিচালিত করতে পারে।অল্প পরিমাণে খান কিন্তু বারে বারে।আপনি শীঘ্রই শিখে যাবেন যে, কোন ধরণের খাদ্যগুলি আপনার জন্য উপযুক্ত এবং সেগুলি যদিও অন্যদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নাও হতে পারে।ভিটামিন B-6 সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি যেমন ব্রাউন রাইস, মিষ্টি আলু, কলা, ভুট্টা, মুরগি(যদি আপনি অনিরামিশাষী হন), এবং আখরোটগুলিকে উচ্চ মাত্রায় সুপারিশ করা হয়।এগুলি সেবন করা পরিপূরকগুলি সেবন করার থেকে ভাল যা বমি হওয়াকে প্ররোচিত করবে যদিও বমি বমি ভাবটি কমে যাবে।

হাইড্রেট থাকুনঃ

আপনার দেহকে হাইড্রেট রাখতে নিয়মিত ব্যবধানে জল পান করুন কারণ এটি প্রাতঃকালীন অসুস্থতার সাথে জড়িত উপসর্গগুলি যেমন বদহজম, হৃদয় জ্বলন, অম্লতা থেকে মুক্তি আনার জন্যও পরিচিত।আবার জলের মধ্যে তাজা লেবুর রসের অতিরিক্ত সংযোজনটিও বমনোদ্রেক অনুভূতিটিকে লাঘব করতে সহায়তা করে, সেরকমই বার্লি জল পান করলেও একই সহায়তাটি হয়ে থাকে।আবার কোলা বা কার্বনযুক্ত পানীয়, কফী এবং চায়ের মত পানীয়গুলি এই অবস্থায় আপনার তরল গ্রহণের অংশ হিসেবে বিবেচিত নয় কারণ যদিও এগুলি মুত্রবর্ধক হয়ে থাকে।

যোগা অনুশীলনের চেষ্টা করুনঃ

যোগা নিদ্রা (গভীর শিথিলকরণ) এবং শবাসন (শিথিলকরণের ভঙ্গি) এর মতো যোগাগুলির সহজ শিথিলকরণ কৌশলগুলি অনুশীলনে সহায়তা করতে একজন প্রশিক্ষিত প্রসবপূর্ব যোগা প্রশিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি আপনার সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থায জুড়ে যোগব্যায়াম অনুশীলন করতে পারেন কারণ এটি আপনাকে আপনার দেহ এবং মনকে প্রশান্ত রাখতে এবং আপনার মানসিক চাপকে সর্বনিম্ন মাত্রায় রাখতে সহায়তা করবে।

বিশুদ্ধ সুঘ্রাণ গ্রহণ করুনঃ

বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট গন্ধ বা সুগন্ধও আপনার পেটের ভিতর গুলিয়ে আপনাকে শীঘ্রই আপনার নিকটস্থ স্নানাগারের দিকে ছুটতে বাধ্য করে তুলতে পারে, আর সেই কারণেই মুহূর্তে সতেজতা ফিরে পেতে আপনার হাত ব্যাগে সব সময় ছোট একটি বোতলে তাজা লেবুর নির্যাস রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।এটি বিশেষ করে সেই সময়গুলির জন্য ভীষণ ভাবে সহায়ক হয়ে ওঠে যখন আপনি কোনও ভীড় জায়গার মধ্যে থাকেন কিম্বা নিকটস্থ মুক্ত স্থানে ছুটে যেতে অক্ষম হন।

আদা- আপনার সুপার খাদ্য করে তুলুনঃ

যুগ যুগ ধরে পেটকে প্রশমিত রাখতে এবং প্রাতঃকালীন অসুস্থতা, বমি হওয়া এবং বমি বমি ভাবনকে হ্রাস করার ক্ষেত্রে আদা আদর্শ এবং গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাবের ক্ষেত্রে সেরা ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মধ্যে এটি একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত। আপনার প্রতিদিনের চায়ের কাপে কিম্বা এক গ্লাস গরম জলের মধ্যে পাতলা এক কুঁচি আদা আপনি যোগ করতে পারেন।আদার ক্যান্ডি, জিঞ্জারব্রেড, অথবা এমনকি আবার স্যুপের মধ্যেও আদা যোগ করার মত নানা ভাবে ব্যবহারের দ্বারা এটিকে আপনার মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতার ক্ষেত্রে সহায়ক করে তোলা যেতে পারে।তবে আপনার ডাক্তারবাবু যদি রক্ত জমাট বাধার কারণে আপনাকে অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধগুলি নির্ধারণ করে থাকেন সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে আদা সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয় না।

টক জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুনঃ

অনেক মহিলাই আবার তাদের বমি বমি ভাবে স্বস্তি আনতে এবং সেটিকে কাটিয়ে ওঠার জন্য লেবু, তেঁতুল, আমলকি এবং পুদিনার মত টক জাতীয় খাদ্যগুলির খোঁজ করেন।সাধারণ লেবু জল আপনার এই সকল উপসর্গগুলির ক্ষেত্রে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে যখন আবার তেঁতুলের রস কিম্বা চাটনিটিও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বিকল্প।পুদিনার সতেজ পল্লবও এক্ষেত্রে বেশ সতেজদায়ক হয়ে উঠতে পারে অতএব বিশেষ এক কঠিণ সকালকে কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু পুদিনা পাতা রেফ্রিজেরেটরের মধ্যে সংগৃহীত রাখুন।

শুয়ে থাকুনঃ

প্রাতঃকালীন অসুস্থতাকে কাটিয়ে ওঠার এবং বমি করতে করতে আপনার সকালের সূচনা করাকে এড়ানোর আরেকটি সহজ সমাধান হল বিছানায় শুয়ে থাকা।বমি বমি ভাবের উদ্রেক যখন হয় ডাক্তাররা বিছানায় শুয়ে থাকারই পরামর্শ দেন।আপনি চাইলে চোখের উপর গাঢ় ঠুলি রাখতে পারেন এবং সূর্যালোককে ঘরের বাইরেই রাখতে ঘরের জানালা দরজাগুলিতে মোটা পর্দা টাঙিয়ে দিতে পারেন।বিশ্রাম আপনার ক্ষেত্রে বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারে এবং খুব বেশি পরিশ্রম ছাড়াই আপনার সমস্যা সমাধানে আপনাকে সহায়তা করতে পারে।

অ্যারোমাথেরাপির সাথে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানঃ

বমি বমি ভাবের নিবৃত্তিতে পাতি লেবু, কমলা এবং পুদিনার মত গন্ধগুলি দুর্দান্ত।কিছুর উপর কয়েক ফোঁটা অপরিহার্য তেল ছিঁটিয়ে নিয়ে কিছু সময়ের জন্য সেটির সুবাস নিন।আপনি আবার বাইরে যাওয়ার সময় আপনার রুমালের মধ্যেও কয়েক ফোঁটা ছিটিয়ে নিয়ে সেটি সাথে করে নিয়ে বেরোতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় বমি হওয়ার জন্য ডাক্তারি চিকিৎসা

আপনার বমির প্রকোপ এবং গা গুলানো বমি বমি ভাবটি যদি ক্রমশই আরও তীব্র হয়ে উঠতে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু আপনার জন্য কিছু ওষুধ নির্ধারণ করতে পারেন যা আপনার বমি বমি ভাবটিকে হ্রাস করবে এবং খাদ্য ও তরলকে আপনার দেহে ধরে রাখতে সহায়তা করবে।এই সকল ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • পেটের অ্যাসিড শোষণে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টাসিড।
  • খাদ্যকে অন্ত্রের মধ্যে ঠেলে পাঠাবার জন্য পেটকে সহায়তা করতে মেটোক্লোপ্রামাইড।
  • তীব্র বমি হওয়া এবং বমি বমি ভাবের মত লক্ষণগুলির জন্য ফেনোথিয়াজিন
  • গতির অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাবকে দূরে রাখতে অ্যান্টিহিস্টামিন।
  • প্রাতঃকালীন অসুস্থতায় স্বস্তি আনার ক্ষেত্রে ভিটামিন B-6 এর পরিপূরকগুলিও আবার ভীষণ মাত্রায় সহায়ক।

সতর্কতামূলক বাণীঃ উপরে উল্লিখিত ওষুধগুলি কেবলমাত্র আপনার ডাক্তারবাবুর নির্দেশ পাওয়ার পরেই একমাত্র ব্যবহারযোগ্য।

কখন আপনার ডাক্তার ডাকা উচিত?

নিম্নলিখিত কোনও উপসর্গ আপনার মধ্যে দেখা দিলেই আপনার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজনঃ

  • হালকা মাথা ঝিমঝিম বা মাথা ঘোরা
  • জ্বর
  • অনিয়মিত প্রস্রাব ত্যাগ
  • পেট ব্যথা
  • মাঝে মধ্যেই মাথা ব্যথা
  • পেটে খাবার ধরে রাখতে অক্ষমতা

আপনার অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠার আগেই ডাক্তার দেখান।গুরুতর প্রাতঃকালীন অসুস্থতার ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে এবং ডিহাইড্রেশনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আবার ইন্ট্রাভেনাস(শিরায় প্রদানের জন্য) তরলের প্রয়োজন হতে পারে।

একজন প্রত্যাশী মা হওয়ার দরুণ আপনি একদম ভয় পাবেন না বা চিন্তা করবেন না কারণ গর্ভাবস্থায় এই প্রাতঃকালীন অসুস্থতার বিরুদ্ধে লিপ্ত সংগ্রামে আপনি কেবল একাই নন এবং প্রায় 70% এর বেশি মহিলাই তাদের গর্ভদশায় গা গুলানো বমি বমি ভাব ও বমি হওয়ার মত অভিজ্ঞতাগুলি পেয়ে থাকেন।শুধু মাত্র ধৈর্য ধরুন, সংযমের সাথে থাকুন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আপনার এই সুন্দর মুহূর্তের যাত্রাপথটিকে আরও সুগম করে তুলুন।