In this Article
সাধারণত গর্ভাবস্থাকালীন যে কঠিন প্রশ্নটি প্রায়শই মনে ঘোরাফেরা করে সেটি হল গর্ভধারণকালীন সময়ে সঙ্গম করা কি নিরাপদ নাকি নয়।যাইহোক,আপনার যদি প্রথম ত্রৈমাসিকে কোনরকম সমস্যা ছাড়াই স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা থাকে,তবে কেন থেমে আছেন?আপনার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক জুড়েও সঙ্গম আনন্দময় অনুভূতিতে পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা নিরাপদ যেহেতু এক্ষেত্রে ভ্রূণের কোন ক্ষতি হয় না।এবার আসা যাক দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা নিয়ে কিছু প্রচলিত এবং ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আপনার যৌন–জীবনের পরিবর্তনগুলি
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময় কালটি আবার “হানিমুন পিরিয়ড” বা “মধুচন্দ্রিমার সময়কাল” নামে পারিচিত,যেহেতু প্রথম ত্রৈমাসিকের যাবতীয় লক্ষণ যেমন বমিবমি ভাব,অবসাদ ইত্যাদি গুলি এই সময় থেকে দূর হয়ে যায়।দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক পুনরায় আপনাকে ফিরিয়ে দেয় আপনার জীবনী শক্তি এবং তেজ,যেগুলি আপনি হারিয়ে ফেলেছিলেন আপনার প্রথম ত্রৈমাসিকে।নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য এই সময়ে আপনি আপনার যৌন–জীবনে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন এবং এই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আপনার বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তনও হয়ে থাকে।
1. হরমোনের ওঠানামা
এই সময়ে শরীরে H C G (হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রপিন) হরমোনের স্বাভাবিক হ্রাস ঘটে এবং আপনার শরীরে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য আরো ভালোভাবে বজায় থাকে।এই কারণের জন্যই আপনার বমিবমি ভাব এবং অবসাদের লক্ষণ গুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যেতে থাকে।এর পরিণাম রূপে আপনার যৌন–যাত্রা বাড়তে থাকে এবং আপনি পুনরায় আগের ছন্দে ফিরে আসেন আরো বেশী উৎসাহ শক্তি ও উদ্দীপনা নিয়ে।
2. কামশক্তি বৃদ্ধি
এই সময়ে অনেক মহিলার জনন ইন্দ্রিয়ে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের কামশক্তি বেড়ে যায়।এই সময়ে যোনি অঞ্চল আরো বেশী পিচ্ছিল এবং উচ্চ সংবেদনশীল হয় যা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তাদের ভালোবাসাকে আরো বেশী আনন্দদায়ক করে তোলে।
সুতরাং এই সময়ের পূর্ণ সুযোগ নিন এবং আপনার সঙ্গীর সাথে আরো বেশী অন্তরঙ্গ হয়ে উঠুন,যা সন্তান জন্মের পর ভোগ করা কিছুটা কঠিন হতে পারে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা কি নিরাপদ?
বেশিরভাগ দম্পতি প্রায়ই দ্বন্দ্বে ভোগেন গর্ভাবস্থা চলাকালীন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা নিরাপদ কিনা সেই ব্যাপারে।যেকোন কিছুই ভুল হতে পারে।কিন্তু ধন্যবাদের সঙ্গে এর উত্তর হল বড় ধরণের হ্যাঁ।গর্ভাবস্থা চলাকালীন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা পুরোপুরি নিখুঁত ভাবে সঠিক।দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম না আপনার ভ্রূণের কোন ক্ষতি করে না আপনার শরীরে কোন প্রতিকূল প্রভাব ফেলে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কখন যৌন–মিলন এড়িয়ে চলতে হয়?
যদি প্রথম ত্রৈমাসিকে কেউ কোনরকম সমস্যায় না ভোগেন তবে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তার পক্ষে সঙ্গম করা নিরাপদ।কিন্তু যদি আপনি কোনরকম সমস্যাতেও ভোগেন তবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করার আগে একবার আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে নেওয়া সবচেয়ে ভাল হবে।এখানে রইল কিছু লাল পতাকা যেগুলি আমাদের সাবধান করে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গমকে এড়িয়ে চলার জন্য।
- যদি আপনার বহুবার গর্ভপাতের মত ইতিহাস থাকে
- যদি আপনার অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের সমস্যা থাকে,এই সময়ে সঙ্গম আরো বেশি মাত্রায় রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে,বিশেষত সেইসব ক্ষেত্রে যেখানে অমরা (প্ল্যাসেন্টা) খুব নিম্নমানের হয়।
- যদি আপনার অ্যাম্নিওটিক তরল নিঃসরণ হয় তবে সে ক্ষেত্রে সঙ্গম আপনার ইনফেকশনের ঝুঁকি বড়িয়ে তোলে।
- আপনি যদি প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ায় ভোগেন তবে এই সময় সঙ্গম এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর নিম্ন অংশে প্ল্যাসেন্টা বা অমরা বাড়তে থাকে এবং সার্ভিক্সের প্রবেশ পথকে ঢেকে দেয় হয় আংশিক ভাবে নয়ত পুরোপুরি ভাবেই।
- যদি আপনার সার্ভিক্স অঞ্চল অসমর্থ হয় তখন সার্ভিক্স খুব দ্রুত বিস্তৃত হয়,যা গর্ভপাত ও অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- আপনি যদি সঙ্গমের পর রক্ত ক্ষরণ বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হতে লক্ষ্য করেন।দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব ইনফেকশনের সংকেত দিতে পারে,যা জরায়ুতে প্রভাব ফেলে।
- আপনি যদি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে যন্ত্রণাদায়ক সঙ্গমে লিপ্ত হন।
উপরে উল্লিখিত কোন শর্ত যদি আপনার দেখা দেয় তবে আপনার ডাক্তারবাবু স্বাভাবিক ভাবেই আপনাকে পরামর্শ দেবেন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গম করা থেকে বিরত থাকার জন্য।
মধ্য গর্ভাবস্থায় সঙ্গম কি আপনার ও আপনার বাচ্চার ক্ষতি করে?
এই সময়ে মায়ের গর্ভে ভ্রূণ খুব সুরক্ষিত থাকে এবং একটি প্রতিরক্ষামূলক আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে,যা অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইড নামে পরিচিত।এটি গর্ভস্থ ভ্রূণটি কে যেকোন বাঁধা ও আঘাত থেকে রক্ষা করে।যার ফলে সঙ্গমের সময় গর্ভস্থ বাচ্চা কোনরকম যন্ত্রণা বা চাপ অনুভব করে না।তাই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে যৌন–মিলনের সময় আপনি ও আপনার বচ্চা পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকেন।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গমের কতকগুলি সেরা ভঙ্গীমা
সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থাকালীন পর্যায়ে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়টি সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক ও উপভোগ্য পর্ব হয়ে ওঠে আপনার সঙ্গীর সাথে আপনার অন্তরঙ্গ হওয়ার জন্য।যদিও এই সময় আপনার পেটটি আকারে বড় হয়ে উঠতে পারে তবে তা আপনাদের ভালোবাসায় ও মিলনে কোন বাঁধার সৃষ্টি করে না।সঙ্গমের অনেক ভঙ্গীমাই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও নিরাপদ হয়ে থাকে।আপনি সেইসকল ভঙ্গীমা গুলি প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে পারেন যেগুলি আরামদায়ক ও আপনার বেড়ে ওঠা পেটের সাথে মানিয়ে নেওয়া সহজ।কিছু ক্ষেত্রে এই বেড়ে ওঠা পেটের সঙ্গে মিশনারি ভঙ্গীমাটি প্রয়োগ করা আপনার জন্য আরামদায়ক হবে না।যাইহোক,তাই বলে এই বৃহৎ পেট আপনাকে থামাতে পারবে না অন্যান্য ভঙ্গীমাগুলি চেষ্টা করা থেকে।দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সঙ্গমের জন্য যে সকল ভঙ্গীমাগুলি আপনি চেষ্টা করতে পারেন সেগুলি হল—
1. উচ্চে অবস্থান
এটি সঙ্গমের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক ভঙ্গীমা, যেহেতু এক্ষেত্রে আপনার পেটে কোন চাপ পড়ে না এবং আপনি প্রবেশ করানোর গভীরতাকেও নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
2. বিপরীত স্পুনিং
চামচের মত এই অবস্থানের ফলে যেহেতু আপনি পাশ ফিরে শুয়ে থাকেন এবং আপনার সঙ্গীটি আপনার পিছনের দিকে শুয়ে থাকেন তাই সেটি সাহায্য করে অগভীর ভাবে প্রবেশ করাতে।
3. পিছন থেকে প্রবেশ করানো
আপনার সঙ্গীর থেকে পিছন দিক করে আপনার পেট টি অবস্থান করিয়ে হাঁটু মুড়ে সোফা বা কাউচের উপরে বসুন,আপনার হাত গুলিকে ব্যবহার করুন অবলম্বনের জন্য এবং এরপর আপনার সঙ্গী পিছন থেকে আপনাকে প্রবেশ করাবেন ধীরে ধীরে।
4. বসা অবস্থায়
চেষ্টা করুন আপনার প্রেমিকের কোলে বসে পড়তে যেহেতু তিনি কোন সোফা বা বিছানাতেই বসেন।এবার আপনি স্থির করতে পারেন দাঁড়িয়ে অথবা বসে কত গভীরভাবে প্রবেশ করাবেন।
সঙ্গমের জন্য কোন ধরণের ভঙ্গীমা শ্রেষ্ঠ সে ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা বা কঠোর কোন নিয়ম নেই।বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি নির্ভর করে নিজেদের পছন্দের উপর।গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সঠিক কৌশলটি খুঁজে বের করা যা নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক মা ও বাচ্চা উভয়ের ক্ষেত্রেই।
সঙ্গমের যে ভঙ্গীমা গুলি এড়িয়ে চলতে হয়
সঙ্গমের এই ভঙ্গীমা এড়িয়ে চলুন যেখানে পিঠের উপর ভর দিয়ে চিৎ হয়ে শুলে পেটের উপর চাপ পড়ে,যেমন মিশনারি ভঙ্গীমাটি।চেষ্টা করুন প্রবেশ করানোর গভীরতাকে কমানোর যেহেতু দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে প্রবেশ করানো নিরাপদ নয়।যদি গর্ভাবস্থায় কোনরকম সমস্যা আপনার থাকে তবে সম্পূর্ণ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক জুড়ে পুরোপুরি ভাবে সঙ্গম এড়িয়ে যাওয়াই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো।
উপসংহার—ক্রমবর্ধমান কামশক্তি এবং বিরক্তিজনক সমস্যাগুলি যেমন–অবসাদ হ্রাস পাওয়ায় গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক নিঃসন্দেহে হানিমুন পিরিয়ড বা মধুচন্দ্রিমার সময়কাল হয়ে ওঠে।শুধু মনে রাখা প্রয়োজন যে,যখন সার্বিক পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃতভাবে নিরাপদ,তখনই সঙ্গম করা শ্রেয়,তবে গভীরভাবে প্রবেশ করানো এবং মিলনের চূড়ান্ত ভঙ্গীমা কখনই এই পর্যায়ে সেরা পছন্দ হতে পারে না।