In this Article
মা, অভিনন্দন! আপনার অনেক আশা–আকাঙ্খা, স্বপ্নকে ঘিরে থাকা ছোট্ট রাজকুমার / রাজকুমারীটি সুদীর্ঘ নয়টি কঠিন মাস পেরিয়ে অবশেষে এখন আপনার বাহুতে, আপনার অপার স্নেহের পরশে একটা নিশ্চিন্ত জীবন কাটাচ্ছে! এটাকে একটা স্বর্গীয় সুখ বলে মনে হয় না? প্রতিবার যখন সে তার ছোট্ট হাতের তালুর ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুলগুলির দ্বারা আপনার আঙ্গুলগুলিকে আঁকড়ে ধরে কিম্বা তার ছোট্ট কৌতুহলী চোখগুলি দিয়ে আপনার দিকে দেখে, আমরা বুঝি সকল যন্ত্রণা–গ্লানি ভুলে গিয়ে আপনার হৃদয় নিশ্চিতভাবেই গলে যায়!
যদিও পরম সুখময় এই সকল মুহূর্তগুলি আপনি উপভোগ করতে পারেন, তার সাথে আবার নানা দিক থেকে আপনার কাছে এসে পৌঁছানো অসংখ্য নির্দেশ, উপদেশ ও পরামর্শগুলির দ্বারা আপনি সম্পূর্ণরূপে বিহ্বল বোধ করাটাও স্বাভাবিক, বিশেষত শীত আমাদের দোরগোড়ায় এসে পড়ার কারণে।যদিও তারা সকলে ভালোর জন্যই হয়ত বলেন, কিন্তু একটা সময়ের পরে সেগুলি স্পষ্টতই ভীষণ অতিরিক্ত বলে মনে হতে পারে।এজন্যই নতুন মায়েদের কথা ভেবে আমরা শীতের যত্ন নেওয়ার জন্য একটি চূড়ান্ত গাইড প্রস্তুত করেছি।এইসকল সহজ ও কার্যকর টিপসগুলির দ্বারা আপনি কেবল শীতের মুখোমুখি হওয়ার জন্যই প্রস্তুত হবেন না, আপনার ছোট্ট রাজকুমারী / রাজকুমার–কে নিয়ে দুজনে একসাথে তার মোকাবিলা করে শীতকে উপভোগও করবেন!
শীতের ঠাণ্ডার জন্য সহজ প্রতিকারগুলি
শীতের মারাত্মক ঠাণ্ডা দূরে রাখা যদিও সর্বদা সম্ভব নয়, তবে যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন।তাছাড়াও, আপনার শরীরের উপর এর ধকলটা প্রচুর পড়ার কারণে তা ঠাণ্ডায় আপনাকে কিছুটা কাহিল করে তোলে, তার ফলে আপনার শক্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, যে কারণে চট করে সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।যাইহোক, তবে এর জন্য বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়ার বিরুদ্ধে আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হতে পারে যেহেতু সেগুলি আপনার বুকের দুধের মাধ্যমে আপনার শিশুর দেহেও প্রবেশ করতে পারে।তাই, শীতে ঠাণ্ডা লাগার ক্ষেত্রে কয়েকটি সহজ প্রতিকার এখানে উল্লেখ করা হলঃ
- প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমান।যাকিছুই হোক না কেন, এই নিয়মের কোনও ব্যতিক্রম হবে না।আপনার শিশুকে সামলাতে সাহায্যের জন্য আপনার ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ডাকুন, তবে আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণের ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।ভালমতো বিশ্রাম আপনার দেহকে দ্রুত নিরাময় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে আর দ্রুত সর্দিকাশিকে দূরে রাখার লড়াইয়ে আরও বেশি শক্তি যোগাবে।
- ভিক্স ভেপোরাব* এর মতো একটি কার্যকর ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করুন এবং এর গায়ে লেখা নির্দেশাবলী অনুযায়ী তা ব্যবহার করুন।ভিক্স ভেপোরাব* ঠাণ্ডা লাগার বিরক্তিকর উপসর্গগুলির জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। ঠিক শুতে যাওয়ার আগে এটি আপনার গলা, বুক এবং পিঠের উপর প্রয়োগ করুন।এছাড়াও আপনি আবার এটিকে গরম জলের (ফুটন্ত নয়) মধ্যে দিয়ে তার বাষ্পশ্বাস নিতে পারেন নাক বন্ধ এবং সাইনাসগুলি শিথিল করার জন্য।
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন যা ঠাণ্ডা লাগাকে আরও খারাপ করতে পারে।স্তন্যপান করানো মায়েদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্তন্যপান করালে তা আপনাকে ভীষণভাবে তৃষ্ণার্ত করে তুলতে পারে! আপনার তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠাকে কার্যকরভাবে বুঝতে পারার সর্বোত্তম উপায়গুলির মধ্যে একটি হল আপনার ঠোঁটে শুষ্কতার লক্ষণগুলি অনুসন্ধান করা।আপনার নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা নিশ্চিত করার আরেকটি মজার উপায় হল আপনার সেল ফোনে লক–স্ক্রিনের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে এক গ্লাস জলের ছবি রাখা।যতবার আপনি নিজের ফোনটি তুলবেন, ততবারই সেটি আপনাকে জল খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে!
- মানসিকচাপ সবকিছুকেই আরও খারাপ করে তোলে।সুতরাং মাঝেমধ্যেই আপনি বিরতি নিয়ে একটু বিশ্রাম করে নেওয়া নিশ্চিত করুন।আর এটি করার সর্বোত্তম উপায়টি হল হালকা যোগা বা ব্যায়ামের সাথে নিজেকে জড়িত রাখা।যোগার শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলি কেবল স্ট্রেস বা মানসিক চাপের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিষেধকই নয়, এটি আবার আপনার নাসারন্ধ্র এবং সাইনাসগুলি পরিষ্কার করারও কার্যকর উপায়!
ঠাণ্ডা লাগা দূরে রাখার জন্য শীতকালীন ডায়েট
শীতে সুস্থ–সবল থাকা এবং ফিটনেস বজায় রাখার জন্য কয়েকটি খাবার (এবং যে পানীয়গুলি আপনি পান করেন) খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অবলম্বন করতে পারেন এমন কয়েকটি সাধারণ সতর্কতা এখানে আলচনা করা হলঃ
1.একগ্লাস ঈষদুষ্ণ জলের মধ্যে এক চামচ ঘি নিয়ে সেটিকে ভালোমতো গুলে নিয়ে পান করার মাধ্যমে আপনার দিনের সূচনা করুন।ঘিয়ের মধ্যে আমাদের কল্পনার থেকেও বেশি ঔষধি গুণাবলী রয়েছে।এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল ঘি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে এবং তার সাথে শীতের শুষ্কতার প্রকোপ থেকে দেহকে রক্ষা করে।আপনি আবার এমনকি আপনার শিশুর ত্বকের জন্যও ঘি ব্যবহার করতে পারেন।
2.সাইট্রাস ফ্রুট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলগুলি সংগ্রহে রাখুন।আপনার প্রতিদিনের ডায়েটের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করুন কমলালেবু, আমলকী, পাতিলেবু, পেঁপে, আনারস এবং অন্যান্য মরশুমি ফল।
3.উচ্চতর থার্মোজেনিক মান রয়েছে এমন খাবারগুলি আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করুন।এই পরামর্শটি আয়ুর্বেদের নীতিগুলির উপর ভিত্তি করেঃ হজম হওয়ার জন্য কিছু খাবারের আরও এনার্জির প্রয়োজন।এই জাতীয় খাবারগুলি যখন ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত থাকে তখন শরীরে আরও উত্তাপ সৃষ্টি করে এবং শীতল আবহাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে।উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের মশলা (দারুচিনি, মরিচ, হিং, গোলমরিচ ইত্যাদি), মূল জাতীয় সব্জি (গাজর, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি) এবং কিছু নির্দিষ্ট গুল্ম (যেমন তুলসী, পুদিনা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
4.আপনার বিকেলের চা বা কফির কাপ বদলে সেখানে এক কাপ গ্রিন টি রাখুন।বিকল্পরূপে, আপনার প্রতিদিনের চায়ের কাপে আদা যোগ করুন।গ্রিন টিতে থাকা কেটচিনস এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি একদিকে যখন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে, অন্যদিকে তেমনি আবার আদা গলা ব্যথার জন্য একটি সুপরিচিত প্রতিকার এবং দুর্দান্ত অ্যান্টিভাইরাল হিসাবে কাজ করে।
5.হলুদ–দুধের সাথে প্রয়োজন মতো মধু যোগ করে তা গরম গরম পান করুন।যদিও হলুদ হল আমাদের দিদিমা–ঠাকুমার আমল থেকে সুপরিচিত দুর্দান্ত প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান, যার ব্যাপারে আমরাও সকলে অবগত, কিন্তু অনেক মানুষই একথা জানেন না যে মধু হল আবার উর্দ্ধ শ্বাসনালীর সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিকারক।অতিরিক্তভাবে, এই মিশ্রণটি কেবল আপনার ঠান্ডা লাগা নিরাময় করবে না তার সাথে আবার আপনাকে আরও ভালভাবে ঘুমাতেও সহায়তা করবে।এই পানীয়টি নিয়মিত সেবনের পরে আপনার বুকের দুধের রঙ যদি কিছুটা হলদেটে হয়ে যায়, অবাক হবেন না!
শীতের ব্যক্তিগত যত্ন এবং পোশাক সম্পর্কিত টিপস
সর্বশেষে, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় এই ব্যক্তিগত যত্ন এবং পোশাক সম্পর্কিত টিপসগুলি অবলম্বন করলে তা আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।
1.মাঝেমধ্যেই আপনার হাত ধুন।প্রতিবার ধোয়ার পরে একটি ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না, বিশেষত আপনার চামড়াকে সুরক্ষিত এবং ত্বককে নরম রাখার জন্য।এটি আবার আপনার শিশুরও উপকার করবে, কারণ তার সাথে আপনি পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া করার প্রতিসময় আপনার হাত থাকবে নরম এবং পরিষ্কার।
2.আপনার বুক ও পিঠ অন্ততপক্ষে দ্বিস্তরীয় আচ্ছাদনে আবৃত রাখুন।এটি আপনাকে এবং আপনার ফুসফুসকে উষ্ণ রাখে, যার ফলে আপনার ঠাণ্ডা লেগে সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
3.ঘাম ঝরান! প্রতিদিন 20 মিনিট করে কঠিন কার্ডিও অ্যাক্টিভিটি করুন(অথবা অন্ততপক্ষে প্রতি বিকল্প দিনে)।এটা আপনার বাচ্চার সাথে সময় কাটানোর জন্যও একটা দুর্দান্ত উপায় হবে– আপনি কেবল তাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারেন এবং একসাথে দু‘জনে কিছুক্ষণ গায়ে রোদ লাগিয়ে ঘামে ভিজে আসতে পারেন, অথবা তার সামনে নাচ করে তাকে বিনোদনও দিতে পারেন!
4.আপনার হাতের চেটো ও পায়ের তলা গরম রাখুন।শরীরের প্রান্তভাগগুলি দিয়েই তাপ দেহে প্রবেশ করে ও দেহ থেকে বেরিয়া যায়, তাই সেগুলি উষ্ণ রাখুন।
5.ঠাণ্ডা জলে স্নান করুন! বিশ্বাস করুন বা না করুন, এটি বাস্তবেই আপনার দেহে রক্ত সংবহনের উন্নতি ঘটাতে এবং শারীরিক তাপ উৎপাদন করতে প্রভূত সহায়তা করে।
6.বাইরে বেরোবার সময় আপনার কান এবং মাথা ঢাকা দিন।আপনি যদি হনুমান টুপি জাতীয় কিছু পরতে না পছন্দ করে থাকেন, তবে নিদেনপক্ষে একটা গরম স্কার্ফ দিয়ে আপনার পুরো মাথাটিকে ভালভাবে ঢেকে রাখার কথা বিবেচনা করুন।তবে আপনি যখন আপনার ছোট্ট রাজপুত্র / রাজকুমারী মাথার টুপির সাথে মিল রেখে নিজের মাথাতেও সেরকম কিছু পরে আপনার মোবাইলে একটা সেলফি তোলেন তখন কি আপনাদের ভারী মিষ্টি দেখাবে না?
শীতকালে ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচার ও নিজেকে রক্ষা করার এই গাইডটি পরিবারের সকল সদস্যের জন্যই চমৎকার যেহেতু এই সহজ প্রতিকার এবং টিপসের সবগুলিই যেকেউ অনুসরণ করতে পারে।আশা করি এই বছর আপনার প্রিয় ঋতুটিকে চুটিয়ে উপভোগ করার পথে কোনও কিছুই অন্তরায় হয়ে আসবে না।
*বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ সর্বদা ওষুধের লেবেল পড়ে নিন।শুধুমাত্র নির্দেশ অনুসারেই তা ব্যবহার করুন। লক্ষণগুলি যদি অব্যাহত থাকে তবে তা আপনার ডাক্তারবাবু অথবা একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারকে দেখান।