শীতের সময় আপনার শিশুকে আরাম দেওয়ার টিপস

শীতের সময় আপনার শিশুকে আরাম দেওয়ার টিপস

বড়দের ক্ষেত্রেই যখন শীতের কনকনে ঠান্ডার সাথে লড়াই করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, তখন একবার ভাবুন তো যে, সেটা একটা বাচ্চার ক্ষেত্রে কতটা মুশকিল হয়ে উঠবে, বিশেষ করে যখন সে মাত্র কয়েক মাস বয়সীই হয়ে থাকে।শীতের প্রখর ঠান্ডা বায়ু এবং তাপমাত্রার চরম হ্রাস আপনার ছোট্ট শিশুটির ত্বক এবং স্বাস্থ্যের উপর একটা চড়া শুল্কের বোঝা চাপাতে পারে, যার অর্থ তাদের ত্বক এবং স্বাস্থ্যের ওপর একটা চরম প্রভাব ফেলতে পারে।শিশুরা এমনিতেই একটু অতিরিক্ত মাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে থাকে, আর তাই শীতের সময় তাদের জন্য প্রয়োজন হয় একটু অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া এবং আরাম দেওয়া।সুতরাং আপনি যদি একথা মনে করেন যে উলের গরম পোশাক এবং গরম গরম স্যুপই সারা শীত ধরে আপনার বাচ্চাকে ঠিক রাখার জন্য যথেষ্ট, তবে সেক্ষেত্রে আরও একবার ভাবুন।এই ঠান্ডায় আপনার সন্তানকে গরম, ঝরঝরে, ফুটফুটে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে রাখার সেরা উপায়গুলি জানতে পড়ুন।

এই শীতে আপনার শিশুকে উষ্ণ এবং আরামদায়ক রাখার টিপস

এই শীতল আবহাওয়াতে আপনি যখন নিজের ছোট্ট শিশুটির স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন তখন কার্যকর হবে এমন কিছু সাধারণ টিপস এখানে দেওয়া হলঃ

1.নিয়মিত ম্যাসাজ চমৎকার কাজ করে

বাইরে বাতাস যখন প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন শরীরের একটা হালকা ম্যাসাজ আপনার বাচ্চাকে উষ্ণ থাকতে সহায়তা করবে।শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বাচ্চাদের ম্যাসেজের জন্য উচ্চ পরামর্শ দেন কারণ এটি তাদের রক্ত ​​প্রবাহকে উদ্দীপিত করে এবং আপনার ছোট্ট সোনাটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।আপনার বাচ্চার শরীরকে উষ্ণ ও আরামদায়ক রাখতে তাকে দিনে অন্তত দুইবার ম্যাসাজ করুন।আপনি সকালের দিকে প্রাকৃতিক তেল দিয়ে তাকে ম্যাসাজ করে দিতে পারেন যাতে তার ত্বক আদ্র থাকে।আর রাত্রে, ভিক্স বেবিরাবের* মতো কোনও ময়েশ্চারাইজিং বাম দিয়ে তার বুক, গলা, পিঠ এবং পায়ে ম্যাসাজ করে দিন।এটি আপনার শিশুর ত্বককে প্রশমিত এবং শিথিল করার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত এবং উন্নতমানের।এটি বাচ্চাদের ত্বকের পক্ষে মৃদু এবং 3 মাসের বেশী বয়সী শিশুদের জন্য প্রস্তাবিত।

2.মোটা ভারী কম্বলগুলি এড়িয়ে চলুন

আপনি হয়ত একথা ভাবতে পারেন যে একটা মোটা ও ভারী কম্বল দিয়ে আপনার বাচ্চাকে রাত্রিবেলায় মুড়িয়ে দিলে তা তাকে উষ্ণ রাখবে এবং তাকে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে।কিন্তু আরেকবার চিন্তা করুন তো! যেটা আপনার কাছেই ভারী লাগছে সেটা ঐটুকু শিশুর পক্ষে আরও কতটা বেশী ভারী হবে।তাই সবথেকে ভাল হল একটা হালকা কম্বলকেই আপনি বেছে নিন আর তার সাথে তার ঘরটিকে গরম রাখার জন্য একটা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।একটা হালকা কম্বল আপনার বাচ্চার নড়াচড়া করা এবং এক পাশ থেকে অন্য পাশে ফেরার পক্ষে সহজ হবে।ভারী কম্বল পরিহার করার পরামর্শ দেওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ যেটি তা হল, আপনার বাচ্চা হয়ত ঘুমানোর সময় সেটিকে টেনে তার মুখের ওপর চাপা দিয়ে দিতে পারে, যার ফলে তার দম আটকে যেতে পারে অথবা আবার এমনকি হঠাৎ শিশুমৃত্যু সিন্ড্রোমের মতো দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।সুতরাং একটা হালকা কম্বল বেছে নিন এবং আপনার বাচ্চাকে আরামদায়কভাবে উষ্ণ রাখুন।

3.সঠিক সময় মতো টিকাদান করান

শীতকাল হল বছরের এমন একটা সময় যখন আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সে খুব ঘন ঘনই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।যখন আপনার বাচ্চার স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ ওঠে, তখন কোনও একটি টিকাদান বা ভ্যাকসিনকে এড়িয়ে যাওয়া বা বাদ দেওয়া কখনই কোনও বিকল্প হতে পারে না।বছরের যেকোন সময় নির্বিশেষে, আপনার বাচ্চাকে তার ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যাওয়া এবং সময়মতো তার শট দেওয়ানো নিশ্চিত করুন।এটি তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এবং ঋতু অনুযায়ী হয়ে থাকা সংক্রমণ এবং রোগব্যাধিগুলির কবল থেকে তাকে রক্ষা করবে। আপনার পিডিয়াট্রিসান বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ত আপনার বাচ্চাকে একটি সিজনাল ভ্যাকসিন দেওয়ানোর কথা বলবেন যা আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরণের ফ্লু থেকে রক্ষা করবে যেগুলি বছরের এই সময়ে হয়ে থাকাটা খুবই সাধারণ।আর যদি তা না হয় তবে সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করুন।

4.সঙ্কেতগুলি অনুধাবন করে বুঝতে শিখুন

সঙ্কেতগুলি অনুধাবন করে বুঝতে শিখুন

আপনার শিশুটি যদি সবেমাত্র কয়েক মাস বয়সী হয়, সে কাঁদা ব্যতীত অন্য কোনওভাবেই তার অস্বস্তিগুলি বোঝাতে সক্ষম হবে না, আর সেই কারণেই তার দিকে সদা সতর্ক নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ, তার ঠান্ডা লাগা ও অস্বস্তিবোধ হওয়ার মতো লক্ষণগুলি বোঝার জন্য।সে কীভাবে তার সঙ্কেতগুলি প্রকাশ করে বা কীভাবে তার লক্ষণগুলি বোঝা যেতে পারে তা অনুধাবন করা এবং শেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।যদি আপনার বাচ্চার ত্বক লাল দেখায় তবে যেন এটি অনুমান করে বসবেন না যে এটি শুধুই শীতের ঠান্ডা বাতাসের প্রকোপে তার গালগুলি গোলাপী হয়ে গেছে।এটি কিন্তু উলের মোটা স্তরগুলি থেকে খুব গরম এবং ঘাম হওয়ার কারণেও হতে পারে। একইভাবে, আপনার শিশুর ত্বক যদি ফ্যাকাশে দেখায়, তবে তার কোনও সর্দিজ্বর হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন।শিশুরা শীত এলে সাধারণত একটু কুঁড়ে বা অলস হয়ে পড়ে।এই লক্ষণগুলি ঠিকমতো সনাক্ত করা এবং আপনার শিশুকে তার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। 3 মাস বা তার বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য, আপনি একটি ননমেডিসিনাল বামভিকস বেবিরাব* ব্যবহার করতে পারেন, এটি আপনার বাচ্চাকে ময়শ্চারাইজ করতে, প্রশমিত করতে এবং শান্ত করতে সাহায্য করবে।আপনার স্নেহের স্পর্শের সাথে যুক্ত, বেবিরাব* আপনার শিশুকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং এর ল্যাভেন্ডার ও রোজমেরর সুবাস তাকে আরাম দেবে এবং ঘুমাতে সাহায্য করবে।

5.ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন

শীতের সময় নানা ধরনের সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়, আর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির অভাব সেটিকে কেবল আরও খারাপ করে তোলে।আপনার বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির অন্তত প্রাথমিক স্তরগুলি বজায় রাখাটা জরুরী।আপনার হাত পরিষ্কার রাখার মতো সাধারণ বিষয়গুলি আপনার ছোট্টটিকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে অনেকটা পথই এগিয়ে যাবে কারণ আপনিই হলেন তার সাথে যোগাযোগের প্রথম মাধ্যম।তাকে ধরার আগে আপনি আপনার হাতগুলি জীবাণুমুক্ত করে নিন এবং অন্যদেরকেও সেটি করার পরামর্শ দিন।জীবাণুগুলি থেকে দূরে রাখতে, আপনার শিশুকে ভিড় জায়গায়গুলিতে নিয়ে যাওয়া এড়ান এবং ঠান্ডা লেগে থাকা ব্যক্তিদের থেকে তাকে দূরে রাখুন।এ জাতীয় সাধারণ বিষয়গুলি আপনার শিশুকে উষ্ণ এবং সুরক্ষিত রাখতে চমৎকারভাবে কাজ করতে পারে।

6.কিছুটা রোদ পাওয়ান

এই শীতে আপনার বাচ্চাকে আরাম দিতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার তা হল, একেবারে কোথাও না বেরোনোটা কিন্তু এই সমস্যাটির সমাধান করবে না।সবসময় ঘরের ভিতরে আবদ্ধ রেখে আপনি কিন্তু আপনার বাচ্চাকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে আরও বেশি ফেলবেনআর এর সাধারণ কারণটি হল এই যে, আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা একভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের মধ্যে থাকার সময় আপনি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে যে বায়ু নেন তা অবিশুদ্ধ হয়ে যায়।এগুলি ছাড়াও আপনি বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকলে তা আপনার সার্বিক শারীরিক সক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে তোলে আবার আপনার শরীরে কোনওরকম রোদও লাগে না।সবসময় ঘরের ভিতরে থাকা এবং শরীরকে উষ্ণ রাখা কিন্তু আপনার শিশুকে আরাম দেওয়ার জন্য সর্বদা যথেষ্ট নয়।আপনার ছোট্টটিকে স্নান করানোর পরে তাকে গরম পোশাক পরিয়ে নিয়ে কমপক্ষে 30 মিনিটের জন্য তার সাথে রোদে বসার বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করুন।এটি তার শরীরকে প্রয়োজনীয় উষ্ণতা দেবে এবং সংক্রমণের হাত থেকে যুদ্ধ করে রক্ষা পেতে সহায়তা করবে।

7.স্বাস্থ্যকর স্যুপগুলি তৈরি করুন

অনাক্রম্যতা বাড়ানোর জন্য জৈব মরশুমি শাকসব্জির চেয়ে ভাল আর কিছুই নেই, আর আপনার শিশুকে শাকসব্জি খাওয়ানো বাড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল তাকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর স্যুপ তৈরি করে খাওয়ানো।কিছু মরশুমি শাকসব্জি নিয়ে শুধু সেগুলিকে ভালকরে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে সেদ্ধ করুন, একটু ঘেটে দিন আর তারপর আপনার বাচ্চাকে দিনে দুবার করে সেই স্যুপটি খাওয়ান।এর জন্য আপনি নিতে পারেন বিটরুট, গাজর, কড়াইশুঁটি, লাউ ইত্যাদি, যেগুলি সহযোগে আপনি মানানসইভাবে আপনার বাচ্চার জন্য উপযুক্ত স্যুপ তৈরি করে নিতে পারেন।এগুলি আপনার বাচ্চাকে কেবল উষ্ণই রাখবে না, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং তার সাথে আবার সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য তার দেহকে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাবে।তার পাশাপাশি আবার শীতের কনকনে ঠাণ্ডার রাতে গরম গরম স্যুপ পান করা বেশ আরামদায়ক একটা ব্যাপার, তাই নয় কি?

এই শীতে আপনার শিশুকে উষ্ণ এবং সুরক্ষিত রাখতে এই সহজ টিপসগুলি অনুসরণ করুন।মনে রাখবেন যে, আপনার ছোট্ট সোনাটি কিন্তু অতিমাত্রায় সংবেদনশীল আর তাই এই শীতে তার জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া এবং তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া।এই সকল ছোট ছোট বিষয়গুলি অনিবার্যভাবেই এই ঠান্ডায় আপনার একরাশি আনন্দের উৎস ছোট্ট সোনাটিকে রাখবে আরামদায়ক ও আনন্দে।

*বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঅসতর্কতায় বা দুর্ঘটনাক্রমে গভীরে প্রবেশ করা বা হাঁটার সময় পিছলে যাওয়া এড়াতে প্রয়োগের স্থানগুলি হালকা করে আচ্ছাদিত রাখুন। সতর্কতার সাথে নির্দেশাবলী পড়ুন।নির্দেশ অনুসারে ব্যবহার করুন।লক্ষণগুলি যদি অব্যাহত থাকে তবে তা আপনার ডাক্তারবাবু অথবা একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারকে দেখান।