একটি শিশুকে পাওয়ার মাধ্যমে একটি সুন্দর যাত্রার শুরু হয়, যার কয়েকটি মাইলফলক থাকে। প্রতিটি মুহুর্ত ভিন্ন, এবং আপনি প্রতিটি পদক্ষেপে নতুন কিছু শেখেন। আপনি মাতৃত্বে নতুন, যার থেকে এটি বোঝা যায় যে আপনার সন্তানের যে কোনো সমস্যা সম্পর্কেই আপনি উদ্বিগ্ন। দাঁত বেরোনো বাচ্চাদের কাছে বিরক্তিকর হয় এবং ফলে মা–রাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। আপনার বাচ্চার দাঁত বেরোনোর পর্যায়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে আপনার পরামর্শ দেওয়ার অনেক লোক থাকতে পারে, কিন্তু তবুও আপনি হয়তো এই পর্যায়টিকে কীভাবে পরিচালনা করতে পারেন সে সম্পর্কে ব্যবহারিক পরামর্শের জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য রিসোর্সের খোঁজ করছেন।
এখানে একটি গাইড রয়েছে যার উপর আপনি নির্ভর করতে পারেন। আপনি দাঁত বেরোনো কী থেকে শুরু করে কীভাবে এটির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার করা যায় সেই সবকিছু শিখবেন। সুতরাং আমরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছি? চলুন শুরু করি!
আপনার বাচ্চার প্রথম দাঁত বেরোনো মা হিসাবে আপনার যাত্রার অনেক আনন্দদায়ক মাইলফলকগুলির মধ্যে একটি। তবে, শিশুটি অস্বস্তিময় হওয়ার বিভিন্ন সময়গুলির মধ্যেও এটি একটি, এবং প্রায়ই আপনার সন্তান যখন বিরক্ত হবে এবং কাঁদবে, তখন আপনাকে তাকে শান্ত করতে হবে।
কখন বাচ্চাদের দাঁত বেরোনো শুরু হয়
প্রতিটি শিশু একটি অনন্য গতিতে বৃদ্ধি পায় এবং কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই যে সময় আপনার সন্তানের নিশ্চিতভাবে দাঁত বেরোনো শুরু হবে।
বাচ্চাদের 4 থেকে 7 মাসের মধ্যে তাদের প্রথম দাঁত বেরোতে শুরু করে। খুব বিরল ক্ষেত্রে, এক বছরেরও বেশি বয়সের পরে বাচ্চার দাঁত বেরোনো শুরু হয়। জন্মের সময় শিশুর প্রথম দাঁত দৃশ্যমান ছিল এমন কিছু ক্ষেত্রও আছে, তবে উভয়ই অতিমাত্রায় বিরল।
দাঁত বেরোনো সাধারণত চার মাসে শুরু হয়, তবে আপনার বাচ্চার তিন মাসের মধ্যেও শুরু হতে পারে। একটি শিশুর এমনকি দুই মাসেও দাঁত বেরোনো শুরু হতে পারে। যে বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি দাঁত বেরোতে শুরু করে, তারা প্রাক–দাঁত নামে পরিচিত সাদা উঁচু জায়গা নিয়েই জন্মায় যেগুলি তাদের মাড়িতে দেখা যায়। আপনি যদি দেখেন যে মাত্র দুই বা তিন মাস বয়সে আপনার শিশুর দাঁত বেরোচ্ছে, ভয় পাবেন না। এটা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।
মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশু গর্ভে থাকার সময়ই দাঁত বিকশিত হতে শুরু করে। আসলে, এই সময়ে দাঁত মাড়ির মধ্যে জন্ম নেয়। দাঁত বেরোনোর প্রক্রিয়া শুরু হলে এবং প্রথম দাঁত বেরিয়ে এলে, সব দাঁত দৃশ্যমান হতে কয়েক মাস লাগে।
প্রথম যে দাঁতগুলি বেরোয় সেটি নীচের দিকে থাকে। নীচের দিক বরাবর দুটি দাঁত প্রথম দেখা যায়।
এখানে শিশুর দাঁত বেরোনোর সময়সূচী রয়েছে যা আপনাকে মনে রাখতে হবে যাতে আপনি বিভিন্ন পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত থাকেন–
তিন বছরের মধ্যে, আপনার শিশুর প্রায় 20টি দাঁত থাকবে। 4 বছর বয়সে চোয়াল এবং মুখের হাড়গুলি বৃদ্ধি পায়, এভাবে স্থায়ী দাঁতগুলির বেরোনোর জন্য স্থান তৈরি হয়।
মা হিসাবে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাঁত বেরোনোর কিছু লক্ষণ দেখতে প্রস্তুত হতে পারেন। এর ফলে আপনি আপনার বাচ্চাকে সময়মত সাহায্য করতে পারবেন। সুতরাং, আপনি আপনার বাচ্চার মধ্যে নিম্নলিখিত যে 13 টি লক্ষণ খেয়াল করবেন সেগুলি সম্বন্ধে আপনাকে জানাই।
দাঁত বেরোনো শিশুদের নাল পড়াকে বাড়ায়। এটি আপনার প্রথম চিহ্ন। শিশুরা যখন দশ সপ্তাহ বয়সী হয় তখন থেকেই এটি শুরু হতে পারে। আপনার নাল পড়া শিশুকে একটি নালপোষ পড়িয়ে শুকনো থাকতে সাহায্য করুন। স্যাঁতসেঁতে জামাকাপড় শিশুকে আরো বিরক্ত করবে যে দাঁত বেরোনোর কারণে ইতিমধ্যেই অস্বস্তিতে আছে।
লাল, প্রদাহযুক্ত মাড়ি দেখলে বুঝবেন যে আপনার বাচ্চার দাঁত বেরোচ্ছে। ফোলা এলাকায় আপনার তর্জনী দিয়ে আলতোভাবে মালিশ করলে কিছু আরাম দিতে পারে।
আপনার শিশুর মাড়ির নিচে একটি অস্পষ্ট সাদাটে বস্তু দেখা গেলে তা নির্দেশ করে যে তার দাঁত বেরচ্ছে।
শিশুদের দাঁত বেরোনোর আরেকটি চিহ্ন হল তাদের গোমড়ামুখো হয়ে থাকা। উঠতে থাকা দাঁত মাড়ি বরাবর চাপ দেয়, যা তাদের অস্বস্তিকর এবং কাঁদুনে করে তুলতে পারে।
হ্যাঁ, দাঁত বেরোলে আপনার বাচ্চাকে সারা রাত জাগিয়ে রাখতে পারে! দাঁত বেরোনোর অস্বস্তি আপনার শিশুকে সারা রাত জাগিয়ে রাখতে পারে!
বাচ্চাদের যখন দাঁত বেরোনো শুরু হয়, তখন তারা তাদের হাতে যা পায় তাই–ই চিবাতে চায়।
দাঁত বেরোনোর সময় তাদের যে অস্বস্তি হয় তার জন্য তারা খাবার প্রত্যাখ্যান করতেও পারে।
অনেক সময়ে কান টানা কান–ব্যাথার একটি চিহ্ন, কিন্তু এটি শিশুদের দাঁত বেরোনোর কারণেও হতে পারে।
দাঁত বেরোনোর ফলে মুখের কাছাকাছি ফুসকুড়িও হতে পারে। (লালা ঝড়া জনিত ফুসকুড়ি হিসাবেও পরিচিত)
দাঁত বেরোনোর অস্বস্তি বাচ্চাদের জন্য অসহনীয় এবং ঘন ঘন তাদের কাঁদিয়ে তোলে। যদি আপনি পর্যবেক্ষণ করেন যে তারা কাঁদছে এবং তার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না, তবে নিশ্চিত করার জন্য দাঁত বেরোনোর অন্য লক্ষণগুলি চেক করুন।
গালে দাঁতের সাথে যুক্ত স্নায়ু থাকে। এই স্নায়ুগুলি দাঁত বেরোনোর সময় কাঁপতে পারে বা কোমল হয়ে যেতে পারে। এই কারণে শিশুরা তাদের গাল ঘষতে থাকে।
কিছু বাচ্চার দাঁত বেরোনোর সময় হালকা কাশি থাকে।
কিছু বাচ্চাদের দাঁত বেরোনোর সময় জ্বর হতে পারে। যদি গুরুতর হয়, আপনাকে একজন ডাক্তারের সাথে চেক করতে হবে।
মা হিসাবে, আপনি অবশ্যই পড়ে থাকবেন যে দাঁত বেরোনোর সাথে জ্বর ও পেট খারাপের সংযোগ রয়েছে, এবং হয়তো ভাবতে পারেন যে দাঁত বেরোনোর সাথে সবসময় জ্বর ও ডায়রিয়া হয় কিনা। যাইহোক, এই ধরনের সংযোগ আছে বলে বা প্রতিটি বাচ্চার দাঁত বেরোনোর সময় এটি ঘটতে পারে বলে বিশ্বাস করার কোন দৃঢ় কারণ নেই। অনেক বাচ্চাদের দাঁত বেরোনোর সময় জ্বর হয়, কিন্তু অনেক বাচ্চাদের দাঁত বেরোনোর সময়টি সহজেই পেরিয়ে যায়। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে, এটি সম্ভব যে শিশুটি কিছু চিবাচ্ছে বা কামড়াচ্ছে যা পরিষ্কার নয়, যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। জ্বর বা ডায়রিয়া চলতে থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা সবসময় ভালো।
আপনার শিশুকে শান্ত করার এবং দাত বেরোনোর অস্বস্তিকে উপশম করার অনেক উপায় আছে। কিছু সহজ কৌশল দিয়ে আপনাকে সাহায্য করা যাক।
দাঁত বেরোনোর যন্ত্রনা উপশম করার জন্য কিছু ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ পাওয়া যায় যা আপনি আপনার শিশুকে দিতে পারেন। অ্যাসিটামিনোফেন, আইবুপ্রোফেন বা অ্যাডভিল আপনার সন্তানের ব্যথা মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে, শিশুদের জন্য মট্রিনও ব্যাথা উপশম করতে সহায়তা করতে পারে। আপনি এই ওষুধগুলি কেনার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা সবসময় ভালো। এছাড়াও, বাচ্চাদের দাঁত বেরোনোর ব্যাথার জন্য অনেকগুলি ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা এই পর্যায়ের চাপ কিছুটা কমাতে পারে।
আপনি এমনকি চিবাতে দেওয়ার জন্য প্রাকৃতিক কঠিন কাঠের খেলনা কিনতে পারেন।
কিছু বাচ্চাদের দেরীতে দাঁত বেরোনোর অনেক কারণ রয়েছে। আপনার বাচ্চার এক বছর বয়সের সময়ও দাঁত বেরোতে শুরু না হলে, হয় এটি বংশগত বা খারাপ পুষ্টির কারণে হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিজমও শিশুদের দেরীতে দাঁত বেরোনোর একটি কারণ হতে পারে। দেরীতে দাঁত বেরোনোর সঠিক কারণ জানতে একটি শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যান। এটি আসলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনও সমস্যা নয, তবে এটি কেন ঘটছে তা জানলে বিলম্বের সাথে মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
দাঁতের যত্নকে আপনার শিশুর রুটিনের একটি নিয়মিত অংশ করে তুলুন এমনকি দাঁত ওঠা শুরুর আগে। দিনে দুইবার আপনার শিশুর মাড়িতে একটি ভেজা ওয়াশক্লথ বা গজের টুকরো দিয়ে ঘষুন, বিশেষ করে খাওয়ার পরে এবং তাকে ঘুম পাড়ানোর আগে। প্রথম দাঁত বের হওয়ার সময়, একটি ছোট মাথা এবং হ্যান্ডেল যুক্ত একটি নরম ব্রাশ কিনতে হবে, যা আপনার শিশুর মুখের ভিতরে আরামদায়কভাবে ফিট হয়ে যাবে। শিশুর তিন বছর হলে তবেই ফ্লোরাইড টুথপেষ্ট ব্যবহার শুরু করুন।
আপনার বাচ্চার 1 বছর বয়স হলে একবার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া ভালো।
দাঁত বেরোনো আপনার সন্তানের জন্য একটি মুখ্য বিকাশমূলক পর্যায়। ধৈর্যের সাথে আপনার শিশুর অস্বস্তি মোকাবিলা করুন এবং আপনাদের উভয়ের জন্য যাত্রাটি নিশ্চিতভাবে সহজ হয়ে উঠবে।