বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাছ খাওয়া—এটি কি নিরাপদ ?

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাছ খাওয়া—এটি কি নিরাপদ ?

আপনার গর্ভাবস্থা আবশ্যিক ভাবে নানা দ্বিধাদ্বন্ধে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে যেহেতু আপনি এই সময়ে নির্দিষ্ট কিছু ধরণের খাদ্যই গ্রহণ করতে পারেন এবং প্রসবের দিনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে পারেন শুধুমাত্র আপনি যেসকল খাবার খেতে পছন্দ করেন সেগুলি পুনরায় ফিরে পাওয়ার আশায় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত,এমন কিছু ধরণের খাবার আছে যেগুলি মায়েদের খাওয়া উচিত নয় এমন কি যখন তারা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান সেই সময়েও

এ বিষয়ে গর্ভাবস্থায় মায়েদের কাছে মাছ খাওয়াএক বিরাট বিভ্রান্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুরূপভাবে,মাছ রান্না করার আগে অথবা আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়কালে আপনার খাদ্যতালিকায় মাছের সংযোজন করার আগে এ বিষয়ে আপনার দীর্ঘ ও কঠিন চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন আছে কিছু ধরণের মাছ বিপজ্জনক যখন আবার অন্য কিছু ধরণের মাছ পুষ্টিকর, সুতরাং এটি বিজ্ঞতার সঙ্গে নির্বাচন করুন চলুন এই প্রবন্ধে দৃষ্টিপাত করা যাক কোন ধরণের মাছগুলি ক্ষতিকারক নয়, এবং সেগুলি আপনার খাদ্য পরিকল্পনার সাথে কতটা সম্পর্কিত তা নির্ভর করে কিছু দৃষ্টিভঙ্গীর উপর

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনি কি মাছ খেতে পারেন?

প্রকৃতপক্ষে,ব্যাপক গবেষণার দ্বারা জানা গেছে যে,বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের মাছ গ্রহণ করা মূলত বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্যই বিশেষ ভাবে প্রয়োজন এর অর্থ হল আপনি আপনার মাছ খাওয়ার খরচ বাড়াতে পারেন যাতে আপনার বাচ্চা বেড়ে ওঠে আরো স্বাস্থ্যসম্মত ভাবেযাইহোক,আপনার মনে রাখা প্রয়োজন যে মাছগুলিতে যেন কোন রকম কড়া রাসায়নিক যেমন –মারকারি না থাকে,তাই সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন

মাছে আছে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও পুষ্টির পরিসর, যেমন-EPA,DHA এবং ভিটামিন D এছাড়াও মাছ আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রণ এবং কপারে সমৃদ্ধ হয় যা আপনার বাচ্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অতএব,আপনি অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকার পরিকল্পনায় এটিকে সংযোজন করুন আপনার বাচ্চাকে আরো বেশি স্বাস্থ্যকর করে তুলতে

প্রকৃতপক্ষে এটি জানা গেছে, যে সকল মায়েরা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাছ খান তাদের সন্তানরা অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান হয় যে সকল মায়েরা গর্ভাবস্থায় এবং তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কখনই মাছের সংস্পর্শে আসেন নি তাদের সন্তানের তুলনায় সুতরাং,এই পর্যায়ে মাছ খাওয়াঅবশ্যই হ্যাঁ

স্তনদুগ্ধ সেবনের সময় মাছ খাওয়ার উপকারিতাগুলি

যখন আপনি আপনার সন্তানকে স্তনদুগ্ধ সেবন করান সেই সময়ে মাছ খাওয়ার অনেক উপকারীতা আছে তার কিছু নিচে আলোচনা করা হল

  • মাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ আছে যা কেবল বাচ্চারই উপকার করে না মায়েরও করে, যখন তিনি সেগুলিকে গ্রহণ করেন
  • মাছ হল ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রধান উৎসএগুলি হল সেই বিশেষ ধরণের ফ্যাট যা সিফুড এ পাওয়া যায় এটি আপনার ছোট্ট সোনার মস্তিষ্কের(ব্রেনের) বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সবদিক থেকেই তাকে আরো বেশী মাত্রায় স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সাহায্য করেওমেগা-3 এর মধ্যস্থ DHA এবং EPA বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্রে বিকাশেও প্রভূত সাহায্য করে
  • মাছে থাকে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা আপনার বাচ্চার বিকাশের সহায়ক হয়
  • এটি খুব সাধারণ ব্যাপার, যে সকল মায়েরা স্তন্যপান করানোর সময় মাছ খান তাদের বাচ্চাদের স্বাভাবিক বিকাশ সময়ের তুলনায় অনেকটা আগে হয় অন্য যে সকল মায়েরা মাছ খান না তাদের বাচ্চাদের তুলনায়

স্তনদুগ্ধ সেবনের সময় মাছ খাওয়ার উপকারিতাগুলিসুতরাং, যে সকল মহিলারা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য এটি খুব ভালো একটি ধারণা, তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য যাইহোক, এই সময়ে মাছ খাওয়া অবশ্যই নিরাপদ

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাছ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলি

যখন আপনার বাচ্চার উপকারের জন্য মাছ খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, তখন মাছ খাওয়ার আগে সেটি খাওয়া কতটা নিরাপদ সেটিও চেক করে নেওয়া ততটাই গুরুত্বপূর্ণ মাছ খাওয়ার কতকগুলি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখানে আলোচনা করা হল

  • যে সকল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাদের বর্জ্য পদার্থ নদী এবং সমুদ্রে মারকারি অধঃক্ষেপণ করেজলের মধ্যস্থ ব্যাকটেরিয়া সেগুলিকে মিথাইলমারকারিতে রূপান্তরীত করে, যেগুলি জলের সাথে খাদ্য হিসেবে মাছ গ্রহণ করে এই উপাদানটি মাছের শরীরে থেকে যায় এমন কি রান্না করার পরেও, যা ভীষণ ভাবে ক্ষতিকারক
  • আবার কিছু ধরণের মাছে অতিরিক্ত মাত্রায় মারকারি পাওয়া যায়, যেমনতলোয়ার মাছ, হাঙর এবং ম্যাকারাল এবং এই মাছগুলি খাওয়ার ফলে জ্ঞানীয় বিকাশের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে
  • যদি বাচ্চার শরীরে কোন ভাবে মিথাইল মারকারি প্রবেশ করে তবে তা তার মস্তিষ্কের বিকাশকে দুর্বল করে দেয় যদি খুব সামান্য পরিমাণেও মারকারি মায়ের শরীরে প্রবেশ করে এবং তার বুকের দুধে পাওয়া যায় তবে সেটি বাচ্চার উপর যথেষ্ট বিরূপ প্রভাব ফেলে, যা আরো বেশী মাত্রায় তার ক্ষতিসাধন করে তোলে
  • মারকারি বাচ্চার বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ খারাপ প্রভাব ফেলেমস্তিষ্কের অংশ বিশেষ যা ব্যবহৃত হয় পড়তে, চিন্তা করতে, শিখতে,মনে রাখতে এবং এমনকি অঙ্গ সঞ্চালনাও ব্যাহত হতে পারে যদি কোন ভাবে শরীরে মারকারি প্রবেশ করেএমনিতেই মানুষের শরীরে রাসায়নিক শোষণের প্রবণতা দ্রুতসুতরাং,অতিরিক্ত মাত্রায় মারকারি যুক্ত মাছ বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়
  • এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে,বর্তমান কালে সমস্ত জলাশয়গুলি দিন দিন দূষিত হয়ে উঠছে, এবং মাছের উপরেও তার প্রভাব পড়ছে, যেগুলি আপনি রান্না করছেনএর অর্থ হল এই যে, ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলি এবং দূষিত পদার্থগুলি আপনার বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে যদি আপনি সেই মাছগুলি গ্রহণ করেন
  • বৃহৎ আকৃতির মাছে অনেক বেশী মাত্রায় মারকারি থাকে যেহেতু সেগুলি তাদের চারিপাশের ছোট মাছগুলিকে খেয়ে নেয়
  • সুপার মার্কেট গুলিতে প্রক্রিয়াজাত হোয়াইট টুনা মাছ সহজেই কিনতে পাওয়া যায়, যেগুলিতে অতিরিক্ত মাত্রায় মারকারি থাকে, যা কিনে খরচ করার জন্য সুপারিশ করা হয় নাবুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মাছ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলি

মাছ তাজা কিনা কিভাবে বুঝবেন?

মাছটি তাজা কিনা তা আপনি চেক করে নিতে পারবেন মাছটির বহিরাকৃতির গঠন সাধারণভাবে দেখেই যদি মাছের আঁশগুলি চকচকে এবং দৃঢ় হয়, তার অর্থ আপনি যেই মাছটি নিয়েছেন সেটি তাজা অন্যদিকে,যদি সেগুলি নিস্তেজ দেখতে লাগে এবং নজর না কাড়ে তবে আপনার সেই মাছগুলি কেনা মোটেই উচিত নয়

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় যে মাছগুলি নিরাপদ

বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য অনেক ধরণের মাছ রয়েছে যেগুলি নিরাপদ, এবং যেগুলি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি কার্যকরী প্রভাব ফেলেসেগুলি হল—

  • পার্বত্য নদীর মৎস বিশেষ(চার)
  • ক্যাপেলইন
  • আটলান্টিক ম্যাকেরেল
  • হেরিং
  • চিংড়ি(শ্রিম্প)
  • মুলেট (সামুদ্রিক মৎস বিশেষ)
  • শামুক ও গলদা চিংড়ি বিশেষ
  • স্যালমন মাছ
  • হ্রদের হোয়াইট ফিশ
  • রেইনবো ট্রাউট (রুই বিশেষ)
  • হক(এক ধরণের মাছ)
  • ঝিনুক
  • হেরিং জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস বিশেষ
  • নীল কাঁকড়া

বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় যে মাছগুলি নিরাপদস্তন দুগ্ধ সেবনের সময় যে মাছগুলি খাওয়া এড়িয়ে চলবেন

অনুরূপভাবে, এমন কতক গুলি মাছ আছে যেগুলি মায়েদের তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না এই সকল মাছ গুলিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক যেমন মারকারি(পারদ) থাকে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যে খারাপ প্রভাব ফেলেএগুলি হল—

  • সার্ক(হাঙ্গর)
  • মার্লিন
  • সোর্ড ফিস(তলোয়ার মাছ)
  • স্যালমন,তাজা টুনা,ট্রাউট,ম্যাকেরেল এবং হেরিংএই শ্রেণীর মাছ গুলির মধ্যে দুধরণের বেশী মাছ প্রতিসপ্তাহে খাওয়া আপনার উচিত হবে না
  • অতৈলাক্ত মাছ, যেমন পাহাড়ি স্যালমন, সিবাস(সামুদ্রিক বাস)এবং হ্যালিবাট (একই পাশে দুই চোখ বিশিষ্ট বৃহৎ আকারের মাছ বিশেষ)

ওমেগা-3 লাভের জন্য মাছের বিকল্প গুলি

খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার আছে যেমন ডিম, দুধ এবং দইয়ে এখন ওমেগা-3 সুরক্ষিত থাকে,কিন্তু সেগুলি কেবলমাত্র ALA- সমৃদ্ধ হয়, যদিও এগুলির কিছু সুবিধা আছে, কিন্তু আপনি এই খাদ্য তালিকার খাবার গুলি থেকে EPA এবং DHA পাবেন নাতিসি দানা হল অন্য একটি খাদ্য উপাদান যা ALA সমৃদ্ধঅতএব, পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের জন্য আপনি ওমেগা-3 সম্পূরক নির্বাচন করতে পারেন

যদিও মাছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্য বিকাশের সহায়ক হয়, তাই আপনি যদি আপনার শিশুকে স্তনপান করান তবে সেক্ষেত্রে মাছ গ্রহণ করার পূর্বে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে সেইগুলিতে কোন রকম ক্ষতিকারক পদার্থ আছে কিনা সে বিষয়ে ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি এর উপকারিতার গুরুত্বকেও অতিক্রম করে যায় অনেকগুণ বেশি, সুতরাং মাছ খাওয়ার আগে আপনি ভালোভাবে সব কিছু পরীক্ষা করে নিন আর সঠিক সম্পূরক গুলি নির্বাচন করুন