আপনার বাচ্চার মুখ দিয়ে কি অনর্গল লালা ঝরে?আপনি কি তার মুখের কাছাকাছি থুতনি অঞ্চলে লালচে চিহ্নগুলিকে চিহ্নিত করতে পারেন?মুখ দিয়ে লালা গড়ানোর বা লালা ঝরার বিষয়গুলি এমন একটি জিনিস যা স্বভাবতই বাচ্চাদের মধ্যে দেখা গিয়ে থাকে যখন তারা অস্বাভাবিক হারে মুখ থেকে লালা ফেলে।আর বাচ্চাদের মুখ থেকে এই অস্বাভাবিক হারে লালা ঝরার বেশ কয়েকটি কারণ আছে।সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হল তাদের দাঁত ওঠা।
টিথিং বা দাঁত ওঠার র্যাশের অপর আরেকটি নাম দেওয়া হয়েছে ‘লালা ঝরার র্যাশ’ যা হয়ে থাকে যখন বাচ্চার নতুন দাঁত ওঠে।বেশীরভাগ শিশুদেরই মোটামুটি তাদের 6 মাস বয়স থেকে দাঁত ওঠা শুরু হয় এবং আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে এটির কারণে কীভাবে শিশুদের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে।দাঁত ওঠার সময় তাদের মুখে,গালে এবং গলায় বেরোনো র্যাশগুলির পাশাপাশি এর অন্যান্য উপসর্গগুলিও লক্ষ্য করতে পারেন যেমন সংবেদনশীল মাড়ি বা চোয়াল,কঠিণ বস্তুগুলিকে চিবানোর চেষ্টা এছাড়াও তার বিরক্তি-প্রবণতা।
বাচ্চাদের মুখ থেকে লালা ঝরাটা ঠিক আছে বলে মনে হতে পারে,কিন্তু এটি সব সময়ের জন্য ঠিক থাকে না কারণ লালায় থাকে পাচক উৎসেচকগুলি যা শিশুর সংবেদনশীল ত্বকে প্রভাব ফেলে।শিশুর ত্বক এই তরলের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় যার ফলে এই উঁচুনিচু র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলি গড়ে ওঠে যা ছোট্ট ব্যক্তিটিকে বিরক্ত করে তুলতে পারে এবং তাছাড়াও এটির ফলে আবার সংক্রমণও হতে পারে।এর জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা্র মাধ্যমে আপনার ছোট্ট সোনাটিকে সহায়তা করা সব সময়ের জন্যই ভাল উপায়।
১. সে যখন ঘুমাবে আপনি তার মুখের নিচে একটি শোষোণকারী নরম ছোট প্যাড দিয়ে রাখতে পারেন।এটি ময়েশ্চার বা আদ্রতাকে টেনে নেবে এবং র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলিকে এড়াতে একটি বৃহৎ পরিসরে সহায়তা করবে।মাঝে যখন আপনার বাচ্চা জেগে ওঠে সেই ফাঁকে আপনি তার লালাগুলিকে পরিষ্কার করে এবং প্রয়োজন হলে কাপড়ের বা প্যাডের টুকরোটিকে পরিবর্তন করে দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
২. আপনি আবার পেট্রোলিয়াম জেলির সাথে সামাণ্য অ্যালভারার জেলি যোগ করে তার মুখমন্ডলের চারপাশে,গলায়,থুতনিতে লাগিয়ে দিতে পারেন,এটি তার চুলকানির ভাবটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে।
৩. নারকেল তেল ত্বকের যত্নে সাহায্য করে।এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলি যা র্যাশের ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।এছাড়াও এই তেল আবার ফুসকুড়িগুলির উপর একটি প্রতিরক্ষামূলক আস্তরণ গড়ে তোলে।
৪. আপনি একটি নরম ওয়াশক্লথকে ভিজিয়ে নিয়ে সেটিকে ফ্রীজের ভিতরে এক ঘন্টার জন্য রেখে দিতে পারেন।এবার এটিকে বের করে এনে আপনার শিশুকে সেই ওয়াশক্লথটির উপর চিবানোর জন্য বলুন।এটি অন্তত কিছু সময়ের জন্য তার যন্ত্রণা লাঘব করতে পারবে।
৫. কখনও সখনও আবার বাচ্চার গলা ব্যথার কারণেও তার মুখ থেকে লালা পড়তে পারে।আপনি একটি আদ্রতা সৃষ্টিকারী শীতল হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে দেখতে পারেন যা চারপাশের বাতাসটিকে সামাণ্য আদ্র করে রাখবে।এটি শিশুটিকে গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং চুলকানো থেকে স্বস্তিবোধে সহায়তা করবে।
৬. যদি আপনার ছোট্টটি 6 মাসের বেশী বয়সী হয়ে থাকে,তবে আপনি তাকে পাতলা করে নেওয়া সামাণ্য ঠাণ্ডা ফলের রস অথবা জল দেওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।আপনি এটি করতে পারেন তার খাওয়ানোর মাঝে যাতে তার গলা খুব শুকিয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করার জন্য।
৭. আপনার পরিষ্কার হাত দিয়ে ধীরে ধীরে আপনার সোনার চোয়ালগুলিকে ঘষে দিন,এই হালকা চাপটি যন্ত্রণা থেকে তাকে কিছুটা সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে।
৮. আপনার বাচ্চা যদি কঠিন খাদ্য খাওয়া শুরু করে থাকে,তবে তার মাড়ির যন্ত্রণার জন্য আপনি তাকে চিবিয়ে খাওয়ার মত কিছু সবজি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন,শুধু নিশ্চিত করে নিন যে সেগুলি সঠিকভাবে কাটা হয়েছে এবং সেগুলি থেকে শ্বাসরোধের কোনও কারণ যেন না ঘটে।
লাল ঝরার র্যাশগুলি আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে যখন শিশুটি র্যাশগুলির উপর ঘষতে শুরু করে শুধু একটু আরামবোধের জন্য।যখন বাচ্চারা তাদের অপরিষ্কার হাতগুলির দ্বারা সেই র্যাশগুলিকে ঘষে ফেলে তাদের অপরিষ্কার হাতের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলি তাদের সেই ঘষে ফেলা র্যাশের ফাটলের ভিতরে প্রবেশ করে এবং অবস্থাটিকে আরও খারাপ করে তোলে।
কখনও কখনও র্যাশগুলি ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেগুলি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠতে পারে,এবং শিশুদের এগুলিকে ভীষণভাবে ঘষে ফেলার প্রবণতা থাকে।এটি মোটেই নিরাপদ নয়।এ ব্যাপারে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।মাঝেমধ্যে,এই র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলি ভীষণভাবে সংক্রামিত হয়ে ওঠে এবং এমনকি এগুলি থেকে বেশ বাজে গন্ধও ছাড়তে শুরু করে।শিশুর লালা ঝরে হয়ে থাকা র্যাশের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি পুনরায় ডাক্তারকে ডাকার একটি লক্ষণ।আপনার সন্তানকে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে রেখে দেবেন না।এই র্যাশগুলির কারণে যখন আপনার বাচ্চা যন্ত্রণার সাথে ভীষণ ভাবে লড়াই করে চলে এবং খুব অস্বস্তিবোধ করে,তখন সেই যন্ত্রণা থেকে তাকে মুক্তি দিতে নিরাময়ের অপেক্ষা না করে বরং যন্ত্রণা উপশমের জন্য কিছু করা ভাল।আপনার বাচ্চার দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া চলাকালীন আপনাকে যে জিনিসটি এড়াতে হবে তা হল যন্ত্রনা উপশমকারী ওষুধগুলির প্রয়োগ করা,কারণ এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যথা উপশমকারী বেঞ্জোকেইন যেটি রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস করে এবং তার ফলে অন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
দাঁত ওঠা হল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা আপনি আপনার ছোট্ট সোনাটির ক্ষেত্রে দেখতে পান।এগুলি হল বৃদ্ধির ইতিবাচক লক্ষণ,কিন্তু এর পাশাপাশি আবার মুখ থেকে লালা ঝরা এবং সংক্রমণের মত কিছু বিষয়গুলিরও উদয় হয়।যেহেতু এই ব্যাপারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে,তাই এই নিয়ে অযথা আপনার আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।শুধুমাত্র এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার ছোট্টটিকে সাহায্যের জন্য ছোট ছোট পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা নিশ্চিত করুন।সহজলভ্য বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্যবহার করার চেষ্টার দ্বারা আপনার আদরের ছোট্ট সোনাটিকে যতটা সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করুন এবং এগুলি আপনার ছোট্ট অমূল্য সম্পদটিকে সহায়তা করবে।তবে যখন বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে লক্ষণগুলি ভাল হওয়ার পরিবর্তে ক্রমশ খারাপের দিকে এগোচ্ছে তখন আপনার একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে অবশ্যই ডাকা প্রয়োজন।