আপনার সন্তানের সম্ভবত তার চার থেকে সাত মাস বয়সের মধ্যে যে কোনও সময়ে তার মাড়ি থেকে প্রথম কয়েকটি দাঁত উঁকিঝুঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে। শিশুদের দাঁত ওঠার সাথে সাধারণত নানা ধরনের বিভিন্ন উপসর্গ জড়িত থাকে।দাঁত ওঠার লক্ষণগুলি যেমন জ্বর,জ্বলন,ব্যথা এবং স্বাভাবিক প্রকৃতির অস্বস্তিগুলি বচ্চাদের ঘ্যান ঘ্যানে করে তুলতে পারে এবং বেশ যন্ত্রণার মধ্যে ফেলতে পারে।শিশুর দাঁত ওঠার যন্ত্রণাগুলি কি এবং কীভাবে সেগুলি নির্ণয়ের দ্বারা বাচ্চার যন্ত্রণা লাঘবের ক্ষেত্রে আপনি তাকে সহায়তা করতে পারেন সে সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরী করে নিন।
“দাঁত ওঠার সময় কি বাচ্চাদের জ্বর হয়?”এটি প্রায় প্রতিটি বাবা–মায়েদের মনে জেগে ওঠা খুব সাধারণ একটা প্রশ্ন,কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সন্তানদের দাঁত ওঠার সময় হালকা জ্বর হতে লক্ষ্য করেন।যাইহোক,তবে এক্ষেত্রে এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যা দাঁত ওঠার লক্ষণ হিসেবে শিশুদের জ্বর হওয়ার ব্যাপারটিকে চূড়ান্তভাবে প্রতিপন্ন করে।এর কারণ হল দাঁত ওঠার সময় দেহের তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে যেতে পারে কিন্তু সেটা জ্বর হিসেবে বিবেচনা করা যায় এমন মাত্রায় বেড়ে যায় না।আপনার বাচ্চার রেকটাল তাপমাত্রা যদি 100.4 ডিগ্রী ফারেনহাইটের থেকে বেশি থাকে এবং তার পাশাপাশি ডায়রিয়া,ক্ষুধামান্দ্য,বমি হওয়া ইত্যাদির মত আরও অন্যান্য উপসর্গগুলি যুক্ত হয়,সেক্ষেত্রে হয়ত এগুলি আপনার সোনার অন্য কোনও অসুস্থতাকে ইঙ্গিত করতে পারে।এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল হল কোনও রকম গুরুতর জটিলতা আছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য চিকিৎসাগত পরামর্শ গ্রহণ করে সেইমত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর কেন হয়–এই প্রশ্নের বেশ কয়েকটি উত্তর আছে। যেহেতু দাঁতগুলি মাড়ি চিঁড়ে বেরিয়া আসে,তাই সেক্ষেত্রে মাড়িতে জ্বলন বা প্রদাহের সৃষ্টি হয়,যা সামাণ্য মাত্রায় জ্বরের কারণ হয়ে উঠতে পারে।আবার দাঁত ওঠার সময় জ্বর হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্রিয়ার ফলেও। মাড়িগুলি যখন চিঁড়ে যায় তখন বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া তার মধ্য দিয়ে ক্ষণস্থায়ীভাবে শিশুটির রক্তে প্রবেশ করতে পারে।এই ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে দেহের লড়াই এর জন্যই হালকা মাত্রায় জ্বর হতে পারে।
আরও বলা যায় যে,এই সময় শিশুদের অধিক পরিমানে লালা উৎপন্ন হয়, যা অন্ত্রে পৌঁছায় এর ফলে শিশুদের মল পাতলা হয়ে যায়।যদিও ডায়রিয়া আক্রান্ত মলের মত এটা হয় না।
দাঁত ওঠার আগের মুহুর্তে মাড়ি ফুলে যাওয়ার ফলে আপনার বাচ্চার দাঁতের প্রদাহ সৃষ্টি হয়।যন্ত্রণা এবং জ্বর যা এই প্রদাহের সাথে হয়ে থাকে তা প্রশমিত হওয়ার আগে এক থেকে দুই দিন ধরে চলতে থাকে।দাঁতগুলি বিভিন্ন সময়ে উঠতে পারে,আপনি লক্ষ্য করবেন যে প্রতিবার দাঁত ওঠার সময় তার দেহের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়। যাইহোক,তবে প্রত্যেকটি দাঁত ওঠার সময় যন্ত্রণা এবং দেহের তাপমাত্রার বৃদ্ধি আগের দাঁতটি ওঠার চেয়ে কম হবে।
দাঁত ওঠার জ্বর যেহেতু খুব সামান্য প্রকৃতির হয়ে থাকে,তাই এটি নিরাময়ের জন্য আপনাকে কোনোরকম ওষুধের প্রয়োগ নাও করতে হতে পারে।ট্যাবলেট আকারে প্রাপ্ত শিশুদের দাঁত ওঠার জ্বর নিবারণের ওষুধ গ্রহণের পরামর্শও দেওয়া হয় না যেহেতু এগুলিও যে কাজ করেই এমন কোনো প্রমাণ নেই এবং সেগুলি নিয়ন্ত্রিতও নয়।
এছাড়াও আবার দাঁত ওঠার যন্ত্রণার জন্য আপনার সন্তানের কোনও কিছুকে চিবানোর ঝোঁকের ক্ষেত্রে আপনি যে কোনও রকম কিছু ভুল ভ্রান্তি করে বসবেন না সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করুন।শিশুর কোনও কিছু চিবানোর ঝোঁককে প্রশমিত করার ক্ষেত্রে তাকে আপনার নিরাপদ প্লাস্টিক বা রাবারের খেলনা প্রদান করার উচিত।আপনার ছোট্টটির মাড়ির জ্বালা–যন্ত্রণা হ্রাস করতে এবং তা থেকে তাকে ভুলিয়ে রাখতে চুষিকাঠি এবং হিমায়িত টিথিং রিংগুলিও আবার বেশ সহায়ক হতে পারে।এমন কোনও খেলনা প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন যেগুলি সহজেই ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে গিয়ে বিষম লাগার মত বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে।
যন্ত্রণা উপশমের জন্য আপনি আবার কিছুটা ঠাণ্ডা জলের মধ্যে আপনার হাতের আঙ্গুল কিছু সময়ের জন্য ডুবিয়ে রেখে তারপর সেই আঙ্গুল দিয়ে আপনার সোনার মাড়ির উপর ধীরে ধীরে মালিশ করে দিতে পারেন।এছাড়াও আবার আপনি আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়া নিতে পারেন যে আপনার ছোট্টটির মাড়ির যন্ত্রণা উপশমের জন্য উপযুক্ত কিছু অয়েনমেন্ট বা মলম তাকে দেওয়া যায় কিনা।
আপনি যদি আপনার বাচ্চার মুখে কিছু র্যাশ বেরোতে লক্ষ্য করেন,বিশেষ করে লালা ঝরার কারণে থুঁতনি অঞ্চলে,তবে সেক্ষেত্রে সেগুলির চিকিৎসার জন্য আপনি কোনও হালকা ক্রীম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন কিনা সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করা নিন।মনে রাখবেন,তার মুখ থেকে ঝরে পড়া লালা কেবল আলতো করেই মুছে নেবেন এবং কোনও রকম ঘষাঘষি করবেন না কারণ যদি তা করেন তবে পরবর্তীতে তা র্যাশগুলিকে কেবল আরও খারাপই করে তুলবে।
এটা স্বাভাবিক যে মা বাবারা আতাদের সন্তানদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাল অনুভব করাতে চান এবং তার জন্য তাঁরা সবকিছুই করার চেষ্টা করে থাকেন।তবে এগুলি হল এমন কয়েকটি ব্যাপার যেগুলি আপনার এড়িয়ে চলা উচিত যখন আপনি আপনার সন্তানকে তার দাঁত ওঠার যন্ত্রণা থেকে উপশম দেওয়ার জন্য সাহায্য করার চেষ্টায় রত থাকেন।
এটা স্বাভাবিক যে দাঁত ওঠার সময় আপনার বাচ্চা ঘ্যান ঘ্যানে হয়ে উঠবে এবং স্বভাবতই তার মেজাজও খারাপ থাকবে কারণ সে যেসকল অস্বস্তি এবং কষ্টগুলির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে তার জন্য এটা তার ক্ষেত্রে হওয়াটা সমর্থনযোগ্য।তবে আপনি যদি আপনার সন্তানের দাঁত ওঠার সময় তার মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি লক্ষ্য করে থাকেন,সেক্ষেত্রে এটি হয়ত আরও অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে থাকতে পারে এবং সেক্ষেত্রে যত শীঘ্র সম্ভব একজন ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়ারই সুপারিশ করা হয়।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর হওয়াটা যতক্ষণ উপরে উল্লিখিত তাপমাত্রার পরিমাপের মধ্যে সীমিত থাকে ততক্ষণ তা কোনও গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে না।তবে যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে আপনার সোনাটি আরও অন্যান্য উপসর্গের সহিত উচ্চ মাত্রায় জ্বরে ভুগছে,সেক্ষেত্রে সে কোনও গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য অনতিবিলম্বে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরূরী।