স্কুল যাওয়া শিশুদের মধ্যে পিনওয়ার্ম বা কৃমি সংক্রমণ বেশ সাধারণ এবং এগুলি শিশুদের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে বাড়ির প্রাপ্ত বয়স্করাও সংক্রমিত হতে পারে, যদি তারা কৃমির ডিমের সংস্পর্শে আসে। যথাযথ যত্ন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি এই কীটগুলির আরও ছড়িয়ে পড়া এবং আপনার সন্তানের অস্বস্তি আটকাতে সহায়তা করতে পারে।
পিনওয়ার্ম বা কৃমি হল একধরনের কীট, যা সাদা রঙের হয় এবং দুর্ঘটনাক্রমে এর ডিম পাকস্থলীতে প্রবেশ করার পরে মলদ্বার অঞ্চলে অবস্থান করে। কৃমির ডিমগুলি শরীরের বাইরে দুই থেকে তিন সপ্তাহ অবধি বেঁচে থাকতে পারে। একবার খাওয়ার পরে এগুলি অন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে এবং পরিপক্ক মহিলা কৃমিগুলি রাতে মলদ্বারের দিকে সরে যায় এবং চুলকানি ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে সেই অঞ্চলের ত্বকে ডিম পারে।
এই কীটগুলি কোন রোগের কারণ হিসাবে জানা যায় না, তবে গুলি খুব অস্বস্তি বোধ করায় এবং আপনার শিশুকে রাতে ঘুমাতে দেয় না।
কৃমিগুলি ২ থেকে ১২ মিমি আকারের হতে পারে এবং মানুষই এই কীটের একমাত্র প্রাকৃতিক বাহক। ডিমগুলি অবশ্য মাইক্রোস্কোপিক ও স্বচ্ছ এবং খালি চোখে দেখা যায় না।
যেহেতু যে কেউ পিনওয়ার্মে সংক্রমিত হতে পারে, পিনওয়ার্ম সংক্রমণের বেশ কয়েকটি সাধারণ কারণ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে দেখা যায়:
এটাও সম্ভব যে কিছু শিশু পিনওয়ার্ম সংক্রমণের কোনও লক্ষণ দেখায় না। তবে, আপনি এই সাধারণ লক্ষণগুলির জন্য লক্ষ্য রাখতে পারেন, যা সংক্রামিত শিশুদের মধ্যে উপস্থিত হয়:
খোলা চোখে সহজেই কৃমি ধরা পড়ে। সুতরাং, যদি আপনার সন্তানের নীচের অংশে বা মলের গায়ে সাদা কৃমি থাকে তবে সহজেই সংক্রমণ বোঝায় যায়। এটি পরীক্ষা করার সর্বোত্তম সময় হল আপনার শিশু সকালে ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই, রাতে কীটগুলি মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে। সাদা কৃমি পরীক্ষা করতে আপনি আপনার সন্তানের মলও পরীক্ষা করতে পারেন।
কৃমিগুলি দৃশ্যমান না হলে চিকিৎসকরা টেপ পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। এটি একটি সহজ পদ্ধতি যেখানে আপনাকে স্বচ্ছ টেপ নিতে হবে এবং এটি আপনার সন্তানের মলদ্বারের আশেপাশের অঞ্চলে আটকে দিতে হবে এবং এটিকে বাইরে টানতে হবে। এই অঞ্চলে জমা কোনও ডিম টেপটিতে আটকে থাকবে। এটি টানা তিনদিন সকালে করা উচিত এবং টেপগুলি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত, যিনি পরে তাদের মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখতে পাবেন। এইভাবে পিনওয়ার্মের ডিমগুলি পরীক্ষা করা এবং সংক্রমণটি নিশ্চিত করা হয়।
পিনওয়ার্মের জন্য মৌখিক ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, যা ওষুধ কাউন্টারে পাওয়া যায়। শিশুদের জন্য পিনওয়ার্মের ওষুধের প্রথম ডোজটির দুই সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজটি দেওয়া হয়। অ্যালবেনডোজল, মেবেনডোজল এবং পাইরেটেল পামোয়েট হল এই ক্ষেত্রে সাধারণ ওষুধ। যদি মাঝারি থেকে গুরুতর মাত্রার চুলকানি অসহনীয় হয়ে ওঠে, তবে চুলকানি প্রশমিত করার জন্য ডাক্তার মলম এবং ক্রিম লিখে দিতে পারেন।
যেহেতু ডিমগুলি বাবা–মা, যত্নকারী এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে, তাই শিশুটির সাথে নিয়মিত যোগাযোগে আসা সমস্ত লোককেই ওষুধ দেওয়া হয়।
প্রত্যেকের জন্য কাজ করে বলে প্রমাণিত না হলেও, কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা আপনি এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
বেশিরভাগ সংক্রমণের মতোই, পিনওয়ার্মের সংক্রমণ রোধের মূল চাবিকাঠিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক স্বাস্থ্যবিধি অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। পিনওয়ার্মের প্রতিরোধে আপনি যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারেন তা হল:
আপনি যখন পিনওয়ার্মের প্রথম লক্ষণগুলি দেখতে শুরু করেন তখনই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল। একটি টেপ পরীক্ষা পরিচালনা করুন এবং একজন ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হোন। তবে, আপনি যদি কোন ঘরোয়া প্রতিকারের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন, লক্ষণগুলি অব্যাহত থাকলে বা আপনি যদি দৃশ্যমান সাদা কৃমি দেখতে পান তবে আপনাকে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আপনি যদি প্রস্রাব বা মল থেকে রক্ত বেরোতে দেখতে পান এবং আপনার শিশু পেটে ব্যথার অভিযোগ করে, তবে তাকে এখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
পিনওয়ার্ম বা কৃমি অত্যন্ত সংক্রামক এবং এর চিকিৎসায় দেরি করা উচিত নয়। সময় মতো লক্ষণগুলি সনাক্ত করা এবং অস্বস্তি দূর করার জন্য আপনার সন্তানের সময়মতো চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।