আপনি আপনার সন্তানের জন্ম দান করার পর মুখোমুখি হবেন এমন বহু চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হয়ে উঠবে আপনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছোট্টটিকে স্তন পান করানো শুরু করা।যদিও এটি একজন মা হয়ে ওঠা এবং একজন মা ও তার সন্তানের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে সবচেয়ে সন্তোষজনক বলে জানা যায়,তবে আপনি এই সময়েই আরও কিছু বিচিত্র চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হতে পারেন।এই ধরনের চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অত্যন্ত সাধারণ একটি হল ব্লকড অথবা অবরুদ্ধ দুগ্ধ নালীকা,যার মুখোমুখি বহু নতুন মায়েরাই হয়ে থাকেন।
আপনার সন্তানকে স্তন পান করানোর পর্যায়ে এমন একটি সময় উপস্থিত হবে যখন আপনি অনুভব করবেন যে আপনার স্তনগুলি পূর্ণ হয়ে এবং ফুলে উঠেছে।এটি প্রাথমিকভাবে হয়ে থাকে যখন আপনার মধ্যে এটির স্বাভাবিক প্রকাশের তুলনায় আরও বেশি দুধ উৎপাদন হতে থাকে।সাধারণত এই অবস্থাটিই সাধারণ ভাবে পরিচিত অবরুদ্ধ দুগ্ধ নালীকাকে পরিচালিত করে।যেখানে দুগ্ধ নালীর চারপাশের সম্পূর্ণ এলাকাটিই ফুলে যায় এবং উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে।যদি আপনি আপনার বক্ষদেশ পরিদর্শন করেন,আপনি অনুভব করবেন যে সেখানে একটি কঠিণ দলা গড়ে উঠেছে যেটির কারণে আপনি সেই অঞ্চলটির চারপাশের পুরো জায়গাটিতেই একটি হালকা ব্যথা অথবা চুলকানি অনুভব করবেন।যত দ্রুত সম্ভব এই অবরুদ্ধ দুগ্ধনালী গড়ে ওঠার শর্তটির চিকিৎসা করা প্রয়োজন কারণ তা না হলে এর থেকে জ্বরও আসতে পারে।স্তনে দুধের বাধা সৃষ্টি হওয়াকে অবিলম্বে খাতিয়ে দেখা উচিত কারণ এটি থেকে কেবল জ্বর হওয়া ছাড়াও আরও জটিল ও গুরুতর কিছু হতে পারে।
দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হওয়ার প্রাথমিক কারণটি হল মায়ের দেহে উৎপাদিত স্তন দুধের বহিঃপ্রকাশ ততটা ঘন ঘন হয় না দুধ উৎপাদনের অনুপাতে যতটা হওয়া উচিত,তার ফলে এই ব্লকেজ আসে।স্তন থেকে দুধ হয়ত নিম্নলিখিত কোনও কারণের জন্যও খালি না হতে পারেঃ
১. আপনার সন্তান আপনার স্তন থেকে সঠিকভাবে চুষে দুধ টানতে অসমর্থ হওয়ার কারণে অথবা যতটা তার খাওয়া উচিত সেই অনুপাতে তাকে খাওয়ানো না হওয়ার জন্যও আপনার বাচ্চাকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে যায় যার পরিণতিতে দুগ্ধনালীর মধ্যে দুধ জমে থাকে।
২. আপনি হয়ত আপনার পরিচর্যায় সাহায্যকারী একটি নার্সিং ব্রা ব্যবহার করে থাকেন যেটি খুবই টাইট হয়,এটি দুগ্ধনালীটির সংকোচন ঘটায় অথবা ক্ষতি করে এবং তার ফলে দুগ্ধনালীর অভ্যন্তরে দুধগুলি জমে থাকে।
৩. আপনি হয়ত এমনভাবে আপনার স্তনগুলিকে পাম্প করে থাকেন যেখানে স্তনের উপরে যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ হয় না।
৪. বাচ্চাকে দুধ পান করানোর প্রক্রিয়াটি খুবই মাঝেমধ্যে হলে
৫. ঠাণ্ডা লেগে সর্দি হওয়া কিম্বা মানসিক চাপও দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে থাকে।মা যদি চাপের মধ্যে থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে অক্সিটসিনের(এক ধরনের হরমোন যার ফলে স্তন দুধ নিঃসৃত হয়)উপর প্রভাব পড়তে পারে।
৬. ব্রেস্ট বায়োপ্সির মত অস্ত্রপচারগুলি দুধ নিঃসরণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে,এইপ্রকারে মায়ের দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হয়ে যায়।
যদি আপনার দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হয়ে থাকে,আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার স্তন ভিতর থেকে কঠিণ দলা বা পিণ্ড আকারে হয়ে উঠেছে অথবা আপনি খুব ‘আঁটসাঁট‘ অনুভব করবেন।ব্লকেজের চারপাশের অঞ্চলে আপনি হয়ত যন্ত্রণা ও কোমলতা অনুভব করবেন এবং এমনকি সেখানে একটি লালচে দাগও থাকতে পারে।এই দাগটিকে স্পর্শ করলে গরম অনুভূত হবে অথবা সেটি ফুলেও উঠতে পারে,বিশেষ করে বাচ্চাকে স্তন পান করানোর পর।কিছু দৃষ্টান্ত আবার এমন হতে পারে যেখানে অবরুদ্ধ দুগ্ধনালীটি কঠিণ পিণ্ড অথবা স্ফীত হয়ে ওঠার অনুভূতি ছাড়াই সেটি যন্ত্রণাদায়ক এবং কোমল হয়ে উঠতে পারে।স্থানীয় উপসর্গগুলির মধ্যেও আবার স্তন পান করানোর পূর্বে যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি এবং খাওয়া্নোর পরে কোমলতাটির হ্রাস পাওয়া অন্তর্ভূক্ত হতে পারে,যদিও বাচ্চাকে স্তন পান করানোর পরেই স্তনের অবরুদ্ধ অঞ্চলটি ফাঁকা বা সংকুচিত হয়ে যাওয়া অনুভব করবেন।মায়েদের মধ্যে আবার কম মাত্রায় জ্বরও বিকাশ পেতে পারে যদি তারা অবরুদ্ধ দুগ্ধনালীর মত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
যদিও অবরুদ্ধ দুগ্ধনালী আপনার সন্তানকে প্রভাবিত করে না তবে এটি তার পক্ষে স্তন পান করাকে একটু জটিল করে তোলে।খাওয়ানোর সহিত অতিরিক্ত কসরত জড়িত হওয়ার কারণে,বাচ্চা আক্রান্ত স্তন থেকে দুধ চুষতে অরাজি হতে পারে যেহেতু স্বাভাবিকের তুলনায় স্তনটি থেকে দুধের প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার সময়েও বাচ্চাদের স্তন পান করানোর সুপারিশ করা হয় কারণ মায়ের বুকের দুধে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখে এমনকি যদি দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে আপনার মধ্যে সংক্রমণও হয়ে থাকে তখনও এটি বাচ্চার জন্য নিরাপদ।এছাড়াও আবার বাচ্চাকে নিয়মিত স্তন পান করালে তা ব্লকেজ দূর করা নিশ্চিত করে।
একজন চিন্তিত মা হিসেবে,আপনি হয়ত ভাববেন যে কীভাবে দুগ্ধনালীটি বাধামুক্ত করে এই অবস্থা্র সাথে যুক্ত যন্ত্রণা এবং অস্বস্তির থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন।অবরুদ্ধ দুগ্ধনালী নিরাময়ের সবচেয়ে পরীক্ষিত উপায়টি হল বাচ্চাকে স্তন পান করানো বজায় রাখা এবং স্তনের দুধকে খালি করে ফেলা।এটি আপনার জ্বালা যন্ত্রণা হ্রাস করবে এবং আপনি আরও আরামদায়ক ভাবে আপনার সন্তানের পরিচর্যা করতে পারবেন।
অবরুদ্ধ নালীর চিকিৎসার জন্য এখানে কিছু পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত পদ্ধতির উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেনঃ
উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও অবরুদ্ধ দুগ্ধনালীর চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে।
অবরুদ্ধ নালী রোধ করার সহায়তার জন্য এখানে কিছু সহজ পরামর্শ রইলঃ
যদি অবরুদ্ধ দুগ্ধনালীকার কারণে হয়ে থাকা অস্বস্তিটি 24 ঘন্টারও বেশি সময় ধরে থেকে যায় ও বাড়তে থাকে,তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে একজন ডাক্তার দেখানোরই পরামর্শ দেওয়া হয়,যিনি হয়ত উপশমের জন্য আপনার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকগুলিকে নির্ধারণ করতে পারেন।
যদিও দুগ্ধনালী অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়া স্তনদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা,তবুও উপরে বর্ণিত যেকোনও দ্রুত প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।তবে সেগুলি ব্যবহারের পরেও আপনি যদি আপনার অবস্থার ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন খুঁজে না পান তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুকে দেখানো প্রয়োজন এবং এটি থেকে আপনার মধ্যে ম্যাসাটাইটিসের মত মারাত্মক কোনওকিছু যে হবে না সেটি নিশ্চিত করুন কারণ এটির জন্য সাধারণ চিকিৎসা ব্যতিরেকে পৃথক ধারায় প্রতিকারের প্রয়োজন হবে যা একজন মা হিসেবে আপনার প্রাপ্য হওয়া উচিত নয়।