গর্ভাবস্থাকালে আপেল গ্রহণ

গর্ভাবস্থাকালে আপেল গ্রহণ

যখন কোনও মহিলা গর্ভবতী হন,তখন তার গর্ভস্থ শিশুটির স্বাস্থ্যকর বিকাশকে সুনিশ্চিত করার জন্য তার স্বাস্থ্যকর আহার গ্রহণ করা প্রয়োজন।আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন,পর্যাপ্ত ফল এবং সবজি সহযোগে একটি সুষম আহার গ্রহণ করলে তা আপনাকে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুটিকে স্বাস্থ্যকর রাখবে।এই নিবন্ধটিতে,আমরা একটি নির্দিষ্ট ফলের ব্যাপারেই কথা বলব-আপেল।আপনি খুব ভাল করেই জানেন যে আপেল বেশ সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর একটি ফল।কিন্তু সেগুলি কি একজন গর্ভবতী মহিলার জন্যও ভাল?একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য কি সেগুলি কোনও উপকারিতা নিয়ে আসে?এই সবকিছুর খোঁজ পেতে নিবন্ধটি পড়ুন!

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার কোনও জ্ঞাত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলারা অবাধেই আপেল সেবন করতে পারেন।আপেল হল পুষ্টির একটি দুর্দান্ত উৎস এবং হবু মা এবং তার গর্ভস্থ ক্রমবিকশিত শিশু উভয়ের জন্যই এটি বেশ উচ্চমাত্রায় উপকারী।

আপনি যদি গর্ভাবস্থায় আপেলকে আপনার ডায়েটের একটি অংশ করে তুলতে চান,আপনি তা করতে পারেন।সেগুলি সেবন করার পূর্বে কেবল যথাযথ ভাবে সেগুলিকে ধুয়ে নেওয়ার কথা মনে রাখবেন যেহেতু সেগুলি হয়ত কীটনাশক দ্বারা দূষিত হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।সম্ভব হলে জৈব আপেলগুলি সেবন করুন কারণ সেগুলি কীটনাশক এবং মোমের প্রলেপ থেকে মুক্ত হয়ে থাকে।

আপেলের বীজগুলিকে খাওয়া এড়িয়ে চলুন কারণ আপেলের বীজে সায়ানাইড থাকে,যেটি বিষাক্ত।বীজগুলি যখন খাওয়া হয়,তখন তা পাচিত হওয়ার সময় পেটের ভিতরে ধীরে ধীরে সায়ানাইড মুক্ত করে।সুতরাং,সায়ানাইডের বিষাক্তকরণের লক্ষণগুলি দেখা দেওয়ার পূর্বে কিছুটা সময় নিতে পারে।অতএব,আপেল খাওয়ার সময় যাতে তার মধ্যস্থ বীজগুলি কোনও ভাবেই পেটের ভিতরে চলে না যায়,তা নিশ্চিতভাবে নিশ্চিতকরণ করা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আপেলের পুষ্টিমান

আপেলের পুষ্টিমান

আপেলের মধ্যে প্রাথমিকভাবে জল এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে।তবে এগুলিতে আবার গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ জাতীয় সাধারণ শর্করাও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।এছাড়াও এগুলি আবার অ-দ্রবণীয় এবং খাদ্যগত তন্তুগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং এগুলির মধ্যে থিয়ামাইন,রাইবোফ্লাভিন,নিয়াসিন,পাইরিডক্সিন এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ও ফোলেটের মত B কমপ্লেক্স ভিটামিনগুলি দৈনিক RDA এর(প্রস্তাবিত খাদ্যগত অনুমোদন) 1% থেকে 3% এর মধ্যে থাকে।

আপেলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন C (RDA এর 8%)এবং ভিটামিন A,E আর অল্প পরিমাণে ভিটামিন K.এগুলির মধ্যে আবার সামান্য পরিমাণে আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাসের মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজও থাকে।এছাড়াও আপেল আবার বিটা ক্যারোটিন,ক্রিপ্টোজেন্থিন,ফ্ল্যাবোনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিনের মত ফাইটো নিউট্রিয়েন্টগুলিরও একটি দুর্দান্ত উৎস।

আপেলে উপস্থিত প্রধান খনিজটি হল পটাসিয়াম,যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনের জন্য পরিচিত।এছাড়াও আবার আপেল পেক্টিন নামক ফাইবারে সমৃদ্ধ,যা শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে এবং হজমের উন্নয়নে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতাগুলি

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ায় হবু মা এবং তার গর্ভস্থ ক্রমবর্ধিত শিশু উভয়ের ক্ষেত্রেই বেশ কয়েকটি উপকারিতা আছে।আপেল মধ্যস্থ ভিটামিন C অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের মধ্যে মুক্ত মূলকগুলির দ্বরা ক্ষতির পরিমাণকে হ্রাস করে।আপেলে উপস্থিত B কমপ্লেক্স ভিটামিন লোহিত রক্ত কণিকাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে।গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া আবার গর্ভস্থ শিশুর জন্যও ভাল কারণ এটি শৈশবকালীন অ্যালার্জি এবং অ্যাজমা বা হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করে।গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন।

1. অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করেঃ আপেল হল আয়রণের একটি ভাল উৎস যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। সাধারণত গর্ভবতী মহিলারা আয়রণের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।এটির সম্ভাবনাগুলি রোধ করতে,আয়রণ সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি খাওয়ার সুপারিশ করা হয়ে থাকে।এই সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় আপেল সংযোজন করতে পারেন।

2. হজমে সহায়তাঃ গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনগুলি হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি সম্পন্ন করে তুলতে এবং কোষ্ঠকাঠিণ্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে,কিন্তু আপেল খেলে তা এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।আপেলের মধ্যে খাদ্যগত তন্তু থাকে,যা মলকে নরম করে কিন্তু আপনি যদি তাই বলে খুব বেশি আপেল খেয়ে ফেলেন,সেক্ষেত্রে সেটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।গর্ভাবস্থায় আপনি নিয়মিত 1-2 টি আপেল খেতে পারেন।

3. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে সহায়তা করেঃ আপেল হল ভিটামিন C এর খুব ভাল একটি উৎস যা রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করে।সুতরাং এই মুচমুচে সুস্বাদু খাদ্যটি সেবন করুন এবং আপনার সংক্রমণের কবলে পড়ার সম্ভাবনাটি হ্রাস করুন।

4. শক্তি সরবরাহ করেঃ আপেলের মধ্যে গ্লুকোজ,সুক্রোজ এবং ফ্রুকটোজের মত সাধারণ শর্করাগুলি থাকে যা আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি সরবরাহ করতে পারে। সুতরাং আপনি যদি ক্ষুধার্থ হয়ে ওঠেন অথবা নিম্ন রক্ত শর্করার সমস্যায় ভুগে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনি যখন বাইরে যাবেন আপনার হাত ব্যাগের মধ্যে করে একটি আপেল নিয়ে যাওয়া একটি ভাল ধারণা হয়ে থাকে।

5. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পারেঃ প্রত্যহ আপেল সেবন ধমনীর প্রাচীরের মধ্যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা,জমে যাওয়া এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়তা করে।হ্যাঁ, এটি আপনার হৃদয়কে স্বাস্থ্যকর রাখতে পারে।আপেল খাওয়া আবার গ্যাস-অম্বল,হৃদয় জ্বলন থেকে স্বস্তি আনতে পারে।

6. শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করেঃ গর্ভাবস্থায় আপেল খেলে তা আপনার শিশুর মধ্যে অ্যাজমা বা হাঁপানি বিকাশের ঝুঁকি হ্রাস করে।আপেলের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি যা হবু মায়ের ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে।আর শক্তিশালী ফুসফুস শ্বাস কষ্ট এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাকে দূরে ঠেলে রাখতে সহায়তা করে।

7. হাড়ের বিকাশে সহায়তা করেঃ আপেলের মধ্যে থাকে ক্যালসিয়াম যা শিশুদের মধ্যে শক্তিশালী অস্থি বিকাশের জন্য অপরিহার্য।ক্যালসিয়াম আবার গর্ভাবস্থায় আপনার অস্থিসমূহকেও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।আপেল দেহ থেকে ক্যালসিয়াম হ্রাস প্রতিরোধেও সহায়তা করে।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহমূলক যৌগগুলিতে সমৃদ্ধ হওয়ায় আপেলগুলি হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

8. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপেলের ত্বকে কোয়ারসেটিন থাকে,এটি হল একটি অ্যান্টঅক্সিডেন্ট যা স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় কার্যকে উন্নত করে।এটি মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং অ্যালজাইমারের ব্যাধি ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি হ্রাস করে।প্রতিদিন অ্যাপলের রস পান করা অ্যাসিটাইলকোলিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারকে উদ্দীপিত করে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।এটি আবার জারণ জনিত ক্ষতির হাত থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে,যেটি হয়ে থাকে খাদ্যজনিত অভাব এবং জেনেটিক অপ্রতুলতার কারণে।

গর্ভাবস্থায় আপনি কি সবুজ আপেল খেতে পারেন?

গর্ভাবস্থায় আপনি কি সবুজ আপেল খেতে পারেন?

সবুজ আপেল যে স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সরবরাহ করে সেগুলি লাল আপেলের মতই অনুরূপ।গর্ভাবস্থায় আপনি সবুজ আপেলগুলিও খেতে পারেন যেহেতু সেগুলিও খুব স্বাস্থ্যকর।লাল আপেলের তুলনায় সবুজ আপেলগুলিতে কম শর্করা এবং বেশি ফাইবার বা তন্তু থাকে।সেগুলির ত্বক পুরু হয় এবং একটি মজাদার টক-মিষ্টি স্বাদের হয়।সবুজ আপেল খাওয়া বিশেষ করে সেই সকল মহিলাদের জন্য বেশ ভাল,যারা গর্ভাবস্থায় তাদের কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করা গ্রহণের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন।লাল আপেলগুলিতে অ্যান্থোসায়ানিনের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি বেশি থাকে যা দেহ থেকে মুক্ত মূলকগুলি অপসারিত করে এবং এছাড়াও এগুলিতে আবার প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলিও আছে,তবে সবুজ আপেলগুলিও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।সবুজ আপেল আবার রক্তচাপের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।সুতরাং আপনি লাল আপেলের পাশাপাশি সবুজ আপেলও সেবন করতে পারেন কারণ এগুলি সবই সমানভাবে স্বাস্থ্যকর।

এগুলিতে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

যদিও গর্ভাবস্থায় আপেল আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশু উভয়ের জন্যই খুব ভাল হয়ে থাকে,কিন্তু আপনাকে অবশ্যই সেগুলি সংযমের সাথে গ্রহণ করতে হবে কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল সেবন কোষ্ঠকাঠিণ্য,অ্যাসিডিটি ইত্যাদির মত কিছু বিশেষ সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কিম্বা অন্য যেকোনও সময়েই আপেল খাওয়া ভাল।গর্ভাবস্থায় আপনি নিয়মিত 1-2 টি আপেল খেতে পারেন-এগুলি সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে খেলে তা আপনার এবং গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করবে না।তাছাড়াও আবার গর্ভাবস্থায় একটি সুষম ডায়েট অনুসরণ করলে তা আপনাকে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুটিকে ভাল রাখবে!