গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া-নিরাপদ নাকি অনিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া

In this Article

আপনি হয়ত গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী মতামতের কিছু প্রতিবেদন পড়ে থাকতে পারেন,যা গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া নিরাপদ কি অনিরাপদ সে ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরী করে।তবে মাছের প্রচুর ভাল দিকও রয়েছে এবং কয়েকটি শ্রেণীর মাছ বাদ দিলে,গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার পক্ষে নিরাপদ এবং পুষ্টিকর হিসেবে বিবেচিত।

আমি গর্ভবতী,আমার কি মাছ খাওয়া উচিত?

এটি এমন একটি প্রশ্ন যা অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলাদের চিন্তিত করে তোলে।এর উত্তরটিও সোজাসাপটা-হ্যাঁ,আপনার খাওয়া উচিত।তবে অবশ্যই আপনাকে খুব সতর্কতার সাথে মাছগুলিকে চয়ন করতে হবে এবং তার সাথে আপনার ভাগের অংশগুলিকেও বিচক্ষণতার সাথে সীমিত করতে হবে।আপনার শিশুর প্রাথমিক বিকাশগুলির জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বিন্যাসে অপরিহার্য পুষ্টিগুলি আর মাছ সেগুলির মধ্যে অনেক পুষ্টিই প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে থাকে।মাছের মধ্যে কম মাত্রায় সম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে তবে এর মধ্যস্থ উচ্চ মাত্রার পুষ্টিকর উপাদানগুলি ক্রমবিকশিত শিশুর জন্য খুবই প্রয়জন,যেমন ভিটামিন D এবং প্রোটিন,আর এগুলি একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থাকে পরিচালিত করতে সহায়তা করে।ঠিক এই নির্দিষ্ট কারণের জন্যই আপনার ডাক্তারবাবুও আপনাকে আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে মাছ খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করবেন।

এছাড়াও আবার মাছের মধ্যে দুটি অপরিহার্য ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড-EPA এবং DHA উপস্থিত থাকে,যেগুলি অন্যান্য খাদ্যে খুঁজে পাওয়া দুরূহ কিন্তু শিশুর বিকাশের জন্য এগুলি খুবই জরুরি।অতএব,আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে মাছ একটি স্বাগত সংযোজন হিসেবে বিবেচিত।

মাছ মধ্যস্থ মার্কারি বা পারদ

মার্কারি বা পারদ কেবল জলেই পাওয়া যায় না এটি আবার বাতাসের মধ্যেও থাকে যেটি আমরা প্রশ্বাস নিয়ে থাকি।তবে দ্রুত শিল্পায়নের কারণে,রাসায়নিক শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিমেন্ট উৎপাদন কেন্দ্র এবং অন্যান্য শিল্প কারখানাগুলি থেকে আরও বেশি পরিমাণে মার্কারি বাতাসের মধ্যে উন্মুক্ত হয়।থার্মোমিটার,ফ্লুরোসেন্ট লাইট, থার্মোস্ট্যাট ইত্যাদির মতো প্রতিদিনের ব্যবহারের জিনিসগুলিতেও পারদ থাকে এবং যখন তারা পরীক্ষা না করেই সেগুলিকে নদী এবং সমুদ্রগুলিতে ফেলে,তখন তারা এভাবেই নিজেদের অজান্তেই নদী ও সমুদ্রের জল দূষিত করে।ব্যাকটিরিয়া জলের মধ্যে থাকা পারদ বা মার্কারিকে মিথাইল-মার্কারিতে রূপান্তরিত করে।মাছগুলি যখন এই জলে সাঁতার কাটে এবং সেই জলস্থিত অন্যান্য জীবগুলিকে ভক্ষণ করে তখন তাদের দেহেও ঐ জল মধ্যস্থ পারদ বা মার্কারি প্রবেশ করে।তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল এই পারদটি মাছের পেশীগুলির সাথে আবদ্ধ হয় এবং এমনকি রান্না করার পরেও সেগুলি তার মধ্যে অনেক সময় থেকে যায়।

মাছ হল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির আড়ত,যেগুলি একজন গর্ভবতী মহিলার একটি স্বাস্থ্যকর ভ্রূণের প্রতিপালনের জন্য প্রয়োজন।তবে জলাশয়গুলি থেকে অনেক ধরণের বিষাক্ত এবং দূষিত পদার্থগুলি মাছের দেহে প্রবেশ করে এবং সেই মাছগুলিকেই আবার যখন আমরা খাই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আমাদের দেহেও প্রবেশ করার মাধ্যমে মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।যদিও সামাণ্য পরিমাণে মার্কারি হয়ত আমাদের স্বাস্থ্যের উপর সেরকম কোনও বড়সড় প্রভাব ফেলে না,তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে পারদের মাত্রা উচ্চ মাত্রায় থাকলে এবং সেটি পরীক্ষা করা না থাকলে তা শিশুদের স্নায়বিক বিকাশকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।একজন হবু মা হিসেবে,গর্ভাবস্থায় আপনি নিশ্চই মার্কারির সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি থেকে দূরে থেকে থাকতে চাইবেন আর সেই কারণেই,এই পর্বে অপেক্ষাকৃত কম বা সামাণ্য মার্কারিযুক্ত মাছের সাথেই সংলগ্ন থাকা ভাল।

গর্ভবতী থাকাকালীন কতটা মাছ আপনার খাওয়া উচিত?

তাহলে,গর্ভাবস্থায় আপনার কি পরিমাণ মাছ খাওয়া উচিত?FDA(ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এবং EPA(এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি)-এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দুই থেকে তিনটি পরিবেশনের সুপারিশ করে থাকে,যার অর্থ হল 8-12 আউন্স(226-340 গ্রাম)কম মার্কারিযুক্ত মাছ প্রতি সপ্তাহে।স্তনদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রেও এই একই নির্দেশাবলী অনুসরণ করা উচিত তাদের শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার জন্য।

গর্ভবতী থাকাকালীন দেহে খুব বেশি মার্কারি বা পারদ প্রবেশের ঝুঁকিগুলি

ভক্ষণ করার মাধ্যমে মাছ মধ্যস্থ মিথাইল মার্কারি মাছ থেকে আমাদের দেহ দ্বারা শোষিত হয় এবং তা প্ল্যাসেন্টা বা অমরা পেরিয়ে গর্ভস্থ শিশুর দিকে চালিত হয়।এমনকি খুব কম মাত্রার মিথাইল মার্কারিও শিশুর মস্তিষ্কে এবং স্নায়ুতন্ত্রে একটি প্রভাব ফেলতে পারে।দৃষ্টি,ভাষা,সঞ্চালন দক্ষতা এবং জ্ঞানীয় দক্ষতা এবং স্মৃতিশক্তির মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিও এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।অতএব,এই সময় তারা যে ধরণের মাছ সেবন করছে তার উপর প্রতিটি গর্ভবতী মহিলারই নজর রেখে সতর্কতা অবলম্বন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যদি উচ্চ মাত্রায় মার্কারি সেবন করে ফেলেন তবে কি করণীয়

আপনি যদি অজান্তেই উচ্চ মার্কারি বোঝাই মাছ খেয়ে ফেলেন,আতঙ্কিত হবেন না।এর প্রথম পদক্ষেপটিই হল আর অন্য কোনওরকম কোনওকিছুই খাওয়া বন্ধ করা এবং আপনার ডাক্তারবাবুকে এ ব্যাপারে অবগত করানো।আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনার অঙ্গ থেকে এই ধাতব পদার্থটি অপসারণ করতে সাহায্য করার জন্য চিলটিং ওষুধ প্রয়োগের দ্বারা একটি চিলেশন থেরাপি করার পরামর্শ দিতে পারেন।চিলেশন প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা পদ্ধতিটি আপনার দেহকে দেহে প্রবেশ করা মার্কারি থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে এবং তার সাথে আবার আপনার দেহে মার্কারির ক্ষতিকারক প্রভাবটিকেও হ্রাস করবে।

গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি

কোনও গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ সংযুক্ত করার প্রকৃতই ব্যাপক পরিসরে বেশ কিছু উপকারিতা আছে।সেগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেঃ

  • মাছ হল চর্বিহীন প্রোটিনের শক্তিশালী উৎস,এর মধ্যস্থ অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এটি শিশুর চুল,হাড়,ত্বক এবং মাংসপেশীর জন্য কোষগুলি গঠণ করতে সহায়তা করে।
  • স্যালমন জাতীয় মাছ আবার DHA এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের দুর্দান্ত উৎস,যা শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে।তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় শিশুর বৃদ্ধি দ্রুত মাত্রায় হয়,আর তাই এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের মাছ খাওয়া বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ।
  • একটা ভাল পরিমাণে ওমেগা-3 সরবরাহ গর্ভস্থ শিশুর স্মৃতিশক্তির বিকাশের জন্য গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ককারী এবং এটি আবার তাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপেরও উন্নতি সাধন করে।
  • গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরবর্তী কালে মেজাজের দোলাচল এবং অসম্ভব হতাশাকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রেও আবার মাছ খাওয়ার মাধ্যমে DHA এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করার পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকে।
  • হবু মা যদি হাইপার টেনশনে ভুগে থাকেন,সেক্ষেত্রে মাছ খেলে তা আবার তাদের রক্তচাপ হ্রাস করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।মাছ সমন্বিত একটি সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকা আবার রক্ত জমে যাওয়া এবং রক্তে ফ্যাটের মাত্রাও হ্রাস করতে সহায়তা করে থাকে,যা গর্ভবতী মহিলাদের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে।
  • যে সকল গর্ভবতী মহিলারা বেশি মাত্রায় মাছ সেবন করার সাথে পর্যাপ্ত ওমেগা-3 গ্রহণ করেন,তা সে হয় সরাসরি মাছ অথবা অন্য কোনও পরিপূরক গ্রহণের মাধ্যমে,তাদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রসবের ঝুঁকি কম দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি

গর্ভবস্থায় আপনি যে সকল মাছগুলি খেতে পারেন

গর্ভাবস্থায় যখনই কোনও রেঁস্তোরায় খেতে যাবেন বা বাড়িতে রান্না করবেন,গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ মাছের তালিকাগুলি আপনার মাথায় রাখা উচিত।আপনি স্যালমন, শ্রিম্প(বাগদা চিংড়ি),শিঙি,মাগুর জাতীয় মাছ,কাঁকড়া,কড মাছ,গলদা চিংড়ি,ঝিনুক এবং ট্রাউট গুলিকে গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য বেছে নিতে পারেন।হ্যালবাট,চিংড়ি এবং স্ন্যাপার জাতীয় মৎস্যবিশেষগুলি প্রতি সপ্তাহে এক বারের বেশি সেবন করা উচিত নয়,যখন উপরে উল্লিখিত অন্যান্যগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং সেগুলি প্রতি সপ্তাহে 2-3 বারের বেশি পরিবেশন না হওয়ার মধ্যে সীমিত রাকাহটাই উপযুক্ত।পরিবেশন আকারটি রন্ধন প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে তবে মাছের একক পরিবেশনটি সাধারণত 3-6 আউন্স (85 থেকে 170 গ্রাম) এর মধ্যেই নির্ধারণ করা হয়।মাছগুলি যাতে তাজা হয় সে ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন এবং যেখানে সম্ভব হবে জৈব উপায়ে ফার্মে চাষ করা মাছের খোঁজ করুন।

গর্ভবস্থায় আপনি যে সকল মাছগুলি খেতে পারেন

সম্প্রতি,স্যাললমন এবং ফার্মে চাষ করা স্যালমনে পাওয়া PCB (পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনাইলস) এর উচ্চ স্তরের সম্পর্কে বিতর্কিত খবর পাওয়া গেছে।PCB গুলি হল বিষাক্ত রাসায়নিক যেগুলি আবার ক্যান্সারের সাথেও সংযুক্ত।নিরাপদে সুরক্ষিত থাকার জন্য,ওয়াইল্ড স্যালমান কিম্বা জৈব উপায়ে চাষ করা স্যালমন মাছগুলিকেই গ্রহণ করুন।

গর্ভবতী থাকাকালীন আপনার যে মাছগুলিকে এড়িয়ে চলা উচিত

মাছে উপস্থিত মার্কারি মৎস্য প্রেমীদের কাছে মাছের আস্বাদ গ্রহণের ব্যাপারে একটি চরম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।মিথাইল মার্কারি হল একটি নিউরোটক্সিন,যখন সেটি উচ্চ পরিমাণে গ্রহণ করা হয়,তখন তা স্নায়ু তন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।গর্ভাবস্থায়,হাঙ্গর, কিং ম্যাকেরেল, সোর্ডফিশ বা তলোয়ার মাছ এবং টাইল ফিশের মতো মাছগুলি একেবারে কোনওমতেই খাওয়া উচিত নয়।এছাড়াও আবার আপনার এই সময় সুশী,সিভিচ এবং সাশিমি সহ সকল ধরণের কাঁচা মাছগুলির স্বাদই এড়িয়ে চলা উচিত,কারণ এগুলিতে খাদ্যজনিত বিষের ঝুঁকি উচ্চ মাত্রায় থাকে।অনুরূপভাবে আবার হিমায়িত করে রাখা স্মোকোড ফিসগুলি লিস্টারিয়ার(একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ)ঝুঁকি বহন করে,আর তাই সেগুলিকেও গর্ভাবস্থার খাদ্য তালিকায় এড়িয়ে চলা মাছের তালিকাতেই নথিবদ্ধ করা উচিত।

গর্ভবতী থাকাকালীন আপনার যে মাছগুলিকে এড়িয়ে চলা উচিত

চিত্ত বিনোদনমূলকভাবে ধরা পড়া মাছগুলি সেবন করা পারতপক্ষে এড়িয়ে চলুন এবং সম্ভব হলে খাওয়ার আগে যে জলের মাছ সেটি সেই জল সংক্রান্ত সকল খবরাখবর নিয়ে পরীক্ষা করে নিন।এই জাতীয় মাছগুলি সেবন করার আগে,আপনার সেগুলির চামড়া এবং অতিরিক্ত ফ্যাটগুলি বের করে ফেলে দেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় ক্যানে করে পাওয়া যাওয়া টিনজাত টুনা মাছগুলি খাওয়া কি নিরাপদ?

ক্যানে করে পাওয়া টুনা মাছগুলি এমনিতেই উচ্চ ঝুঁকিযুক্ত মাছ হিসাবে আখ্যায়িত।তবে এটি গর্ভবতী মহিলাদের দ্বারা খাওয়া যেতে পারে যদি এটি তাদের প্রধান এবং একমাত্র খাদ্যের উৎস না হয়ে থাকে এবং খাওয়ার পরিমাণটি সীমিত থাকে।মাঝে মধ্যে টুনা পরিবেশন করা হলে তা আপনার শিশুর ক্ষতি করবে না।বাণিজ্যিক মৎস্য শিল্পটি স্বাস্থ্যবিধি মানার দিক থেকে বেশ ভালভাবে নিয়ন্ত্রিত আর তাই রেস্তোঁরা এবং সুপারমার্কেটে পাওয়া যায় এমন টিনজাত মাছগুলি গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সাধারণত নিরাপদ হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় ক্যানে করে পাওয়া যাওয়া টিনজাত টুনা মাছগুলি খাওয়া কি নিরাপদ?

সবচেয়ে ভাল হল যেকোনও রকম মাছ খাওয়ার পূর্বে সেই সকল মাছের উপকারিতা এবং ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে ভালভাবে অবগত হয়ে বিবেচনা করে নেওয়া কিম্বা মাছ খাওয়ার ব্যাপারে আপনার গর্ভস্থ শিশুর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আপনি যদি উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুর কাছে তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। অ্যালব্যাকোর টুনা(যা আবার সাদা টুনা নামেও পরিচিত)এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করুন কারণ এগুলিতে উচ্চ মাত্রায় মার্কারি বা পারদ আছে বলে জানা যায়।এর আরও অন্যান্য জাতের তুলনায় বরং হালকা টুনাগুলিকে বেছে নিন।

স্থানীয় জলাশয়ে ধরা পড়া মাছগুলি কি আমার খাওয়া উচিত?

স্থানীয় জলে ধরা পড়া মাছগুলিকে সাধারণত অনিরাপদ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।এর কারণ হল সময়ের সাথে সাথে নদী এবং সমুদ্রের দূষণের হারও ক্রমশই বেড়ে চলেছে আবার শিল্প কারখানাগুলির অপরিশুদ্ধ রাসায়নিকগুলিও সেই সকল নদী,সমুদ্রের জলে গিয়ে মেশে।তাই,গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সেই সকল জায়গাগুলি থেকে মাছ ধরা এড়িয়ে চলা উচিত যেখানের জলে সামাণ্য পরিমাণেও মার্কারি থাকে বা যেখানের জলে মার্কারি জনিত দূষণের ব্যপ্তির কোনও তদারকি করা হয় না।

ওমেগা-3 গুলি পাওয়ার জন্য মাছ ব্যতীত কী ধরণের ডায়েট আমার গ্রহণ করা উচিত?

যদি আপনি সেই সকল মানুষের তালিকায় পরেন যারা স্বাদ কিম্বা ধর্মীয় কারণের জন্য মাছ খান না,আর সেই জন্য আপনি যদি গর্ভাবস্থায় আপনার দেহে প্রয়োজনীয় ওমেগা-3 গ্রহণের ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন,আপনার হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই।মাছ এবং মাছের তেল ব্যতীতও,আপনি প্রাকৃতিকভাবে ওমেগা-3 পূরণ করার জন্য নিম্নলিখিত খাদ্যগুলি গ্রহণ করতে পারেন।

  • আখরোট হল ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস,আর এক মুঠো আখরোট হল গর্ভাবস্থায় বিকেলের হালকা জলখাবারের জন্য চমৎকার।

আখরোট হল ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস

  • আপনার শরীরে ওমেগা-3 গ্রহণের ভারসাম্যকে বজায় রাখার জন্য খাবার রান্না করার সময় অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ব্যবহার করুন,বিশেষ করে খাবারগুলিকে ভাজাভুজি বা সাঁতলানোর সময়।তবে এটির ব্যবহার খুব বেশি করবেন না কারণ এটি একটি ক্যালোরি সমৃদ্ধ তেল।

জলপাই তেল

  • শণ বীজ হল ওমেগা-3 এর আরেকটি মূল্যবান উৎস।প্রাতঃরাশ অথবা সান্ধ্য আহারের সময় শণের বীজগুলিকে ভেঙ্গে গুঁড়ো করে নিয়ে সেটিকে দই কিম্বা ওটের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সেবন করুন।

শণ বীজ

মাছগুলিকে সঠীকভাবে পস্তুত করার পরামর্শগুলি

সঠিকভাবে মাছ রান্না করা হলে তা আপনার বা আপনার গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন সম্ভাব্য দূষকগুলির যে কোনও ধরণের প্রকটতা হ্রাস করতে সহায়তা করে।পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু উপায়ে মাছকে মার্জিতিভাবে আরও সুখাদ্য রূপে প্রস্তুত করার জন্য এখানে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হলঃ

  1. চিংড়ি, গলদা চিংড়ি এবং ঝিনুক সহ সমস্ত সামুদ্রিক খাবারগুলি ভালভাবে রান্না করা উচিত যতক্ষণ না সেগুলির মধ্যস্থ যেকোনও দূষিত পদার্থ দূর করার জন্য সেগুলির আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা 75 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছায়।
  1. অয়েস্টার,ক্ল্যাম,মাসলস জাতীয় ঝিনুকগুলির খোলাগুলি যদি সহজে খোলা যায় তবে সেগুলিকে সঠিকভাবে রান্না করা যায় কিন্তু যদি না খোলা যায় তবে সেগুলি খাবেন না।
  1. সর্বদা তাজা এবং ভালভাবে হিমায়িত করা সামুদ্রিক খাদ্যগুলি গ্রহণ করার পরামর্শই দেওয়া হয়।যদি সবটা মাছ একসাথে সাথে সাথেই ব্যবহার করার পরিকল্পনা আপনার না থাকে তবে একটি বায়ু নিরুদ্ধ পাত্রের মধ্যে মাছটিকে ভালভাবে সীল করে ফ্রীজের মধ্যে রেখে দিন।
  1. স্বাস্থ্যকর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সবজি এবং মাছ ও মাংস কাটার জন্য বিভিন্ন কাটিং বোর্ড ব্যবহারের অনুশীলন করুন।
  1. কাঁচা খাবার সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলাই উচিত কারণ এগুলি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি মাত্রায় থাকে।কিছু দিনের জন্য আপনার রান্না ঘরের ধার কাছ থেকে সুশী এবং অন্যান্য কাঁচা মাছগুলিকে বাইরে রাখুন।

উপসংহার

অতিরিক্ত খাওয়ার বদলে, গর্ভাবস্থায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ এবং পরিমাণমত তাজা মাছ খাওয়া ভাল।এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন এবং আপনার এই অবস্থায় মাছ খাওয়া ঠিক কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নিন।মনে রাখবেন,এই সময়ে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানের প্রয়োজন এবং যতক্ষণ না প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, মাছ সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিই প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে থাকে।