In this Article
- ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফল বলতে কি বোঝেন ?
- ইতিবাচক গর্ভাবস্থা মূত্র পরীক্ষার ভুল ফলাফলের কারণগুলি কি?
- যেসকল ওষুধের জন্য ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফল পাওয়া যায়
- ফ্যান্টম hCG পরীক্ষা এবং ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফলের সাথে এর যোগসূত্র কোথায়?
- ইতিবাচক গর্ভাবস্থার রক্ত পরীক্ষার ভুল ফলাফল হবার কারণ কি কি?
গর্ভধারণের সম্ভবনা উত্তেজনা আর উদ্বেগের বিষয়। যাইহোক,আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে।অনেক মহিলাই চিরাচরিত বাড়ির গর্ভাবস্থা পরীক্ষার উপর আস্থা রাখেন যে তিনি গর্ভবতী কিনা জানার জন্যে। এগুলো সহজেই ওষুধের দোকানে বা ফার্মাসিতে কিনতে পাওয়া যায়।বেশীর ভাগ এই কিটস গুলোতে একটি কাঠি থাকে যা আপনার মুত্রে উপস্থিত প্রেগনেন্সি হরমোনে-hCG (হিউম্যান ক্রণিক গোনাডোট্রপিন)এর মাত্রা নিরুপণ করে।যদিও এই পরীক্ষা দাবি করে এটি 97%-99% সঠিক তবুও খুব সামান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভুল ফলাফল দেয়।
ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফল বলতে কি বোঝেন ?
যখন আপনার গর্ভবস্থা পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও আপনি গর্ভবতী হন নি তাহলে বুঝতে হবে এটা হল ইতিবাচক গর্ভাবস্থার ভুল ফলাফল।
ইতিবাচক গর্ভাবস্থা মূত্র পরীক্ষার ভুল ফলাফলের কারণগুলি কি?
ইতিবাচক গর্ভাবস্থা মুত্র পরীক্ষার ফল কেন ভুল হয় তা জেনে আপনি অবাক হয়ে যাবেন, কিটটা তার কাজ ঠিকভাবে করলেও ফল ভুল হবার অনেকগুলো কারণের কয়েকটি নিচে দেওয়া হল।
1.সাম্প্রতিক কালে যদি আপনার প্রসব বা গর্ভপাত হয়ে থাকে
যদি আপনার সাম্প্রতিক সময়ে আপনি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন অথবা যদি আপনার গর্ভাবস্থায় ছেদ (গর্ভপাত বা গর্ভস্রাবের মাধ্যমে) ঘটে থাকে বিগত 8 সপ্তাহের মধ্যে। তাহলে আপনার hCG এর মাত্রা অনেক বেশী থাকে। এর জন্য আপনার মুত্র পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক(পজেটিভ) হবে।আপনার শরীরে গর্ভাবস্থা শেষ হবার পর থেকে hCG এর মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
2.রাসায়নিক গর্ভাবস্থা
রাসায়নিক গর্ভাবস্থায় তখন হয় যখন নিষিক্ত ডিম্বাণু বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় প্রতিস্থাপনের পর যা আর ভ্রুণে পরিণত হয় না। তাত্ত্বিকভাবে আপনি গর্ভবতী হওয়ায় প্রেগনেন্সি পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হবে, কিন্তু আপনার গর্ভাবস্থা সমাপ্ত হয়ে যাবে আগেভাগে ঘটে যাওয়া গর্ভস্রাবের মাধ্যমে। 25% – 40% গর্ভাবস্থার সমাপ্তি ঘটে অলক্ষিত গর্ভস্রাবের মধ্য দিয়ে।
3.এক্টোপিক গর্ভাবস্থা
যখন কোন নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ু ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয় তখন এক্টোপিক গর্ভাবস্থার সৃষ্টি হয়। ভ্রূণটি বাড়তে পারে না যেহেতু তার বৃদ্ধির জন্য কোন জায়গা থাকে না জরায়ুর বাইরে।এই এক্টোপিক গর্ভাবস্থা হল অন্যতম কারণ ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফলের জন্য। কিন্তু এটা চিকিৎসা সংক্রান্ত অত্যন্ত জরূরী ব্যাপার। আপনাকে অতি দ্রুত ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে।
4.নানারকম শারীরিক সমস্যা
দেহের নানাবিধ শারীরিক সমস্যা যেমন গর্ভাশয়,মুত্রশয়,বৃক্ক,ফুসফুস,স্তন পাকস্থলী প্রভৃতির ক্যন্সার,জেস্টেশনাল ট্রফোব্লাস্টিক ডিজিজ, ওভারিয়ান সিস্ট, বৃক্কের অসুখ বা মুত্রনালীর সংক্রমণ,অ্যাডিনোমায়োসিস এর ফলে মহিলাদের hCG এর মাত্রা বেড়ে যায় তার জন্যে ইতিবাচক গর্ভাবস্থার ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
5.ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ
যেসকল মহিলাদের ঋতুবন্ধ বা মেনোপজের সময় এসে গেছে তাদের hCG এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য ইতিবাচক গর্ভাবস্থার ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
6. বাস্পীভবন বা ইভাপোরেশন লাইন
যদি আপনি প্রস্তুতকারকের নির্দেশ ভালভাবে না পড়েন তাহলে ইতিবাচক গর্ভাবস্থার ফলাফল ভুল পাবেন। এটা নিশ্চিত করবেন যে নির্দেশাবলীতে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যেই আপনি ফলাফল দেখেছেন। যদি আপনি বলে দেওয়া সময়ের বহুক্ষন পরে রেজাল্ট চেক করেন তাহলে মুত্র বাস্পীভবন বা ইভাপোরেশন লাইনের কাছাকাছি থাকার জন্য ভুল ফল দেবে।
7.ত্রুটিপূর্ন গর্ভাবস্থা পরীক্ষা
একটা ত্রুটিপূর্ণ বা সময় পেরিয়ে যাওয়া কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে ভুল ফলাফল হবে। আপনি সব সময় কিটটা দেখে নেবেন ব্যবহারের আগে।
8.অনেক আগে পরীক্ষা করা
বেশ কিছু অত্যন্ত স্পর্শকাতর পরীক্ষা আছে যেগুলো ইতিবাচক ফলাফল দেয় যদি সেটা ওভ্যুলেশনের ঠিক পরের দিন করা হয়। তাই এই পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনি পিরিয়ড মিস করার কমপক্ষে এক সপ্তাহের পর এই পরীক্ষাটি করুন। খুব আগে পরীক্ষা করানো হল একটা সাধারণ কারণ গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফল জন্য।।
9.নমুনা মূত্রে অপদ্রব্যের উপস্থিতি
অনেক সময় মুত্রের নমুনাতে অপদ্রব্য যেমন সাবান বা রক্ত উপস্থিত থেকে ভুল ফলাফল দেয়।
যেসকল ওষুধের জন্য ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফল পাওয়া যায়
আপনি যদি গর্ভধারণের জন্য hCG শট বা গোনাডট্রপিন ওভ্যুলেশানের জন্য নেন তাহলে ইতিবাচক গর্ভাবস্থা ভুল ফল পাওয়া যাবে।
এছাড়াও অ্যান্টিসাইকোটিক, অ্যান্টিহিস্টেমাইনস, অ্যান্টিঅ্যাংজাইটি,ডাইইয়ুরেটিক, পারকিন্সন্স অসুখের ওষুধ এবং নানা রকম ড্রাগ যেমন মেথাডোন, ক্লোরোডিয়াজপক্সাইড অথবা প্রোমেথাজাইন এর প্রভাবে ইতিবাচক গর্ভাবস্থা ভুল ফল পাওয়া যেতে পারে।
ফ্যান্টম hCG পরীক্ষা এবং ইতিবাচক গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফলের সাথে এর যোগসূত্র কোথায়?
ফ্যান্টম hCG হল রক্ত নমুনার দ্বারা করা গর্ভাবস্থা পরীক্ষা যা ইতিবাচক ফল দেয় গর্ভবতী না হওয়া সত্ত্বেও।একজন মহিলার দেহের নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পরীক্ষধীন কিটের সাথে বিক্রিয়া করে গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ভুল ফলাফলের দেয়।
আপনার পরীক্ষা করে দেখার যথেষ্ট কারণ থাকবে যদি আপনার ফ্যান্টম hCG পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হয় কিন্তু আপনার মুত্র নমুনার পরীক্ষার ফল নেতিবাচক হয়।
ইতিবাচক গর্ভাবস্থার রক্ত পরীক্ষার ভুল ফলাফল হবার কারণ কি কি?
যদি আপনার মনে হয় মুত্রের নমুনার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা ফলাফল ভুল তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করান।রক্ত নমুনার পরীক্ষায় মুত্রের নমুনার পরীক্ষার তুলনায় কম মাত্রায় hCG থাকলেও তা ধরা যায়।তাই এই পরীক্ষাটি অনেক বেশী ভরসাযোগ্য।
কিন্তু একটা গুনগত ভাবে খুব ভাল রক্ত নমুনার গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফল ভুল করে ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে কয়েকটি কারণে।কতগুলো কারণ যার জন্য ভুল ইতিবাচক ফলাফল মুত্র বা রক্ত পরীক্ষায় হতে পারে।
নির্দিষ্ট ভাবে কয়েকটা ওষুধ (যেগুলো আগে বলা হয়েছে) টিউমার ওভারিয়ান ক্যানসার মু্ত্রে রক্ত বা প্রোটিন এবং বহুগর্ভধারণের ফলে মহিলাদের শরীরে hCG উচ্চ মাত্রায় থাকে।এছাড়াও রাসায়নিক প্রেগনেন্সি, ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ এবং গর্ভধারনের জন্য চিকিৎসার কারণে অনেক সময় ইতিবাচক গর্ভবস্থার পরীক্ষার ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
যদি আপনার ঘরোয়া প্রেগনেন্সি পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হয়,তাহলে আপনি অবশ্যই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন। আপনি যখন এটা জেনে আনন্দিত হবেন যে আপনি গর্ভবতী, তাহলে আপনি অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন।এটা আপনার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার প্রাক–প্রসবকালীন যত্নের জন্যেও জরুরী,ডাক্তারবাবুর নজরদারীর মধ্যে একটি সুন্দর সুস্থ্ গর্ভাবস্থা লাভ করুন।