In this Article
আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে আপনি নিশ্চয়ই আপনার প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হতে লক্ষ্য করবেন। প্রস্রাবের পরে টয়লেটের বাটিতে যখন ঝুঁকে তাকাবেন, সাধারণ হালকা-হলুদ বর্ণ না দেখে আপনি সম্ভবত গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব দেখতে পাবেন। প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন গর্ভাবস্থার পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় কিছু সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। এই পরিবর্তনটি হলুদ থেকে উজ্জ্বল হলুদ বা গাঢ় হলুদ বর্ণের হতে পারে এবং বিভিন্ন কারণ দ্বারা পরিচালিত হয়।
গর্ভাবস্থায় মূত্রের রঙ কি পরিবর্তন হয়?
স্বাস্থ্যকর ব্যক্তির প্রস্রাবের রঙ খুব হালকা, প্রায় স্বচ্ছ হলুদ থেকে হলুদ রঙের কিছুটা গাঢ় শেডের পর্যন্ত হতে পারে। তবে, গর্ভাবস্থাকালীন, এই পরিবর্তনটি আরও স্পষ্ট দেখা যেতে পারে। এটি একটি তীব্র উজ্জ্বল হলুদ থেকে গাঢ়, প্রায় কমলা-হলুদ বর্ণের হতে পারে।
প্রস্রাবের রঙ ইউরোক্রোম পিগমেন্টের কারণে ঘটে যা ইউরোবিলিন নামেও পরিচিত। ইউরোবিলিন তৈরি হয় যখন দেহ মৃত লাল রক্তকণিকা থেকে হিমোগ্লোবিন ভেঙে দেয়। পিগমেন্টটির উপস্থিতি আপনার প্রস্রাবের ঘনত্বের উপর নির্ভর করবে। যদি আপনার মূত্র পাতলা হয় (আপনি যখন হাইড্রেটেড হন), আপনার প্রস্রাবের পিগমেন্টটি হালকা শেডের হবে। তবে, আপনার মূত্র যদি ঘন আকারে থাকে তবে পিগমেন্টের গাঢ় শেড হবে।
এগুলি ছাড়াও, এমন অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় আপনার মূত্রের রঙ নির্ধারণ করবে। কিডনি যেভাবে জল ফিল্টার করে, গর্ভাবস্থায় তাতে একটি গভীর পরিবর্তন আসে। তার সাথে, গর্ভাবস্থায় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত ভিটামিন ও ওষুধ খাওয়ার কারণেও প্রস্রাবের বর্ণে পরিবর্তন আনতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মূত্রের রঙ পরিবর্তন হয় কেন?
গর্ভাবস্থায় মূত্রের রঙ নির্ধারণ করে যে কারণগুলি সেগুলি নীচে উল্লেখ করা হয়েছে:
১. গর্ভাবস্থা ডায়েট
গর্ভাবস্থায়, আপনারডায়েট180 ডিগ্রিপালটেযায়।আপনিআপনারখাদ্যাভাসসম্পর্কেআরওসচেতনহন।আপনারডায়েটেফল, শাকসবজি, দুগ্ধজাতপণ্যএবংঅন্যান্যস্বাস্থ্যকরখাবারঅন্তর্ভুক্তহবে।কিছুফলওশাকসব্জীগর্ভাবস্থায়আপনারপ্রস্রাবেররঙপরিবর্তনকরতেপারে।
২. ভিটামিন এবং অন্যান্য ওষুধ
অনেক গর্ভবতী মহিলাকে গর্ভাবস্থায় প্রসব-পূর্ববর্তী ভিটামিন এবং পরিপূরক গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। একজন মহিলার শরীর পুরোপুরি ভিটামিনগুলিকে ভেঙে ফেলতে পারে না। শোষিত ভিটামিন এবং অন্যান্য পরিপূরক পুষ্টিগুলি শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রস্রাবের গাঢ়় শেড হতে পারে।
৩. ডিহাইড্রেশন
গর্ভাবস্থায় জল গ্রহণের পরিমাণও আপনার প্রস্রাবের রঙ স্থির করে। অনেক মহিলারা যথেষ্টর বেশি জল পান করলেও গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশনের সমস্যা অনুভব করেন। ডিহাইড্রেশনের আরেকটি কারণ হল হাইপারএমেসিস গ্রাভিডারাম নামে পরিচিত একটি অবস্থা। হাইপারএমেসিস গ্রাভিডারাম এমন একটি অবস্থা যা গুরুতর সকালের অসুস্থতা, বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাস দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই অবস্থাটি গুরুতর সকালের অসুস্থতার কারণ হয় এবং সমস্ত গর্ভাবস্থার মধ্যে প্রায় এক শতাংশের ক্ষেত্রে এটি ঘটে। হাইপারএমেসিস গ্রাভিডারামে গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত বমি হয় যার ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। ডিহাইড্রেশনের কোনও আপাত লক্ষণ নেই এমন ক্ষেত্রে গাঢ় রঙের প্রস্রাব লিভারের জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। আপনার শীঘ্রই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
৪. মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)
মূত্রনালীর সংক্রমণও আপনার মূত্রের রঙে পরিবর্তন আনতে পারে। মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় কারণ এর থেকে অকাল প্রসব শ্রম বা কম ওজনের শিশুর মতো মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের প্রস্রাব, প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি, তলপেটে ব্যথা হওয়া বা প্রস্রাবে রক্ত হওয়া সবই মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ।
৫. হেমাট্যুরিয়া
হেম্যাটুরিয়া হ’ল প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি। অতিরিক্ত লোহিত রক্তকণিকা শরীর থেকে নির্মূল করা প্রয়োজন; এগুলি প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ দ্বারা ফেলে দেওয়া হয় এবং এর ফলে খুব গাঢ় হলুদ বা লাল রঙের প্রস্রাব হতে পারে।
৬. মূত্রথলির সংক্রমণ
মূত্রথলির সংক্রমণটি এক প্রকারের ইউটিআই এবং এটি একটি ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ। গর্ভাবস্থার ফলে কোনও মহিলার দেহে ক্রমবর্ধিত ফ্রিকোয়েন্সিতে হরমোন পরিবর্তনের হতে পারে। এ জাতীয় পরিবর্তনগুলির ফলে সাধারণত মূত্রথলির প্রসারণ ঘটে যা মূত্রথলির আস্তরণকে দুর্বল করে দেয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে। মূত্রথলির সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হতে পারে।
৭. কিডনির রোগ
কিডনি হ’ল সেই অঙ্গ যা শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থকে ফিল্টার করে এবং ফেলে দেয়। কিডনির যে কোনও ব্যাধি সহজেই প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন করতে পারে।
৮. কিডনির পাথর
কিডনির পাথর কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে এবং প্রচণ্ড ব্যথা, বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে এবং প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মূত্র পরীক্ষা করা
গর্ভাবস্থায় সময়ে সময়ে প্রস্রাব পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রকাশ করবে। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে মূত্রের বিশ্লেষণ করলে তা আপনার চিকিৎসককে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা এমন কোনও সম্ভাব্য অবস্থা সনাক্ত করতে সহায়তা করবে। মূত্রথলির সংক্রমণ, কিডনি সংক্রমণ, ডায়াবেটিস এবং এমনকি ডিহাইড্রেশন নিরীক্ষণের জন্য পরীক্ষা করা হবে। প্রস্রাবে উচ্চ মাত্রার প্রোটিনের উপস্থিতি মূত্রনালীর সংক্রমণ বা কিডনি রোগের লক্ষণ। গর্ভাবস্থায় উচ্চ গ্লুকোজ-এর (চিনি) মাত্রা থাকা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসকে বোঝাতে পারে যা সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে বিকাশ লাভ করে। লাল রক্তকণিকা, সাদা রক্তকণিকা বা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ইউটিআই-এর লক্ষণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মূত্র পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি এড়িয়ে যাবেন না। তদ্ব্যতীত, প্রস্রাব করার সময় আপনার যদি কোনও সমস্যা হয় তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করতে দ্বিধা করবেন না।
কখন কোনো ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে
যদিও প্রস্রাবের রঙে পরিবর্তন বিভিন্ন ক্ষতিহীন কারণের ফলে হতে পারে, ভিটামিন গ্রহণ থেকে ডিহাইড্রেশন পর্যন্ত, কিন্তু এটি কখনও কখনও আরও তীব্র অবস্থার কারণে হতে পারে। প্রস্রাব করার সময় জ্বালার অনুভুতি কোনও ইউটিআই নির্দেশ করতে পারে। জল খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করার পরেও, যদি আপনার প্রস্রাবের রঙ গাঢ়় থাকে, তবে এটি লিভার এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়াকে ইঙ্গিত করতে পারে। যদি আপনি খেয়াল করেন যে আপনার প্রস্রাবের রঙ ফ্যাকাশে-হলুদ বা গাঢ়, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
অন্যান্য অনেক শারীরিক পরিবর্তনের মতোই গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের বর্ণের পরিবর্তনও সাধারণ। ডিহাইড্রেশনের কারণে আপনার গাঢ়় বর্ণের প্রস্রাব হতে পারে। এটি নিছক এই ইঙ্গিত দেয় যে আপনার আরও জল খাওয়া উচিত। আপনি যদি আপনার প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তবে আতঙ্কিত হবেন না। জল পান করুন এবং হাইড্রেটেড থাকুন; তবে সমস্যাটি যদি থেকে যায়, তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।