In this Article
গর্ভাবস্থায়, আপনি কি খান বা পান করেন তার সমস্ত কিছুর উপর নজর রাখা জরুরী। নির্বিচারে যেকোন খাদ্যসামগ্রী সেবন শিশুর ক্ষতি করতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে, এই কারণেই আপনি কি খাচ্ছেন এবং কি পান করছেন সেদিকে আপনার নজর রাখা উচিত। অনেকগুলি খাদ্যসামগ্রী এবং পানীয় গর্ভাবস্থায় এড়ানো বা কমপক্ষে খুব সীমিতভাবে খাওয়া উচিত। আইসড টি একটি আশ্চর্যজনক সতেজকারী পানীয়, তবে এতে ক্যাফিন এবং চিনি রয়েছে, তাই গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার জন্য নিরাপদ কিনা তা আমাদের যাচাই করে দেখা উচিত। আসুন দেখা যাক।
গর্ভবতী মহিলারা কি আইসড টি পান করতে পারেন?
প্যাকেৎজাত বা বোতলজাত আইসড টিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় সুপারিশ করা হয় না। আপনি যদি সারা জীবন আইসড টি–এর আগ্রহী প্রেমিকা হয়ে থাকেন তবে গর্ভাবস্থা এই লোভকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং আপনাকে এ থেকে সরে থাকতে হবে। পরিবর্তে, আপনি কম চিনি যুক্ত আইসড টি বাড়িতে তৈরি করে পান করতে পারেন, বা আপনি চিনির পরিবর্তে মধু যোগ করতে পারেন।
আইস টিতে কতটা ক্যাফিন থাকে?
ক্যাফিনের স্তর আপনার পছন্দ করা আইস টি–এর ব্র্যান্ড এবং গন্ধের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। গড়ে, একটি আইসড টি–এর পরিবেশন প্রায় ১২ এমজি থেকে ১৮এমজি ক্যাফিন থাকে। গর্ভাবস্থায়, একজনের পক্ষে প্রতিদিন ২০০ এমজির বেশি পরিমাণ ক্যাফিন গ্রহণ করা উচিত নয়। আইস টি যদি আপনার প্রতিদিনের ক্যাফিন গ্রহণের মাত্রার ভিতরে থাকে, তবে এটির খাওয়ার ফলে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না, কারণ চা–তে কফির চেয়ে কম ক্যাফিন থাকে।
গর্ভাবস্থায় আইস টি কি উপকারী
মাঝারি পরিমাণে হলেও গর্ভবতী মহিলারা যে স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করতে পারেন তার মধ্যে একটি হল চা। আসুন আমরা আইসড টি–এর বিভিন্ন উপকারিতাগুলি জানি:
১. তাত্ক্ষণিক রিফ্রেশমেন্ট বা সতেজতা সরবরাহ করে
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম আপনাকে বিরক্ত করে তোলে, সকালের অসুস্থতার কথা তো উল্লেখ না করাই ভালো। এক গ্লাস আইসড টি আপনাকে উত্তাপ সহ্য করতে সাহায্য করবে এবং সকালের অসুস্থতা দূরে রাখতে সহায়তা করবে। পানীয়টিতে থাকা ক্যাফিনের জন্য আপনি খুব তাত্ক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধিও অনুভব করবেন।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধারণ করে
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির বৃদ্ধি ঘটে এবং চা কোনো রূপেই এগুলি আটকে রাখতে সহায়তা করতে পারে। চায়ের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ডিএনএ–এর ক্ষতি রোধেও কার্যকর।
গর্ভবতী থাকাকালীন আইসড টি পান করার ক্ষতিকারক প্রভাব
ক্যাফিন দিয়ে পূর্ণ, চা আপনার এবং আপনার সন্তানেরও স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে চা পান করার কয়েকটি ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে যা সম্পর্কে আপনার জানা উচিত।
১. গর্ভপাতের কারণ
গর্ভাবস্থায় আপনার ক্যাফিন খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এবং প্রচুর পরিমাণে চা পান করলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফিনের জন্য গর্ভপাত হতে পারে।
২. নিউরাল টিউব ত্রুটির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে
আইসড টি–এর ক্যাফিন ফলিক অ্যাসিড শোষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে, ফলে স্পিনা বিফিডার মতো নিউরাল টিউবের ত্রুটি দেখা দেয়।
৩. জন্মের সময় কম ওজন
গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় আইসড টি–এর বর্ধিত পরিমাণ জন্মের সময় শিশুর কম ওজনের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এটি মূলত চায়ের ক্যাফিনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে হয়।
৪. অ্যানিমিয়াকে ট্রিগার করে
গর্ভবতী মহিলাদের এই সময়কালে প্রচুর পরিমাণে আয়রনের প্রয়োজন হয় এবং চা পান করা প্রায়শই আয়রনের ঘাটতি সৃষ্টি করে। খাবারের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে চা দেহে আয়রনের পরিমাণ হ্রাস করে, যা গর্ভবতী মহিলার রক্তাল্পতার কারণ হয়। বিকল্পভাবে, আপনার প্রয়োজনীয় আয়রন সরবরাহ করতে আপনি আপনার ডায়েটে মাংস এবং হাঁস–মুরগি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
৫. মৃত শিশু প্রসব
ক্যাফিনযুক্ত পানীয়গুলির অত্যধিক গ্রহণ মৃত শিশুর জন্মের অন্যতম কারণ হতে পারে। যদিও চা পানের আকাঙ্ক্ষা বেশি হবে, তবে আপনি গর্ভবতী অবস্থায় নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে আইসড টি পান করবেন না তা নিশ্চিত করুন।
৬. ডিহাইড্রেশনের কারণ
আপনি খেয়াল করবেন যে আপনি চা পান করার পরে প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পায়, কারণ এটি মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে। এটি ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে এবং আপনি গর্ভাবস্থায় শরীরের প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজগুলি হারাতে পারেন।
৭. ঘুম কমে যাওয়া
গর্ভাবস্থায় সতেজ ও স্বাস্থ্যকর থাকার অন্যতম প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা রাতে ভালো ঘুম পাওয়া। আইসড টি পান করার কারণে আপনার শরীরে ক্যাফিনের মাত্রা বাড়ার প্রথম ক্ষতি হল অনিদ্রা, বিশেষত আপনি ঘুমোতে যাওয়ার আগে। আপনার দিন শেষ হওয়ার আগে আপনি কোনোভাবেই যেন চা পান না করেন তা নিশ্চিত করুন এবং এটি অনিদ্রা রোধ করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আইসড লেমন টি কি ভাল?
আইসড টি বিভিন্ন ধরণের স্বাদে পাওয়া যায় এবং আইসড টি প্রেমীদের মধ্যে লেবু একটি জনপ্রিয় জিনিস। যদিও মাঝারি পরিমাণে আইসড লেমন টি পান করার কোনোভাবে ক্ষতিকারক কিছু নয়, তবে বোতলজাত আইসড টিতে উচ্চ পরিমাণে চিনি থাকে, যা এটিকে ক্ষতিকারক করে তুলতে পারে। লেবু চা আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাদকে বাড়াতে পারে তবে চিনির উপস্থিতি এই উপকারিতাটিকে অনেকাংশে কম করতে পারে। পরিবর্তে, আপনি ঘরে বসে ডিক্যাফিনেটেড চা তৈরি করতে পারেন এবং আপনার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এটিতে এক টুকরো লেবু মেশাতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর আইসড টি–এর রেসিপি
১. লেমনগ্রাস মিন্ট আইসড টি
এই সতেজ পানীয়টি সুস্বাদু এবং বানানো সহজ।
উপকরণ:
- টি ব্যাগ– ২টি
- লেমনগ্রাসের ডাঁটি– ১টি
- পুদিনা– ২টি পাতা
- জল– ৪ কাপ।
কিভাবে তৈরী করবেন:
- জল ফোটান এবং আঁচ বন্ধ করে এতে বাকী উপাদানগুলি দিন।
- পাঁচ মিনিটের পরে টি ব্যাগগুলি সরিয়ে ফেলুন, মিশ্রণটি একটি জগ বা বোতলে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন।
- ঠাণ্ডা হয়ে গেলে একটি গ্লাসে ঢালুন, ২টি আইস–কিউব যুক্ত করুন এবং উপভোগ করুন।
২. লেমন পমেগ্রানেড আইসড টি
এটি আরও একটি দুর্দান্ত আইসড টি রেসিপি, এটি অবশ্যই একটি রিফ্রেশ পিক–আপ–এর জন্য পান করা উচিত।
উপকরণ:
- টি ব্যাগ– ২টি
- জল– ৫ কাপ
- ডালিমের দানা– ১ কাপ।
কিভাবে তৈরী করবেন:
- জল ফোটান এবং আঁচ বন্ধ করে টি ব্যাগ ও ডালিমের দানা যোগ করুন।
- টি ব্যাগগুলি সরিয়ে নিন, মিশ্রণটি একটি জগ বা বোতলে ঢালুন এবং সারারাত ফ্রিজে রাখুন।
- পরিবেশন করার সময়, মিশ্রণটি একটি গ্লাসে ঢেলে দিন, কয়েকটি ডালিমের দানা উপরে দিন এবং উপভোগ করুন।
সুতরাং, আমরা নিরাপদে বলতে পারি যে আপনি যদি সংযম করেন এবং প্রচুর পরিমাণে আইসড টি পান করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করেন, তবে আইসড টি বেশি ক্ষতি করবে না। আইসড টি–এর একটি সতেজ গ্লাস আপনার মেজাজকে বিস্ময়করূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে এটি অতিরিক্ত পান করবেন না।