In this Article
গর্ভাবস্থায় আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি পরিবর্তনশীল হয়ে ওঠায় তা আপনাকে সাধারণ অসুস্থতাগুলির প্রতিও আরও বেশি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় আপনাকে কেবল সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশিতেই ধরবে না, সেগুলি আবার আগের থেকেও অনেক বেশি সময় ধরে আপনার মধ্যে রয়ে যাবে।সুতরাং আপনি যদি ভীষণ খারাপ রকম কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদিগুলি আরও খারাপ হতে থাকছে বলে মনে করেন, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলতে পারেন, যেহেতু সেটা অনেক সময় ব্রঙ্কাইটিস হওয়ারও একটা লক্ষণ হয়ে থাকতে পারে।
ব্রঙ্কাইটিস কি?
নাসাপথ বা নিম্ন শ্বাসনালীর একটি প্রদাহের দ্বারা ব্রঙ্কাইটিসকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, যা আপনার শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়াকে মুশকিল করে তুলতে পারে।তাছাড়াও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির মধ্যে একটা ভাইরাল সংক্রমণ আপনার মধ্যে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে যা ব্রঙ্কি বা শ্বাসনালীদ্বয়ের পক্ষে সেগুলি শোধনের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে ওঠে।
ব্রঙ্কাইটিস মূলত দু প্রকারের হতে পারে–তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী।গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে তীব্র ব্রঙ্কাইটিস দেখা দেওয়াটা সাধারণ আর তা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে।এই ধরণের সংক্রমণটি সহজেই চিকিৎসা করা যেতে পারে।কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস বেশ কয়েক মাস থেকে বেশ কয়েক বছর পর্যন্তও স্থায়ী থাকে এবং সংক্রমণটি ফিরে আসতে থাকায় তা আবার ফুসফুসেরও ক্ষতি করে।
গর্ভাবস্থায় ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার কারণগুলি
ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার কতগুলি সাধারণ কারণ হলঃ
1.ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া
ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার প্রায় 90% ক্ষেত্রেই সেটি হয়ে থাকে ভাইরাস জনিত কারণে।সাধারণ সর্দি–জ্বর হয়ে থাকে যে ভাইরাসের কারণে সেই একই ভাইরাস থেকেই এটি হয়ে থাকেঃ রাইনোভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি।এটি আবার ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হয়ে থাকতে পারে।সর্দি–জ্বরের থেকে যে শ্লেষ্মা গড়ে ওঠে তার থেকেও ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে।
2. উত্তেজক পদার্থ
সিগারেটের ধোঁয়া, ধূলিকণা, রাসায়নিকের ধোঁয়া ইত্যাদির মত সাধারণ শ্বাস–প্রশ্বাস জনিত উত্তেজকগুলিও ব্রঙ্কাইটিসের প্রকোপকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।এগুলি আবার প্রদাহকে আরও খারাপও করে তুলতে পারে যার ফলস্বরূপ দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে এবং এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকারক আর শিশুর শ্বাসনালী অঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ করে তোলে এবং এর ফলে তার মধ্যে এর একটা জন্মগত অসুখের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
3.নির্দিষ্ট কিছু পদার্থের কাছে দীর্ঘ প্রকাশ
ধূলোবালি, দানাশস্য, অ্যামোনিয়া, কড়া অ্যাসিড, ক্লোরিন এবং অন্যান্য কয়েকটি জিনিসের সামনে দীর্ঘক্ষণ থাকলে তা ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি
গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণগুলি অন্যদের তুলনায় সাধারণত একটু বেশিই হতে পারে।তারই মধ্যে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলঃ
- কাশি
- শ্বাস–প্রশ্বাসে কষ্ট অথবা গলা ধরে থাকার মত একটা অনুভূতি
- কম মাত্রায় জ্বর কিম্বা অবিচলিতভাবে উত্তরোত্তর তাপমাত্রা বেড়ে চলা
- গলা ব্যথা
- শারীরিক দুর্বলতা, অবসন্ন বোধ হওয়া এবং সারা শরীরে ব্যথা
- বুকে ব্যথা
- ক্ষুধামান্দ্য
- শ্বাস–প্রশ্বাসের দুর্বলতা
এছাড়াও আবার আপনার এর সাথে হলদেটে, ধূসর অথবা এমনকি আবার স্বচ্ছ বর্ণের সর্দিও হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ব্রঙ্কাইটিস নির্ধারণ করা
প্রথম রোগ নির্ণয়টি সাধারণত একটি শারীরিক পরীক্ষা আকারে শুরু করা হয় যেখানে লক্ষণগুলি লক্ষ্য করার পরে, গলদেশ বা স্বরযন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখা হয় সেটি লাল হয়েছে কিনা আর বক্ষপিঞ্জরগুলি পরীক্ষা করা হয় সেগুলি কোনওভাবে ফুলে গেছে কিনা তা দেখার জন্য।এক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন শোনার জন্য ডাক্তারবাবু একটি স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করবেন।
সংক্রমণের ব্যাপ্তি নির্ধারণের জন্য যদিও একটা এক্স–রে করানো হয়, কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এক্স–রে রশ্মির বিকিরণটি শিশুর কাছে পৌঁছানোর ঝুঁকি প্রতিরোধ করার জন্য হয়ত তা এড়িয়ে যাওয়া হতে পারে।থুতু বা কাফটি(যা শ্লেষ্মা, কাশির সাথে ফুসফুস থেকে উঠে আসে)পরীক্ষা করানো হয় এটি নির্ধারণের জন্য যে, অবস্থাটি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহারের দ্বারা নিরাময় হবে কিনা।এটি আবার কোনওরকম অ্যালার্জি পরীক্ষার জন্যও করানো হতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য রোগ নির্ধারণের জন্য আরও নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হবে, যেমন নিউমোনিয়া এবং টিউবারকুলেসিস বা যক্ষার পরীক্ষা, যেগুলির ক্ষেত্রেও এই একই ধরণের উপসর্গগুলি দেখা দিয়ে থাকে।পালমোনারি ফাংশন পরীক্ষা করা হবে, যেখানে ফুসফুস কতটা বায়ু ধরে রাখতে পারে তার পরিমাণ পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে স্পিরোমিটার নামক একটি যন্ত্রে ফুঁ দিতে বলা হবে।
একদম ঠিকঠাকভাবে রোগটি নির্ধারণ করা যায় সাধারণত রক্ত পরীক্ষা থেকে, যা প্রদাহের লক্ষণগুলি সনাক্ত করে এবং হিমোগ্লোবিন (Hb) এবং হেমোটোক্রিট (Ht)-এর মাত্রার পরিমাপ করে।
ঝুঁকি সমূহ
যদিও ব্রঙ্কাইটিসের কারণে আপনার মধ্যে কোনও গুরুতর জটিলতাগুলি ক্রম বিকশিত হতে থাকবে এমনটা হওয়া প্রায় অসম্ভব, তবে এক্ষেত্রেও এমন কিছু ঝুঁকি রয়েছে যেগুলি আপনার মাথায় রাখাটা প্রয়োজন।
1. শ্বাস–প্রশ্বাসে সমস্যা
শ্বাসনালীর প্রাচীরে প্রদাহজনিত কারণে, আপনার ফুসফুস খুব কম পরিমাণেই অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে, যা ভ্রূণের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত অক্সিজেনের মাত্রা সরবরাহে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে।
2. ওষুধপত্রগুলি– যা গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে
বেশ কয়েকটি অ্য্যান্টিবায়োটিক এবং ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।আর সেই কারণেই চিকিৎসকরা সাধারণত বিকল্প প্রতিকার এবং বিশ্রামের প্রস্তাব দিয়ে থাকেন, আর এ ব্যাপারে অন্যান্য সকল পদ্ধতি ব্যর্থ হলে কেবলমাত্র তখনই ওষুধগুলি ব্যবহারের কথা ভাবুন, অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শে।
3. নিউমোনিয়া
জ্বর কিন্তু ব্রঙ্কাইটিসের একটা লক্ষণ।এক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা মাঝেমধ্যে এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে, আপনার মধ্যে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে যা গর্ভস্থ শিশুকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত কারণে হয়ে থাকা ব্রঙ্কাইটিস অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে।তবে যাইহোক, এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন কারণ যেহেতু সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিই ভ্রূণের পক্ষে ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচিত।
গর্ভাবস্থার পক্ষে নিরাপদ এমন কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকগুলি হলঃ অ্যামোক্সিসিলিন, এরিথ্রোমাইসিন, ক্লিন্ডামাইসিন, পেনিসিলিন, অ্যাম্পিসিলিন এবং নাইট্রোফুরানটোইন।
সালফামেথক্সাজল, টেট্রাসাইক্লিন এবং ট্রাইমেথোপ্রিমের মত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে।এছাড়াও আবার সালফামেথক্সাজল এবং ট্রাইমেথোপ্রিমের মত ওষুধগুলি শিশুর জন্মগত ত্রুটির জন্য দায়ী হিসাবে পরিচিত।
যাইহোক, যদি আপনার ব্রঙ্কাইটিসটি ভাইরাস থেকে হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনার অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার প্রয়োজন হবে না কারণ এগুলি ভাইরাসের বিরুদ্ধে অকার্যকর।এই ধরণের সংক্রমণটি নিজে থেকেই সেরে ওঠে।কিন্তু এর লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি যদি অব্যাহত থেকে যায়, তবে সেটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ কিনা তা নির্ধারণ করা হতে পারে এবং সেইমত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।
ত্রৈমাসিক অনুযায়ী চিকিৎসা
ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণগুলি প্রথমবার লক্ষ্য করার সাথে সাথে সময় মত তার চিকিৎসা করাতে শুরু করলে সেটি মা এবং গর্ভস্থ শিশুর উপর তার আরও বেশি প্রভাব পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে।এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের ত্রৈমাসিকের অবস্থানের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
প্রথম ত্রৈমাসিকের সময়, সংক্রমণকে লক্ষ্য করে তার প্রদাহকে হ্রাস করার জন্য একটি বায়োপারক্স ড্রাগ দেওয়া হবে।প্রথম ত্রৈমাসিকে আপনাকে সাধারণত পেনিসিলিন গ্রুপের একটা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ক্ষেত্রে, সিফালোস্পোরিন অ্যান্টিবায়োটিকগুলি যা গর্ভস্থ শিশুর পক্ষে নিরাপদ, দেওয়া হবে।আর কাশির জন্য ব্রোমহেক্সিন, হ্যালিক্সল, অ্যামব্রক্সল এবং মুকাল্টিনের মত ওষুধগুলি দেওয়া হয় যা শ্লেষ্মা পরিষ্কারে সাহায্য করে।
আর তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, যদি কোনও ইনট্রটেরাইন বা জরায়ু মধ্যস্থ কোনও সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে একটা ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিন থেরাপি করানো হয়।অবস্থার তীব্রতা এবং প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, অকাল শ্রম অথবা সম্ভাব্য গর্ভপাতেরও চিকিৎসা করানো হতে পারে।
ঘরোয়া প্রতিকারগুলি
ব্রঙ্কাইটিসের সূত্রপাত অনুভব করার সাথে সাথে আপনি হয়ত ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার শুরু করতে চাইতে পারেন। গর্ভবতী হওয়ার সময় তীব্র ব্রঙ্কাইটিসের প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি সেরা ঘরোয়া প্রতিকার হলঃ
1.লবণ জল দিয়ে গার্গেল করা
মোটামুটি প্রায় 250 মিলি উষ্ণ জলের সাথে এক চা–চামচ লবণ মিশিয়ে সেটি দিয়ে গার্গেল করুন।এটি আপনার গলা ব্যথা থেকে উপশম আনতে পারে এবং শ্লেষ্মা পরিষ্কারে সাহায্য করবে।
2.হলুদ
হলুদ হল প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, এটি শ্লেষ্মাকে তুলে পরিষ্কার করতে এবং গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।কেবল এক চা–চামচ হলুদ গুঁড়ো নিয়ে সেটিকে দুধের মধ্যে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন এবং তারপর সেটি গরম গরম পান করুন।
3.আদা
আদা হল রন্ধনশালার আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যার মধ্যেও রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যাবলী।ফুটন্ত জলের মধ্যে কিছুটা আদা থেঁতো করে দিয়ে দিন এবং তারপর সেই তরলটি একবার গরম গরম পান করুন।এর মধ্যে কিছুটা মিষ্টতা আনার জন্য আপনি আবার খানিকটা মধুও যোগ করতে পারেন।আদা আবার সাধারণ সর্দি কাশির চিকিৎসাতেও বেশ কার্যকারী।
4.লেবু–মধুর মিশ্রণ
এক গ্লাস উষ্ণ জল নিন এবং তার মধ্যে কিছুটা পাতিলেবুর রস চিঁপে নিয়ে, তার সাথে এক চামচ মধু যোগ করুন।লেবু হল ভিটামিন C এবং ফ্ল্যাভোনয়েডে সমৃদ্ধ আর মধুতে আছে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যাবলী।
5.বাষ্প শ্বাস
একটা বড় পাত্রে জল নিয়ে সেটিকে ফুটান এবং ফুটে গেলে সেটির আগুনকে নিভিয়ে দিন, যখন ফুটন্ত জলের বুদবুদ ওঠাটা বন্ধ হয়ে যাবে, সেই বাষ্পটা টেনে প্রশ্বাস নিন।চাইলে আপনি আবার একটা বড় তোয়ালে নিয়ে সেটা দিয়ে আপনার পুরো মাথাটাকে ঢেকে দিয়েও বাষ্পটা গ্রহণ করতে পারেন, এটা আপনার বুকে ও গলায় জমে থাকা সর্দিকে তুলে বের করতে এবং নাক বন্ধ হওয়া থেকে উপশম আনতে সাহায্য করবে।
6.আপনার নাসাপথের মধ্য দিয়ে জল চালনা করুন বা টানুন
মোটামুটি প্রায় 250 মিলি জলের সাথে অর্ধেক চা–চামচ বেকিং সোডা এবং লবণ মেশান।এবার 45 ডিগ্রী কোণে তার মধ্যে ঝুঁকে নাকটিকে ডোবানোর মত অবস্থায় থাকুন যাতে আপনার নাসারন্ধ্রগুলি সেই জলের মধ্যে ডুবে থাকার দিকেই থাকে। আপনাকে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হওয়ার কারণে আপনার বন্ধ নাকের কোনও একটি নাসারন্ধ্রের মধ্যে মিশ্রণটি ঢালার জন্য আবার আপনি একটি সিরিঞ্জ বা স্কুইজ বোতলও ব্যবহার করতে পারেন।দ্রবণটি আপনার অন্য নাসারন্ধ্র দিয়ে বেরিয়ে আসবে।দিনে বেশ কয়েকবার এর পুনরাবৃত্তি করলে এটি শ্বাস–প্রশ্বাসের কষ্ট থেকে মুক্তি আনতে সাহায্য করবে।
7. দই
দইয়ের মধ্যে থাকে স্বাস্থ্যকর এবং ভাল ব্যাকটেরিয়া যা আবার প্রোবায়োটিক্স নামেও পরিচিত, শ্বাসনালীর সংক্রমণ দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গর্ভাবস্থায় যথাযথ সাবধানগুলি অবলম্বন করলে তা কার্যতই বহুলাংশে ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে পারে, যদি না সেক্ষেত্রে কোনও বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।এখানে সেরকমই কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উল্লেখ করা হল, যেগুলি আপনি মাথায় রাখতে পারেনঃ
- ব্রঙ্কাইটিস হয়ে থাকা মানুষদের থেকে দূরে থাকুন।জীবাণু এড়াতে সর্দি–কাশি হয়ে থাকে মানুষদের চারপাশে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- ভাইরাস জনিত সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে বারে বারে হাতগুলি হ্যান্ড–ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
- ধোঁয়া, ধূলোবালি, রাসায়নিকের ধোঁয়া ইত্যাদির মত অ্যালার্জেন বা উত্তেজক পদার্থগুলির থেকে দূরে থাকুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম আহার এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু জীবনধারা বজায় রাখার সাথে আপনার মধ্যে একটা দৃঢ় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলুন।
প্রায়শই জিঞ্জাসিত প্রশ্নাবলী
ব্রঙ্কাইটিসের ব্যাপারে প্রায়শই জিঞ্জাসিত কিছু প্রশ্নগুলি এখানে আলোচনা করা হলঃ
1. ব্রঙ্কাইটিস হলে আপনি কি অলবুটেরল ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন?
অলবুটেরল ইনহেলারগুলি ব্রঙ্কাইটিসের জন্য নির্ধারিত ওষুধগুলির সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া করে এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্স্পন্দনের কারণে হার্টের সমস্যা থাকা মহিলাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে।শিশুর উপর এর টেরাটোজেনিক প্রভাব আছে বলেও জানা যায়, মোদ্দা কথা হল এগুলি ভ্রূণের বিকাশেও বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
2.ব্রঙ্কাইটিসের জন্য কি আপনি স্টেরয়েডগুলি ব্যবহার করতে পারেন?
গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রাক্ বিদ্যমান চিকিৎসা জনিত অবস্থায় কিম্বা অ্যালার্জি এবং অ্যাসথেমার ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তারই সাধারণত স্টেরয়েডগুলি নির্ধারণ করে থাকেন।
3.মারাত্মক কাশি কি আপনার অনাগত শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে?
কাশি গর্ভবতী মহিলার মধ্যে শারীরবৃত্তীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে কর্টিসল নামে পরিচিত একটি হরমোন নিঃসৃত হয়ে থাকে।এই হরমোন যখন প্লাসেন্টা বা অমরার কাছে পৌঁছায় তা শিশুর উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং তা মস্তিষ্কের এবং জন্মগত কিছু ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে কিম্বা আবার এমনকি কম ওজনের শিশুর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বহু মহিলার মধ্যেই ব্রঙ্কাইটিস হয়ে থাকাটা হল সাধারণ একটা ব্যাপার। যদিও ভাইরাস জনিত কারণে হয়ে থাকা ব্রঙ্কাইটিস যথাযথ যত্ন এবং ঘরোয়া প্রতিকারের সাথে নিজে থেকেই নিরাময় হয়ে ওঠে কিন্তু তথাপি ব্রঙ্কাইটিস হওয়া প্রতিরোধ করার জন্য যথাযথ সাবধানতাগুলিও অবলম্বন করা প্রয়োজন।যদি কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গগুলি দূর না হয়, সেক্ষেত্রে সেটি হয়ত আপনার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকতে পারে এবং তার জন্য আপনার অবিলম্বে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া দরকার হবে।গর্ভস্থ শিশুর যাতে কোনওরকম ক্ষতি না হয়, তা রোধ করতে, গর্ভাবস্থায় আপনি যে ওষুধগুলি গ্রহণ করতে পারেন এবং যেগুলি পারেন না সেগুলি সম্পর্কে নিজে ভালমত অবগত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন এবং একটি সুস্থ, সুন্দর ও মসৃণ গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!