গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়া- এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়া- এটি কি নিরাপদ?

যখন কোনও মহিলা গর্ভধারণ করেন, তিনি তখন তার ডায়েটের ব্যাপারে ভীষণ মাত্রায় সচেতন থাকেনএইসময় তিনি কোনও কিছুই মুখে দেওয়ার আগে দুবার করে চিন্তা করে থাকেন এই ভেবে যে, সেগুলি হয়ত তার সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারেযদি আপনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন, আমরা নিশ্চিত যে আপনিও আপনার খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হবেনযাই হোক না কেন, আপনি মোটের উপর কেবল আপনার নিজেরই নয়, তার পাশাপাশি আবার আপনার গর্ভস্থ সন্তানেরও স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির জন্য দায়বদ্ধ।আপনার ডাক্তারবাবু নিশ্চই অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যগুলির সাথে সাথে ড্রাই ফ্রুট এবং বাদাম খাওয়া শুরু করারও প্রস্তাব আপনাকে এর মধ্যে দিয়ে ফেলেছেন।কিন্তু তাই বলে আপনি কি সব ধরণের ড্রাই ফ্রুট এবং বাদামগুলিই এই সময় খেতে পারেন? এই নিবন্ধে আমরা সেরকমই একটা ড্রাই ফ্রুটকিশমিশের ব্যাপারে কথা বলব।গর্ভাবস্থায় আপনি সেটি খেতে পারেন কি পারেন না তার সন্ধান করুন।

গর্ভবতী থাকাকালীন কিশমিশ বা শুকনো আঙ্গুর খাওয়া কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়া একেবারে নিরাপদ।কালো শুকনো আঙ্গুর ভীষণ মাত্রায় পুষ্টিকর আর গর্ভাবস্থায় সেগুলি খেলে তা একজন গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারি হয়ে উঠতে পারে।আসুন এবার কিশমিশের পুষ্টি মানের ব্যাপারে একটু বুঝে নেওয়া যাক।

কিশমিশের পুষ্টি উপাদানগুলি

1.ফাইবার

কিশমিশ ফাইবার সমৃদ্ধ উৎস।এগুলি হজম করা সহজ এবং আপনার পাচন তন্ত্রকে সঠিক পথে রাখতে সহায়তা করতে পারে।ফাইবার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন ঠিকই তবে সেটি একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য আরও বেশি জরুরি।গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার দেহকে খাদ্য ভাঙ্গনের জন্য লড়াই করতে হয়।হরমোনীয় ভারসাম্যহীনতাগুলি বহুবিধ হজমজনিত সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তবে কিশমিশ সেগুলি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

2.আয়রণ বা লোহা

কিশমিশ খাওয়ার অপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল এগুলি শরীরে আয়রণ বা লোহা সরবরাহ করে থাকে।শরীরের জন্য আয়রণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং অক্সিজেন বহনকারী রক্ত কোষগুলির ফুসফুসের মধ্যে গ্যাসীয় আদান প্রদানকে নিশ্চিত করার একটি স্বাস্থ্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে আর এটি আপনার ফুসফুসের সুস্থভাবে কাজ করাকে সুনিশ্চিত করে।আয়রণের ঘাটতির কারণে আয়রণঘাটতি জনিত অ্যানিমিয়া নামক এক ধরণের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেহের মধ্যে দেখা দিতে পারে।

3.ক্যালসিয়াম

আপনার দেহের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হল ক্যালসিয়াম।এই খনিজটি হাড়ের স্বাস্থ্য, দাঁতের স্বাস্থ্য, কোলেস্টেরল বিশোষণ, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিকমত বজায় রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।এটি আপনার দেহে প্রয়োজন হয় দৈহিক ক্রিয়াগুলিকে যথাযথভাবে অব্যাহত রাখার জন্য আর কিশমিশ হল সেই ক্যালসিয়ামেরই এক সমৃদ্ধ উৎস।এমনকি, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্যালসিয়াম দ্বিগুণ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি গর্ভে শিশুর হাড়ের বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এটি শিশুর হাড়ের ঘনত্ব স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকা এবং তা যথাযথ ভাবে বিকাশ হওয়াকে নিশ্চিত করে।

গর্ভাবস্থাকালে আপনার কতগুলি করে কিশমিশ খাওয়া উচিত?

প্রতিদিন এক মুঠো করে কিশমিশ খাওয়া আপনার জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠতে পারে।এগুলিকে চাএর সাথে একটি পুষ্টিকর স্ন্যাক্স হিসেবে পরিবেশন করা যেতে পারে অথবা আপনি যখনই দুর্বল বোধ করবেন।তবে কিশমিশ সর্বদাই একটা সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতাগুলি

কিশমিশ মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্যই অসংখ্য উপকারিতা নিয়ে আসে।তবে গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়ার ফলে একজন হবু মায়ের উপর কীরকম প্রভাব পড়তে পারে সেটা বুঝে ওঠাটা গুরুত্বপূর্ণ।গর্ভাবস্থায় একজন হবু মায়ের জন্য কিশমিশের কিছু উপকারিতার কথা এখানে আলোচনা করা হলঃ

1. দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে

কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং তার পাশাপাশি ওলিয়ানলিক অ্যাসিড রয়েছে, উভয়ই আপনার দাঁতকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে, আপনার দাঁত গর্ভাবস্থায় খারাপ হয়ে যেতে পারে তবে কিশমিশ এটি মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে

2.কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে স্বস্তি আনে

কিশমিশের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অন্যান্য ল্যাক্সেটিভ বৈশিষ্ট্যও, সুতরাং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকার ঘটনাটি হল মহিলাদের দ্বারা জানানো একটি সাধারণ অভিযোগ, তবে কিশমিশ খেলে তা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।কিশমিশ খেলে তা অল্পস্বল্প কোষ্ঠকাঠিন্যকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি তা নিরাময় করতেও সহায়তা করে।

3.রক্ত কণিকা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে

কিশমিশ আপনার দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করতে পারে, যা দেহের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।গর্ভবতী হওয়ার পর আপনার দেহ প্রচুর ট্রমার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় এবং দেহে অসংখ্য পরিবর্তন হয়ে থাকে, যা আপনার দেহের মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।কিন্তু কিশমিশ খেলে তা এই সকল সমস্যাগুলিকে সহজেই মোকাবিলা করতে পারে।

4.পাচন তন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে

কিশমিশ মধ্যস্থ উচ্চ পরিমাণ ফাইবার উপাদানটিও আবার দেহের মধ্যে পাচন ক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়তা করে।সুতরাং গর্ভবতী হওয়ার পর এক মুঠো ভরে কিশমিশ খান এবং পাচন তন্ত্রটিকে সুস্থ এবং ভাল রাখুন!

5.শক্তি যোগায়

প্রাকৃতিক গ্লুকোজের একটা ভীষণ ভাল উৎস হিসেবে কিশমিশের পরিচিতি আছে।খিদে পাওয়ার মিহূর্তে কিশমিশ খেলে, তা আপনাকে তৎক্ষণাৎ শক্তি সরবরাহ করতে পারে।

6.রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোধ করে

গর্ভাবস্থায় দেহের মধ্যে হরমোনীয় ভারসাম্যহীনতা এবং আয়রণ উপাদানের ঘাটতি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার কারণ হয়ে উঠতে পারে।কার্যত, গর্ভদশায় অ্যানিমিয়া দেখা দেওয়াটা একটা সাধারণ ঘটনা।কিন্তু আয়রণের ঘাটতি জনিত অ্যানিমিয়াকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে কিশমিশ খাওয়ার দ্বারা।কিশমিশগুলি আয়রণের একটি সমৃদ্ধ উৎস হওয়ার কারণে সেগুলিকে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করলে এর বিস্তার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

কাদের কিশমিশ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?

যদিও কিশমিশগুলি ভীষণই স্বাস্থ্যকর, কিন্তু সেগুলি ডায়াবেটিস কিম্বা রক্ত শর্করা সম্পর্কিত সমস্যাগুলির মত পূর্ব বিদ্যমান কোনও অবস্থা থেকে থাকা মহিলার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।আপনার যদি গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস অথবা অন্য কোনও চিকিৎসাগত সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে কিশমিশের অন্য কোনও প্রাকৃতিক বিকল্পের সন্ধানের জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রস্তাবই আপনাকে দেওয়া হয়

গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি

যদিও কিশমিশ আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ মাত্রায় ভাল, তবে সেক্ষেত্রে খুব বেশি কিশমিশের ব্যাপারে আবার কিছু সমস্যা আছে।খুব বেশি মাত্রায় কিশমিশ খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।আপনি যদি এটি খেতে ভালওবাসেন, তবে সেটি মুঠো ভরে একবার খাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে দুবার করে সে ব্যাপারে ভাবুন।কিন্তু কখনই সেটি অত্যধিক পরিমাণে খাবেন না।এখানে জানুন কেন

  • খুব বেশি মাত্রায় কিশমিশ খেলে তা আপনার রক্ত শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • আবার কিশমিশ খুব বেশি খেলে তা থেকে গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।
  • সেগুলি আবার আপনার দেহে টাইপ 2 ডায়াবেটিসেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কিশমিশ খাওয়ার সময় সেটি সংযমের সাথে খেলে সেটি একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর জলখাবার হয়ে উঠতে পারে।আর সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে খেলে তা আপনাকে শক্তি সরবরাহ করে এবং গর্ভাবস্থাকালে আপনার সামগ্রিক শারীরবৃত্তিয় তন্ত্রগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে পারে।তবে আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটে সেটি অন্তর্ভূক্ত করার আগে একবার আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নিন।শাকসবজি, ফল এবং ড্রাই ফ্রুট ও বাদাম সমন্বিত একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট বজায় রাখুন যা আপনার একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থাকে নিশ্চিত করবে।ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন আর সুস্থ থাকুনআর সাথে করে একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!