প্রতিটি মহিলার জীবনে মাতৃত্ব হলো সবচেয়ে সুন্দর পর্যায়। নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে যাবার পর সন্তানের জন্ম দেওয়াটা অবশ্যই একটা অতি বিশেষ অনুভুতি। ঠিক একই কারণে, গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান প্রসবকালীন সময় প্রচুর আশঙ্কা থাকে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সন্তানকে সঠিকভাবে স্তন্যদুগ্ধ পান করানোতে অক্ষমতা। একটি শিশুর সূক্ষ্ম প্রকৃতি এবং মা এর নানা দায়িত্বের কারণ তার শিশুটিকে খাওয়ানোর জন্য অপরিমিত স্তন্যদুগ্ধ যোগানের সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে। এখানে আমরা মায়েদের স্তনের দুগ্ধক্ষরণ সম্পর্কিত কিছু সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।
মাতৃত্বের প্রারম্ভে, কম দুগ্ধ উৎপাদনের দরুণ একজন মা বুকের দুধ খাওয়ানোর সমস্যায় ভুগতে পারে। যখন একজন মা তার নবজাতক শিশুর চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করতে পারে না তখনই সেই মায়ের স্তন্যদুগ্ধ সরবরাহ কম বলে মনে করা হয়। বেশিরভাগ মহিলাদের সিদ্ধান্ত হল- নিম্নোক্ত পরিস্থিতিগুলিতে তাদের অপর্যাপ্ত স্তন্যদুগ্ধের সমস্যা থাকতে পারে:
এই সমস্ত ভাবনাগুলি সঙ্গে সঙ্গে দূরে সরিয়ে দিতে হবে, কারণ এগুলির কোনোটিও কোনওভাবেই অপরিমিত স্তন্যদুগ্ধ সরবরাহের সাথে সম্পর্কিত নয়।
যথেষ্ট স্তন্যদুগ্ধের অভাবে শিশুর মধ্যে কিছু বিশেষ লক্ষণ পরিদৃষ্ট হয়। দুর্ভাগ্যবশত, অনেক অভিভাবকরা প্রায়ই এই বিশেষ লক্ষণগুলিকে বাচ্চার ক্রমবিকাশের প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসাবে মনে করে বিভ্রান্ত হন। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে কয়েকটি যেমন:
অনেক কারণ আছে যেগুলি স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে কারণগুলো কখনো শিশুর স্বাস্থ্য, মায়ের স্বাস্থ্য বা অন্য কোনো সাধারণ সমস্যা সম্পর্কিত হতে পারে। এই কারণগুলি বা উপসর্গগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার যাতে শিশুটির ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা না হয়।
এই সমস্যাগুলিকে একজন অভিজ্ঞ ও বড় চিকিৎসকের সাহায্যে ধৈর্য ধরে এবং সঠিক নির্দেশ পালন করে চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা যেতে পারে। জীবনধারা ও খাদ্য গ্রহণের কিছু পরিবর্তনও দুধের উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে। শিশুকে খাওয়ানোর সেশনগুলির অন্তর্বর্তী সময়ে নিয়মিতভাবে স্তন্যদুগ্ধ বাহিরকরণের প্রক্রিয়াও অনুশীলন করা উচিত যাতে শরীরের দুগ্ধ উৎপাদনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
যেহেতু শিশুটি নবজাতক এবং প্রয়োজনমাফিক দুগ্ধ পেতে অক্ষম, সেহেতু তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা কোনো বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে বিশেষ পরামর্শের প্রয়োজন।
না। কখনও কোন কোন খাদ্যবস্তু দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়াতে প্রতিবন্ধক হতে পারে। শরীরের মধ্যে হরমোনের সঠিক ভারসাম্য না থাকাটাও একটা কারণ হতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ বা কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ঔষধ সেবন করলেও বেশিরভাগ কারণগুলিকে নির্মূল করা যেতে পারে। আর শিশুর ক্ষেত্রে, তাকে মাতৃদুগ্ধের সম্পূরক(সাপ্লিমেন্ট) কোনো খাদ্য দেওয়া যেতে পারে এর দ্বারা শিশুটির পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পরিপূর্ণ হবে।
যদি দুধ উৎপাদনের হার নিজের থেকেই না বাড়ে তবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। তাঁরা সাধারণত রক্ত পরীক্ষার কথা বলবেন যাতে তাঁরা রক্ত কণিকার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারেন এবং ব্যক্তিটি রক্তাল্পতায় আক্রান্ত কিনা তা যাচাই করতে পারেন। শরীর সাধারণত নিজেই নিজের নিরাময় করে থাকে এবং এই সমস্যাগুলির অধিকাংশই কোনও চিকিৎসা ছাড়াই সমাধান হয়ে যায়। তবে, কোনো কোনো সমস্যায় চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
যেহেতু সবাই জানে যে শিশুর প্রথম খাদ্যই হলো মাতৃদুগ্ধ, এটির অভাব শিশুর বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। বস্তুতভাবে এটি দেখা গেছে যে প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃদুগ্ধের অভাব মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং শরীরেরও প্রাকৃতিক বৃদ্ধিকে সীমিত করে, অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে।
দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে যাতে শিশুটির যথাযথ বিকাশ ও পুষ্টির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কয়েকটি হল:
মেথি
ওট
ল্যাকটেশন কুকি(স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধিকারী বিস্কুট) নামে বাজারে কিছু কুকি পাওয়া যায়। এই কুকিগুলিতে সাধারণত ওট রয়েছে যা স্তনদুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে বলে দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বাস করা হয়েছে।
মৌরি
এটি একটি স্তন্য বর্ধনকারী বিশেষ ভেষজ এবং তাই এটি স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন চা এবং সম্পূরকগুলিতে ব্যবহার করা হয়।
ব্রুয়ারস ঈস্ট
এটি কিভাবে দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকা সত্বেও, এটির সেবন স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদনে সহায়ক বলে বিশ্বাস করা হয়।
পালং শাক
পালংশাক খনিজ লৌহে সমৃদ্ধ এবং শরীরের খনিজ লৌহের পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে যা প্রসবকালীন সময় রক্তক্ষরণের কারণে কমে গিয়ে থাকতে পারে। খনিজ লৌহের ঘাটতির সাথে কম স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদনের সংযোগ করা হয়ে থাকে।
আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন, কয়েকটি খাবারের ক্ষেত্রে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যার থেকে বলা যায় যে তারা মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। তবে, অনেকে দাবি করেন যে এই খাবারগুলি কাজ করে এবং এগুলির কোনোটাই কাজ দেয় না বলেও প্রমাণিত নয়, তাই এগুলি খাওয়া যেতেই পারে।
নতুন মায়েদের শিশুর জন্মের দিন থেকে সম্পূরক গ্রহণ শুরু করা উচিত যাতে তাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুগ্ধ নিঃসরণের জন্য তাঁদের শরীরকে প্রস্তুত করতে পারেন। এটি শিশুর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে দুধ উৎপাদন করতে মাকে সাহায্য করতে পারে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন যে, প্রথম ছয় সপ্তাহের মধ্যে পরিমিত ভাবে স্তন্য উৎপাদন করা উচিত যাতে শিশুর ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধা না হয়।
স্তন্যদুধ কম থাকলেও বুকের দুধ খাওয়ানো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। আর এটা স্তনকে উদ্দীপিত করে আরও দুধ উৎপাদনে সাহায্য করবে যাতে চাহিদা পূরণ করা যায়। স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদনের পরিবর্তন চলাকালীন , ফর্মুলা দুধ শিশুর খাদ্যের পরিপূরক হতে পারে যাতে শিশুর পুষ্টি সরবরাহে কোনও খামতি না হয় এবং যাতে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে এবং তারা স্বাস্থ্যকর ও শক্তিশালী হতে পারে।
উপসংহার
বিভিন্ন তথ্য এবং পরিসংখ্যান দেখার পর, সহজে বিশ্বাস করা যেতে পারে যে নতুন মায়েদের কম স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে, বেশিরভাগই বাস্তবিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি। স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া আপনার শিশুর সুস্বাস্থকে প্রভাবিত করতে পারে, তাদের বিকাশ যথাযথ হয়না। যাইহোক, এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা নয় কারণ সমস্যাটিকে অনেকগুলি প্রতিকারের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। এমনকি সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ক্ষেত্রেও, সর্বদা একজন দাইমার বিকল্প রয়েছে যিনি সাময়িকভাবে শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারেন।