আপনার আট মাস বয়সী এখন প্রায় একজন বড়ো মানুষের কাছাকাছি! এই আটটি মাস যে কিভাবে বয়ে গেল ভাবলেই নস্টালজিক মনে হয় তাই না? আট মাস বয়সী এখন তার সকল প্রকার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনা তার সংবেদনশীল ঞ্জানের সহিত মিশিয়ে আরো বেশী কিছু দুঃসাহসিক করার অণ্বেষণ করে। তাদের সুস্থ স্বাভাবিক বৃদ্ধি আরো দ্রুততার সাথে তাদের সঞ্চালনা ও যোগাযোগ করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। আপনার বাচ্চা এখন আরো ভালভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চায়, শব্দ এবং ভাষা ব্যবহার করতে শেখে। তাদের ছোট্ট উৎসাহী মাথা তার চারিপাশের পরিবেশ সম্বন্ধে তাকে আরো বেশী সচেতন করে তোলে, তার রঙ্গভঙ্গে আপনাকে মোহিত করে দেওয়ার মত ঘটনা অনেকবারই ঘটবে, যা অন্য অনেক কিছুর থেকেই অনেক বেশি বড় অনুষ্ঠান বলে আপনার মনে হতে পারে।
বিকাশের মাইল স্টোন গুলো –অতিক্রম করেছে | বিকাশের মাইল স্টোন গুলো –ছুঁতে চলেছে |
দাঁড়াবার সময় দুই পায়ে ভর দেয় | অবলম্বন ধরে দঁড়াবার চেষ্টা করে |
চলমান বস্তু কে ট্র্যাক করতে পারে | চলমান বস্তু কে লক্ষ্য করে এবং ধরবার চেষ্টা করে |
বিভিন্ন বস্তুকে দুই হাতের মধ্যে নিয়ে ব্যবহার করতে চায় | আঙ্গুলের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করে জটিল কাজ করবার জন্য |
সাধারণ ‘ম’,‘দ’ এবং ‘ব’ এর মত একমাত্রিক শব্দ উচ্চারন করে | কথা বলার পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করে |
বার বার বলা সাধারণ নির্দেশ গুলো বুঝতে পারে | চেষ্টা করে অনেক অনন্য নির্দেশ গুলো বুঝতে |
অভিভাবকদের যে কাউকে ‘মামা’ এবং ‘দাদা’ বলতে পারে | চেষ্টা করে বাবা মাকে সঠিকভাবে চিনে সঠিক নামে ডাকতে |
সাঁড়াশির মত করে কোন জিনিস ধরতে পারে | কোন বস্তুকে মুঠো করে ধরতে চেষ্টা করে |
বিচ্ছেদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে | স্থায়ী ভাবে বিচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করে |
হামাগুড়ি দিতে পারে | নিজে নিজে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। |
নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো বুঝতে পারে | ঘরের বিভিন্ন জিনিস গুলো মনেরাখার চেষ্টা করে |
আপনার আট মাস বয়সী যতই তার প্রথম জন্মদিনের কাছাকাছি পৌঁছাতে থাকে ততই সে আগের থেকে আরো বেশী ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। তার জেগে ওঠার মুহূর্ত থেকে তার মনে নানা কৌতুহলের উদ্রেক হতে শুরু করে এবং প্রতিটা ছোটো খাটো ব্যাপারেই তার উৎসাহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এটি হল সেই সময় যখন আপনার শিশুটি আপনার বাড়ির অনেক জিনিসকেই তার ছোট্ট মুখে ঢুকিয়ে ফেলতে শুরু করে। খাবারের বিষয়ে দেখতে গেলে, আপনার বাচ্চার স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ে তাই নানা ধরণের সলিড খাবার ইচ্ছে বেড়ে যায়। এই সময়ে আপনার শিশুটি খুব দ্রুত গতিতে হামাগুড়ি দিতে পারে এমনকি চেষ্টা করে কোন কিছুর সাহায্যে উঠে দাঁড়াতে এবং এমন কিছু অভাবনীয় জিনিস সে করে ফেলে যা আপনাকে মুগ্ধ করে তোলে এবং আপনি সারা জীবনের মত সেগুলিকে আপনার স্মৃতিতে ধরে রাখেন। এই সময় থেকে সে তার বাবা মাকে ‘দাদা‘, ‘মামা‘ বলে ডাকতে শুরু করে যদিও সে ভুল করে অন্যদেরকেও এই ডাক দিয়ে থাকে।
শিশুর বুদ্ধির পরাক্রম তার ঞ্জানীয় দক্ষতা বারায়,মস্তিষ্কের বিকাশ এবং দক্ষতা তার চারপাশের বস্তুগুলিকে বুঝতে সাহায্য করে।
আপনার বাচ্চা এই সময় সাধারণত একমাত্রিক অক্ষর গুলি যেমন-‘ব‘, ‘ম‘ এবং ‘দ‘ এগুলি বলতে পারে। সে কোনো জিনিসের সাধারণ নাম বুঝতে পারে এমনকি সে তার ভাই বোনের নাম শুনলেও সাড়া দেয়।
সমানে নড়াচড়া করতে পারায় সব কিছুতেই যেমন বাড়ির সমস্ত জিনিসের সাথে সাথে তার খেলনাগুলি সনাক্ত করার চেষ্টা করবে এবং সেগুলির উপরেও আগ্রহ প্রকাশ করবে। আপনার বাচ্চা জিনিস গুলিকে মুঠো করে ধরতে পারবে, সেগুলি কে গভীর ভাবে নিরীক্ষণ করবে সেগুলির কার্যকারিতা গুলি বোঝার জন্য ,আর সেগুলিকে পড়বার চেষ্টা করবে।
আপনার বাচ্চাটি ধীরে ধীরে সব কিছু করতে শিখবে, সাধারণ নির্দেশ গুলি কে পুনরায় বলতে পারবে এবং সেগুলি ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি আপনি আপনার মাথাটি ঝাঁকিয়ে বলেন ‘না‘ তখন সে বুঝতে পারবে যে আপনি কিছু করতে বারন করছেন তাই সে তখন আপনার কথা মানবে।
একটি বলকে ড্রপ খাওয়ান এবং সম্ভ্রমের সাথে লক্ষ্য করুন আপনার বাচ্চা সেটিকে এক ভাবে নজর করে চলেছে যতক্ষণ না সেটির চলন বন্ধ হয়। এই সময়ে শিশুদের কোন বস্তু কিভাবে উপর থেকে পড়ে এবং তার গতিশীলতা দেখার ও বোঝার ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।
এখন আপনার বাচ্চা কোন জিনিসকে তার হাতের তর্জনি দ্বারা চিহ্নিত করতে পারে যেগুলি তাদের উৎসাহ জাগিয়ে তোলে।
আপনার সন্তান কোন বস্তুকে নীচে পেতে চেষ্টা করবে না, সে তার সীমারেখার মধ্যেই সেগুলি পরীক্ষা করার চেষ্টা করবে। এই কারণে সে ব্যাস্ত থাকবে সেগুলিকে ছুঁড়তে, সেগুলি আঘাত করতে অথবা সেগুলিতে ঠুং করে আওয়াজ করতে। তারা তাদের এই প্রতিক্রিয়ার সাড়া পেতে ভালোবাসে এবং আপনি দেখতে পাবেন আপনার ছোট্ট সোনা প্রায় মাঝে মধ্যেই তার জলের বোতলটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
আপনার বাচ্চা সব সময়ে তার প্রয়োজনে লাগবে এমন বস্তুর প্রতিই আগ্রহ প্রকাশ করবে না। যেমন–যদি আপনি তাকে একটি খালি কাপ দেন সে সেটিকে তার মুখে ঢুকিয়ে দিতে পারে। আপনি যদি তাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দেন তবে সে তার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বে।
এ ক্ষেত্রে তার সার্বিক ক্রিয়াকলাপের দক্ষতায়, তার পেশী সমূহ এবং দৈহিক শক্তির দক্ষতার বিকাশ হয়।
আপনার বাচ্চা এখন কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই নিজে উঠে বসতে পারে এবং যখন আপনি তাকে সহযোগিতা করেন সে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারে এবং পায়ের উপর ভর দিয়ে সে নিজের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
এটি হল কোন জিনিসকে বুড়ো আঙ্গুল ও হাতের প্রথম দুটি আঙ্গুলের সাহায্যে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। বাহুর শক্তি বাড়ে এবং মাংস পেশীগুলিও আরো বেশী শক্তিশালী হয়ে ওঠার ফলে সে তার কোন জিনিসকে তুলে ধরতে পারে, নিপূণভাবে সেগুলি ব্যবহার করতে শেখে এবং ছুঁড়েও ফেলতে পারে।
এই সময়ে আপনার বাচ্চার প্রথম দাঁত ওঠে এবং সে চেষ্টা করে সব খাবার গুলি চিবিয়ে খেতে। চেষ্টা করুন তাদের কাঁচা নয়, সেদ্ধ খাবার দিতে। তারা তাদের মুখের ভিতরে খাবারগুলি কুঁচিয়ে চিবোতে থাকবে।
আপনার বাচ্চা এখন তার পেটের উপর ভর দিয়ে যে কোন পাশেই 180° টুসকি দিয়ে লাফ দিতে পারে। 7-10 মাসের মধ্যে বাচ্চারা অসম্ভব গতিতে হামাগুড়ি দিতে পারে।
যথেষ্ট দৃষ্টি ক্ষমতা তাদের দুটি বস্তুর মাঝের দূরত্বকে নির্ণয় করতে এবং তাদের পেশীর অঙ্গ বিন্যাসের সাহায্যে সেগুলির সাথে সাংযোগ রক্ষা করতে করতে পারে। সে বিচার করতে পারে কোথায় সে হামাগুড়ি দিতে পারবে নির্বিঘ্নে আর কোথায় সে বাধা পাবে।
এখন আপনার বাচ্চা অনেক বেশী পরিমাণে সামাজিকভাবে এবং আবেগের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এই সংযোগ তার সামাজিক শিক্ষা,আবেগ প্রকাশ এবং মানুষের প্রতি তার মনোভাব বোঝাতে সাহায্য করে।
আপনার বাচ্চা তার দুঃখ বা রাগ প্রকাশের আবেগের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। সে এগুলি দেখাবে সেই সকল খেলনা বা মানুষদের উপর যারা তার ভীষণ কাছের ও যেগুলিকে সে খুব ভালোবাসে।
আপনার বাচ্চাটি হেসে উঠবে অথবা খল খলিয়ে নানাভাবে আওয়াজ করে উঠবে যখন আপনাকে বা কোন নিকট আত্মীয়কে কিম্বা কোন বন্ধুকে তার কাছে এসে পৌঁছতে দেখবে। তারা পরিবার সদস্য বা বন্ধু চক্রের প্রত্যেকের গুরুত্ব আলাদা ভাবে বুঝতে পারে।
আপনার শিশুটি এই সময় থেকে অনেক বেশী সহমর্মী হয়ে উঠবে তার প্রিয়জনেদের প্রতি, বিশেষত তারা যখন তার সামনে কেঁদে ওঠে। যখন সে তাদেরকে এইরূপ মর্মাহত অবস্থায় দেখে তখন আপনিও আপনার বাচ্চার মুখে ভয়ানক দুঃখের ছায়া দেখতে পাবেন।
এখানে কিছু লাল পতাকা রইল যা আপনার শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে কিছু বাধা হিসেবে চিহ্নিত।
যদি আপনার শিশু নিজে থেকে বসতে না পারে, এমনকি আপনি সাহায্য করার পরেও, তখন সেটি কোন অসঙ্গতির লক্ষণকেই চিহ্নিত করে। আপনি লক্ষ্য করুন আপনার বাচ্চার অঙ্গসঞ্চালনার প্রবাহ বা ডিগবাজি খাওয়া বাড়তে শুরু করেছে কিনা,যদি অন্যরকম কিছু দেখেন তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন।
যখন আপনার বাচ্চাটিকে সোজা করেন ও উপরের দিকে তোলেন তখন সাধারণ ভাবেই তারা তাদের পা গুলিকে মাটির দিকে ঠেলতে থাকে। যদি তাদের হাত ও পা গুলি শক্ত হয়ে কুঁচকে থাকে, তবে এটি উদ্বেগের কারণ।
আপনার বাচ্চা কথা বলার জন্য খুব স্পষ্ট শব্দ বা মুখাভিনয় করতে পারেনা, কিন্তু তার প্রয়োজন খুব সহজ কিছু শব্দ করে তার গলার ভোকাল কর্ডের ব্যায়াম করানো। যদি আপনার বাচ্চা ভীষণ ভয়ানকভাবে বা অস্বাভাবিক ভাবে শান্ত হয়, এবং আপনিও নিজে যদি কখনই তার কোন শব্দ না শোনেন তবে সেটি আপনার শিশুর বিকাশের গুরুতর বিলম্বকেই চিহ্নিত করে।
পরিবারের সদস্যদের মুখ যেমন ঠাকুমা ঠাকুরদার মুখ, তার প্রাথমিক দেখভালের ব্যাক্তি বিশেষ যথা মা ,বাবার মুখ চিনতে না পারা তার স্নায়বিক ব্যাধির লক্ষণকেই নির্দেশ করে। এই ধরণের শিশুরা একটু পৃথক হয়ে থাকে এবং সামাজিকও হয় না।
যদি আপনার শিশুর কোন জিনিসকে দেখতে অসুবিধা হয়, শব্দের উৎপত্তি খুঁজে পেতে কষ্ট করতে হয় অথবা কোন ধীর গতিসম্পন্ন বস্তু যদি তার চোখে ঠিকমত ধরা না পড়ে তবে একজন ডাক্তারের সাথে আপনার এ বিষয়ে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
আপনি আপনার শিশুটিকে তার মাইলস্টোন গুলো অতিক্রম করার ব্যাপারে সক্রিয় এবং নিরলস ভাবে সাহায্য করবেন।উদ্দীপনাময় এবং নিরবচ্ছিন্ন কার্যাবলীতে নিমগ্ন থেকে আপনি এটি করবেন।
তার সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে তার উদ্দীপনা এবং কৌতুহ ল বাড়ান।বিভিন্ন ত থ্য পাঠোদ্ধার করে তার জ্ঞানের পরিধি বাড়ান
খেলনা গুলোর নামের সাথে পরিচিতি বাড়ান, পাশাপাশি যেসকল ব্যাক্তি কে তার সাথে পরিচ্য করাবেন তাদের নাম গুলো তাকে শেখান। এতে তার বস্তু বাচক বিশেষ্য সম্বন্ধে ধারনা হবে।
উজ্জ্বল চিত্র যুক্ত বি থেকে গল্প পড়ুন। প্রতিটা শব্দের উপ্র জোর দিন যতে তার দেখারক্ষমতা এবং রঙ চেনার দক্ষতা বাড়বে।
বিভিন্ন মানুষের সাথে মেলামেশা বাড়ান যারফলে আপনার বাচ্চাটি নতুন নতুন মানুষকে চিনবে এবং তার স্মৃতিশক্তি বাড়বে। এর ফলে অপরিচিত কাউকে দেখে আতঙ্ক গ্রস্থ হবার প্রবনতা কমবে।
হামাগুরি একটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন বিষয় যা তার মাংস পেশীকে সবল করে। সেই জন্য পিকাবু অথবা বল ছোড়া ছুড়ি তাকে চলতে সাহায্য করে।
আপনার আট মাস বয়সী শিশু তার নিজের কৃতিত্বে অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার সম্পাদন করবে।আপনি তার দক্ষতাগুলি অর্জনের ক্ষেত্রে তার পরিচর্যা করুন নিজের হাতে এবং নিজেকে তার সমস্ত ক্রিয়াকলাপের সাথে সংযুক্ত করুন,যা আপনার বাচ্চার বৃদ্ধি কে উদ্দীপিত করবে এবং তার বিকাশকে তরান্বিত করতে সাহায্য করবে।