স্ত্রী জননতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি হল জরায়ু।এই অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গটি মাসিক চক্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং গর্ভবতী মহিলার গর্ভস্থ সন্তানটিকে ধরে রাখে।এই অঙ্গটি মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল বা মাসিকচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখে।যাইহোক অনেক মহিলার আবার অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস বা জরায়ু থাকতে পারে।একটা অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস বা জরায়ু সার্ভিক্সের সামনের দিকে হেলে থাকে এবং তলপেটের দিকে এগিয়ে যায়।অনেক মহিলাই মনে করেন যে অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস থাকলে সেটি গর্ভসঞ্চারের পক্ষে বাধা সৃষ্টি করে।কিন্তু সত্যিই কি সেটা হয়? আসুন দেখা যাক!
যখন জরায়ু তলপেটে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে তখন সেটি অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস নামে পরিচিত হয়।সাধারণত জরায়ুর দুই ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়।একটি হল অ্যান্টিভারটেড অন্যটি রেট্রোভারটেড।যখন জরায়ুটি পিছনের দিকে হেলে পড়ে তখন তাকে রেট্রোভারটেড ইউটেরাস বলে।অ্যান্টেভারটেড ইউটেরাসের কথা বলতে গেলে বলা যায় যে এই ক্ষেত্রে জরায়ুটি কিছুটা স্থানচ্যুত হয়ে সামনের দিকে মূত্রাশয়ের ওপর ঝুঁকে পড়ে।এটি মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া সাধারণ এক সমস্যা যেটি তাদের মনে করতে বাধ্য করায় যে এর ফলে তাদের মাসিকচক্র এবং গর্ভধারণে জটিলতা বৃদ্ধি পাবে।কিন্তু অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস থাকাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার এবং তা কোনওরকম ভাবেই একজন মহিলার গর্ভসঞ্চার ক্ষমতাকে হ্রাস করে না। আপনার যদি অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস থেকেও থাকে অনেক ক্ষেত্রে আপনি সেটা হয়ত জানতেও পারবেন না।
বিভিন্ন রকমের কারণ আছে একজন মহিলার অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস হওয়ার পিছনে। অনেক ক্ষেত্রে পূর্বে করা অস্ত্রোপচারের ফলে হয়ে থাকা ক্ষতের জন্য জরায়ুর অবস্থান সরে কাত হয়ে যেতে পারে।আবার এন্ডোমেট্রিওসিসের জন্যও অনেক সময় জরায়ু সামনের দিকে ঝুঁকে আসতে পারে।এইটি এমন একটি অবস্থা যখন জরায়ুর মধ্যস্থ কলা স্তরের বিকাশ জরায়ুর বাইরের দিকে হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাসের পরিষ্কার কোন লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না। এমনকি আপনার যে অ্যান্টেভারটেড ইউটেরাস আছে তা বুঝতে না পারারও সম্ভাবনাগুলি থাকে।যাইহোক কিছু বিরল ক্ষেত্রে যেখানে এটি খুব সমস্যাবহুল হয়ে ওঠে এবং জরায়ু অনেক বেশি পরিমাণ হেলে থাকে, আপনি সে ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলি লক্ষ্য করতে পারেনঃ
আগে মনে করা হত, যে সকল মহিলার অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস আছে তারা গর্ভধারণ করতে পারেন না।তবে বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে যা বোঝা যায় সেটি কিন্তু সম্পূর্ণ এর বিপরীত।জরায়ুর হেলে পড়ার সাথে একজন মহিলার ফার্টিলিটি বা উর্বরতার কোনও সম্পর্ক নেই।এর কারণ হল এই যে, জরায়ুর মধ্যে যে পথ দিয়ে শুক্রাণু গমন করে ও পরবর্তী ক্ষেত্রে নিষেক সম্পন্ন করে তার সাথে জরায়ুর অবস্থানের কোনও সম্পর্ক নেই।
গর্ভবতী কোন মহিলার জরায়ুটি যদি সীমার বেশি হেলে থাকে তাহলে তিনি যখন মুত্রত্যাগ করবেন তখন ভীষণ রকম অসুবিধা অনুভব করতে পারেন।যদি কোনও গর্ভবতী মহিলার অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস থাকে এবং তিনি প্রচন্ড পরিমাণে পিঠে ব্যথা অনুভব করেন অথবা তার পেটে যদি খুব প্রদাহ হয় তাহলে অবশ্যই তিনি কোন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।
একটি কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার অবাক করে দেবে তা হল যখন একজন অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস যুক্ত মহিলা গর্ভবতী হন তখন তার বেবি বাম্পটি প্রত্যাশ্যার থেকে অপেক্ষাকৃত আগেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।এমনকি গর্ভদশার 12 সপ্তাহ সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই সেটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
কোনও অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস ডায়গোনাইজ করা যায় নম্নোলিখিত দুটি পদ্ধতি অনুযায়ী:
এটা জানা হয়ে গেছে যে, জরায়ু যদি সামনের দিকে হেলে থাকে তাহলে সেটি একজন মহিলার গর্ভধারণ ক্ষমতা কিম্বা তার প্রসবের ক্ষেত্রে কোনওরকম সমস্যা সৃষ্টি করে না (যদিও এটা দেখা যায় যে জরায়ুর ভেতরকার কয়েকটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এটি প্রভাব ফেলে)। তাই আপনাকে দৃঢ়ভাবে এই পরামর্শই দেওয়া হয় যে আপনি অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করুন যদি সেরকম কোন কঠিন জটিলতা নাও দেখা যায় তবুও।
তবে বেশ কিছু বিরল ক্ষেত্রে কয়েকজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভবস্থায় নানা রকম সমস্যা যেমন ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড, ইউটেরাস পলিপ, ওভারিয়ান সিস্ট, ফাইব্রয়েড টিউমার পর্যন্ত দেখা যায় অ্যান্টিভারটেড ইউটেরা থাকার কারণে।এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া উচিত গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়েই।
যদি আপনার অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস থাকে, তবে সেটি আপনার যৌন জীবন–যাপন করার ক্ষেত্রে বা সঙ্গমের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে না।সুতরাং আপনি সঙ্গম করতেই পারেন সন্তান ধারনের জন্য বা অন্য যেকোনো কারণে আর কোনও ক্ষেত্রেই অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না।
একটা অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস থাকা কোনওরকম শারীরিক সমস্যা নয় এবং এটির জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাসের কোনোরকম চিকিৎসা পদ্ধতি নেই যেহেতু এর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
যদিও এক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজনটা সেরকম কোনও গুরুতর বিষয় নয় তবুও আপনি নিচের বিষয়গুলি করতে পারেন আপনার সুস্থ, ভাল এবং স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য।নিচে উল্লেখিত ব্যায়ামগুলি সকল মহিলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে এবং এর ফলাফলগুলিও আপনাকে সেভাবে আশ্বস্ত না করতে পারে, সুতরাং যে কেউ এগুলি চেষ্টা করার আগে অবশ্যই তাদের ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করার পরই কেবল করতে পারেন।
অ্যান্টিভারটেড ইউটেরাস খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এটি একজন মহিলার ফার্টিলিটি বা উর্বরতা অথবা তার গর্ভধারণ ক্ষমতার উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না।যদি আপনি দীর্ঘকাল ধরে গর্ভধারণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসেন তাহলে আপনি আপনার জরায়ু পরীক্ষা করিয়ে নিন।যদি আপনার কোন দ্বন্ধ অথবা দ্বিধা থাকে তাহলে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন সেটাই হবে আপনার সবচেয়ে বড় বাজি।সুতরাং আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন এবং আপনার সমস্যার কথা তাকে জানান আর তার নির্দেশ মত চলুন।তথ্যসমৃদ্ধ থাকুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, ব্যায়াম করুন এবং একটা স্বাস্থ্যকর জীবন উপভোগ করুন।