সাধারণত গর্ভাবস্থাকালীন সময়সীমা 40 সপ্তাহ। যদিও প্রকৃত গর্ভকালীন সময়সীমা হল 38 সপ্তাহ। তাই সাধারণত 38 সপ্তাহের পর থেকেই যে কোন সময় কোন শিশুর জন্ম হয়। প্রসবের দিন আগাম গণনা করা হয় বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা যেমন-LMP, ন্যাজেলার নিয়ম অথবা প্রেগনেন্সি চক্র অনুযায়ী। এই সকল পদ্ধতিগুলি সম্ভাব্য প্রসাবের দিন নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। শতকরা মাত্র 5 শতাংশ মহিলা ওই পূর্ব নির্ধারিত দিনে তাদের সন্তানের জন্ম দেন। এবার প্রসবকালীন দিন আগাম নির্ধারণের ব্যাপারে একটু ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।
যখন আশা করা হয় একটি নির্দিষ্ট দিনে আপনি আপনার সন্তানকে জন্ম দেবেন তখন তাকে বলা হয় প্রসবের আগাম দিন গণনা। এটি সাধারণত সন্তান ধারণের জন্য আপনার শেষবার পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে 40 সপ্তাহের মধ্যে ধরা হয়।কিন্তু আপনি যদি আপনার ধারণের নির্দিষ্ট দিনটি জানেন তবে প্রসবের দিন নির্ধারণটি হতে পারে ধারণের প্রথম দিন থেকে 38 সপ্তাহের পরে। গর্ভাবস্থা চলাকালীন আপনি আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করে নিন আপনার প্রসবকালীন দিন নির্ধারণের ব্যাপারে,আপনার গর্ভস্থ শিশুটির বিকাশ এবং আপনার অন্যান্য শারীরিক বিষয়গুলি সম্পর্কে। আগে থেকে প্রসবের দিন নির্ধারণ আপনার ডাক্তার বাবুকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে গর্ভাবস্থাকালীন আপনার কি কি শারীরিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা প্রয়োজন, ভ্রূণটির বিকাশের সঠিক ধারণা দিতে সাহায্য করে,এবং প্রসবের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে কি কি করণীয় সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
প্রতিটি ডাক্তার তাদের নিজস্ব মতামত অনুযায়ী প্রসবের সময় আগাম নির্ধারণ করেন। প্রসবের আগাম সময় নির্ণয়ের ব্যাপারে আপনাকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। যাইহোক তিনটি ভীষণ জনপ্রিয় পদ্ধতি,যা আপনার প্রসবের দিন আগাম নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
জার্মান ধাত্রীবিদ ফ্রানজ কার্ল ন্যাজেলার নাম থেকে এই পদ্ধতিটির নামকরণ হয়েছে। এই পদ্ধতির সাহায্যে অনুমান করা হয় যে কারো গর্ভাবস্থাটি চলে প্রায় 280 দিন পর্যন্ত এবং তার স্থিতিকাল হল ঋতুচক্রের 28 দিনের মধ্যে।এর অর্থ হল আপনার আনুমানিক প্রসবের দিন (EDD)হল আপনার শেষবার পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার 280 দিন পর(9 মাস 7 দিন)।কিন্তু আপনার যদি ঋতুচক্রের ব্যবধানটি কমে হয় 27 দিন,তার অর্থ হল 9 মাস 6 দিন। আবার আপনার ঋতুচক্রটি যদি দীর্ঘ হয় তবে আপনার EDD প্রসবের সম্ভাব্য দিন গণনায় আপনি অতিরিক্ত দিনটি যোগ করে নেবেন 9 মাস 7 দিন।
LMP (শেষ মাসিক সময়) পদ্ধতিটি আপনার প্রসবের সম্ভাব্য দিন আগাম নির্ণয়ে (EDD)সাহায্য করে। বেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে এই তথ্যটি এই ভাবে কাজ করে যে, তাদের ঋতুচক্রের 28 দিনের মধ্যে প্রায় 14 দিনের মাথায় যদি ওভেলিউশন ঘটে। এই পদ্ধতিতে আপনার শেষ বার মাসিক থেকে 40 সপ্তাহ যোগ করা হয়। এই দিন থেকেই আপনার 2 সপ্তাহ কমিয়ে দিন আপনার EDD নির্ধারণের ক্ষেত্রে। এটি ওভেলিউশনে সাহায্য করে,যা আপনার শেষ বারের মাসিকের সময় থেকে প্রথম 2 সপ্তাহের মধ্যে ঘটে।
প্রেগনেন্সি চক্র, যার দ্বারা সহজেই আপনার EDD গণনা করা যায়,। এটিকে গর্ভকাল ক্যালকুলেটরও বলা হয়। এটি সাধারণত হিসেব করা হয় আপনার সর্বশেষ মাসিকের সময় থেকে।.
এটি সাধারণত আপনার গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য বোঝাতে সাহায্য করে। প্রেগনেন্সি চক্রের বিভিন্ন ভাগ আছে, যেগুলি গর্ভাবস্থায় সারা বছরের বিভিন্ন মাস গুলির দিকে নির্দেশ করে। এবং গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুর জন্মপূর্বক সার্বিক বিকাশের দিকগুলিকে চিহ্নিত করতে সায়ায্য করে।
কোনো ইডিডি ক্যালকুলেটেড পদ্ধতি নির্ভুল এবং গ্যারান্টি দিতে পারেনা যে ঐ নির্দিষ্ট দিনেই আপনার শিশুটি জন্ম নেবে।এটা স্বাভাবিক যে 2 সপ্তাহ আগে বা পরে শিশুর জন্ম হওয়া।পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে প্রতি 20 জন মহিলার মধ্যে মাত্র 1 জন মহিলা নির্দিষ্ট দিনে সন্তান প্রসব করেন। প্রথম প্রসবের ক্ষেত্রে 10% মহিলা ইডিডির দুই সপ্তাহের পর সন্তান প্রসব করেন।৭০% ক্ষেত্রে ওভারডিউ হয়ে যায়।
যত আপনার প্রসবের দিন এগিয়ে আসে, ততই আপনি আবেগ প্রবন হয়ে উঠবেন আপনার উৎকন্ঠা পরিবর্তিত হয়ে যায় আনন্দে।আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে ওঠেন এই ভেবে যে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। আপনার শারিরীক অসুবিধা এই সময় সবথেকে বেশী হবে কারণ আপনার গর্ভস্থ শিশুটির জন্য জায়গার দরকার হয়।যদি আপনার প্রথম সন্তান হয় তবে ডেলিভারী এবং লেবার পেইন আপনাকে ব্যাস্ত রাখবে। শেষ কয়েকদিন আপনি নিচে লেখা কাজ গুলো করতে পারেন।
5%শিশু জন্মগ্রহণ করা আগে থেকে হিসাব করা নির্দিষ্ট দিনে। 90% জন্মগ্রহণ করে নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে বা পরে। 37 সপ্তাহ থেকে 42 সপ্তাহের মধ্যে শিশু জন্ম স্বাভাবিক বলে ধরা হয়।
হ্যাঁ,দিনটি পিছোতে পারে বিভিন্ন কারনে, যেমন ভ্রুনের বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থার জটিলতা, মায়ের সার্বিক সাস্থ্যের কারনে।
হ্যাঁ, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলে আমরা প্রসবের দিন জানতে পারি।এটা সাধারণত করা হয় প্রেগনেন্সির আট সপ্তাহ থেকে কুড়ি সপ্তাহের মধ্যে। গর্ভস্থ শিশুটির দেহের বিভিন্ন অঙ্গের বিকাশ লক্ষ্য করে ডাক্তারবাবু এবং রেডিওলজিষ্টরা জেস্টেসেশন্যাল বয়স নির্ণয় করেন। প্রথম ত্রৈমাসিক আলট্রাসাউন্ড থেকে মোটামুটই সম্ভাব্য তারিখটি জানান।
সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সাহায্যে সম্ভাব্য তারিখ টি জানাবেন।
এসব ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সি চক্র শিশুটির সম্ভাব্য জন্মের দিন হিসাব করতে কাজে লাগে।শুধুমাত্র শিশুটির জন্ম তারিখ বের করা ছারাও এটি অনেক ভাবে আপনার কাজে লাগে। যেমন কবে থেকে আপনার নার্সিং দরকার বা কবে থেকে আপনি মাতৃত্ব কালীন ছুটি নেবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে সম্ভাব্য তারিখ টি একটা অনুমান করে বের করা হয়। তাই এটার উপর অতিরিক্ত জোর দেবার দরকার নেই। তাই আপনি আপনার শরীরের উপর যত্ন নিন এবং আপনার প্রিয় শিশুটির মঙ্গল কামনার মধ্যে দিয়ে তার আগমনের প্রতীক্ষা করুন।
বি দ্র : উপরের তথ্যগুলি কখনই একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের চিকিৎসা সংক্রান্ত উপদেশ এর বিকল্প নয়।