গর্ভধারণ

গর্ভধারণের চেষ্টা করলে যে ১০টি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

একদিকে, অনেক অধ্যয়ন ও গবেষণায় দেখা গেছে যে, মহিলারা সঠিক পুষ্টি ও প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছেন না, সঠিকভাবে গর্ভধারণের জন্য এটা খুবই প্রয়োজনীয় । একই সময় দেখা যায় যে, গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করার সময় মহিলারা কোন খাবারগুলি এড়িয়ে যেতে হবে সে সম্বন্ধে সচেতন নন । এগুলি গর্ভধারণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে বা গর্ভনিষেকের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়, যার ফলে গর্ভধারণ ব্যর্থ হয় ।

গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করলে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে?

ভালো স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি উপাদানগুলির যথাযথ অনুপাত এবং খাবার খাওয়ার সময়সূচী জানা গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গর্ভধারণের চেষ্টা করলে যে খাদ্য সামগ্রীগুলি এড়িয়ে চলতে হবে, সেগুলি জানাও আপনার প্রয়োজন । এখানে একটি তালিকা দেওয়া হলো যেটি দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন ।

১) ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাবার

হ্যাঁ । যদি আপনি সত্যিই গর্ভবতী হতে চান, তাহলে বেক করা কেক, চিপস, ফাস্ট ফুড, ক্যান্ডি এবং অন্যান্য অনেক খাবারকে বিদায় জানাতে হবে । গবেষণায় দেখা গেছে যে, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার সরাসরি মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের সাথে যুক্ত । এই সংযোগটি এত শক্তিশালী যে দিনে মাত্র ২% অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট খেলে একজন মহিলার প্রজনন ক্ষমতা ৭৫% পর্যন্ত কম হয়ে যেতে পারে । এই খাবারগুলি শুধু শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রাই বৃদ্ধি করে না, তারা শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিন উৎপাদনকে বাধা দেয়, ফলে শরীরের সম্পূর্ণ জৈব রসায়নের ক্ষতি হয় ।

২) সরাসরি অপরিস্রুত জল

আপনার বাড়িতে হয়তো সরাসরি বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ হয়ে থাকে । আপনি হয়তো এজন্য সম্প্রতি কোন সমস্যার মুখোমুখি হননি । কিন্তু জলে অনেকগুলি রাসায়নিক থাকে, যেগুলি জলকে পরিশোধন করতে এবং পানের উপযুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়, অথবা সম্ভবত কিছু ট্রেস মাইক্রোবসও থাকে । এই কারণে এই ধরনের জল প্রচুর পরিমাণে পান করলে, তা আপনার শরীর থেকে অনেকটা লবণ বের করে দিতে পারে । এই সময়ে অন্তত ফিল্টার করা জলই পান করা উচিত ।

৩) উচ্চ পরিমাণে চিনি বা শর্করা যুক্ত খাবার

পিসিওএস-যুক্ত মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করলে, এড়িয়ে যাওয়া উচিত এমন খাবারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাবার হল এটি । এই ধরনের খাবারগুলিতে উপস্থিত পরিশ্রুত চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট এমন প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন হয়, যেখানে অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেওয়া হয়, যেগুলি প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ । অনেক চিনি এবং শর্করা শরীরের ইনসুলিন মাত্রা বাড়াতে শুরু করে, যা মহিলাদের ডিম্বাশয়ের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে, যার ফলে মহিলাদের গর্ভনিষেকের সম্ভাবনা কমে যায় । তাছাড়া, পিসিওএস-যুক্ত মহিলাদের এগুলির জন্য বেশি সমস্যা হয়, যার মধ্যে অন্যতম হল অনিশ্চিত ডিম্বস্ফোটোন ।

৪) সোয়া-ভিত্তিক খাবার

আসলে, এটি নিয়ে একটু বিতর্ক রয়েছে । সোয়াতে স্বাস্থের উপকারীতা আছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মনে করা হ যে, যে মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের সোয়া থেকে দূরে থাকা উচিত । সোয়ায় কিছু যৌগ রয়েছে, যা নারীদেহের এস্ট্রোজেনের মতোই কাজ করে । তবে, এই যৌগগুলি নিষেকের জন্য ডিম্বাণুর দিকে এগিয়ে যাওয়া শুক্রাণুকে ধ্বংস করা এবং বাধা দেওয়ার জন্যও পরিচিত, যার জন্য গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায় ।

৫) বায়ুযুক্ত পানীয়

ফাস্ট ফুডের পাশাপাশি আপনাকে এগুলির সঙ্গী বন্ধুদেরও বিদায় জানাতে হবে । বিভিন্ন নরম পানীয় এবং সোডাগুলিতে শুধু যে আপনার স্বাস্থ্যের সহায়ক কোনও উপযুক্ত পুষ্টি নেই তা নয়, বরং এতে উচ্চ পরিমানে ফ্রুক্টোজ যুক্ত কয়েক টন ভুট্টা সিরাপ থাকে, প্রচুর পরিমাণে সংরক্ষক বা প্রিজারভেটিভ থাকে যাতে এটি পানের উপযুক্ত থাকে এবং স্বাদ যোগ করার জন্য বিভিন্ন সিনথেটিক স্বাদ থাকে । এই সমস্ত জিনিসগুলি আপনার শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করে, প্রকৃত পুষ্টির সংশ্লেষের জন্য কোন জায়গাই থাকে না ।

Related Post

৬) কিছু কাঁচা খাবার

সবজি এবং ফলকে আপনার বন্ধু হিসাবেই ধরা হয় এবং এগুলির পুষ্টির সমর্থক হওয়ার কথা । তাই কিছু কাঁচা শাকসব্জি এবং ফল এড়াতে বলা হলে, বেশিরভাগ মহিলাই বিস্মিত হতে পারেন । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কাঁচা অঙ্কুর; যেমন মুগ, মুলো এবং অন্যান্য কিছু জিনিস, যেগুলির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে জন্মানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই ভ্রুণের গর্ভপাত হয়ে যায় । নির্বীজকৃত ফলের রস এবং সাইডারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার । জৈব খাবার জিনিসগুলি এই ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে খাওয়ার জন্য একটি ভাল বিকল্প হতে পারে ।

৭) মটরশুঁটি

এই তালিকায় আরেকটি বিস্ময়কর প্রবেশ, তাই না? যদিও খুব অল্প কয়েকজন ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ এই বিষয়ে সচেতন, তবে এক শতাব্দী আগে এই বিষয়ের উপর গবেষণায় করা হয়েছে, যেখান দেখা গেছে, নিয়মিত মটরশুটি খাওয়া মহিলাদের সাথে কম জন্মহারের একটি যোগসূত্র আছে । সয়াবিনের মতো, মটরশুটিগুলিতে কিছু রাসায়নিক থাকে, যা শুক্রাণুকে বাধা দেয় এবং প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধক হিসাবে কাজ করে ।

৮) মাছ

মাছ স্বাস্থ্যকর খাবার । কিন্তু আমাদের জলে থাকা মাছগুলি স্বাস্থ্যকর নয় । তাদের মধ্যে উচ্চ অনুপাতে পারদ থাকে, যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আপনি গর্ভবতী বা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, যা-ই হোক না কেন । আপনার খাবারে নিরাপদ পরিমাণে সালমন, কড বা চিংড়ির মধ্যেই সীমিত রাখুন, যাতে এগুলির উপকারীতাগুলি পাওয়া যায় এবং ক্ষতিকারক ফলাফলগুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায় ।

৯) ডিম

সঠিকভাবে সিদ্ধ করা ডিম সাধারণতকোন সমস্যা করে না । কিন্তু ডিমটি সঠিকভাবে রান্না না করা হলে বা কাঁচা খাওয়া হলে আপনার শরীরে স্যালমোনেলা ভাইরাস সংক্রমন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা আপনার গর্ভাবস্থাকে টিকিয়ে রাখার সম্ভাবনাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি স্বাভাবিক ডিমে প্রাণীদেরকে ইনজেক্ট করা এন্টিবায়োটিক থাকতে পারে। অতএব, সাময়িকভাবে অরগানিক বা জৈব ডিম খাওয়া বেছে নিন, যদি সম্ভব হয়।

১০) পনির বা চীজ

চিন্তা করবেন না, এই সুস্বাদু খাবার থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকার প্রয়োজন নেই । নির্বীজকৃত করা হয়নি এমন দুধ থেকে তৈরি পনির বা ছাঁচে পাকানো পনির বা চীজ এড়িয়ে যান । এই সমস্তের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে । আপনি যদি এরপরেও সেগুলিকে বেছে নেন, তাহলে খাওয়ার আগে সেগুলিকে ভালো করে রান্না করতে ভুলবেন না ।

গর্ভবতী হওয়া যতটা মনে হয় ততটা সহজ নয় । শুধু যৌনসঙ্গম ছাড়াও এতে আরো বেশি কিছু আছে এবং শরীরকেও বাচ্চাকে ধারণ করার ক্ষমতাযুক্ত হতে হবে । প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এড়িয়ে যাওয়ার মতো খাবারগুলি সম্বন্ধে জানলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে ।