গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।ডিম্বাশয়ের মধ্যে ডিম্বাণুগুলি উৎপন্ন হয় এবং সেগুলি শুক্রাণুর দ্বারা নিষেকের পর নিষিক্ত হয়ে ওঠে।এছাড়াও আবার ডিম্বাশয়টি মহিলাদের অন্যতম মূখ্য প্রজনন হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন উৎপন্ন করে।
গর্ভধারণেওর জন্য স্বাচ্ছন্দ্য আসার ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ের আকারটির গুরুত্ব অনেকখানি–ছোট আকারের ডিম্বাশয়ের অর্থ হল একজন মহিলার স্বাভাবিকের তুলনায় কম ডিম্বাণু সংরক্ষিত হওয়া।তাই বলে বড় আকারের ডিম্বাশয় থাকার অর্থ কখনই এটি হতে পারে না যে সেক্ষেত্রে তাদের ডিম্বাণুর সংরক্ষণ বেশি মাত্রায় হবে।বিভিন্ন কারণে ডিম্বাশয়ের আকারে পরিবর্তন হতে পারে,যার সমস্ত কিছুই আমরা নিচে আলোচনা করব।
একজন মহিলার জীবনে বহুবার বিভিন্ন কারণে তার ডিম্বাশয়ের আকার পরিবর্তিত হয়ে থাকে।ডিম্বাশয়ের আকারে পরিবর্তন আনতে পারে এমন বিভিন্ন কারণের উল্লেখ এখানে করা হলঃ
বয়সের সাথে ডিম্বাশয়ের আকারে পরিবর্তন হয়ে থাকে।একজন মহিলা তার বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর পূর্বে এবং রজোবন্ধের পরে তার ডিম্বাশয়ের আকারটি ছোট থাকে,সেটি বৃদ্ধি পায় একজন মহিলার জীবনের বয়ঃসন্ধিকালের পর এবং রজোবন্ধের পূর্ববর্তী সময়কালের মধ্যে।একজন মহিলার ডিম্বাশয়ের গড় পরিমাপ হয়ে থাকে দৈর্ঘ্যে 3 cm,উচ্চতায় 2.5 cm এবং প্রস্থে 1.5 cm,বয়ঃসন্ধির আগে বা রজোবন্ধের পরে কোনও মহিলার ডিম্বাশয়টি আকারে 20 mm এর কম ব্যাসযুক্ত হয়ে থাকে।আবার কোনও মহিলার ডিম্বস্ফোটন বা ঋতুস্রাবের সময়েও তার ডিম্বাশয়টি বড় হয়ে ওঠে।
ডিম্বাশয়ের ব্যাধি এবং ক্যান্সারের কারণে কোনও মহিলার ডিম্বাশয়ের আকারটি বেড়ে যেতে পারে।পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম(PCOS),ফলিকুলার সিস্ট এবং করপাস লিউটিয়াম সিস্টের মত কিছু শর্তের কারণে ডিম্বাশয়টি বড় হয়ে যেতে পারে,যার ফলে আন্তঃরক্তক্ষরণ এবং যন্ত্রণা হয়ে থাকে।এই ব্যাধিগুলি একজন মহিলার গর্ভবতী হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরী করে।
বন্ধ্যাত্ব ধরা পড়া মহিলাদের প্রায়শই গর্ভধারণ করানোর জন্য প্রজননের ক্ষেত্রে উর্বরতা বৃদ্ধি চিকিৎসার মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়।এই সকল চিকিৎসার একটা অংশের সাথে হরমোনাল ইঞ্জেকশনগুলি যুক্ত থাকে,যেগুলি প্রয়োগের দ্বারা ডিম্বাশয়কে উদ্দীপ্ত করা হয় যাতে সেটি নিষেকের জন্য ডিম্বাণু মুক্ত করতে পারে।এই চিকিৎসাগুলির কারণে ডিম্বোস্ফোটনের সময় ডিম্বাশয়টি বেড়ে ওঠে এবং ডিম্বোস্ফোটনের পর্যায়টি ঘটে যাওয়ার পর তা পুনরায় আবার স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসে।
গর্ভাবস্থায় ডিম্বাশয়ে প্রোজেস্টেরণ এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনগুলি (যা গর্ভাবস্থায় সহায়তা করে থাকে)উৎপন্ন হওয়ার কারণে ডিম্বাশয়ের আকারটি বেড়ে যেতে পারে।তবে,এ ব্যাপারে আপনার মধ্যে যে সিস্ট অথবা ফাইব্রয়েডগুলি নেই সেটি নিশ্চিত করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটি বিচক্ষণতার কাজ।
কোনও মহিলার ডিম্বাশয়ের আকার তার সাবলীলভাবে গর্ভধারণের দক্ষতার সহিত সম্পর্কিত।নিষিক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত সম্ভাব্য ডিম্বাণুগুলির সংখ্যা ডিম্বাশয়ের আকারের উপর নির্ভর করে।যদি কোনও মহিলার ডিম্বাশয়ের আকারটি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে তবে তার ডিম্বাণুর সংরক্ষণ গড়পড়তার তুলনায় সম্ভবত কম হওয়ার কারণে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে তিনি হয়ত সমস্যায় পড়তে পারেন।ডিম্বাশয়ের আকারটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এবং সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড এবং রক্ত পরীক্ষার মত কিছু পরীক্ষা পরিচালনা করানো যেতে পারে।প্রযুক্তিবিদরা আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান ব্যবহারের দ্বারা একটি ডিম্বাশয়ের ফলিক্যলের সংখ্যা গণনা করতে পারেন।মহিলাটির ডিম্বাণুর সংরক্ষণ স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম রয়েছে কিনা,নির্ধারিত ফলিক্যলের সংখ্যাটি তার ইঙ্গিত দিতে পারে।
বড় মাপের ডিম্বাশয় থাকা মানেই তার অর্থ এই নয় যে সেক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিম্বাণুর সংরক্ষণ উচ্চ মাত্রায় হবে,মহিলাদের ডিম্বাশয়টি কিন্তু আবার টিউমার বা অন্য কোনও ব্যাধির কারণেও বেড়ে যেতে পারে।এই সব ক্ষেত্রে,মহিলাদের ডিম্বস্ফোটন স্বাভাবিকভাবে হবে না এবং তার ফলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা আসবে।পলিসিস্ট ওভারিতে ভুগে থাকা কোনও মহিলার ডিম্বাশয়ের আকারটি বেড়ে প্রায় 15 cm ব্যাসবিশিষ্ট হতে পারে।
সুতরাং,বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ডিম্বশয়গুলি প্রায়শই একটি হরমোনের ব্যাধির,সিস্ট অথবা টিউমার হওয়ার ইঙ্গিত করে থাকে।আপনার যদি সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে জটিলতা থেকে থাকে তবে তা এই ধরণের কোনও সমস্যার কারণে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর কাছে একবার পরীক্ষা করিয়ে নিন।
গর্ভধারণের জন্য ডিম্বাশয়ের সঠিক মাপটি হল 3cm x 2.5cm x 1.5cm,যা হল একটি সাধারণ,স্বাস্থ্যকর ডিম্বাশয়ের পরিমাপ।এই মাপের একটি ডিম্বাশয়ে পর্যাপ্ত ডিম্বাণু সংরক্ষিত থাকবে।তবে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় ডিম্বাণুর নিজের আকারটিও এক্ষেত্রে গুরুত্ব রাখে–উর্বর হওয়ার জন্য ডিম্বাণুর আকারটি সঠিক হওয়া উচিত।ডিম্বাণুটি যদি সঙ্কুচিত হয়ে যায়,এটি সঠিকভবে বিকশিত হবে না।
এক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ,নিয়মিত অনুশীলন,দেহে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং চিন্তা ও চাপ–মুক্ত হয়ে থাকার মাধ্যমে সবসময়েই আপনার ডিম্বাশয় এবং ডিম্বাণুর স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করার উপায় রয়েছে।
এক্ষেত্রে আপনার ডিম্বাশয় এবং ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনের জন্য কতকগুলি উপায় আছে,এখানে তার কয়েকটির উল্লেখ করা হলঃ
ডিম্বাশয়ের আকারটি একটি মহিলার গর্ভধারণের সম্ভাবনের উপর প্রভাব ফেলে,তবে সেক্ষেত্রে এর বহু অন্তর্নিহিত কারণও হয়ত থাকতে পারে।এটি কি আপনার গর্ভধারণের সময় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলির মধ্যে একটি?-সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সহিত আলোচনা করুন এবং তাঁর থেকে জেনে নিন ইতিবাচক ফললাভের ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে এটির স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারেন।