আপনি যদি আপনার গর্ভাবস্থার আট মাস চিহ্ণে আঘাত করে থাকেন,তবে আপনি প্রায় সেখানেই আছেন!পূর্ণ গর্ভবতী হওয়ার অনুভূতি এই মাসে আপনি প্রায় সম্পূর্ণ রূপেই অনুভব করেন এবং কখনই অবাক হবার কিছু নেই যদি আপনি ইতিমধ্যেই আপনার সন্তানের জন্য নতুন জামা কাপড় কেনার কথা চিন্তা করতে শুরু করেন।তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শুরুটি আসে এটির নিজের চ্যালেঞ্জের সাথে কারণ আপনার বাচ্চা বেশি ওজন লাভ করতে থাকে এবং সে বেড়িয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।আপনার সন্তানের বৃদ্ধি,যে পরিবর্তনগুলি আপনার শরীরে আসে এবং আপনার গর্ভধারণের এই পর্যায়ে যেগুলি আপনার করা উচিত সেগুলি সম্পর্কে জানতে আরো বেশী করে পড়ুন।
সাধারণত গর্ভাবস্থার অষ্টম মাস হল এমন একটা সময় যখন মায়ের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন গুলি হয়।তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যায়ের সূচনাকে চিহ্ণিত করে এমন কিছু সাধারণ লক্ষণগুলি হল,
ক্রমবর্ধমান শিশু এবং ফলস্বরূপ আচমকা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুর শরীরে কিছু অতিরিক্ত ওজন সংযুক্ত হয়।অভ্যন্তরীণ ভাবে,জরায়ুর বিস্তার ফুসফুসের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং এটিকে সংকুচিত করে।এই শারীরিক পরিবর্তনগুলি শ্বাসকষ্টের কিছুটা কারণ।এই অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে যখন শিশুটির অবস্থান এই মাসে সেফালিক পজিশনে থাকে।
ব্রাক্সটন হিক্স সংকোচন নামে এমন একটি সংকোচন সম্ভবত এই মাসে ঘটে থাকে যেটি প্রকৃত প্রসবকালীন সংকোচনের মতই যন্ত্রণাদায়ক। সাধারণত সেগুলি কেবলমাত্র কয়েক সেকেণ্ডের জন্যই হয়ে থাকে।প্রসবের জন্য জরায়ুর পেশীগুলিকে প্রস্তুত করতে শরীর এই স্বাভাবিক পদক্ষেপটি গ্রহণ করে।কম পরিমাণে জল পান করা এই সংকোচনকে আরও বেশী মাত্রায় বাড়িয়ে তোলে।
জরায়ুর বৃদ্ধির ফলে পেলভিক অঞ্চলে অন্ত্র এবং শরীরের অন্যান্য আভ্যন্তরীণ অঙ্গাণুর জায়গা অধিকার করে নেয়।এই কারণের জন্যই আপনি সম্ভবত এই মাসে গর্ভের আন্দোলনে অসুবিধা অনুভব করতে পারেন।মাঝে মধ্যে আবার এই অতিরিক্ত চাপের কারণে আপনার মলের মধ্যে কিছু রক্তও আসতে পারে।জোলাপের দ্বারা এই অবস্থাটি সহজেই চিকিৎসাযোগ্য,সুতরাং যখন আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্মুখীন হবেন আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নিন।
বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুতি–মূলক পদক্ষেপ হিসেবে,মায়ের দেহ আগে থেকে কোলোস্ট্রাম তৈরী করে।এই মাসে আপনার স্তন থেকে সামান্য পরিমাণে কোলোস্ট্রাম বা হলদেটে দুধ লিক হওয়া লক্ষ্য করতে পারেন।যদিও এটি প্রত্যেকটি মহিলার জন্য খুব একটা সাধারণ সমস্যা নয়,তবে এটি স্তন প্যাড পরিধানের মাধ্যমে সহজেই সমধান করা যেতে পারে।
বেড়ে যাওয়া শিশুর ওজন এবং পেট পিছনে কটিদেশীয় অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি করে।এটি মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রকেও পরিবর্তন করে এবং দেহকে বাধ্য করে একটি খারাপ অবস্থানে দাঁড়াতে।এর ফল স্বরূপ এই পর্যায়ে অনেক মহিলারই কোমড়ে যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে,বিশেষ করে অনেক ঘন্টা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার পর।এটি সংশোধিত করা যেতে পারে অঙ্গ–বিন্যাসের সংশোধন দ্বারা,কঠিন পৃষ্ঠতলে ঘুমানোর দ্বারা এবং গর্ভাবস্থাকালে নিরাপদ এমন কিছু সাধারণ যোগ–ব্যায়াম অনুশীলনের দ্বারা।
গর্ভধারণের অষ্টম মাস হল আপনার সন্তানের উল্লেখযোগ্যজনক ভাবে ওজন বৃদ্ধির এবং বেশ দ্রুততার সাথে বেড়ে ওঠার সময়।এই সময়টি সরাসরি মায়ের শরীরে বহু পরিবর্তন নিয়ে আসে।সেগুলির মধ্যে আপনি নিম্নলিখিত পরিবর্তন–গুলি লক্ষ্য করা শুরু করতে পারেন।
গর্ভাবস্থার প্রতিটি ত্রৈমাসিক তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জের সাথে আসে।সাধারণত গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে,এগুলি হল এমন কিছু ধরণের উদ্বেগ যা মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে অনেক মহিলার উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।এটি জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন নামে পরিচিত, এবং এটি মানসিক চাপ অথবা শারীরিক অন্যান্য শর্তগুলির কারণে হতে পারে।যদি এই উচ্চ রক্তচাপটি জরায়ুর উচ্চ প্রোটিনের সাথে মিলিত হয়,তবে এটিকে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বলা হয়।অচিহ্ণিত অথবা অচিকিৎসারত প্রিক্ল্যাম্পসিয়া ভ্রূণের পুরোপুরি ক্ষতি করতে পারে যেহেতু এটি শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।এই উদ্বেগ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মোকাবিলা করতে হবে।
গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে অকাল প্রসব ঝুঁকির একটা কারণ হয়ে ওঠে কারণ অনেক শিশুই সেফালিক পোজিশনে স্থায়ী হয়ে যায় এবং পূর্ণ সময়ের তুলনায় দ্রুত জন্মগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়।অন্যান্য শারীরিক অবস্থা যেমন প্রিক্ল্যাম্পসিয়া,প্ল্যাসেন্টা বা অমরার অস্বাভাবিকতার ফলেও শিশুর জরুরী জন্ম হতে পারে।আট মাসে যে সকল শিশুর জন্ম হয় তাদের বেঁচে থাকার একটা ভাল সম্ভাবনা থাকে কিন্তু অনেক দিনের জন্য প্রয়োজন হয় তাদের অত্যন্ত যত্ন নেওয়ার।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পড়া মাত্র ভ্রূণের বিকাশের শেষ পদক্ষেপটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।এখানে অষ্টম মাসে শিশুর মধ্যে হওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের উল্লেখ করা হল।
গর্ভাবস্থার অষ্টম মাসে নেওয়া পরিচর্যা ও সাবধানতার অংশ হিসেবে এই পর্যায়ে এখানে রইল আপনার কি করা উচিত এবং উচিত নয়সেই বিষয়গুলি।
প্রতি মাসের মতই গর্ভাবস্থার আট মাসে খাদ্য তালিকায় খাদ্যগুলি সুষম এবং স্বাস্থ্যকর হওয়া প্রয়োজন।অতিরিক্ত ভাবে আপনার খাদ্যে বেশী পরিমাণে তন্তু থাকা উচিত যা কোষ্ঠকাঠিণ্য কমায় যেটা এই সময়ে প্রায়ই হয়ে থাকে।আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যে ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার বা তার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।কাঁচা,ঠিকমত রান্না না হওয়া খাবার,কাঁচা শামুক জাতীয় খাবার,প্রসেসড ফুড, কফি,এবং পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ খাওয়া এড়িয়ে চলুন এগুলো খেলে আপনার খাদ্য বিষক্রিয়া বা অ্যালার্জি হতে পারে।
সমান অংশীদার হবার জন্য বাবাদেরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে সন্তান জন্মের আগে এবং পরে।এখানে কয়েকটি বিষয় রইল হবু বাবাদের মনে রাখার জন্য।
যেহেতু গর্ভাধারণের এই সমগ্র যাত্রাপথে মা নানা রকম শারীরিক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে,তার শিশুর স্বাস্থ্য, তার চেহারা,তার ভবিষ্যৎ ইত্যাদি।স্বামি হিসাবে আপনি সবসময় আপনার স্ত্রীকে ইতিবাচক প্রত্যয় জুগিয়ে চলবেন।তার আবেগ প্রবণতার দিকগুলিও এই পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বর্ধণশীল ওজন এবং নানা ধরণের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য ঘরের দৈনন্দিন কাজকর্ম–গুলি যেগুলো প্রচুর শ্রমসাধ্য সেগুলো হবু মায়েদের পক্ষে করা কঠিণ হয়ে পরে।তাই এই ঘরের কাজ গুলোতে আপনি তাকে সাহায্য করুন যাতে সে কিছুটা সময় আরাম করতে বা নিজেকে নিয়ে থাকতে পারে।
আপনি তার পা টিপে দিন অথবা স্পা এর জন্য একটা বুকিং করার ব্যাপারে প্রশয় দিন।নিজের জন্য যত্ন এবং সময়ের অভাব দেখা দেবে শিশুটির জন্মের পর।আপনি তাকে যথেষ্ট প্রশয় দেওয়া নিশ্চিত করুন জন্মের পর শিশুর যত্নের মত কঠিণ কাজ করার আগে।
শিশুর জন্ম এবং সদ্যোজাতের যত্ন অত্যন্ত ব্যয়বহুল।আপনার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করে রাখুন যাতে সমস্ত ধরণের হসপিটাল বিল মেটানো যায়।আপনার ইন্সুওরেন্স কোম্পানির সাথে কথা বলুন এবং জেনে নিন কীভাবে দাবিগুলি পেতে হবে।
আট মাস হল সঠিক সময় আপনার গর্ভাবস্থা উপভোগ করার ক্ষেত্রে এবং যতটা সম্ভব ততটা উদযাপন করুন।আপনার বিরাট দিনের থেকে আর কয়েক ইঞ্চি দূরে আছেন আপনি, আপনার শরীর ক্রমশ পরিবর্তিত হয়ে চলেছে আপনার ক্রম বিকাশমান শিশুর জন্য।সময় নিন এবং প্রশয় উপভোগ করুন যেহেতু আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই আপনি মিলিত হতে চলেছেন আপনার এক গুচ্ছ আনন্দের সাথে!