In this Article
তৃতীয় ত্রৈমাসিক,আপনার গর্ভাবস্থার সর্ব শেষ পদক্ষেপ,আপনি ধীরে ধীরে সেই সবচেয়ে প্রতীক্ষিত দিনটিকে আহরণ করে থাকেন।আপনার দেহ এবং আপনার সন্তান এক অস্বাভাবিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে।আপনি আকৃতিতে বড় দেখতে লাগবেন,এবং আপনার ওজন বৃদ্ধিকে পরিমিত করার একটা ডায়েটে যেতে আপনি প্রলুব্ধ হয়ে উঠবেন।খাদ্যের পরিবর্তে, আপনার ডায়েটকে এমনভাবে করার চেষ্টা করুন এবং গঠন করুন যা এই পর্যায়ে আপনার পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাগুলি মেটাবে এবং আপনার ওজনও পরীক্ষা করবে।আপনার পেটের ভিতরে গুড় গুড় শব্দ গুলি আগে প্রায়ই হয়ার থেকেও এখন থেকে আরও বেশী হতে থাকবে যেহেতু আপনার সন্তানটি এখন থেকে প্রস্তুত হতে থাকবে তার বহির্জগতের জীবনের জন্য।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে,অন্তত নূন্যতম একটি অতিরিক্ত 450 ক্যালোরি গ্রহণ করতে যা থেকে আপনার সন্তানের এই পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি লাভ নিশ্চিত করা হয়।সুতরাং বড় প্রশ্ন হল আপনার পুষ্টি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সাম্যতা বজায় রাখার জন্য আপনার কি খাওয়া উচিত।এখানে অসংখ্য বিকল্প দেওয়া রইল।খুঁজে পেতে পড়ুন।
গর্ভধারণের সপ্তম মাসের ডায়েটে কোন খাবার গুলি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে?
গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে ত্রৈমাসিকের একটা স্বাস্থ্যকর ডায়েটে অনেকগুলি উপাদান থাকে।আপনার খাদ্য পরিকল্পনায় নীরস হয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু অবশ্যই তার সাথে পুষ্টিকর উপাদানগুলিকে সংযুক্ত করবেন।মূল বিষয় হল সংযমের সাথে খাওয়া!বেশী খাওয়ার সব রকমের প্রলোভন এড়িয়ে চলুন,তার বিশেষ কারণ হল এই সময়ে আপনি আকস্মিক তীব্র খিদে অনুভব করবেন।গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে কোন খাবার গুলি খাবেন সে বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন।
- আয়রণ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার : প্রসবের অথবা এমনকি অকাল প্রসবের সময় অ্যানিমিয়া ও হ্যামারেজ বা রক্তস্রাব এড়িয়ে চলার জন্য আয়রণের একটা অতিরিক্ত ডোজ অপরিহার্য।আপনার প্রতিদিন মোটামুটি প্রায় 27 মিলিগ্রামের মত আয়রণের প্রয়োজন।ঘন সবুজ শাক সবজি যেমন পালং শাক,বীটের পাতা,ড্রাই ফ্রুট যেমন কিশমিশ,খুবানি,কুমড়ো এবং তিল বীজ, সয়াবিন,রেড মিট এবং পোলট্রি এগুলি সবই হল আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার যেগুলি আপনি আপনার খাবারের সাথে যোগ করতে পারেন।আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্যও প্রোটিন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিদিন 75-100 গ্রাম প্রোটিন সুপারিশের সাথে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলি যেমন ডিম,মাংস,মসুর ডাল,ছোলা,ডাল এবং দুগ্ধজাত পণ্য গুলি আপনাকে অ্যামিনো অ্যাসিডও সরবরাহ করবে।
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার : গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ক্যালসিয়াম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।আপনার খাদ্য মধ্যস্থ ক্যালসিয়াম আপনার সন্তানের কঙ্কাল তন্ত্রের স্বাস্থ্যকর বিকাশের এবং হাড়ের বলিষ্ঠ গঠনের সহায়ক।প্রতি দিন খাবারের মাধ্যমে প্রায় 1000 গ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া আপনার লক্ষ্য হওয়া আবশ্যক।দুধ,চীজ,পনির এবং দই এর মত সকল দুগ্ধ জাত পণ্যগুলিই ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ।
- ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার : ক্যালসিয়াম খাওয়ার জন্য সমানুপাত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম আপনার প্রয়োজন হবে এটিকে হজম করার জন্য।ম্যাগনেসিয়াম পায়ে খিচুঁনি বা টান ধরা,পেশী শিথিল হওয়ার উপশম করে এবং অকাল প্রসবও প্রতিরোধ করে।প্রতি 100 গ্রাম ক্যালসিয়াম খেলে আপনার 400 গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম খাওয়ার প্রয়োজন।কালো শিম,যবের ভুসি, বার্লি, আর্টিচক(খাওয়ার উপযোগী সবুজ ডাটা গাছ বিশেষ),আমণ্ড এবং কুমড়োর বীজ ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ উৎস।
- DHA সমৃদ্ধ খাবার : আপনি যদি সুস্থ সবল উন্নত মাংসপেশীর ও মস্তিষ্কের একটা শিশু চান তবে সেক্ষেত্রে এক প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিড DHA অপরিহার্য।প্রতিদিন 200 মিলিগ্রাম করে DHA খাওয়ার সুপারিশ করা হয় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য।মাছের তেল,চর্বি যুক্ত মাছ যেমন টুনা,আখরোট এগুলি সবই DHA পরিপূর্ণ।
- ফলিক অ্যাসিড: ফলিক অ্যাসিড যেকোনো রকম নিউরাল টিউবের ঝুঁকি কমায় এবং এটি একটি সুস্থ স্নায়ু তন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে।প্রতিদিন অন্তত পক্ষে 600-800 মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান।সুপারিশকৃত ডোজ পাওয়ার জন্য আপনার খাবারের সাথে ঘন সবুজ শাক সবজি,কমলা লেবু,যবের আটা,সম্পূর্ণ শস্য বা হোল গ্রেইন রুটি এবং শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্যশস্যের মত সম্পূরক গুলি যোগ করুন।
- ফাইবার বা তন্তু সমৃদ্ধ খাবার : তন্তু সমৃদ্ধ খাবার পিত্তকে পরিষ্কার রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনার খাওয়া ফাইবার বা তন্তুগুলির দ্বারা পরিপাক নালী মধ্যস্থিত জল শোষিত হয়ে যায় অতএব প্রচুর পরিমাণে জল পান করার ব্যাপারটা সুনিশ্চিত করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য তৃতীয় ত্রৈমাসিকে একটা সাধারণ ব্যাপার সুতরাং আপনার খাবারের সাথে তাজা ফল,শাক–সবজিশিম জাতীয় খাবার এবং সম্পূর্ণ শস্য বা হোল গ্রেইনগুলিকে অন্তর্ভূক্ত করুন।
- ভিটামিন C : আপনার ভিটামিন C খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করলে তা লোহা বা আয়রণ সমৃদ্ধ খাবারের সঠিক শোষণে সাহায্য করবে।সাইট্রাস ফ্রুট যেমন সরবতী লেবু,কমলা লেবু এবং তরমুজ, ফুটি,খরমুজ জাতীয় ফলগুলি,সবুজ মরিচ এবং ব্রকলি হল ভিটামিন C এর সমৃদ্ধ উৎস।
গর্ভধারণের সপ্তম মাসে যে খাবারগুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে
শুধু কি কি খাবেন সেটা যখন জানবেন,স্মরণে রাখবেন এই পর্যায়ে কি কি খাওয়া যাবে না সেটা জানাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।গলা–বুক জ্বালা,হাত এবং পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া,অবসাদ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এগুলি হল গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ের কিছু সাধারণ উপসর্গ,যেগুলির অভিজ্ঞতা আপনার হবে।কিছু নির্দিষ্ট খাবার এই সমস্যা গুলিকে অবশ্যই বাড়িয়ে দেয়,এবং সেই কারণে আপনার খাদ্য থেকে সেগুলিকে নিষ্কাশন করাই ভাল।
- উচ্চ মাত্রায় তেল মশলাযুক্ত খাবার : অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার বিশেষ করে ভাজা খাবার গলা বুক জ্বালার মত অস্বস্তিকে বাড়িয়ে তুলবে।এগুলি হজম করা কষ্টকর এবং আপনার ঘুমকেও ব্যহত করতে পারে।রাতের বেলায় ভাজা খাবারগুলিকে এড়িয়ে চলুন।
- সোডিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আনুন : গর্ভাবস্থার এই পর্যায়ে আপনার খাবারের সাথে সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রাটি পরীক্ষা করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম খাওয়া হলে তা ফুলে যাওয়া এবং ব্লটিং এর মত সমস্যা গুলি ঘটাবে।কুড়মুড়ে খাবার,আচার,শস,ক্যান–জাত খাবার এবং কেচাপ গুলিকে এড়িয়ে চলুন।আপনার শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল এবং জলপান করুন।
- ক্যাফিন এবং ঠাণ্ডা পানীয় গুলির ক্ষেত্রে না বলুন : কফি এবং চা পান করা এড়িয়ে চলুন। নিজেকে সারা দিনের মধ্যে কেবল এক কাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন যেহেতু এটা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ।ঠাণ্ডা পানীয় কৃত্রিম চিনি এবং মিষ্টি দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং একেবারে শূন্য পুষ্টি প্রদান করে।
- অ্যালকোহল বা মাদক : আপনার গর্ভাবস্থার কোনো পর্যায়েই অ্যালকোহলকে একেবারেই সুপারিশ করা হয় না। এই পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই যে আপনি কখনই এটা খাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না কারণ এটা আপনার প্রসব প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে।
- জাঙ্ক ফুড : KFC থেকে আপনার হয়ত ফ্রাইড চিকেন অথবা ম্যাক ডোনাল্ড থেকে লোভনীয় বিশাল বার্গার খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে কিন্তু আপনি যদি এগুলি থেকে দূরে থাকেন তবে তা আপনার ক্ষেত্রে সাহয্য হবে।একটা সীমিত পরিমাণের মধ্যে এগুলিকে ব্যপ্ত করুন এবং ঘরে তৈরী কিছু জলখাবার যেমন স্যান্ডউইচ,উপমা,ধোকলা ইত্যাদি গুলিকে নির্বাচন করুন।
সাত মাসের গর্ভবতী মহিলার জন্য ডায়েটের পরামর্শ
- সকালের ডায়েট – সকালে জল খাবারের সাথে তাজা ফল অন্তর্ভূক্ত করুন।আয়রণ খাওয়ার জন্য খাবারের সাথে শক্তি বৃদ্ধিকারী কিছু দানাশস্য সেবন অন্তর্ভূক্ত করুন।এমনকি আপনি প্রোটিনের জন্য সেদ্ধ করা কিছু শিম জাতীয় শস্য এবং বিনসকেও খেতে পারেন।এবং রোজ নিয়ম করে ডিম,ড্রাই ফ্রুট এবং দুধ খান।একটা ভারী জলখাবার খান যেহেতু আপনার শরীর এটি হজম করতে সারাদিন পায়।
- দুপুরের ডায়েট – দুপুরে মধ্যাহ্ণ ভোজের সাথে একটা সুষম অনুপাতে রান্না করা সবজি,স্যালাড,রুটি এবং ভাত অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিত।অস্বাস্থ্যকর ক্যালোরি বৃদ্ধিকারী মিষ্টি খাবারের তুলনায় বেশী শর্করা জাতীয় খাবার গুলি খান।আপনার দুপুরের ভোজে সাথে প্রোটিনকেও সংযুক্ত করুন।
- রাতের নৈশভোজের ডায়েট – গলা–বুক জ্বালা কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলার কারণে আপনার নৈশভোজটি হালকা রাখুন।রাত্রে ভাল ঘুমের জন্য স্যালাড এবং তাজা ফলের সাথে জড়িত থাকুন।
একটা স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার শুধুমাত্র আপনার জন্যই নয় আপনার সন্তানের জন্যও উপকারী।যেহেতু আপনি এখন থেকে আকারে বেড়ে চলেছেন তাই যে ক্যালোরি গুলি আপনি গ্রহণ করেছেন সেগুলি এবং আপনার অর্জিত ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে অল্প কিছু ব্যায়াম করা ভাল ধারণা হতে পারে।গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে উপযোগী কিছু যোগ–ব্যায়াম,সাঁতার এবং হাঁটা এগুলি হল আপনার অর্জিত ওজন চেক করার সেরা বিকল্প যেগুলি স্বাভাবিক প্রসবের জন্য আপনাকে শক্তিশালী এবং ফিট রাখবে।