গর্ভধারণ এড়াবার জন্য কীভাবে সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করবেন

গর্ভধারণ এড়াবার জন্য কীভাবে সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করবেন

In this Article

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ নির্ণয় করার চেষ্টা করছে অনুর্বর সময়ের যখন সঙ্গম করলে গর্ভসঞ্চার হবে না। যদি আপনি একবার ঋতুচক্রের বিজ্ঞানটি বুঝতে পারেন এবং জানতে পারেন এর প্রতিটা দশায় কি ঘটে তাহলে আপনি সুরক্ষিত সময়ের হিসাব আরো নিখুঁত ভাবে করতে পারবেন।এটা করলে স্বাভাবিক ভাবে গর্ভসঞ্চার রোধ করা যায় কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া।

কোনটা সুরক্ষিত সময়(অনুর্বর সময়)?

সুরক্ষিত সময় বলতে সেই সময় বোঝায় যে সময়ে মহিলাদের গর্ভধারণের ঝুঁকি কম থাকে, যখন আপনি সন্তান চাইছেন না এবং কোনোরকম গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে চান না তখন এটাই হল সেই সময় যখন আপনি যৌন সঙ্গম করতে পারবেন।

জীবন বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বলা চলে যে এই সময়ে মহিলাদের শরীরে কোন ডিম্বাণু থাকে না। যদি এই সময় আপনি যৌনসঙ্গম করেন যখন ডিম্বাণু নেই ,তখন আপনি গর্ভবতী হবেন না কারণ এটা হল ঋতুচক্রের অনুর্বর সময়।

বেশীরভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে ওভ্যুলেশান ঘটে পরবর্তি ঋতুস্রাবের 14 দিন আগে। এটা বের করা বেশ শক্ত যে মহিলাদের পরবর্তি ঋতুস্রাব কবে থেকে শুরু হবে।যাইহোক যদি কোনো মহিলার ঋতুচক্র নিয়মিত হয় তাহলে ওভ্যুলেশনের দিন নির্ণয় করা খুব সহজ।এই জন্য আপনাকে পূর্ববর্তী ঋতুচক্রের দিনগুলি জানতে হবে শুরু করার প্রথম ধাপ হিসাবে।এটা মাথায় রাখবেন যে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় ওভ্যুলেশানের চার দিন আগে থেকে তিন দিন পরে পর্যন্ত। তার মানে হল এটা অসুরক্ষিত সময় আপনি এই সময় যৌনসঙ্গম থেকে বিরত থাকবেন।

কীভাবে সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করবেন যাতে গর্ভসঞ্চার না হয়

কীভাবে সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করবেন যাতে গর্ভসঞ্চার না হয়

সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করার জন্য আপনাকে ঋতুচক্রের বিভিন্ন দশাগুলো সম্বন্ধে জানতে হবে।

ঋতুচক্রের বিভিন্ন ধাপগুলি

ঋতুচক্রে তিনটি দশা দেখা যায়, এগুলো হল ফলিকুলার দশা,(প্রিওভ্যুলেশন দশা) ওভ্যুলেশন এবং লুটিয়াল দশা (পোষ্টওভ্যুলেশন দশা)। বিভিন্ন মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিটা দশার সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়।যাইহোক গড়ে ঋতুচক্র 28 দিন ধরে চলে।ঋতুস্রাবের প্রথম দিন থেকে ঋতুচক্রের শুরু ধরা হয়। এখন দেখা যাক প্রতিটা দশায় কী ঘটে।

1. ফলিকুলার দশা বা প্রোলিফারেটিভ দশা

এটা অভ্যুলেশান ঘটার আগের দশা। এই দশায় ফলিকুল গুলি ডিম্বাশয়ের মধ্যে পূর্ণতা পায়। এটা ওভ্যুলেশানে শেষ হয়। এই দশায় ইস্ট্রাডিয়ল হরমোন কাজ করে এবং ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন ক্ষরিত হয়।

2. ওভ্যুলেশান দশা

এই দশায় একটি পূর্ণাঙ্গ ওভারিয়ান ফলিকুল থেকে ওভাম (ডিম্বাণু) বেড়িয়ে আসে। অভ্যুলেশানের ঠিক আগের এবং পরের সময়টাকে ওভ্যুলেশান দশা বলে।এক জন মহিলার অভ্যুলেটিং এর সময়েই গর্ভবতী হয়ে পড়ার সম্ভবনা সবথেকে বেশী থাকে।

3. ল্যুটিয়াল দশা বা ক্ষরণ দশা

এটা হল ঋতুচক্রের সর্বশেষ দশা।এর শুরুতে করপাস লুটিয়াম তৈরী হয়।শেষ হয় গর্ভধারণের মধ্যে দিয়ে কিম্বা করপাস লুটিয়ামের ধ্বংসের মাধ্যমে।করপাস লুটিয়াম হল একপ্রকারের অস্থায়ী অন্তক্ষরা তন্ত্রের অংশ যা ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টোজেন ক্ষরণ করে।

জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম আবরণ তৈরী করতে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টোজেন কাজে লাগে।সুরক্ষিত সময় নির্ভর করে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু উভয়েরই জীবনকালের ওপর। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গড়ে 28 দিনের ঋতুচক্রের 14 দিনের মাথায় ওভ্যুলেশান ঘটে থাকে। ওভ্যুলেশানের সময় বিভিন্ন মহিলার ক্ষেত্রে 12 তম দিন থেকে 19 তম দিনের তারতম্য ঘটে।জনন নালীর মধ্যে একটা শুক্রাণু 3 থেকে 5 দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে।

ল্যুটিয়াল দশা বা ক্ষরণ দশা

সেই জন্য গর্ভসঞ্চার হবার প্রবণতা থাকে যদি ওভ্যুলেশানের দিন থেকে পাঁচদিন আগে অসুরক্ষিত যৌনসঙ্গম করা হয়ে থাকে। একটি আদর্শ ডিম্বাণুর জীবণকাল অপেক্ষাকৃত কম মাত্র 24 ঘন্টা। যদি এই সময়ের মধ্যে নিষেক সম্পন্ন না হয় তাহলে ডিম্বাণুটির মৃত্যু হয়।

গর্ভধারণ এড়াবার সুরক্ষিত সময়ের চার্ট

এখানে সুরক্ষিত সময়ের এবং অসুরক্ষিত সময়ের চার্ট দেওয়া হল যেখানে সহজ গণনার সাহায্যে আপনি সুরক্ষিত দিন গুলো বের করতে পারবেন।

সুরক্ষিত সময় ক্যালেন্ডার পদ্ধতি অনুসারে
রবিবার সোমবার মঙ্গল্বার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার
পিরিয়ড শুরু

1

2 3 4 5 6 7 সুরক্ষিত সময়
8 9 10 11 12 13 14 অসুরক্ষিত সময়
15 16 17 18 19 20 21
22 23 24 25 26 27 28
পিরিয়ড শুরু

29

30 1 2 3 4 5

কখন যৌনসঙ্গম করবেন গর্ভধারণ এড়াবার জন্য

1. যৌণ সঙ্গমের সুরক্ষিত সময় কোনটি?

চলতি ধারণা হল আপনি যৌন সঙ্গম করলেই গর্ভসঞ্চার হবে।আপনার সব রকমের হিসাব নিকাশ সত্ত্বেও একজন মহিলার কবে ওভ্যুলেশান হবে তা বলা সম্ভব নয় যেহেতু নানা কারণ এতে জড়িয়ে আছে।

বেশিরভাগ মহিলার পিরিয়ড শুরু হবার 12 দিন থেকে 14 দিনের মধ্যে ওভ্যুলেশন হয়। কিন্তু অনেক মহিলার শরীর অন্য সময়তালিকা মেনে চলে ফলে তাদের ওভ্যুলেশান অন্য সময়ে হয়। তাই ঠিক কোন সময় হল যৌনসঙ্গমের জন্য সুরক্ষিত তা বলা হল লাখ টাকার প্রশ্ন।

2. সরক্ষিত সময়ের ব্যাপ্তি কতদিন?

তাদের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক মহিলা মনে করেন যে পিরিয়ড শুরু বা তার সামান্য কদিন আগে যৌনসঙ্গম করলে গর্ভসঞ্চার এড়ানো যায়।সাবধান থাকবেন বিভিন্ন হরমোনের ক্রিয়া এবং সময়তালিকার পরিবর্তন আপনার হিসাব গুলিয়ে দিতে পারে।যদি আপনার ঋতুচক্র নিয়মিত হয় (যেটা হল 28 দিন অথবা তার বেশী) তাহলে পিরিয়ড শুরুর দিন আগে পর্যন্ত হল সুরক্ষিত সময়।কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন হিসাব তাদের ক্ষেত্রে কাজ দেবে যারা স্বাভাবিক ঋতুচক্রের অধিকারী।এখানে মিস পিরিয়ডের ধারণাটা মাথায় রাখতে হবে।

3. কীভাবে ওভ্যুলেশানের সময় নির্ধারণ করবেন?

সুরক্ষিত সময় এবং ওভ্যুলেশান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কারণ ওভ্যুলেশানের ওপর নির্ভর করেই সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করা হয়।সব থেকে জনপ্রিয় সুরক্ষিত সময় গণনার পদ্ধতি অনু্যায়ী 1 ম দিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত হল সুরক্ষিত এবং অনুর্বর সময় যাদের ঋতুচক্রটি 26 থেকে 32 দিনের।এটা মনে রাখবেন শুক্রাণুর জীবনকাল জনন নালীর মধ্যে 3 থেকে 5 দিন।এই পদ্ধতিতে ওভ্যুলেশান সংগঠিত হয় 19 তম দিনে। তারপর নিষেক সম্পন্ন হয় 20 তম দিনে।যেহেতু সমস্ত হিসাব নিকাশ আনুমানিক তাই এটা বিভিন্ন মহিলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়।

এই হিসাব থেকে দেখা গেছে যে WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ) তথ্য অনুযায়ী প্রায় 80% মহিলাদের ঋতুচক্র সময় সীমা 26 থেকে 32 দিন।

সুরক্ষিত সময়ের সময়ের হিসাব করার বিভিন্ন পদ্ধতি

এজন্য আপনার কাছ থেকে নানা তথ্য যেমন শরীরের তাপমাত্রা সহ অন্যান্য তথ্য যথা আপনার স্বাস্থ্য শরীর এবং ঋতুচক্র জানতে চাওয়া হয়।

সুরক্ষিত সময়ের হিসাবের ক্যালকুলেটার বা ঋতুচক্র ক্যালকুলেটার

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই চক্র গণনা পদ্ধতিগুলো মোটামুটি সঠিক হয়। যদিও কিছু লোক এই অ্যাপ বা হিসাব পদ্ধতিটি জটিল মনে করেন।আসলে যে তথ্যগুলো দিয়ে এই গণনা করা হয় সেগুলি অনেকের কাছেই সহজবোধ্য নয় যা তাদের অসুরক্ষিত সময়ে যৌনসঙ্গম উৎসাহিত করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যেমন সারা মাসের শরীরের তাপমাত্রা, সারভাইকাল মিউকাস,এবং ঋতুচক্রের দিন প্রভৃতি। এই হিসাবে তথ্যগুলো বসালেই তা পাওয়া যাবে।আপনার দেহের তাপমাত্রা এবং ঋতুচক্রের তথ্যগুলো দিলেই চলবে।তা ছাড়াও অনেকে সহজ পিরিয়ড হিসাব ব্যবস্থা পছনদ করে যেহেতু সেটাতে মাসের তথ্য লাগে না এবং মোটামুটি সঠিক ফল দেয়।

1. উর্বর দিন গুলো এড়িয়ে চলুন

আপনার উর্বর দিন গুলো এড়িয়ে চলুন,সুরক্ষিত দিন নির্ভর করে চক্রগুলোর সময় সীমার ওপর।নিচের সারণীতে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের চক্রের উর্বর দিন গুলি তথ্য দেওয়া হল।যদি আপনি গর্ভবতী হতে না চান তবে নিচের দিন গুলোতে সঙ্গম থেকে বিরত থাকুন।

চক্রের সময়কাল সবথেকে উর্বর সময়
24 দিন 5 দিন থেকে 10 তম দিন
28 দিন 9 দিন থেকে 14 তম দিন
30 দিন 11 দিন থেকে 16 তম দিন
30 দিন 16 দিন থেকে 21 তম দিন

2. হিসাব করুন কখন আপনআর গর্ভধারনের সম্ভবনা কম

প্রথম ধাপ

একটানা ছ্য় মাস ধরে আপনার ঋতুচক্রের হিসাব রাখুন। সহজ পদ্ধতি হল আপনার সবথেকে কম সময়সীমার ঋতুচক্র থেকে 18 দিন বিয়োগ করুন।পরবর্তি ঋতুচক্রের প্রথম দিন থেকে ওই বিয়োগফলের দিন সংখ্যা হিসাব করে ক্যালেন্ডারে দাগ দিন।

ধাপ দুই

দীর্ঘ ঋতুচক্রের সময়সীমা থেকে 11 দিন বাদ দিন। পরবর্তী পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে ওই সংখ্যাটি হিসাব করে ক্যালেন্ডারে দাগ দিন।

তৃতীয় ধাপ

ওই দুটি দাগের মধ্যবর্তি সময়টি হল আপনার সবথেকে বেশী উর্বরতার সময়।ওই সময়সীমার বাইরে যে কোনো দিনই হবে আপনার অসুরক্ষিত যৌন সঙ্গমের সময়। যদিও মাথায় রাখবেন শুক্রাণু প্রায় চার দিন জীবিত থাকে, তাই ওই সময়সীমার থেকে চার দিন আগুপিছু করে নেবেন সুরক্ষিত সময় বের করার জন্য।মনে রাখবেন যদি আপনার পিরিয়ড নিয়মিত হয় তাহলেই এই হিসাব কাজ করবে।

3.কারা সুরক্ষিত পিরিয়ড ক্যালকুলেটার ব্যবহার করবেন

আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর কাছে স্বাভাবিক পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতিগুলো জানতে চাইবেন। ডাক্তারবাবু আপনাকে পরীক্ষা করার পর জানাবেন এটা কার্যকর হবে কিনা। যখন আপনার ডাক্তারবাবু সবুজ সংকেত দেবেন তখন আপনি পিরিয়ড ক্যালকুলেটার ব্যবহার করুন প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধক হিসাবে। কীভাবে সুরক্ষিত দিন হিসাব করবেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার যদি নিয়মিত এবং 26 থেকে 32 দিনের ঋতুচক্র হয় এবং দীর্ঘকালীন ও হ্রস্বকালীন সময়ের মধ্যে ব্যবধান সাত দিন বা তার কাছাকাছি হয় তাহলে আপনি এই পদ্ধতি জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।

4.কারা সুরক্ষিত পিরিয়ড ক্যালকুলেটার ব্যবহার করতে পারেন না

ওপরের নিয়ম অনুসারে বলা যায় যদি আপনার ঋতুচক্রটি 26 থেকে 32 দিনের মধ্যে না হয় এবং আপনার দীর্ঘকালীন ও হ্রস্বকালীন ঋতুচক্রের সময়ের ব্যবধান আট দিন বা তার বেশী হয়,তাহলে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে যাবে।

মনে রাখবেন হরমোনের পরিবর্তের জন্য সন্তান জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করে এই পদ্ধটি প্রয়োগ করা বুদ্ধিমতীর কাজ হবে

কিশোরী এবং রজবন্ধের দোরগোড়ায় যেসব মহিলারা আছেন তাদের অনিয়মিত ঋতুচক্রের জন্য এই নিয়মটা খাটে না। এছাড়াও যাদের অনিয়মিত ঋতুচক্র PCOD এর কারণে বা হরমোনাল কারণে তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযজ্য নয়।

5. সুরক্ষিত সময়ের গণনার কয়েকটি উদাহরণ

সুরক্ষিত সময় গননা যে কোন লোকের পক্ষে বিভ্রান্তিকর।এখানে দুটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • ধরা যাক একজন মহিলার দুটি ঋতুচক্রের মধ্যে ব্যবধান 24 দিনের।তার মানে হল দ্বিতীয় ঋতুচক্রের প্রথম দিন থেকে 10 দিনের মাথায় তার ওভ্যুলেশানের দিন। এর নিয়মে (24 থেকে 14 বিয়োগ ) বলা যায় তার সুরক্ষিত সময় হল প্রথম ঋতুচক্রের প্রথম দিন থেকে ষষ্ঠ দিন এবং দ্বিতীয় ঋতুচক্রের ত্রয়োদশ দিনের পর।
  • এবার আরেকটি উদাহরণ নেওয়াযাক।ধরা যাক একজন মহিলার দুটি ঋতুচক্রের মধ্যে ব্যবধান 32 দিনের তার ওভ্যুলেশানের দিন হল শেষ চক্রের 18 দিন পর। এই হিসাব অনুযায়ী (32 থেকে 24 বিয়োগ) তার সুরক্ষিত সময় হল শেষ পিরিয়ডের প্রথমদিন থেকে 14 তম দিন পর্যন্ত এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে 21 তম দিন থেকে পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগে পর্যন্ত।
  • সুরক্ষা – যে সকল মহিলার নিয়মিত ঋতুচক্র আছে তাদের ক্ষেত্রে সুরক্ষা অনুপাত হল 85%, 12 মাস পর্যন্ত। তবে এটা নির্ভর করে কতটা নিখুঁত আপনার হিসাব হয়েছে এবং আপনি কতটা সেটা মেনে চলছেন।
  • সহজ প্রযুক্তি – আজকের প্রযুক্তির অগ্রগতির জন্য বহু অ্যা আছে যার দ্বারা আপনার ঋতুচক্রের হিসাব করে আপনার অনুর্বর দিনগুলো বের করা যাবে,সমস্ত তথ্য আপনি রেখে দিন তাড়াতাড়ি বের করার জন্য।
    সহজ প্রযুক্তি
    নানা রকমের উপকরণ পাওয়া যায় যেমন ঋতুচক্র ক্যালকুলেটার।এই উপকরণ গুলো আপনাকে একটা মোটামুটি ওভ্যুলেশানের সময়ের হিসাব দেবে। এর ফলে আপনার ওভ্যুলেশানের হিসাব সাথে সুরক্ষিত সময়ের দিন অনেকটা ঠিকঠাক বলা যাবে।

প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা ( উর্বরতা সচেতনতা ভিত্তিক পদ্ধতি)

ওভ্যুলেশান দশায় আপনার দেহে নানা ধরণের লক্ষণ দেখা যায়। আপনি যদি এই লক্ষণ গুলো বুঝে যৌনসঙ্গম এড়িয়ে চলেন তাহলে আপনি গর্ভধারণ এড়াতে পারবেন। একেই বলে প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা।

বিভিন্ন উর্বরতা সচেতনতা ভিত্তিক পদ্ধতিগুলো হল নিম্নলিখিত

1. বাসাল বডি টেম্পারেচার পদ্ধতি

. বাসাল বডি টেম্পারেচার চার্ট হল সব থেকে সহজ উপায়।এর জন্য আপনাকে প্রতিদিন দেহের তাপমাত্রা দেখতে হবে এবং সেটাকে চার্টে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

  • কিছু মহিলার দেহের তাপমাত্রা কমে যায় যখন ওভ্যুলেশান ঘটে
  • যদি দেখেন যে আপনার দেহের তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়েছে এবং তা তিনদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে তাহলে আপনি দাগ টানবেন ফলিকুলার দশা এবং লুটিয়াল দশার তাপমাত্রার মধ্যে।যদি ভাগ্যবান হন তাহলে লুটিয়াল দশার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং ফলিকুলার দশার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য সহজেই করতে পারবেন।
  • চার্টটা বিশ্লেষণ করুন মাসের শেষে এবং প্যাটার্নটি বোঝার চেষ্টা করুন।
  • এই ধরনের চার্ট 3 থেকে 6 মাস ধরে বানান তাহলেই আপনি প্যাটার্নটা বুঝতে পারবেন।
  • যদি আপনার দেহের তাপমাত্রা 18 দিনের মধ্যে না কমে তাহলে বাড়িতে প্রেগনেন্সি টেষ্ট করুন বা ডাক্তারবাবুকে দেখান।

2.বাসাল বডি টেম্পারেচারের চার্টিং

তাপমাত্রা প্লাস 3 নিয়ম

4 টি নিয়ম চার্ট করবার, যার সাহায্যে আপনি গর্ভরোধ করতে পারবেন।

  • প্রথম 5 দিনের নিয়ম – ঋতুচক্রের প্রথম পাঁচ দিন গর্ভধারণের সম্ভবনা সবথেকে কম থাকে। এটা ঠিক হয় না যদি আপনার ঋতুচক্রটি 25 দিনের কম হয়। এটা জানতে ছয়মাস ধরে আপনার ঋতুচক্রটি লক্ষ্য করুন।
  • শুষ্ক দিনের নিয়ম যে দিন বিকালের দিকে কোনো রকম সারভাইকাল তরল দেখা যাবে না সেই দিন অনুর্বর দিন ধরতে পারেন।
  • পিক প্লাস 4 নিয়ম আপনার সবথেকে বেশী সারভাইকাল তরল বের হবার দিন থেকে 4র্থ দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় অনুর্বর সময়।যখন আপনার CF পুণরায় অনুর্বর হয়ে থাকে,এবং সেখানে পরিষ্কার BBT র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
  • তাপমাত্রা প্লাস 3 নিয়মমনে করা হয় BBT পরিবর্তনের 3য় দিন থেকে অনুর্বর সময় শুরু হয়, যাদের নিয়মিত ঋতুচক্র হয় তাদের সুরক্ষিত থাকার অনুপাত 85% , 12 মাসের মধ্যে। যাইহোক, এর সফলতা নির্ভর করছে আপনি কতটা নির্ভুল ভাবে হিসাব করছেন এবং সেটা কতটা নিয়ম মেনে আপনি চলছেন।

যখন আপনি উর্বরতার লক্ষণগুলোকে বুঝতে পারবেন আপনি তখন সুরক্ষার সাথেই আপনি কোনোরকম বাধা ছাড়াই যৌনসঙ্গম করতে পারবেন।

শেষ কথা বলা যায়, যেকোনো পদ্ধতিই একদম নিশ্ছিদ্র নয়।যদিও সমস্ত পদ্ধতিগুলো নিখুঁত কিন্তু মহিলাদের দেহে হরমোনের ওঠা নামা আপনার সমস্ত হিসাব গুলিয়ে দিতে পারে।সব থেকে ভাল হল শ্রেষ্ট নিয়ম গুলো মেনে চলুন যখন কোন সন্দেহ হবে জানবেন গর্ভসঞ্চার হয়েছে।

3.সারভাইকাল মিউকাস বা ওভ্যুলেশন পদ্ধতি

সারভাইকাল মিউকাসের রঙ পালটে যায় যখন ওভ্যুলেশান ঘটে। প্রতিদিনের সারভাইকাল মিউকাসের রঙ খেয়াল রাখুন। তার পরিবর্তন হলে বুঝবেন ওভ্যুলেশান হয়ছে।

এইখানে সারভাইকাল মিউকাসের পরিবর্তন গুলো দেওয়া হল।

  • ঋতুস্রাবের সময় মিউকাসের ফ্লো মাস্ক দেখা যায়।
  • ঋতুস্রাবের পরের কয়েক দিন মিউকাস তৈরী হয় না।এই শুকনো দিন গুলো সুরক্ষিত সময়।
  • যখন ওভাম পরবর্তী চক্রে যাবার জন্য প্রস্তুত হয় তখন মিউকাসের পরিমাণ বাড়ে।এটার রঙ হলুদ,সাদা,অথবা মেঘের মত হয় এবং আঠালো হয়।
  • পরিষ্কার পিচ্ছিল মিউকাস হল ঋতুচক্রের সব থেকে উর্বর সময়।
  • কতগুলো শুকনো দিনের পর পরিষ্কার মিউকাস পরবর্তী চক্রের আগমন বার্তা দেয়।

4. সিমটোথার্মাল পদ্ধতি

এটা অনেকগুলো পদ্ধতির সংমিশ্রণ।এর মধ্যে রয়েছে ওভ্যুলেশানের লক্ষণ যেমন তলপেটে যন্ত্রণা, নরম এবং ভারী স্তন, দেহের তাপমাত্রার সাথে সাথে মিউকাসের রঙের পরিবর্তন।নানা ধরণের পদ্ধতিগুলো একসাথে দেখলে অনেক নির্ভুল ভাবে সুরক্ষিত দিনটা কবে তা বলা যাবে।

5. চক্রাকার পুঁতির মালা

এই পদ্ধতিতে ঋতুচক্রের বিভিন্ন দশা চিহ্নিত করা হয়। একটা গোলাকার রিং এর মধ্যে রঙিন পুঁতি দেওয়া থাকে। ঋতুচক্রের বিভিন্ন দশাগুলো নানা রঙের পুঁতির সেট দিয়ে নিচের মত করে বোঝানো যায়।

  • প্রথম পুঁতিটির রঙ কালো এবং সাদা তীর চিহ্ন দেওয়া থাকে।
  • দ্বিতীয়টির রঙ লাল
  • তার পরে ছয়টি লাল পুঁতি থাকে
  • তারপরে 12 টি সাদা পুঁতি থাকে।
  • তারপরে থাকে 13 টা বাদামী পুঁতি।

এখানে বলা হল কীভাবে চক্রাকার পুঁতির মালাটি ব্যবহার করবেন।

  • ঋতুচক্রের প্রথম দিনে একটা রাবারের ব্যান্ড লাল রঙের পুঁতির ওপর রাখুন।
  • তীর চিহ্নের দিক বরাবর রাবারের ব্যান্ডটাকে পুঁতি গুলোর ওপর দিয়ে ঘোরান।
  • বাদামী রঙের পুঁতি সুরক্ষিত দিন নির্দেশ করবে।
  • সাদা রঙের পুঁতিগুলো অসুরক্ষিত দিন নির্দেশ করবে

6. প্রমান দিন গুলির পদ্ধতি

ক্যালেন্ডার পদ্ধতির মত এই পদ্ধতিতে আট থেকে দশটি চক্রের তথ্য নিতে হয় এবং চক্রগুলো 27 দিনের কম হলে এই পদ্ধতিতে হিসাব করা যায় না।

  • সবথেকে কম সময়ের চক্রটিকে ধরে প্রথম উর্বর দিনের হিসাব করতে হয়।
  • মোট দিন থেকে 18 বিয়োগ করতে হবে।
  • আপনার চক্রের প্রথম দিন থেকে বিয়োগ ফলের সংখ্যাটি গুনতে থাকুন এবং প্রথম উর্বরতার দিনটা চিহ্নিত করুন।
  • সবথেকে বড় সময়ের ঋতুচক্রটি ধরে শেষ উর্বর দিনটির হিসাব করা হয়।
  • মোট দিন সংখ্যা থেকে 11 বিয়োগ করা হয়।
  • আপনার চক্রের প্রথম দিন থেকে শুরু করে বিয়োগফলের সংখ্যাটি হিসাব করলে শেষ উর্বর দিনটি জানতে পারবেন।

যখন আপনি প্রথম এবং শেষ উর্বর দিন জানতে পেরে যাবেন তখন সহজেই যৌনসঙ্গমের জন্য সুরক্ষিত দিন গুলো বের করতে পারবেন।

আর্দশ যে শর্ত গুলো অনুমান হিসাবে মানতে হবে :

  • শুক্রাণু 4 থেকে 6 দিন জনন নালীর মধ্যে বাঁচতে পারে এবং এর মধ্যে যেকোনো সময়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে পারে।
  • প্রতিটি চক্রে একটি মাত্র ডিম্বাণু উৎপন্ন হয় যা 24 ঘণ্টা বেঁচে থাকে।
  • সব থেকে উর্বর দিন হল ওভ্যুলেশানের সাত দিন আগে এবং পিরিয়ডের 3-4 দিন পর হল সুরক্ষিত দিন।

কতটা কার্যকর উর্বরতা সচেতনতা ভিত্তিক পদ্ধতি (FAMs) গর্ভধারণ এড়াবার জন্য?

নানা ধরনের পরিবর্তনশীল শর্তের জন্যে সুরক্ষিত দিন নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলো 100% ভরসা যোগ্য নয়। অনেক মহিলারা এইটার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন।হরমোনাল পরিবর্তন (যেটা অনেক সময় বোঝা যায় না )এবং অনিয়মিত পিরিয়ড গণনাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।কন্ডোম হল সব থেকে সহজ উপায়, কিন্তু আপনি যদি অপছন্দ করেন গর্ভনিরোধক হিসাবে এটাকে ব্যবহার করতে তাহলে আপনি খাবার গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে পারেন।

মনে রাখবেন:

  • অতি সতর্ক বেন সুরক্ষিত সময়ের হিসাব করার সময় এবং এটাকে নিখুঁত ভাবে মানতে হবে।
  • আপনার সঙ্গীকে সুরক্ষিত দিন গুলোতে যৌনসঙ্গম করতে রাজী হতে হবে।
  • উর্বর দিনগুলোর জন্য অন্য গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে হবে।

গর্ভধারণ এড়াবার জন্য উর্বরতা সচেতনতা ভিত্তিক পদ্ধতির সুবিধাগুলো

যদি সঠিক ভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে FAMs আপনাকে দিতে পারে অকাল গর্ভধারণ থেকে সুরক্ষা।

FAM এর নিম্নলিখিত সুবিধা আছে:

  • খরচ নেই
  • ওষুধের দরকার নেই ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই
  • দম্পতিদের মধ্যে খুব ভাল বোঝাপড়া
  • কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস কৃত্রিম গর্ভনিরোধক ্যবহারের বিরোধী তাই সুরক্ষিত দিনের পদ্ধতি ভাল

গর্ভধারণ এড়াবার জন্য উর্বরতা সচেতনতা ভিত্তিক পদ্ধতির অসুবিধাগুলো

  • আপনার সঙ্গী যদি পদ্ধতিটি না মানতে চান তাহলে এটা প্রয়োগ করা অসুবিধাজনক।
  • যৌন সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ করে না।
  • কিছু ওষুধের জন্য হিসাব মেলে না
  • কখনো কখনো পিরিয়ড ট্র্যাক করা মুশকিল হয়ে যায় আবার অনেক সময় হরমোনের গণনা সঠিক হয় না।

সুরক্ষিত সময়ে যৌনসঙ্গম করার সময় কি কি মনে রাখতে হবে?

  • সবার আগে মনে রাখতে হবে 100% সুরক্ষিত সময় বলে কিছু হয় না।
  • এটা তখনই ভাল কাজ করবে যখন আপনার পিরিয়ড নিয়মিত হবে কারণ অস্থিরতা ভুল ঘটায়।
  • যদি ঋতুচক্রের দিন গুলোর কমাবাড়া আট দিনের বেশী হয় 6 মাস সময় সীমার মধ্যে তাহলে এই হিসাব কাজ করে না।
  • কখনও কখনও আপনাকে আপৎকালীন গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে হতে পারে গর্ভসঞ্চার রোধ করবার জন্য।

অন্যান্য উপায়ে যৌনসঙ্গম যাতে গর্ভসঞ্চারের ভয় থাকে না।

সুরক্ষিত দিন গুলোতে সুস্থ ভাবে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন যা আপনাকে আপনার সঙ্গীর কাছাকাছি নিয়ে আসবে। এখানে কয়েকটি বিষয় রইল যা মনে রাখতে হবে।

1. কন্ডোম ব্যবহার করুন

জন্ম নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায় যা আপনাকে STD থেকে সুরক্ষা দেয়।

2. নতুন ভঙ্গীমা, স্থান এবং কৌশল অবলম্বন করুন

যোনিতে প্রবেশ না করে অন্যান্য সঙ্গম করুন। ঘরের নানা জায়গায় সঙ্গম করুন আপনার সঙ্গীর সাথে এব্যাপারে আলোচনা করুন।

3. বিভিন্ন সেক্স টয় বা খেলনা কিনুন

দম্পতিরা বিভিন্ন সেক্স টয় যেমন ভাইব্রেটার, ডিলডো প্রভৃতি কিনুন আরও মজাদার অভিজ্ঞতার জন্য।

4.যৌনতা পূর্ণ খেলা খেলুন

স্ট্রিপ পোকার জাতীয় বা নতুন ধরনের যৌনতা পূর্ণ খেলা উদ্ভাবন করুন।

এফএএম জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি, তবে এটি তার অসুবিধাগুলি সহ আসে। সুতরাং, দুর্ঘটনাক্রমে গর্ভাবস্থা এড়ানোর জন্য আপনি নিশ্চিত হন এবং আপনার গণনার সাথে পুরোপুরি সতর্ক হন