মাঝে মাঝে অনেক মহিলারা সাধারণ গর্ভনিয়ন্ত্রক গুলো ব্যবহার করতে পারেন না,কারণ আগে থেকে বোঝা যায় না এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সেগুলি থেকে হতে পারার জন্য।সেই ক্ষেত্রে তারা ভ্যাজাইনাল স্পঞ্জ বা গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন।এই গর্ভনিয়ন্ত্রকটি প্রত্যাবর্তনযোগ্য।অনেক মহিলা এটা পছন্দ করেন গর্ভধারণ রোধ করতে যেহেতু এটা সহজে ওষুধের দোকানে প্রেশক্রিপশান ছাড়াই কিনতে পাওয়া যায় এবং এর ব্যবহার করা সহজ।যাইহোক যদি এটাকে কন্ডোমের সাথে তুলনা করা হয় HIV এর মত যৌন সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে এর ভূমিকা নিয়ে তাহলে ভুল হবে কারণ যৌন সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে এটা কোন কাজ করে না।
গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ হল ডোনাট আকৃতির জন্মনিয়ন্ত্রক স্পঞ্জ এবং আকারে প্রায় দুই ইঞ্চি হয়।এই নরম গোলাকৃতির স্পঞ্জটি পলিরিথেন ফোম দিয়ে তৈরী।এটা গর্ভসঞ্চার রোধ করে স্পার্মিসাইডাল এবং বাধা দান পদ্ধতিতে।
গর্ভনিরোধক স্পঞ্জটি সঙ্গমের আগে যোনির মধ্যে গভীরভাবে প্রবেশ করান হয়।স্পঞ্জটা একটা সুরক্ষিত আবরণ তৈরী করে সারভিক্সের ওপর এবং জরায়ুতে শুক্রাণুর প্রবেশ আটকায়। প্রতিটা সারভাইকাল স্পঞ্জের সাথে কাপড়ের লুপ লাগানো থাকে যা সেটাকে টেনে বের করতে সাহায্য করে। এটা পুণঃব্যবহার যোগ্য নয়, তাই ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়।
এটার কাজ করার পদ্ধতি ডায়াফ্রামের কাজ করার পদ্ধতি একই রকমের। স্পঞ্জটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে দুই ভাবে। স্পঞ্জ টাতে একটা খাঁজ আছে যা সারভিক্সের সঙ্গে শক্ত ভাবে আটকে থেকে শুক্রাণুর জরায়ুতে প্রবেশে বাধা দেয়। স্পঞ্জটি শুক্রাণুগুলোকে শোষণ করে নেয় সেগুলো সারভিক্সে পৌঁছানোর আগেই যেটা হল যোনি এবং জরায়ুর সংযোগকারী পথ।
গর্ভনিরোধক স্পঞ্জটিতে স্পার্মিসাইড থাকে সেটা হল শুক্রাণুকে ধ্বংসকারী একটা পদার্থ।যা শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্তকরণের আগেই শুক্রাণুটিকে নষ্ট করে দেয়।সঙ্গমের আগে এটা সঠিক ভাবে ব্যবহারের পদ্ধতি মহিলাদের জানতে হবে। স্পঞ্জ টাকে জল দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে যোনির গভীরে প্রবেশ করানোর আগে। আপনি যোনির গভীরে এটাকে প্রবেশ করাবেন সঙ্গমের 24 ঘন্টা আগে।
ব্যবহারের পর এটা আপনি টেনে বের করে নিতে পারেন।আপনি এটাকে শুধুই ব্যবহার করতে পারেন অথবা কন্ডোমের সাথে ব্যবহার করতে পারেন। যাই হোক কন্ডোমের সাথে এর ব্যবহার আরো বেশী ফলদায়ক গর্ভধারন রোধ করার ক্ষেত্রে।
এখানে রইল গর্ভনিরোধক হিসাবে স্পঞ্জের কার্যকারীতা
যখন আমরা বিভিন্ন জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির কথা বলি তখন গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ বাজার চলতি গর্ভনিরোধক গুলোর মধ্যে সব থেকে ভাল একথা বলা যায় না,বিশেষত যারা একবার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।যাইহোক, সঙ্গমের আগে এটাকে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী এর কার্যকারীতা বজায় রাখার জন্য। পণ্যটির ব্যবহারের নির্দেশাবলী ভালভাবে মেনে চললে এবং প্রতিবার সঙ্গমের আগে এটা ব্যবহার করলে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ অনেক বেশী কার্যকর হয়ে ওঠে।তবে সত্যি কথা বলতে কি সবসময় এটার সঠিক ব্যবহার সম্ভব হয় না।
যে সকল মহিলার কোনো সন্তান হয়নি এবং যিনি নিখুঁতভাবে স্পঞ্জ ব্যবহারের সমস্ত নিয়ম মেনেছেন তার ক্ষেত্রে এটির কার্যকারীতার হার সবথেকে বেশী হলে 91% হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা 88% এর বেশী হয় না।যে সব মহিলারা একবার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হার 80% এর কম।সেই জন্য যে সকল মহিলার সন্তান আছে তাদের জন্য এটা গর্ভনিরোধক হিসাবে খুব জনপ্রিয় বিকল্প নয়।
তাই বলা যেতে পারে প্রতি 100 জন মহিলার মধ্য 9 থেকে 11 জন গর্ভবতী হয়ে পড়তে পারেন গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করেও।
প্রতিবার সঙ্গমের করার আগে ঠিকভাবে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করলে এর কার্যকর ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়।প্রতিবার সঙ্গমের আগে ধারাবাহিক ভাবে এটা ব্যবহার করলে এর কার্যকারীতা অনেক বেড়ে যায়।অন্যান্য গর্ভনিরোধক যেমন গর্ভনিরোধক পিল বা পুরুষদের ব্যবহার্য্য কন্ডোমের সঙ্গে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করলে অনেক বেশী ফল পাওয়া যায়।
আর একটা উপায় হল যদি আপনার সাথী যোনির ভিতরে বীর্য না ফেলে সেটাকে বাইরে বের করে নেন। সবথেকে ভাল হল পুরুষ কন্ডোম এবং স্পঞ্জ একসাথে ব্যবহার করা এটা যৌন সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
স্পঞ্জ STD’s প্রতিরোধ করতে পারে না।উল্টোদিকে শুধুমাত্র স্পঞ্জের ব্যবহার আপনাকে HIV এর মত STD’s এর সম্ভবনা বাড়িয়ে দেবে।সহজে স্পার্মিসাইড–এর কার্যকর ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় স্পার্মিসাইড যেটা স্পঞ্জের ওপর আস্তরণ হিসাবে থাকে তাতে নোনোজাইনল-9,নামে একটি রাসায়নিক থাকে যা যোনির গাত্রে জ্বলনের সৃষ্টি করে ফলে এটা অনেক বেশী ভেদ্য হয়ে ওঠে তাই STD এর জীবাণুগুলো সহজেই যোনির মধ্য দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। তাই সবথেকে ভাল নিয়মিত STD এর পরীক্ষা করানো।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহারের পদ্ধতিটি কষ্টদায়ক নয়।যদি আপনি ভাল ভাবে অভ্যাস করেন তাহলে স্পঞ্জটা লাগানো খুবই সহজ।স্পঞ্জ ঢোকানোটা অনেকটা ট্যাম্পুন প্রবেশ করানোর মত।
স্পঞ্জ ব্যবহারের সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি মনে রাখার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। প্রতিটা বিষয়ই পণ্যগুলির প্যাকে ভালভাবে দেওয়া থাকে। ওই নির্দেশগুলো ভালভাবে মেনে চললেই আপনি স্পঞ্জটির ব্যবহার সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা জানতে পারবেন।
আপনি স্পার্মিসাইড সঙ্গম করার 24 ঘন্টা আগে স্পঞ্জটি লাগাবেন।স্পঞ্জটার স্পার্মিসাইড জলের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে এবং যোনিতে প্রবেশ করার পর পরই কাজ শুরু করে দেয়।তার ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটি যৌন সঙ্গমের অনেক আগেই কাজ শুরু করে দেয়। যোনিতে প্রবেশ করানোর পর থেকে পরবর্তী 24 ঘন্টায় আপনি বিরতি ছাড়াই যতবার ইচ্ছা সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারেন।ওই সময়ে আপনাকে স্পঞ্জটা বদলাতে হবে না।
আপনি যৌন সঙ্গম করার পর থেকে কম করে 6 ঘন্টা রাখতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন সেটা যেন কখনই 30 ঘন্টার বেশী না হয়। 30 ঘন্টার মধ্যে কখন খুলতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই,তবে অবশ্যই সঙ্গম করার 6 ঘন্টার পর খুলবেন তাতে আপনি অনেক বেশী সুরক্ষিত থাকবেন।
আপনার হাত ভাল করে ধুয়ে নিয়ে একটা আঙ্গুল আপনার যোনিতে প্রবেশ করিয়ে দিন এবং স্পঞ্জ এর লুপটাকে ধরুন। এরপর লুপটাকে ধরে আস্তে আস্তে স্পঞ্জটাকে যোনির বাইরে আনুন। যদি আপনি লুপটা খুঁজে না পান তাহলে স্পঞ্জ টাকে শক্ত করে ধরে ধীরে ধীরে বাইরে বার করুন।স্পঞ্জ অবধি পৌঁছাতে না পারেন তাহলে ঠেলা বা ধাক্কা দিন আপনার যোনির পেশীর গুলোর সাহায্যে, যাতে আপনার আঙ্গুল স্পঞ্জ অবধি পৌঁছতে পারে। এটাকে নোংরা ফেলার বিনে ফেলে দিন কখনই ফ্ল্যাশ করবেন না।
যদি আপনার নিম্নলিখিত শারীরিক সমস্যাগুলো থাকে, তাহলে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার এড়িয়ে যান।
এছাড়া স্পঞ্জ ব্যবহার করার সময় যদি নিচের লক্ষণ গুলো দেখতে পান তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্পঞ্জ ব্যবহার বন্ধ করুন এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অনেক মহিলা গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ ব্যবহার করে থাকেন নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পান বলে।
অন্যান্য গর্ভনিরোধক গুলোর মত স্পঞ্জেরও কতগুলো অসুবিধা আছে।যদিও বেশীরভাগ মহিলা এটাকে সুরক্ষিত একটি গর্ভনিরোধক বলে মনে করেন তবে কেউ কেউ গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার এবং অন্যান্য অসুবিধাগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন।
স্পার্মিসাইড স্পঞ্জ আপনি কিনতে পারেন যেকোন ওষুধের দোকানে কোনোরকম প্রেসক্রিপশান ছাড়াই।গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ অনলাইনেও সহজলভ্য।
গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের দাম নির্ভর করে আপনি কোথায় থাকেন এবং কোনখান থেকে আপনি এটা কিনছেন তার ওপর। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আজকের দিনে চালু ভাল ব্র্যান্ডের গর্ভনিরোধক স্পঞ্জের দাম আমেরিকাতে 15 ডলার। আবার বিভিন্ন কমিউনিটি হেলথ সেন্টার বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এগুলোকে বিনা পয়সায় বা স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়।
অতি অবশ্যই গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ নিয়মিত এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে এর কার্যকর ক্ষমতার সুফল সর্বাধিক বেশী পাওয়া যায় এবং এটা ভরসাযোগ্য জন্ম নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি হয়ে ওঠে।পণ্যটির সংশ্লিষ্ট নির্দেশাবলীগুলো আপনাকে স্পঞ্জটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে।বারবার অভ্যাস করলে খুব সহজেই ঠিকমত ব্যবহার শিখে যাবেন। আপনার যদি এর ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থাকে তবে অন্যান্য অপেক্ষাকৃত সহজ এবং ভরসাযোগ্য গর্ভনিরোধক পদ্ধতি যেমন নানা ধরনের ইমপ্ল্যান্ট বা IUDs অবলম্বণ করুন।যেকোনো অবস্থাতেই পুরুষ কন্ডোমের সাথে গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ সব থেকে উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা গর্ভসঞ্চার রোধের ক্ষেত্রে এবং সাথে সাথে STD’s এর প্রতিরোধে।