বড় বাচ্চা (5-8 বছর)

বাচ্চাদের জন্য পঞ্চতন্ত্রের সেরা 11টি ছোট গল্প

পঞ্চতন্ত্রের নৈতিক গল্পগুলি প্রাণী-ভিত্তিক উপকথার অন্যতম জনপ্রিয় একটি সংগ্রহ। এগুলি মূলত সংস্কৃত ভাষায় রচিত, এই কল্পকাহিনীর প্রত্যেকটির সাথে একটি নৈতিকতা যুক্ত রয়েছে। এই গল্পগুলি হালকা, বর্ণময় এবং এমনকি ছোট বাচ্চাদের জন্য একদম উপযুক্ত, এগুলি তাদের মূল্যবান শিক্ষা দেয় যা তাদের মনে চিরকাল স্থায়ী থাকে।

পঞ্চতন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কিংবদন্তি আছে যে এটি রাজা অমরাশক্তির সময়ে তৈরী হয়েছিল, যিনি তাঁর তিন পুত্রকে শিক্ষিত করার জন্য বিষ্ণু শর্মা নামে এক পণ্ডিতকে নিযুক্ত করেছিলেন। বিষ্ণু শর্মা বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রচলিত উপকরণ এবং শিক্ষার কৌশলগুলি এই রাজকুমারদের সাথে ভালভাবে কাজ করবে না তাই পরিবর্তে গল্পগুলির মাধ্যমে তাদের শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।সেই কারণে তিনি নিম্নলিখিত পাঁচটি খণ্ডের অধীনে গল্পের একটি সংকলন লিখেছিলেন আর তাই এটির নাম পঞ্চতন্ত্র (‘পঞ্চ’ – পাঁচ এবং ‘তন্ত্র’ – ব্যবস্থা) দেওয়া হয়েছিল:

  • মিত্র লাভা (বন্ধু লাভ) – বন্ধু জয় করা সম্পর্কিত গল্পের সংগ্রহ।
  • মিত্রা ভেদা (বন্ধু হারানো) – বন্ধু হারানো সম্পর্কিত গল্পের সংগ্রহ।
  • অপরীক্ষিতকারাকাম (চিন্তা না করেই কাজ করা) – অদূরদর্শিতার কারণে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারিয়ে যায় সেই সম্পর্কিত গল্পের সংগ্রহ।
  • লব্ধপ্রাণাশম (লাভের ক্ষতি) – কোনওকিছু হারিয়ে না ফেলে কঠিন পরিস্থিতি থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসতে হয় সেই সম্পর্কিত গল্পের সংগ্রহ।
  • কাকোলুকিয়ম (কাক এবং পেঁচা) – যুদ্ধ এবং শান্তির বিধি এবং কৌশল সম্পর্কে গল্পের সংগ্রহ।

ইংরেজী, ভারতীয় বিভিন্ন স্থানীয় ভাষা, ফারসি এবং আরবি সহ অনেকগুলি ভাষায় পঞ্চতন্ত্র অনুবাদ করা হয়েছিল।

আপনার বাচ্চাদের জন্য পঞ্চতন্ত্রের 10টি আকর্ষণীয় গল্প

গল্পের সময়কে মজাদার এবং তথ্যবহুল করার জন্য, এখানে পঞ্চতন্ত্রের কয়েকটি গল্প দেওয়া হল যা আপনার সন্তানের কল্পনাশক্তিই কেবল বাড়িয়ে তুলবে না, তাদের কিছু শিক্ষাও দেবে।

১. বানর এবং কুমির

একসময়, একটি জঙ্গলে, একটি বানর থাকত যে নদীর তীরে জাম (বেরি) গাছে বাস করত। একই বনে, একটি কুমির এবং তার স্ত্রী থাকত। একদিন কুমির নদীর তীরে এসে গাছের নীচে বিশ্রাম নিল। দয়াবান বানর তাকে কিছু ফল দিল। কুমিরটি পরের দিন আরও ফলের জন্য ফিরে এল, কারণ ফলগুলি তার পছন্দ হয়েছিল। কিছু দিন কেটে যাওয়ার সাথে সাথে কুমির এবং বানর ভাল বন্ধু হয়ে গেল।

একদিন বানর কুমিরের স্ত্রীর জন্য কিছু ফল পাঠাল। সে ফলগুলি খেল এবং সেগুলি তার খুব ভালো লাগল, কিন্তু তার হিংসা হল, কারণ সে বানরের সাথে তার স্বামীর সময় কাটানোটা সে পছন্দ করত না। সে তার স্বামীকে বলল, “যদি ফলগুলি এত রসালো হয় তবে আমি ভেবে অবাক হই যে বানরের হৃদয়টি কত মিষ্টি হবে। আমাকে বানরের হৃদয়টি এনে দাও। ” কুমিরটি তার বন্ধুকে হত্যা করতে রাজি ছিল না, তবে তার কোনও উপায়ান্তরও ছিল না।

সে বানরকে তার বাড়িতে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানাল এবং বলল যে তার স্ত্রী তার সাথে দেখা করতে চায়। বানর খুশি হল, তবে সে সাঁতার কাটতে পারে না, তাই কুমির তাকে পিঠে করে নিয়ে গেল। কুমির খুশী হল যে সে বানরটিকে বোকা বানাতে পেরেছে, কিন্তু নিয়ে যাওয়ার সময় সে বানরকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আসল কারণটি বলে ফেলল। চতুর বানর বলল, “তোমার আমাকে আগেই বলে দেওয়া উচিত ছিল, আমি আমার হৃদয় গাছের উপরে রেখে দিয়ে এসেছি। আমাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে এবং ওটা নিতে হবে। ‘ কুমির তাকে বিশ্বাস করে তাকে আবার গাছের কাছে নিয়ে গেল। এভাবে চালাক বানর নিজের জীবন বাঁচাল।

গল্পের শিক্ষা: বুদ্ধিমত্তার সাথে বন্ধু বাছুন এবং সর্বদা উপস্থিত বুদ্ধি রাখুন।

২. সারস এবং কাঁকড়া

একসময়, এক সারস ছিল যে তার পাশের পুকুর থেকে মাছ তুলত এবং সেগুলি খেত। কিন্তু, বুড়ো হওয়ার সাথে সাথে একটিও মাছ ধরা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ল। নিজের খাবার জোগাড়ের জন্য তার মাথায় একটি বুদ্ধি এল। সে মাছ, ব্যাঙ এবং কাঁকড়াগুলিকে বলল যে কিছু লোক পুকুরটি ভরাট করে ফসল ফলানোর পরিকল্পনা করছে এবং সে কারণেই পুকুরে কোনও মাছ থাকবে না। সে তাদের এটাও বলল যে সে এই শুনে কতটা দুঃখ পেয়েছে এবং সে তাদের সবাইকে মিস করবে। মাছগুলি দু:খিত হয়ে সারসকে তাদের সহায়তা করতে বলল। সারস তাদের সবাইকে একটি বড় পুকুরে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। তবে, সে তাদের বলল, “আমার বয়স হওয়ার কারণে আমি একসাথে তোমাদের কয়েক জনকেই নিতে পারি” “সারসটি মাছগুলিকে একটি পাহাড়ে নিয়ে যেত, তাদের মেরে ফেলত এবং খেয়ে ফেলত। যতবারই সে ক্ষুধার্ত হত, সে তাদের থেকে কয়েকজনকে পাহাড়ের কাছে নিয়ে গিয়ে খেয়ে নিত।

পুকুরে একটি কাঁকড়া থাকত, সেও আরও বড় পুকুরে যেতে চাইল। সারস একটু স্বাদ বদলের জন্য কাঁকড়াটিকে খাওয়ার কথা ভাবল এবং তাকে সাহায্য করতে রাজি হল। পথে কাঁকড়া সারসকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বড় পুকুরটি কোথায়?” সারস হেসে পাহাড়টির দিকে ইশারা করল, যা মাছের হাড়ে ভরা ছিল। কাঁকড়া বুঝতে পারল যে সারসটি তাকে মেরে ফেলবে এবং তাই তাড়াতাড়ি নিজেকে বাঁচানোর একটা ফন্দি আঁটলো। সে সারসের ঘাড়টি চেপে ধরল এবং সারস মারা না যাওয়া পর্যন্ত তা আর ছাড়ল না।

গল্পের শিক্ষা: সর্বদা উপস্থিত বুদ্ধি রাখুন এবং বিপদে পড়লে দ্রুত কাজ করুন।

৩. হাতি এবং ইঁদুরগুলি

একটি গ্রাম ছিল যেটি ভূমিকম্পে ভেঙে যাওয়ার পরে সেখানকার লোকজন ছেড়ে চলে গিয়েছিল। যাইহোক, গ্রামে বসবাসকারী ইঁদুরগুলি সেখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিল এবং তাদের বাড়ি বানাবার কথা ভাবল। এই গ্রামের উপকণ্ঠে একটি হ্রদ ছিল, যেখানে হাতির একটি পাল একসাথে স্নান করে জল পান করতে আসত। গ্রামটি এই হ্রদে যাওয়ার পথে, হাতিরা সেখানে যাওয়ার সময় ইঁদুরগুলিকে পদদলিত করত। সুতরাং, ইঁদুরদের রাজা হাতিদের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তাদের বললেন, “হে হাতিগণ, আপনারা যখন গ্রামে ভ্রমণ করেন তখন অনেক ইঁদুর পদদলিত হয়। আপনারা যদি আপনাদের পথ পরিবর্তনের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন তবে আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হব। আপনাদের যখন প্রয়োজন হবে তখন আমরা আপনাদের এই অনুগ্রহটি স্মরণ রাখব আর তা ফিরিয়ে দেব।”

হাতিদের রাজা হেসে বললেন, “আমরা হলাম দৈত্যাকার বিশাল হাতি সম্প্রদায়। আপনারা ইঁদুররা কী অনুগ্রহ ফিরিয়ে দিতে পারেন? তবুও, আমরা আপনার অনুরোধকে সম্মান জানাচ্ছি এবং আমাদের পথ পরিবর্তন করব ””

কিছু দিন পর, শিকারিদের রাখা জালে হাতিগুলি আটকা পড়ল এবং জালে জড়িয়ে পড়ল। তারা পালাবার জন্য কঠোর সংগ্রাম করল, কিন্তু তা ব্যর্থ হল। ইঁদুরের রাজা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা হাতির রাজার মনে পড়ে গেল। সুতরাং, তিনি জালে আটকে না পড়া একমাত্র ভাগ্যবান সহযাত্রী হাতিটিকে প্রেরণ করলেন ইঁদুর রাজার কাছে তাদের সাহায্যের আর্জি জানাতে।

শীঘ্রই, সমস্ত ইঁদুর এসে তাদের জাল কাটতে শুরু করল এবং এভাবেই তারা হাতিদের মুক্তি দিল।আর হাতির রাজা ইঁদুরদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাল!

গল্পের শিক্ষা: বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। সর্বদা মানুষের প্রতি সদয় হন এবং তাদের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ হন।

৪. অনুগত বেজি

এক কৃষক দম্পতির একটি পোষা বেজি ছিল। একদিন, কৃষক এবং তার স্ত্রীকে জরুরী কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হল, এবং তাই তারা তাদের শিশুকে বেজির কাছে রেখে গেল, বেজি আশ্বাস দিয়েছিল যে সে তাদের বাচ্চাকে ভালভাবে রক্ষা করবে। তারা যখন চলে গেল, একটি সাপ লুকিয়ে ঘরে ঢুকে শিশুর উপর হামলা করার জন্য বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। চতুর বেজি বাচ্চাটিকে রক্ষার জন্য সাপটির সাথে যুদ্ধ করল এবং তাকে হত্যা করল।

কৃষকের স্ত্রী বাড়ি ফিরলে বেজির মুখ এবং দাঁতে রক্তের দাগ দেখে সে আঁতকে উঠল। সে তার মেজাজ হারিয়ে চিৎকার করে বলল, “তুই আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছিস!” সে ক্রোধে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনুগত বেজিকে মেরে ফেলল। যখন সে তার বাড়িতে প্রবেশ করল, সে শিশুটিকে জীবিত এবং তার পাশে মৃত সাপ দেখতে পেল। কী ঘটেছে বুঝতে পেরে সে তার কর্মের জন্য অনুশোচনা করল।

গল্পের শিক্ষা: কিছু করার আগে ভাবো।

৫. কচ্ছপএবংরাজহংসী

একসময়, একটি হ্রদের পাশে একটি কচ্ছপ এবং দুটি রাজহংসীর বাস ছিল যারা খুব ভাল বন্ধু ছিল। হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ায়, রাজহংসীগুলি একটি নতুন জায়গায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কচ্ছপটিও তাদের সাথে যেতে চাইল, কিন্তু সে উড়তে পারে না, এবং তাই সে রাজহংসীগুলিকে অনুরোধ করল তাকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাজহংসীগুলিকে সত্যই বোঝানোর অনেক চেষ্টা করার পর অবশেষে, তারা রাজি হয়ে গেল। তারা তাদের ঠোঁট দিয়ে একটি লাঠি ধরে কচ্ছপকে মুখ দিয়ে লাঠিটি ধরে রাখতে বলল, এবং সাবধান করল যে সে যেন মুখ না খোলে এবং লাঠিটি ছেড়ে না দেয়।

Related Post

তারা উড়ে যাওয়ার সময়, কিছু প্রত্যক্ষদর্শী ভাবল যে কচ্ছপটিকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মন্তব্য করল: “ওহ, বেচারা কচ্ছপ!” এতে কচ্ছপটি রেগে গেল এবং সে তৎক্ষণাৎ মুখ খুলল তাদের কিছু বলার জন্য।আর যেই না সে তার মুখটি খুললো আর অমনি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা গেল।

গল্পের শিক্ষা:কিছু বলার আগে চিন্তা করো। নির্দেশগুলি শোনো এবং সেগুলি অনুসরণ করো।

৬. তিনটি মাছের কাহিনী

একটি হ্রদে তিনটি মাছ ছিল যারা দুর্দান্ত বন্ধু ছিল। প্রথম মাছটি খুব বুদ্ধিমান ছিল, দ্বিতীয়টি জানত যে কীভাবে সমস্যা থেকে তার উপায় বের করা যায় এবং তৃতীয়টি ছিল ভীষণ গোঁয়ার এবং কোনও কিছুর পরিবর্তনকে সে ঘৃণা করত। প্রথম মাছটি একজন জেলেকে পরের দিন এসে হ্রদে মাছ ধরার কথা বলতে শুনল। বিপদ অনুভব করে সে তার বন্ধুদেরকে হ্রদ থেকে সরে যেতে সতর্ক করে দিল। দ্বিতীয় মাছটি বলল, “আমি এখানেই থাকব এবং ধরা পড়লে উপায় খুঁজে বের করব।” তৃতীয় মাছটি বলল, “আমি বাইরে যেতে চাই না। আমি এখানেই থাকব, এবং আমার ভাগ্যে যদি ধরা পড়া থাকে তো ধরা পড়ব।“ প্রথম মাছ বেরিয়ে গেল। পরের দিন, জেলে এসে অন্য দুটি মাছকে ধরল। দ্বিতীয়টি চতুরতার সাথে মৃত হওয়ার ভান করে পালিয়ে গেল। তৃতীয় মাছটি কিছুই না করে ধরা পড়ে মারা গেল।

গল্পের শিক্ষা: প্রত্যেকেরই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে সেটিকে গ্রহণ করা উচিত বিপদ বুঝে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন।

৭. বোকা সিংহ এবং চালাক খরগোশ

একসময়, একটি লোভী সিংহ ছিল যে প্রাণীদের আক্রমণ করত এবং হত্যা করত, যার কারণে জঙ্গলের প্রতিটি প্রাণী তাকে খুব ভয় করত। একদিন তারা সকলে মিলে একটি সভার আয়োজন করল এবং সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নিল যে প্রতিদিন একটি করে প্রাণী শিকার হিসাবে সিংহের কাছে যাবে। সিংহ তাতে রাজি হয়ে গেল। যখন খরগোশের পালা এল, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিল যে জ্ঞানী বৃদ্ধকে প্রেরণ করবে। তিনি ধীরে ধীরে গেলেন এবং সূর্যাস্তের আগে সিংহের গর্তে পৌঁছালেন। সিংহ তাকে ক্রোধে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি এত দেরী করেছ কেন?” খরগোশ জবাব দিল, “একদল খরগোশ তোমার কাছে আসছিল, কিন্তু পথে তাদের অন্য এক হিংস্র সিংহ আক্রমণ করেছিল। আমি পালাতে সক্ষম হয়ে এখানে এসেছি।” খরগোশ আরও বলল যে অন্য সিংহটি তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

এ কথা শুনে সিংহ তো অত্যন্ত রেগে গেল আর খরগোশকে বলল নতুন সিংহের সাথে দেখা করানোর জন্য তাকে নিয়ে যেতে। জ্ঞানী খরগোশ সিংহটিকে একটি গভীর কূপের কাছে নিয়ে গেল এবং তাকে তার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখাল। সিংহ গর্জন করার সাথে সাথে তার প্রতিবিম্বও তা-ই করল। সে এই প্রতিবিম্বকে নিজের শত্রু বলে ভাবল। উত্তেজিত সিংহ অন্য সিংহকে আক্রমণ করার জন্য কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ল আর সেখানেই সে মারা গেল। এইভাবে, বুদ্ধিমান বুড়ো খরগোশ নিজেকে এবং বনের সমস্ত প্রাণীকে বাঁচিয়ে রক্ষা করল।

গল্পের শিক্ষা: সমস্যার দিকে নয়, সমাধানের দিকে সর্বদা মনোনিবেশ করা উচিত।

৮. শিয়াল এবং ড্রাম

একসময়, একটি শিয়াল জঙ্গল থেকে দূরে সরে গিয়ে একটি নির্জন যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছল। সে খুব ক্ষুধার্ত ছিল, এবং তাই সে খাবারের সন্ধান করতে শুরু করল,তখন সে একটি অদ্ভুত শব্দ শুনল। শিয়ালটি ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, কিন্তু তারপরে সে ভাবল, “সাবধানে দেখে নেওয়া যাক যে কে এই শব্দটি করছে।” সে চারদিকে তাকাতে দেখতে পেল যে একটি পরিত্যক্ত ড্রাম একটি গাছের পাশে পড়ে আছে এবং বাতাস বয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গাছের ডালগুলি তার গায়ে ঘষে, শব্দ করছে। সে স্বস্তি পেল এবং খাবারের সন্ধান চালিয়ে গেল।

গল্পের শিক্ষা: সমস্যা থেকে পালানোর পরিবর্তে সেগুলির মুখোমুখি হোন।

৯. হাতি এবং চড়ুই

একটি লম্বা, শক্তিশালী গাছে একটি চড়ুই দম্পতির সুন্দর একখানি বাসা ছিল আর তার মধ্যেই ছিল তাদের ডিমগুলি যেগুলি থেকে শীঘ্রই তাদের বাচ্চা হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু,একটি অহঙ্কারী হাতি শীঘ্রই সেই অঞ্চলটিতে এল এবং গাছটিকে এত জোরে নাড়িয়ে দিল যে, তাদের বাসা এবং ডিমগুলি সব নষ্ট হয়ে গেল। এতে ক্ষুব্ধ ও দুঃখিত হয়ে চড়ুইরা প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

তারা তাদের কাঠঠোকরা বন্ধুকে তাদের সাহায্য করার জন্য বলল। কাঠঠোকরা তার মাছি ও ব্যাং বন্ধুর সাথে মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরী করল। ব্যাঙ মাছিকে হাতির কানের কাছে ভনভন করতে বলল। সে বলল, “হাতি যখন চোখ বন্ধ করবে, কাঠঠোকরা, তুমি তখন অবশ্যই তার চোখ ফুটো করে দেবে। হাতি উঠে দাঁড়িয়ে জল খোঁজার চেষ্টা করবে। আমি অনেক দূরে গিয়ে শব্দ করতে থাকব এবং হাতি ভাববে যে সেখানে চারদিকে জল রয়েছে এবং সেই জায়গায় পৌঁছে যাবে। আমরা একটি বড় গর্ত তৈরি করব এবং হাতি সেটাতে পড়ে যাবে।

সূর্যাস্তের সময়, তারা পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করল, এবং হাতিটি গর্তে পড়ে মারা গেল।

গল্পের শিক্ষা: শারীরিক শক্তি এবং অহঙ্কার থাকলেই জেতা যায় না, বরং বুদ্ধি এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।

১০. জ্ঞানী মন্ত্রীর পরামর্শ

এক রাতে একদল পেঁচা একটি জঙ্গলে কিছু কাককে আক্রমণ করেছিল এবং তাদের সবাইকে হত্যা করেছিল। যেহেতু কাকেরা রাতের বেলা পরিষ্কার দেখতে পায় না, তাই তারা আর লড়াই করতে পারল না।

কাকের রাজা এই সংবাদ শুনে এতটাই ব্যথিত হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর জ্ঞানবান প্রবীণ মন্ত্রীর কাছে পরামর্শ নেওয়ার জন্য গেলেন। মন্ত্রী তাঁকে কিছু পরামর্শ দিয়ে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন।

পরের দিন, কাকগুলি পেঁচার গুহায় গিয়ে একটি নাটক শুরু করল! একটি কাক পেঁচাদের প্রশংসা করার ভান করল এবং অন্য কাকরা তাকে আঘাত করল! এটি দেখে পেঁচাদের রাজা ভাবলো যে এই কাকটি পেঁচাদের পক্ষে। কাকটি পেঁচাদের সাথে থাকতে থাকল, এক সকালে কাকটি উড়ে গেল, এবং তার কাক বন্ধুদের সহায়তায় পেঁচাদের গুহার প্রবেশ পথে আগুন ধরিয়ে দিল! যেহেতু পেঁচা নিশাচর প্রাণী, তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল, এবং পরিণামে তারা সবাই মরে গেল!

গল্পের শিক্ষা: আপনার বন্ধুদের কাছাকাছি থাকুন, তবে আপনার শত্রুদের আরও কাছাকাছি থাকুন।

১১. গানপাগলা গাধা

একটি ধোপার গাধা সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করার পরে সবুজ মাঠের উপর মুক্ত ভাবে চড়তে পারত। কিন্তু সে মাঠে না গিয়ে গ্রামবাসীদের খামারে লুকিয়ে ঢুকে পড়ত এবং বাড়ন্ত সবজি খেয়ে বাড়িতে ফিরত।একদিন গাধাটির এক শিয়ালের সাথে পরিচয় হল, এবং তারা ভাল বন্ধু হয়ে গেল। তারা একসাথে শিকার করার সিদ্ধান্ত নিল, এবং মোটা গাধাটি বেড়া ভেঙে দিয়ে শাকসবজি খেত, এবং শিয়াল খামারের পশুদের শিকার করত। একদিন রাতে গাধা শিয়ালটিকে জানালো যে তার গান গাইতে ইচ্ছে হয়েছে। শিয়াল তাকে অনুরোধ করল যেন গান না গায়, কারণ তারা ধরা পড়বে। কিন্তু, গাধা বিরক্ত হল এবং গান গাওয়ার জন্য জিদ করল। সে মুখ খুলল এবং জোরে জোরে ডাকতে লাগল, এবং শিয়ালটি সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে গেল। গাধার ডাক শুনে কৃষকরা ছুটে এসে তাদের শাকসব্জী খাওয়ার জন্য তাকে মারধর করল। অবশেষে কৃষকরা গাধাটির গলায় একটি হামানদিস্তা বেঁধে দিল এবং সেই অবস্থায় সে বাড়ি ফেরার সময় শিয়াল তাকে দেখতে পেয়ে উপহাস করে বলল যে তার গান গাওয়ার জন্য কৃষকরা তাকে নেকলেস উপহার দিয়েছে।

গল্পের শিক্ষা : সবকিছুর জন্য একটি সময় এবং জায়গা থাকে।

বাচ্চাদের কাছে নৈতিক মূল্যবোধ ব্যাখ্যা করতে আপনি এই পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি বর্ণনা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, শৃঙ্খলা, বন্ধুত্ব, শক্তি, বুদ্ধি এবং অন্যান্য গুণাবলী সম্পর্কে পঞ্চতন্ত্রের গল্পগুলি থেকে শিশুরা বুঝতে পারে যে এই নৈতিকতাগুলির মানে কী এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে সেগুলির প্রভাব কী। এই গল্পগুলি আপনার সন্তানের ভাষাগত এবং জ্ঞানীয় বিকাশেও সহায়তা করতে পারে। আপনার সন্তানের গুণাবলীর আরও বিকাশ করতে, তাকে একটি বাচ্চাদের ক্রিয়াকলাপের সাবস্ক্রিপশন কিট দিন যাতে মজাদার এবং আকর্ষণীয় ক্রিয়াকলাপ রয়েছে। এই ক্রিয়াকলাপগুলি করার চেষ্টা করে আপনার শিশু তার অন্যান্য দক্ষতাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

Share
Published by
দেবশ্রী ব্যানার্জী