একজন গর্ভবতী মহিলা যেসকল আশঙ্কার মুখোমুখি হয়ে থাকেন,সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল তাদের মধ্যে গর্ভস্রাব হওয়ার মত ভয়ের উদ্রেক হওয়া।যদিও অনেক ক্ষেত্রে একটি গর্ভপাত ঘটা হল তাৎক্ষণিক চিকিৎসাগত মনোযোগ আকর্ষণের একটি লক্ষণ,তবে পর্যাপ্ত যত্ন নিলে এটি ঘটার ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।ভ্রূণের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত থাকলে তা গর্ভস্রাব হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে বিশেষ করে,গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে।
সূত্র অনুযায়ী,গর্ভস্রাব অথবা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গর্ভপাত ঘটানোটি হল আসলে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বিনাশ সাধনের সবচেয়ে সাধারণ একটি ধরণ।এটি হল ভ্রূণের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পূর্বেই ঘটে যাওয়া তার স্বাভাবিক মৃত্যু।গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই গর্ভপাত ঘটা দুঃখজনকভাবেই মহিলাদের মধ্যে হয়ে থাকা ভীষণ সাধারণ একটি ঘটনা এবং এটি প্রথম ত্রৈমাসিকের গর্ভপাত হিসেবে পরিচিত।প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থাতেই গর্ভপাত হওয়ার হার বেশ উচ্চ বলে জানা যায়,আর ঠিক এই কারণের জন্যই গর্ভাবস্থায় বিশেষত গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়গুলিতে সর্বোত্তম যত্ন অতিরিক্তভাবে নেওয়া প্রয়োজন।হেলথলাইনঅনুসারে, সমস্তগর্ভাবস্থারপ্রায়10 থেকে25% ক্ষেত্রেই গর্ভপাতঘটে থাকে।
বিলম্বে মাসিক হওয়ার কারণে অনেকেই এটিকে অনাহূত গর্ভাবস্থা হিসেবে ভুল করে থাকেন।যদিও গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হওয়াটা সাধারণ,তবুও এটি তখনও সবার ক্ষেত্রেই একটি বিধ্বংসী এবং মানসিক আঘাতপূর্ণ অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত হতে পারে।
একটি গর্ভপাত সাধারণত ভ্রূণের 24 সপ্তাহ বয়স হওয়ার আগেই ঘটে থাকে। গর্ভাবস্থার প্রথম 12 সপ্তাহের মধ্যে একটি ভ্রূণের বিনাশ সাধারণত প্রাথমিক গর্ভপাত হিসাবে পরিচিত,যখন আবার 12-24 সপ্তাহের মধ্যে ঘটে যাওয়া একটি ভ্রূণের বিনাশ বিলম্বিত গর্ভপাত হিসাবে পরিচিত হয়ে থাকে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভপাতগুলি জিনগত অস্বাভাবিকতার কারণে ঘটে থাকে।তবে স্বস্তি পাওয়ার বিষয়টি হল এই যে,সকল অস্বাভাবিকতাগুলি কিন্তু জিনগত নয়,যার অর্থ হল এই ঘটনাগুলি তাই বলে আপনার পরবর্তী গর্ভাবস্থায় প্রবেশ করে না।জরায়ুর কিছু অস্বাভাবিকতার কারণেও গর্ভপাত হয়ে থাকতে পারে।এমনকি থাইরয়েড ব্যাধিগুলির কারণে কম শতাংশে হলেও গর্ভপাত হয়ে থাকতে পারে।একটি দুর্বল অথবা অনুপযুক্ত জরায়ুর কারণে সাধারণত দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে গর্ভপাত হয়ে থাকতে পারে।
গর্ভপাত ঘটার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং সেগুলির মধ্যে আবার কিছু প্রত্যেকের পৃথক পৃথক অভ্যাসের কারণেও হয়ে থাকতে পারে।আমেরিকান প্রেগনেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতানুসারে,এক্ষেত্রে ড্রাগ, অ্যালকোহল সেবন এবং ধূমপানের মতো অভ্যাসগুলি একটি ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে,প্রধানত ডিম এবং কাঁচা মাংসে পাওয়া কিছু ব্যাকটিরিয়া অন্ত্রে অনুবিদ্ধ হওয়ার কারণে গর্ভপাত হয়ে থাকে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে মাতৃত্বজনিত উদ্বেগও অনেক সময় এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার কারণ হতে পারে।আবার অন্যান্য কয়েকটি কারণের মধ্যে হরমোনীয় অস্বাভাবিকতাগুলি, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং গর্ভাবস্থার বিলম্ব এটি ঘটার পিছনে দায়ী হয়ে থাকে।
গর্ভপাতের মুখোমুখি হওয়া একজন মহিলার ক্ষেত্রে অত্যধিক মাত্রায় মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক যেহেতু এই পরিস্থিতিটি কাটিয়ে ওঠাটা সত্যই বেশ কঠিণ।কিছু সময়ের জন্য মানসিক অবসাদ হয়ত আপনার উপর অতিরিক্ত উপশুল্ক চাপাতে পারে এবং এই সময়ের জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় আপনার আরও বেশি মানসিক সমর্থন পাওয়া প্রয়োজন।এছাড়াও আবার একটি গর্ভপাত ঘটে যাওয়ার মত ঘটনা কিছু মহিলার মধ্যে গর্ভাবস্থার বিষয়ে ভীতির বিকাশ করে,যার ফলে তারা সম্ভবত পরবর্তী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অসম্মত হয়ে উঠতে পারে।এটি মেনে নেওয়া খুব কঠিন এবং বেশ দুঃখজনক,তবে পরিশেষে সময়ের সাথে সবকিছুই ঠিক হয়ে যায়।
কখনও কখনও,রক্তপাত এবং খিঁচুনিগুলি হওয়াকে সম্ভাব্য গর্ভপাত হিসেবে ভুল করা হয়।কিন্তু এই ঘটনাগুলির সময়,যদি কারুর মধ্যে এগুলির সবগুলিই বিদ্যমান থাকে, সেক্ষেত্রে তার গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনাকে দূর করার জন্য তা নির্ণয় করতে অত্যন্ত সাবধানী হতে হবে।কেবলমাত্র একটি আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানই গর্ভপাত নিশ্চিত করতে পারে,সুতরাং রক্তপাত হওয়ার সাথে কোনওরকম ক্রাম্প বা খিঁচুনি লাগা জড়িত থাকার মত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এই গর্ভপাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবশ্যিকভাবেই সেই মহিলাকে একজন ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন এবং কোনওভাবেই এটিকে হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক নয়।রক্তপাতের দ্বারা গর্ভপাতের প্রারম্ভিক সম্ভাবনাকে আবার অনেকেই হয়ত উপাক্ষা করে থাকতে পারেন।
কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ আবার হালকা থেকে তীব্র খিঁচুনি এবং হালকা পিঠে ব্যথা অনুভব করে থাকতে পারেন।
প্রতি চার জনের মধ্যে একজন এ কথা স্বীকার করেন যে গর্ভবস্থায় গর্ভপাতের মুখোমুখি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা আছে।প্রায় 85% গর্ভপাতই ঘটে থাকে গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে।30 বছরের কম বয়সের মধ্যে থাকা মহিলাদের মধ্যে গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা 10 জনের মধ্যে 1 জনের থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সংখ্যাটিও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
গর্ভাবস্থার প্রারম্ভিক সপ্তাহগুলিতে গর্ভপাত বা গর্ভস্রাব হওয়ার ঘটনাকে প্রায়শই বিলম্ব বা স্বাভাবিক মাসিক হিসেবে ভেবে ভুল করা হয়ে থাকে।এই সব ক্ষেত্রে,মহিলাদের মধ্যে তাদের স্বাভাবিক মাসিক চক্রে হয়ে থাকা কিছু সাধারণ লক্ষণগুলিই যেমন দাগায়িতকরণ অথবা রক্তপাত,পিঠ ও কোমরে ব্যথা এবং হালকা খিঁচুনি দেখা দিয়ে থাকে।এই সকল উপসর্গগুলি খুব শীঘ্রই রক্তপাতের সম্পূর্ণ সময়কাল ব্যাপী অগ্রসর হতে পারে এবং তার সাথে তীব্র খিঁচুনি এবং রক্ত জমাট বাঁধাও সংযুক্ত হতে পারে।আপনি যদি আপনার গর্ভাবস্থাকালীন চক্রটির মধ্যে ভালভাবেই থেকে থাকেন তবুও আপনাকে হয়ত সেক্ষেত্রে প্রারম্ভিক শ্রমের একটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।আপনার গর্ভাবস্থার যেকোনও পর্যায়ে রক্তপাত হওয়া কিম্বা অনিশ্চিত যন্ত্রণার উদয় হওয়া উদ্বেগজনক এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন সাধারণ চিকিৎসকের কাছে তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ঘটে যাওয়া গর্ভপাতের মত কিছু ঘটনার ক্ষেত্রে,কিছু মহিলার আবার কোনও রকম যন্ত্রণা বা রক্তপাত হওয়ার অভিজ্ঞতা নাও হয়ে থাকতে পারে এবং তার ভ্রূণ নাশের অভিজ্ঞতাটির ব্যাপারে হয়ত তিনি পুরোপুরিভাবেই অজ্ঞও থাকতে পারেন।এটি কেবলমাত্র তার একটি রুটিন মাফিক স্ক্যান সম্পাদনের দ্বারা জানা যেতে পারে।এই ধরনের গর্ভপাতকে নিঃশব্দ গর্ভপাত বা একটি বাদ যাওয়া গর্ভপাত বলা হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের সর্বাধিক সাধারণ কারণটি হতে পারে ক্রোমোজোমগুলির সাথে সমস্যা যা ভ্রূণের পুরোপুরি বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে জিনগত অস্বাভাবিকতা ছাড়াও গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত ঘটানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য আরও কয়েকটি কারণ এক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।যার মধ্যে রয়েছেঃ
বিভিন্ন ধরণের গর্ভপাতগুলি ঘটে থাকে হয় ভ্রূণের অবস্থা কিম্বা গর্ভবতী মহিলার দেহের অবস্থার উপর ভিত্তি করেঃ
রাসায়নিক গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে, ডিম্বাণুটি নিষিক্ত হয় তবে কখনওই জরায়ুতে রোপিত হয় না। এটি শরীরকে একটি মিথ্যা সংকেত দেয় যার ফলস্বরূপ গর্ভাবস্থাকালের হরমোনগুলি তৈরি হয় যা মহিলাকে তার পিরিয়ড বা মাসিক হওয়ার তিন থেকে চার দিন আগে একটি ইতিবাচক গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করতে পারে।ডিম্বাণুটি রোপিত না হওয়ার কারণে,এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার কোনও চিহ্ন থাকবে না,কারণ এক্ষেত্রে গর্ভধারণের বা অমরার কোনও উপস্থিতি থাকবে না। এসব ক্ষেত্রে,গর্ভাবস্থাটি চিকিৎসাগতভাবে টেকসই নয় হিসাবে অভিহিত করা হয়। কিছু অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মাসিক খিঁচুনি এবং গর্ভধারণের ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে রক্তক্ষরণ হওয়া।
আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মতো ক্লিনিকাল পরীক্ষার মাধ্যমে যখন গর্ভপাতকে স্বীকার করা হয় তখন গর্ভপাত বাদ দেওয়া বা মিস করার ঘটনাটি ঘটে থাকে। তবে এক্ষেত্রে মহিলা গর্ভপাতের কোনও লক্ষণ বা উপসর্গের অভিযোগ করেন না। এই জাতীয় গর্ভপাতকে নিঃশব্দ গর্ভপাতও বলা হয়ে থাকে।
রোগাক্রান্ত ডিম্বাশয়ের মধ্যে,ভ্রূণ সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হতে পারে না এবং তার পরিবর্তে জরায়ুর দ্বারা শোষিত হয়।এরকম পরিস্থিতিতে মহিলা গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি অনুভব করবেন এবং তার একটি গর্ভ থলিও গড়ে উঠবে তবে শিশুর বিকাশ হবে না।
কিছু ক্ষেত্রে,জরায়ু তার অভ্যন্তরে কিছু কলাকে ধারণ করে রাখে,যা জরায়ুটিকে খালি করার জন্য অবশিষ্ট কলাগুলিকে অপসারিত করতে জরায়ুটি চেষ্টা করার ফলে আরও খিঁচুনি এবং রক্তপাত হতে পারে।জরায়ু মধ্যস্থ কোনওরকম গর্ভাবস্থার কলা অপসারণের জন্য জরায়ুটিকে খালি করার ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত একটি অস্ত্রপচার পদ্ধতি সম্পাদন করতে পারেন।
একটি সম্পূর্ণ গর্ভপাত তখনই ঘটে যখন জরায়ুটি বাকি সকল অবশিষ্ট পদার্থ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সফলভাবে মুক্ত করে ফেলে।গর্ভপাতের ফলে জরায়ুর সংকোচন এবং রক্ত প্রবাহিত হতে থাকার কারণে এই সময় রক্ত ক্ষরণ এবং খিঁচুনি হয়ে থাকতে পারে।
কেবলমাত্র খুব কম সংখ্যক মহিলার মধ্যেই তাদের সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থা জুড়ে এই পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।পুনরাবৃত্ত গর্ভপাত খুব একটা সাধারণ নয় এবং এটি হওয়া ক্রোমোজোমের ব্যাধিগুলি ছাড়াও সার্ভিক্যাল এবং জরায়ুর অবস্থানের উপর নির্ভর করে।
এক্টোপিক গর্ভাবস্থা হল এমন একটি অবস্থা যেখানে ভ্রূণ সাধারণত জরায়ুর অভ্যন্তর ছাড়া অন্য কোথাও নিজেকে রোপণ করে।এই ধরণের ভ্রূণটি বেঁচে থাকতে পারে না এবং গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকে।এই সব ক্ষেত্রে,হবু মা যোনি থেকে রক্তক্ষরণ এবং তলপেটে তীব্র যন্ত্রণার মত অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকেন।
মোলার গর্ভাবস্থায়,যে সকল কলাগুলি ভ্রূণ রূপে গঠিত হতে পারে বলে মনে করা হয়, তা হওয়ার বদলে জরায়ুতে সেগুলির অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি হয়ে থাকে।এ ব্যাপারে সকল কলাগুলির অপসারণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হবে।
গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট ও স্থির নিশ্চিত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই।তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেবেন অথবা হয়ত আপনার জরায়ুর মধ্যে থেকে থাকা ভ্রূণের অবশিষ্ট কলাগুলি সম্পূর্ণরূপে অপসারণের জন্য একটি অস্ত্রপচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করার পরামর্শ দেবেন।
যদিও গর্ভাপাত ঘটা হল একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা,তবে এর বিপদের পরিমাণটি মহিলাটির গর্ভধারণ করা থেকে তার কততম মাসে গর্ভপাত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে।সকল গর্ভাবস্থার প্রায় 15% ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার প্রথম 20 সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটার ফলে গর্ভাবস্থাগুলির সমাপ্তি ঘটে যায়।
তবে এটি যদি এর পরে(5-8 মাসের মধ্যে)ঘটে থাকে সেটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং মারাত্মক রক্তক্ষরণ,বন্ধাত্ব্য ও এমনকি চূড়ান্ত পর্যায়ে মৃত্যুর মত জটিলতাগুলির কারণ হয়ে উঠতে পারে।যাইহোক,নিয়মিত রূটিন চেক-আপের মধ্যে থাকলে তা প্রাথমিক অবস্থায় গর্ভপাতের মত ঝুঁকির সম্ভাবনা আপনার মধ্যে আছে কিনা চিহ্নিত করে নির্ণয় করতে এবং আপনাকে এ ব্যাপারে শান্ত রাখতে সহায়তা করবে।
প্রথম ত্রৈমাসিকে বাঁচার জন্য ভ্রূণের বিকাশ যথেষ্ট না হওয়ার কারণে প্রথম ত্রৈমাসিকে ঘটা গর্ভপাতটি একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে থাকে।সপ্তাহ থেকে সপ্তাহ ধরে গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনার একটি চিত্রণ এখানে দেওয়া হলঃ
সপ্তাহ 0-6 | 75% |
সপ্তাহ 7-12 | 5% |
সপ্তাহ 13-20 | 3% |
20 সপ্তাহের পরে | অপ্রযোজ্য |
শিকাগোর অ্যাডভান্সড ফার্টিলিটি সেন্টার অনুসারে,44 – 46 বছর বয়সের মধ্যে থাকা মহিলাদের মধ্যে তাদের গর্ভাবপস্থা বিনাশের ঝুঁকি উচ্চ মাত্রায় থাকে,যার অনুমান হতে পারে 60% এরও বেশি।আর 30 বছরের কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে সর্বনিম্ন গর্ভাবস্থা বিনাশ 8% এর মত বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।বেশি বয়সী মহিলাদের তুলনায় কম বয়সী মহিলাদের গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা সাধারণত কম হয়ে থাকে।
মায়েদের বয়স অনুপাতে তাদের মধ্যে গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনার একটি সারণী এখানে উপস্থাপনা করা হলঃ
<30 | 8% |
30-40 | 12% |
35-37 | 16% |
38-39 | 22% |
40-41 | 33% |
42-43 | 45% |
44-46 | 60% |
একটি গর্ভপাতে স্বীকৃত গর্ভাবস্থার প্রায় 15-20% মত গর্ভপাত ঘটে থাকে। বেশিরভাগ স্বীকৃত গর্ভপাত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে ঘটে থাকে অথবা কিছু ক্ষেত্রে আবার সেটি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও ঘটার সম্ভাবনা থাকে। মহিলার বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
গর্ভপাত ঘটার পর পুনরুদ্ধারের জন্য অবশ্যই অনুসরণযোগ্য কিছু বিষয়ের তালিকা এখানে দেওয়া হল।শারীরিক এবং মানসিক নিরাময়ের জন্য নিজেকে সময় দিন।কিছুদিনের জন্য আপনার রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং সেটি বেশ যন্ত্রণাদায়ক এবং হতাশাজনক হয়ে থাকতে পারে।একটি গর্ভপাত ঘটে যাওয়ার ফলে আপনার মধ্যে একটি মানসিক ট্রমা এবং শারীরিক সহনশক্তি হ্রাস পাওয়ার কারণে তা হয়ত আপনার উপর একটি অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা চাপাতে পারে এবং যা আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে,সেই কারণে গর্ভপাত ঘটার পরবর্তী কয়েক দিনের জন্য অথবা এক সপ্তাহের জন্য আপনার দৈহিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।পরবর্তী কিছু দিনের জন্য যৌন সঙ্গম এড়িয়ে চলুন এবং নিরাময়ের জন্য নিজেকে শিথিল করুন আর আপনার দেহকেও এর জন্য কিছুটা সময় দিন।গর্ভপাতের কারণে পূর্বপ্রস্তুতি ব্যতীতই রক্ত প্রবাহ এড়াতে পরবর্তী এক কিম্বা দু’দিনের জন্য স্যানিটারি প্যাড পরিধানের চেষ্টা করুন।
এমনকি আপনি আপনার আসন্ন গর্ভপাতকে শনাক্ত করার পরেও সেটি প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব।আপনার পেটটিকে নিরাপদে রাখা এবং সেটির ভালভাবে যত্ন নেওয়া নিশ্চিত করা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি অবশ্যই সময়মত নিশ্চিত করা উচিত।যেকোনও দৃশ্যকল্পে আপনার ওষুধগুলি পরীক্ষা করার নিয়ম করুন এবং এটি কোনও অনুমোদিত উৎস থেকে হওয়া উচিত সে ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করে নিন।
গর্ভপাতের লক্ষণগুলি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর,ডাক্তারবাবু এক সারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন।সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল HCG রক্ত পরীক্ষা।একজন ডাক্তারের আওতায় থাকা অন্যান্য সকল পরিমাপ পদ্ধতিগুলির মধ্যে উল্লেখ্য হল শ্রোণীর পরীক্ষা,ভ্রূণের হৃদযন্ত্রের আল্ট্রাসাউন্ড এবং স্ক্যান করা।একটি আল্ট্রাসাউন্ডে,গর্ভ থলির বিকাশের অভাব,ভ্রূণের হৃদস্পন্দনের অভাব,আকারে 5 মিলিমিটারের থেকেও বড় হওয়া সত্ত্বেও ভ্রূণের মধ্যে হৃদস্পন্দন না থাকার মত বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রান্সভ্যাজিনাল আল্ট্রাসাউন্ড এবং পরবর্তী পর্যায়ে তলপেট অঞ্চলে অতিরিক্ত আল্ট্রাসাউন্ড পরিচালনা করা মনোনীত করা হয়।যে ব্যাপারটি অবশ্যই ভুললে চলবে না তা হল একটি আল্ট্রাসাউন্ড যে ফলাফলটি সমর্পন করে তা একটি নিরাপদ এবং ইতিবাচক গর্ভাবস্থাকে সূচিত করতে অথবা নাও করতে পারে।একটি গর্ভপাত শণাক্ত করতে ডাক্তারবাবু ত্রৈমাসিকের পরবর্তী অংশে একটি ভ্রূণের হার্ট মনিটর ব্যবহার করবেন,যদি সেটি একান্তই বিদ্যমান থাকে।গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে,একটি হৃদস্পন্দন এড়িয়ে যাওয়া একটি গর্ভপাতের ইঙ্গিত দিতে পারে না।একটি বিস্তৃত জরায়ু পরীক্ষা করার জন্য একটি শ্রোণী পরীক্ষা পরিচালিত করা হয় যা গর্ভপাতের একটি জোরালো ইঙ্গিত।
একটি ব্যর্থ গর্ভাবস্থার পর গর্ভধারণের চেষ্টা করা যদিও খুবই কঠিণ এবং মাঝেমধ্যে আঘাতদায়ক হয়ে উঠতে পারে,এক্ষেত্রে সর্বদাই আশা রাখা উচিত।একটা গর্ভপাত ঘটে যাওয়ার অর্থ কখনই এই নয় যে পুনরায় গর্ভবতী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আপনার আর নেই।যদি পুনরায় চেষ্টা করার জন্য আপনি নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে করেন,আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তের সাথে আপনার এগিয়ে চলা উচিত।গর্ভপাতের পর পুনরায় গর্ভবতী হয়ে ওঠা সম্ভব এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার সঙ্গীর সাথে যৌথভাবে আপনার এ বিষয়ে কথা বলা উচিত।
সকল মায়েদের একটি বিরাট প্রশ্ন হল একবার গর্ভপাত হয়ে যাবার পর আমি কি আবার গর্ভবতী হয়ে উঠতে পারব?ডাক্তারবাবু আপনাকে পরামর্শ দেবেন দ্বিতীয়বার গর্ভাধারণ করার আগে কিছুটা সময় বিরতি দেবার জন্য,তবে সে ব্যাপারে খুব কঠিন কিছু নিয়ম নেই যা কঠোর ভাবে মানতেই হবে।
যাইহোক এই সিদ্ধান্তটি একক ভাবে সেই মহিলাটির মানসিক স্থিতির উপর নির্ভর করে এছাড়াও খুব দ্রুত গর্ভাধারণের জন্য নানা ধরণের আবেগ ও মানসিক বিষয় যেমন পরিবারের সাহচর্য সহযোগীতার বিষয়টি থেকে থাকে।একবার গর্ভাপাত হবার অর্থ এই নয় যে পরেরটিরও একই দশা হবে।ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন তার সাথে আপনার পছন্দের ব্যাপারে আলোচনা করুন এবং যখন আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন তখন পুনরায় গর্ভধারণ করুন।একজন ডাক্তারবাবুই আপনার এই অবস্থায় আপনার পথপ্রদর্শক হবেন এবং আপনার যদি দুবার গর্ভপাত হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি আপনার পথপ্রদর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবেন।সমস্যবহুল পরিস্থিতিতে ডাক্তারবাবুই আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।
আপনি যদি প্রস্তুত থাকেন তাহলে গর্ভপাতের 2 সপ্তাহ পরেই গর্ভধারণ করতে পারেন কিন্তু পরিসংখ্যান এই কথাই বলে যে যদি আপনি গর্ভপাতের 6 মাস পরে গর্ভধারণ করেন তাহলে সেটি সফল এবং ইতিবাচক হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশী।আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে পারেন যখন আপনি মনে করবেন এক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসাগত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মত অনুযায়ী প্রায় 85% মহিলা যাদের একবার গর্ভপাত হয়ে গেছে তারা দ্বিতীয়বারে স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণ করে থাকেন।এটা সাধারণত একটিবার ঘটার মত প্রক্রিয়া খুব কম ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় বা তার বেশি ঘটে থাকে। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলাদের দ্বিতীয়বার গর্ভপাত হবার সম্ভবনা 14% এর থেকেও কম।
গর্ভাবস্থায় যে কোনোও ধরনের রক্তক্ষরণ চিন্তার বিষয়। ডাক্তারবাবু শ্রোণী পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে নিশ্চিত হন গর্ভপাত হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে।পরীক্ষাটি করর সময় যদি জরায়ুটিকে কোন ভ্রূণকলা থেকে মুক্ত থাকতে দেখা যায় কিম্বা যদি এটা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই ঘটে থাকে তাহলে আর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজনে নেই।আর যদি কোন রকম ভ্রূণকলা বা অন্য কোনো কলা জরায়ুতে থেকে থাকে তাহলে সেটিকে অস্ত্রোপচার বা ওষুধ দিয়ে বের করতে হবে।
চেতনা লোপ করে গর্ভপাতের পরবর্তী অবশেষ জরায়ু থেকে বের করা হয় সেক্ষেত্রে নানাধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন রক্তক্ষরণ এবংখিঁচুনি দেখা দিতে পারে।যদি শেষ পর্যায়ে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু ঘটে তাহলে অনেক সময় ডাক্তারবাবু বলপ্রয়োগ করে প্রসব ঘটান।প্রসবের পর ডাক্তারবাবু শিশুটি এবং অমরার পরীক্ষা করেন এবং শিশুটির মৃত্যুর কারণ বলেন।
গর্ভপাতের মত ঘটনাটিকে অতিক্রান্ত করা দম্পতিদের মধ্যে একটা কঠিন পরিস্থিতি গড়ে তুলতে পারে বিশেষভাবে যারা নতুন পরিবার শুরু করতে উদগ্রীব। যাইহোক এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে অনেক ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র রাস্তা অসম্পূর্ণ গর্ভাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার।প্রচুর পরিমাণে যত্ন নেওয়া,সর্বদা ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনে চলা এবং পরবর্তী গর্ভসঞ্চারের জন্য মধ্যবর্তী পর্যায়ে বেশ কিছু সময় বিরতি দেওয়া দরকার পরের একটি সফল গর্ভধারণের জন্য।এইসব ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পরিবারের সাহায্য এবং সহানুভূতি খুবই প্রয়োজন।উচ্চ মাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হয় যে কিছুটা বিরতি নিন, নিজেকে কিছুটা সময় দিন, তারপর পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন এবং পরবর্তী গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হন।