একটি নিশ্ছিদ্র ঘুম সকল গর্ভবতী মহিলাই প্রত্যাশা করেন, কিন্তু সেটি পাওয়া প্রায়শই মুশকিল হয়ে ওঠে।গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং প্রায় মোটামুটি সকল গর্ভবতী মহিলাই বিশেষত পূর্ব অবস্থা থেকে গর্ভদশায় প্রথম ত্রৈমাসিক পেরিয়ে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে কম-বেশি ঘুমের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
গর্ভদশায় হয়ে থাকা উদ্বেগ, হরমোনের উত্থান-পতন এবং শারীরিক পরিবর্তনের মত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণের জন্য পূর্বের তুলনায় কঠিন হয়ে ওঠে একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় রাত্রিকালীন নিশ্চিন্ত ঘুম যাপন করা।আপনার বর্ধিষ্ণু পেটের আকার, পিঠে ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া এবং আপনার ক্রমবর্ধিত সংবেদনশীল মুত্রাশয়টি খালি করার তাগিদটি প্রতিদিন আপনার পিঠের উপর ভর দিয়ে চিৎ হয়ে আরামের ঘুমের মত আপনার নিয়মিত ঘুমের স্বকাচ্ছন্দ্যে ব্যাঘাত আনে।স্বাভাবিক নিয়মের ধারায় আপনার গর্ভদশাটি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে ক্রম অগ্রসর হওয়ার কারণে, আপনার আরামদায়ক ঘুমের অবস্থানটির সন্ধান পাওয়া হয়ত কঠিন থেকে আরও কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে।এরকম অবস্থায়, চিন্তা হওয়া এবং একটি নিশ্ছিদ্র প্রশান্তির ঘুমের জন্য গর্ভাবস্থায় কীভাবে ঘুমানো উচিত ও গর্ভাবস্থায় চিৎ হয়ে ঘুমানোটা নিরাপদ কিনা এ ধরণের নানা প্রশ্ন মনে আসাটাই স্বাভাবিক।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রাত্রে ভাল ঘুম হওয়াটা ভীষণই প্রয়োজন।বিশেষজ্ঞের মতানুযায়ী, গর্ভদশায় ঘুমানোর সর্বোত্তম অবস্থানটি হল বা পাশ ফিরে ঘুমানো, যেটি আবার আপনার এবং তার সাথে আপনার ভাবি সন্তানের জন্যও আদর্শ।এই অবস্থানটি আপনার দেহে সর্বাধিক রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে এবং আপনার অমরা এবং শিশুর পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।পাশ ফিরে ঘুমালে তা আবার আপনার বৃক্কের কার্যকারিতাকেও বড়িয়ে তোলে যা দেহস্থ বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে এবং আপনার পায়ের পাতা, গোড়ালি এবং হাতের ফুলে যাওয়াকে হ্রাস করে।
ঘুমের সাধারণ অবস্থানগুলি যেমন আপনার পেটের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে কিম্বা পিঠে ভর দিয়ে চিৎ হয়ে ঘুমানোও কঠিন হয়ে উঠবে আপনার গর্ভদশা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে।এর কারণ হল আপনার ক্রম বর্ধিত পেটের আকার, পিঠ ব্যথা, শ্বাস কষ্ট এবং হৃদয় জ্বলনের মত সমস্যাগুলির কারণে হয়ে থাকা অস্বস্তিগুলি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থায়, ঘুমানোর সঠিক অবস্থানটি নিঃসন্দেহে হওয়া উচিত আপনার পাশ ফিরে ঘুমানো এবং তাও আবার বাম পাশ ফিরে।হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী বৃহৎ শিরাটি ডান দিকে অবস্থিত, আর সেই কারণেই আপনাকে বাম পাশ ফিরে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।শোওয়ার আদর্শ অবস্থানটি হল আপনার বাম পাশ ফিরে হাঁটুগুলিকে কিছুটা ভাঁজ করে শোওয়া এবং আপনার পাগুলির মাঝে একটি পাশ বালিশ স্থাপন করা।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, আপনার পিঠের পিছনের দিকে এবং পেটের নীচে একটি বালিশ স্থাপন করলে তা আপনাকে তুলনামূলক কম টান বা চাপের সাথে একটি অনুকূল ঘুম সরবরাহ করবে।ঘুমানোর সময় আপনাকে সুতির ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরিধান করার পরামর্শই দেওয়া হয় যাতে সহজেই বায়ু চলাচল করতে পারে।
চিৎ হয়ে কিম্বা উপুড় হয়ে ঘুমানো গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলতে হবে।কারণ এটি নীচের উল্লেখানুযায়ী নানা ধরণের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারেঃ
গর্ভাবস্থায় নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় ঘুমের জন্য নিম্নে আরও অন্যান্য কয়েকটি পরামর্শ তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
সারা রাত ধরে এক ভাবে একই অবস্থায় শুয়ে থাকাটা আরামদায়ক হয় না, সুতরাং এক পাশ থেকে আরেক পাশে মাঝে মধ্যে ফিরুন তবে অবশ্যই বাম পাশে ফিরে শোয়ার পক্ষপাতিত্বটি ভাল ঘুমের একটি সেরা সমাধান।মাঝরাতে যদি আপনার চিৎ হয়ে কিম্বা উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় ঘুম ভেঙে যায়, অযথা আতঙ্কিত হবেন না।শুধু যেকোনও এক পাশে ফিরে শুয়ে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ুন।
একটি মসৃণ গর্ভাবস্থাকে বয়ে নিয়ে চলার জন্য গর্ভবতী মহিলাদের নানাবিধ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন এবং তার সাথেই আবার তাদের জীবনধারাতেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি নিয়ে আসা দরকার।ঘুমের এই সকল নতুন অবস্থানগুলি প্রয়োগের চেষ্টা করা হল সেই সকল পরিবর্তনগুলিরই একটি দিক।এই পর্যায়ে ঘুমের অবস্থানগুলির সাথে নিজেকে মানিয়ে তোলার জন্য দেহের অবস্থানের অবিরত পরিবর্তনগুলি হওয়ার ফলে কয়েক রাত অথবা এমনকি আবার কয়েক সপ্তাহও ঘুমের সময় অস্বস্তিবোধ করাটা স্বাভাবিক।গর্ভাবস্থার ক্রম অগ্রগতির সাথে সাথে এই অবস্থাটি ক্রমশ আরও সহজ হয়ে উঠবে এই আশ্বাসই নিজেকে দিন।আপনার শরীর এবং মনকে কিছুটা সময় দিন, এবং আপনি খুব শীঘ্রই আপনার ঘুমের নতুন এই অবস্থানগুলির সাথে নিজেকে মানিয়ে তুলতে সমর্থ হয়ে উঠবেন।