প্রতিদিনের চুল পড়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা।আমরা সকলেই অবিচলিত এবং ক্রমাগত হারে আমাদের চুল হারাতে থাকি,এবং সেটি আরও বেশি হারে হয়ে থাকে যখন আমরা আমাদের চুলগুলিকে ধুই কিম্বা আঁচড়াই।বৃদ্ধির চক্রে,যেকোনও সময়ে,আমাদের প্রায় 90% চুলই বাড়তে থাকে,যখন বাকি 10% বৃদ্ধি না পেয়ে স্থিতবস্থায় থাকে। গর্ভাবস্থাকেলে বেশিরভাগ মহিলারাই ঘন,উজ্জ্বল চুলের অধিকারিণী হয়ে থাকেন আর প্রসবের পর তারা চুল পড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেন।যাইহোক,তবে কিছু ক্ষেত্রে আবার বেশ কিছু মহিলা গর্ভাবস্থায় তাদের চুল ঝরে যেতে লক্ষ্য করে থাকতে পারেন।আসুন চুলের এই হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সন্ধান করা যাক।
এটি চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক যদি আপনি আপনার ঘন উজ্জ্বল একরাশ চুলকে ক্রমশই পাতলা হয়ে যেতে লক্ষ্য করেন।কিন্তু চিন্তা করবেন না কারণ এটি সম্ভবত কেবল একটি পর্যায় এবং সেটি অতিবাহিত হয়ে যাবে।গর্ভাবস্থায়,চুলের একটি বর্ধিত শতাংশ ধারণক্ষম পর্যায়ে দীর্ঘায়িত অবস্থায় থাকে।এর কারণ হল এক বিশাল পরিমাণ ইস্ট্রোজেন হরমোন চুলগুলিকে নিস্ক্রিয় দশায় আটকে রাখে আর তাই চুলগুলি পড়ে যায় এবং পাতলা দেখায়।তবে প্রসবের পরবর্তীতে,ইস্ট্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকে ফিরে আসার কারণে অবশিষ্ট চুলগুলিও ঝরে যায় যার পরিণামস্বরূপ চুলের হ্রাস বৃদ্ধি পায়।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে চুল পড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,তবে প্রসবের পরবর্তীতে চুল পড়ে যাওয়ার মত ক্ষতির তুলনায় সেটি কিছুটা কম স্বাভাবিক হয়।নিষ্ক্রিয় দশায় চুলের বৃদ্ধি চক্র বিরত থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত ঘন এবং আরও বেশি উজ্জ্বল চুল উপভোগ করেন।এটি প্রসবের পর পর্যন্ত চুল পড়ে যাওয়া চক্রকে বিলম্বিত করে।তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে,কারুর কারুর স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে আবার গর্ভাবস্থাকালেও চুল পড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। মাঝেমধ্যে আবার হরমোনের ওঠা–নামাও চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে।মাথার যেকোনও অংশ থেকেই চুল পড়ে যেতে পারে অথবা আপনার স্নান করার বা চুল আঁচড়ানোর সময়েও চুল ঝরে পড়তে পারে।প্রসবের পর 6-12 মাসের মধ্যে আপনার চুলের বৃদ্ধির উপর লক্ষ্য রাখা উচিত।যদি চুল পড়ে যাওয়ার তীব্রতাটি অব্যাহতই থেকে যায়,তবে এটি গর্ভাবস্থায় চুল পড়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে এবং সেটি সম্ভবত আপনার কিছু ভিটামিনের অভাবজনিত কারণেই হয়ে থাকতে পারে।যদি এরকম হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।গর্ভাবস্থায় চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলি সম্পর্কে খোঁজ পেতে নিম্নে বর্ণিত নিবন্ধটি আরও পড়ুন।
ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত ঘন এবং উজ্জ্বল চুলের অধিকারিণী হয়ে থাকেন।এই হরমোনটি চুল পড়ে যাওয়া থেকে চুলের ফলিক্যলগুলিকে রক্ষা করে।তবে কেউই এটি আশা রাখতে পারেন না যে,এই একই অবস্থা সকল গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেই বজায় থাকবে,কারণ বেশ কিছুজন আবার তাদের গর্ভাবস্থায় চুল খোয়ান স্বাস্থ্য এবং হরমোনের অসামঞ্জস্যতা সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণের জন্য।
গর্ভাবস্থায় প্রায়শই,প্রচুর পরিমাণ প্রজেস্টেরণ হরমোন নিঃসরণ শুষ্কতার কারণ হয়ে ওঠে।আর এর ফলে এটি চুলের গোঁড়ার কাছ থেকেই সূক্ষ্ম আঁশ বিশেষের চুলগুলিকে ভেঙ্গে এবং চিঁড়ে ফেলে।আবার অন্যভাবে,মাথা থেকে চুল পড়ে চুলের পরিমাণ কমে যেতে পারে আপনার শরীরে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতির কারণে।এছাড়াও চুল পড়ে যাওয়ার আরও অন্যান্য কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে জন্ম নিরধক বড়ি বন্ধ করে দেওয়া অথবা গর্ভস্রাব বা গর্ভপাতের মত অন্যান্য পরিস্থিতিগুলি।
“টেলোজেন এফ্লুভিয়াম” নামটি সধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে অত্যধিক পরিমাণে চুল ঝরে যাওয়াকে বর্ণনা করতে এবং এটি সাধারণত হয়ে থাকে গর্ভধারণের পর এক থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে।এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা যা 40-50% মহিলাদের প্রভাবিত করে।আবার এই চুল ঝরে যাওয়া চক্রটি পুনরায় স্বাভাবিকে ফিরে আসে সাধারণত প্রসবের পর 6-12 মাসের মধ্যে।হরমোনের অস্থিরতা এবং বিশেষ কিছু শারীরিক পরিবর্তন গর্ভাবস্থায় এই ধরণের চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।এর কিছু সম্ভাব্য কারণ নিম্নে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
আপনি গর্ভবতী হলে আপনার দেহে আরও বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হয়।এর পাশাপাশি আবার আপনি যদি প্রথম ত্রৈমাসিকের মধ্যে গা–গুলানো বমি বমি ভাব অনুভব করেন,তবে সেক্ষেত্রে বেশির ভাগ পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়।অপর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের ফলেও আবার প্রায়শই চুলের ক্ষতি হয়ে থাকে।আয়রণ,প্রোটিন,খনিজ এবং ভিটামিনের অভাবও আবার এই অবস্থার পিছনে এক বিরাট অবদান রাখে।মনে রাখবেন যে অত্যধিক মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণও আবার চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিছু ক্ষেত্রে কিছু মহিলার মধ্যে আবার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস কিম্বা কিছু বিরল ক্ষেত্রে দাদের(ছত্রাক জনিত সংক্রমণ)মত কিছু অসুস্থতাগুলি রয়ে যায়,যে কারণে চুল পড়ে যেতে পারে।আবার উচ্চ রক্তচাপ কিম্বা অবসাদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ধরনের ওষুধও আবার চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।যদি এগুলি আপনার হয়ে থাকে,ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।
চুলের গোছের পরিবর্তনের একটি অন্যতম মূখ্য কারণ হল দেহস্থ হরমোনের পরিবর্তন,যেহেতু হরমোনগুলি চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি চক্রের উপর প্রভাব ফেলে।এর পরিণামে অতিরিক্ত চুল পড়ে যায়,যা আবার “টেলোজেন এফ্লুভিয়াম” নামেও পরিচিত।এটি হল একটি অস্থায়ী অবস্থা এবং প্রসবের কয়েক মাস পরেই এটি আবার বিপরীত অবস্থায় ফিরে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে আবার জীনগত কারণের পরিপ্রেক্ষিতেও চুল পড়ে যায়।আপনার মা যদি তাঁর গর্ভাবস্থায় এই একই অবস্থা ভোগ করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভাবস্থাতেও এই সমস্যাটি ভোগ করার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
হাইপোথাইরয়েডিজম হল এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের মধ্যে থাইরয়েডের মাত্রা খুব কম থাকে।এই হরমোন বিপাক,মানসিক স্বাস্থ্য,পাচন প্রক্রিয়া এবং এমনকি চুল এবং নখের নিয়ন্ত্রণের জন্যও দায়ী।অতএব,পরিণামস্বরূপ থাইরয়েডের অভাবও আপনার চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
PCOS হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়ে থাকে,যা মহিলাদের মধ্যে পুরুষ হরমোন নিঃসরণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে।এর ফলে মহিলাদের দেহে অতিরিক্ত চুল জাতীয় লোমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং মাথার তালুতে চুলের পরিমাণ কমে যায়।
এটি লক্ষ্য করা গেছে যে,জন্মনিরোধক বড়ি সেবন কিম্বা অন্যান্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি বন্ধ করে দিলে পরিণতি হিসেবে প্রায়শই অতিরিক্ত চুল পড়ে যায়।আবার গর্ভস্রাব,মৃত সন্তানের জন্মদান এবং গর্ভপাতের মত ঘটনাগুলিও অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অনেক মহিলাই ত্বকের অ্যালার্জি এবং তাদের মাথার ত্বকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কিছু অবস্থার মুখোমুখি হতে পারেন।আর এটিই পরবর্তীতে তাদের চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং এমনকি প্রচুর পরিমাণে চুল উঠে যাওয়ার পিছনেও অবদান রাখে।
গর্ভাবস্থায় অথবা গর্ভাবস্থার পরবর্তীতে চুল পড়ে যাওয়াটা কোনও বড়সড় উদ্বেগ নয়,কারণ এই অবস্থাটি স্বল্পমেয়াদীর হয়ে থাকে এবং প্রসবের পর দ্রুতই তা স্বাভাবিকে ফিরে আসে।তবে অসুস্থতা কিম্বা পুষ্টির ঘাটতির মত আবার কিছু অন্তর্নিহিত শর্তও থাকতে পারে,যার কারণে চুল পড়ে যায় এবং তা নজরে রাখা প্রয়োজন,যেহেতু এগুলি মা এবং বাচ্চা উভয়েরই ক্ষতি করতে পারে।চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখানে কিছু কার্যকর চিকিৎসার নির্দেশ করা হল যেগুলি আপনার চুল পড়া হ্রাস করতে এবং স্বাস্থ্যকর চুল বজায় রাখার ক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
নিয়মিতভাবে আপনার মাথার তালুতে তেল লাগানো আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।ঘুমানোর আগে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাথায় তেল লাগালে তা আপনার চুলের যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে।আপনি আবার এমনকি একবার কিছুক্ষণের জন্য সামাণ্য ঈষদুষ্ণ তেল দিয়ে আপনার মাথার ত্বকটিকে মালিশও করতে পারেন।চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সেরা কিছু তেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নারকেল তেল,আমণ্ড তেল,সরষের তেল এবং জলপাই তেল।
কৃত্রিম উপায়ে চুলকে সোজা করা,হিট দিয়ে চুল শুকনো করা এবং অন্যান্য হেয়ারস্টাইলের পরিবর্তে বরং আপনার স্বাভাবিক চুলের ধরণটিকে বজায় রাখার চেষ্টা করুন।আপনার চুল ভিজে থাকলে সেটির সাথে নমনীয় হন এবং ভেজা চুলের জট ছাড়াতে বেশ মোটা ও চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন।
একজন গর্ভবতী মহিলার তার নিজের এবং তার গর্ভস্থ শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি সমণ্বিত খাদ্য গ্রহণ করা একান্তই জরুরী।আপনাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সহ উচ্চ মাত্রায় শাক–সবজি এবং ফল জাতীয় খাদ্যগুলিকেই গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।এগুলি আপনার চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে এবং চুলের ফলিক্যলগুলিকে রক্ষা করবে।এছাড়াও আবার আপনার ডায়েটের সাথে ভিটামিন C,E,B কমপ্লেক্স এবং জিঙ্কের পরিপূরকগুলি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
মানসিক চাপ হল গর্ভাবস্থায় চুল পড়ে যাওয়ার একটি প্রাথমিক কারণ।একজন গর্ভবতী মহিলার প্রসব সংক্রান্ত ব্যাপারে এবং যেকোনও সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিস্থিতিগুলির জন্য চিন্তাণ্বিত হয়ে ওঠাটা স্বাভাবিক,কিন্তু গর্ভাবস্থায় আপনাকে সেগুলিকে থেকে দূরে এবং চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।শুধুমাত্র ভাল বিষয়গুলির উপরেই আপনার লক্ষ্য স্থির রাখার চেষ্টা করুন এবং সেই কাজগুলিই করুন যেগুলি আপনাকে খুশি রাখে।যেকোনও চিন্তা,ভয় এবং চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে দীর্ঘ শ্বাস গ্রহণ করুন,শিথিল হন,আরাম করুন এবং ধ্যান করার চেষ্টা করুন।
আপনি হয়ত বাজারে চুলের যত্ন নেওয়ার বিভিন্ন রকম পণ্য দেখতে পারেন,যেগুলি চুল পড়ে যাওয়ার সাথে সম্পর্কত সমস্যাগুলি সমাধানের দাবী রাখে,কিন্তু গর্ভাবস্থাকালে আপনার সেগুলিকে এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভাল।এই ধরনের প্রসাধনীগুলিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকার দরুণ সেগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত নয়।আপনার কেবলমাত্র সেই সকল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারগুলিই ব্যবহার করা উচিত যেগুলিতে বায়োটিন এবং সিলিকা রয়েছে।
কিছু মহিলাদের স্নান সারার পরেই তাদের ভিজা চুলের জট ছাড়ানোর জন্য চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস থাকে।এটি অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত।এর কারণ হল যখন চুল ভিজে থাকে,চুলের ফলিক্যলগুলি খুবই নরম থাকে এবং সহজেই উঠে যেতে পারে।যদি আপনি আপনার ভিজে চুল আঁচড়ান,আপনার প্রচুর চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।সবচেয়ে ভাল হল স্বাভাবিকভাবে চুল শুকিয়ে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করা এবং আপনি আবার আপনার চুলগুলিকে শুকিয়ে নেওয়ার জন্য একটি শুকনো তোয়ালেও ব্যবহার করতে পারেন।
এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে গর্ভবতী হওয়ার সময় অনেক মহিলাকেই চুল পড়ে যাওয়ার মুখোমুখি হতে হয়।চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আপনি আবার এমনকি কিছু ঘরোয়া প্রতিকার প্রয়োগের চেষ্টাও করতে পারেন।চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু কার্যকর প্রতিকারের উল্লেখ এখানে করা হলঃ
একটি সুপরিচিত প্রাকৃতিক প্রতিকার হল মাথার মালিশ করা।আপনি আপনার মাথার ত্বকে হালকা গরম তেল দিয়ে মালিশ করতে পারেন কারণ এটি চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।মাথার ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে নারকেল,আমণ্ড,জোজোবা,জলপাই এবং সরষের তেল হল কিছু শ্রেষ্ঠ বিকল্প।
ত্বকের সমস্যার চিকিৎসায় অ্যালোভেরা ব্যাপক পরিসরে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।আপনিও আপনার মাথার ত্বকের শুষ্কতা এবং সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য এই জেল আপনার মাথার ত্বকের উপরে প্রয়োগ করতে পারেন যা আবার আপনার চুল পড়া হ্রাস করার ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে।
চুল পড়ে যাওয়া, মাথার ত্বকের সংক্রমণ অথবা অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে।প্রাকৃতিক পণ্যগুলি সকল ধরনের ত্বকের জন্য এবং এমনকি আবার সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও নিরাপদ।এই ধরনের অ্যালার্জি এবং সংক্রমণগুলি এড়াতে চুলের জন্য প্রাকৃতিক এবং অর্গানিক পণ্যগুলি ব্যবহার করাই সবচেয়ে শ্রেয়।
নীম হল একটি ঔষধি ভেষজ যা ত্বকের সংক্রমণের কারণে চুল ঝরে যাওয়া মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত।এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি আছে যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।আপনি তাজা নীম পাতা দ্বারা প্রস্তুত একটি পেস্ট আপনার মাথার ত্বকের উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
আমলা হিসেবে পরিচিত ভারতীয় বৈচী বা গুজবেরীটি চুল পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সেরা প্রাকৃতিক প্রতিকার।আপনি আবার এমনকি আমলকি গুঁড়ো সেবন করতে পারেন অথবা আপনার মাথার ত্বকের উপর মালিশও করতে পারেন।এটি চুলগুলিকে সোজা করতে এবং চুল পড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
আধ কাপ মত তাজা নারকেল দুধ প্রস্তুত করুন এবং সেটিকে আপনার হাতের আঙ্গুলের ডগার সাহায্যে মাথার তালুর উপরে মালশ করে লাগিয়ে দিন।এরপর সেটিকে মাথার ত্বকে শুষে যাওয়ার জন্য 20-30 মিনিটের জন্য ঐ অবস্থায় রেখে দিন এবং তারপর একটি হারবাল শ্যাম্পুর দ্বারা সেটিকে ধুয়ে নিন।এটি মাথার ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।
একটা ফ্যাটানো ডিমের সাথে বড় এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ প্রস্তুত করুন।এবার এই মিশ্রণটিকে আপনার মাথার ত্বকের উপর লাগান এবং 30 মিনিটের জন্য সেটিকে সেই অবস্থায় রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।এটি চুল পড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং আপনার চুলকে ঘন এবং ঝলমলে করে তোলে।
সারা রাত্রি ভিজিয়ে রাখা মেথি দানার দ্বারা একটি সূক্ষ্ম পেস্ট বানিয়ে নিন।এবার আপনার চুলগুলিতে এই পেস্টের দ্বারা মালিশ করুন এবং এভাবে 3-4 ঘন্টা রেখে দেওয়ার পর সেটিকে ধুয়ে নিন।এটি আপনার চুলে ঔজ্জ্বল্যতা আনে এবং চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপ্ত করে।
ডিম,দই এবং জলপাইয়ের তেলের একটি সংমিশ্রণ আপনার চুলকে নমনীয় করে তোলার মাধ্যমে গভীরভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে।আপনি এই তিনটি উপকরণই সম পরিমাণে নিয়ে একটা পেস্ট প্রস্তুত করতে পারেন এবং সপ্তাহে একবার করে সেটিকে আপনার মাথার ত্বকের উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
আপনার এটি জানা উচিত যে আপনার গর্ভাবস্থায় চুল ঝরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা লাভের ক্ষেত্রে এই পৃথিবীতে আপনিই কেবল একক ব্যক্তি নন।অযথা আতঙ্কিত ও চিন্তিত হওয়ার পরিবর্তে বরং এটিকে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করা এবং সম্ভাব্য নিরাময় প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহার করার চেষ্টা শুরু করাই ভাল।এ ব্যাপারে একাধিক উপায় আছে যেগুলিকে আপনি বেছে নিতে পারেন গর্ভাবস্থায় এবং গর্ভাবস্থার পরে চুল পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে।আপনার চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে এমন বেশ কয়েকটি টিপসের উল্লেখ এখানে করা হলঃ
চুল পড়ে যাওয়া হল একটি স্বাভাবিক ঘটনা এবং গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পরে চুল ঝরা বেড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হওয়াটাও স্বাভাবিক।এই স্পর্শকাতর সূক্ষ্ম সময়কালে আপনার চুলের কিছু অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার দ্বারা আপনি নিশ্চিতিভাবেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা পেতে পারেন।