একটি ঋতুচক্র বাদ যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ মহিলাদের মত আপনিও হয়ত সন্দেহ করে থাকতে পারেন যে আপনি গর্ভবতী।গর্ভাবস্থা এবং পিরিয়ডের জৈবিক বোঝাপড়াটা হল এই যে আপনার এই দুটির মধ্যে একটি হবে এবং একই সাথে দুটি হবে না।তবে এ ব্যাপারে একটি শহুরে শ্রুতি আছে যা জোর দিয়ে থাকে কিছু মহিলা তাদের গর্ভবতী থাকালীন কীভাবে তাদের পিরিয়ড বা মাসিকগুলি পেয়ে থাকেন তার উপরে।যদিও এটি সম্ভব নয়, তবে এটা লক্ষ্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা গর্ভাবস্থায় ঋতুস্রাবের মতো বিষয়গুলিকে নিয়মিত পিরিয়ডের অন্যান্য উপসর্গগুলি ভেবে ভুল করে থাকতে পারেন।রক্তক্ষরণ এবং দাগ দেখা দেওয়ার কারণে এটি এমনকি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যা গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকাটা খুবই সাধারণ এবং বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পিরিয়ড বা মাসিকগুলি হয়–এই প্রশ্নের জীববিজ্ঞান ভিত্তিক সমর্থিত উত্তরটি হল– ‘না‘। আপনি গর্ভবতী হলে তখন আপনার শরীরের পক্ষে স্বাভাবিক ঋতুস্রাব বা মাসিকচক্র শুরু করা সম্ভব নয়।আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে এর অর্থ হল আপনার ডিম্বাণুগুলি নিষিক্ত হয় এবং আপনার জরায়ুটি প্রস্তুত হয় একটি শিশুর জন্য।পিরিয়ড বা মাসিকগুলি কেবল তখনই হয়ে থাকে যখন আপনার ডিম্বাণুগুলি অনিষিক্ত থাকে এবং একটি শিশুর জন্য আপনার জরায়ুটিকেও প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয় না।
প্রতি মাসেই জরায়ুর মধ্যে তার টিস্যু বা কলা এবং রক্তের প্রবাহের মাধ্যমে আস্তরণটি পুরু হয়ে ওঠে ও বিকশিত হয়ে জরায়ুতে ডিম্বাণুর বাসা বাঁধার অপেক্ষা করে এবং তার মধ্য দিয়ে একটি শিশুর বিকাশ করে। তবে, যদি কোনও নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে না পৌঁছায় তবে টিস্যু এবং রক্তের এই আস্তরণটি স্খলিত হয়ে প্রবাহিত হয়ে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়,আর সেই প্রক্রিয়াটিই মাসিক বা ঋতুস্রাব হিসেবে পরিচিত।ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণুটি নির্গত হয়ে যাওয়ার পরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সেক্ষেত্রে আবার এটিরও ইঙ্গিত দেয় যে আস্তরণটি স্খলিত হওয়ার সময় হয়ে গেছে।
কিন্তু যখন একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু নিজে থেকেই জরায়ুর মধ্যে প্রতিস্থাপিত হয়, তখন আপনার দেহের হরমোনগুলি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ভ্রূণের সুরক্ষা এবং লালনপালনের জন্য জরায়ুর ভিতরের আস্তরণটিকে অক্ষত রাখতে তা জরায়ুকে প্রণোদিত করে।আর সেক্ষেত্রে মোটামুটি প্রায় 9 মাস ব্যাপী আপনার গর্ভাবস্থাটি পুরোপুরিভাবে সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই কেবল আস্তরণটি স্খলিত হবে।
সুতরাং আপনি গর্ভবতী হলে নিয়মিত ঋতুস্রাব পাওয়া কখনই সম্ভব নয়।
কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, এটি হওয়া সম্ভব যে, নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর মধ্যে প্রতিস্থাপিত হয় মোটামুটি প্রায় সেই একই সময়ে, যখন আপনি পিরিয়ড বা মাসিক হবে বলে আশা করেছিলেন।ডিম্বাণুটি যেহেতু জরায়ুর আস্তরণের মধ্যে প্রোথিত হয়, তাই সেক্ষেত্রে সাদা যোনি স্রাব ও রক্তের হালকা কিছু দাগ দেখা দেওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে যা প্রাথমিকভাবে যোনিটির প্রাচীর পুরু হওয়ার কারণে হয়ে থাকে।
অনেক মহিলাই এই রোপণ বা প্রতিস্থাপন রক্তপাতকে ভুল করে থাকতে পারেন স্বাভাবিক নিয়মিত পিরিয়ডের সাথে যা স্বাভাবিক রক্তপাতের থেকে কম হয়ে থাকে এবং হালকা দাগ দ্বারা চেনা যায়।এটি গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে পিরিয়ড হিসাবে বিবেচিত হতে পারে এবং এমনকি অনেক সময় পরবর্তী পিরিয়ড বা মাসিকটি বাদ যাওয়া না পর্যন্ত আপনি হয়ত বুঝতেও পারবেন না যে আপনি গর্ভবতী।
রক্তের দাগ দেখা দেওয়া বা রক্তপাত হওয়ার আরও অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় মাসিকের রক্তপাত হিসেবে ভুল হতে পারে।
যদিও আপনার পিরিয়ড হওয়া এবং তারই সাথে একসঙ্গে গর্ভবতী হয়ে ওঠাটা সম্ভব নয়, তথাপি এক্ষেত্রে এমন কিছু পরিস্থিতি হয়ে থাকতে পারে যা আপনাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে তুলতে পারে যে আপনার পিরিয়ড বা মাসিক হয়েছে বলে।আবার খিঁচুনি, পিঠে ব্যথা অথবা বিরক্তিভাবের মত কিছু উপসর্গগুলিও গর্ভাবস্থা এবং ঋতুচক্র উভয় ক্ষেত্রেই কমন হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় অল্পস্বল্প রক্তপাত বা রক্তের দাগ দেখা দেওয়াটা সাধারণ ব্যাপার এবং সেক্ষেত্রে আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর প্রায় কোনওরকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।তবে আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং তীব্র রক্তস্রাব হতে থাকে তবে সেটি গর্ভাবস্থার অন্তর্নিহিত কোনও সমস্যা নির্দেশ করতে পারে এবং তার জন্য আপনাকে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।
যেসব মহিলারা গর্ভাবস্থায় সামান্য রক্তপাত অনুভব করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সাধারণত কোনও জটিলতা ছাড়াই প্রসব করে থাকেন। তবে, আপনি যদি রক্তের দাগ পড়া এবং রক্তক্ষরণ হতে লক্ষ্য করেন তবে তার জন্য একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে সেটি আপনার গর্ভাবস্থায় কোনওরকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হচ্ছে।