বমিভাব এবং বমি হওয়া গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে সাধারণ ঘটনা; প্রকৃতপক্ষে, এটি সেই প্রথম দুটি লক্ষণ যা আপনাকে আপনি গর্ভবতী কিনা তা বুঝতে সাহায্য করে। যদিও আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে সর্বদা বমি বমি ভাব বোধ করা সাধারণ, যদি এটি গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকেও অব্যাহত থাকে তবে তা অবশ্যই আপনার জন্য বেশ কষ্টকর হবে। আপনি যদি আপনার গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে থাকেন, তবে আপনার এই পর্যায়ে বমি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত কিনা তা আপনার জানা জরুরি।
আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন বেশ কয়েকটি লক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকেন, তার মধ্যে একটি হল বমি বমি ভাব, তবে গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের বমি বমিভাব উদ্বেগের কারণ, যার জন্য আপনি চিন্তিত থাকতে বাধ্য। তবে, দয়া করে মনে রাখবেন যে কেবল আপনিই এটির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন না এবং তাই এটি অস্বাভাবিক বা অসাধারণ কিছু নয়। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বমি করার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ নিম্নরূপ:
গর্ভাবস্থার চূড়ান্ত ত্রৈমাসিকে বমি করার একটি খুব স্পষ্ট কারণ হল সকালের অসুস্থতা। এটি একটি সাধারণ ঘটনা এবং এটির কারণে এমনকি গর্ভাবস্থার শেষ ত্রৈমাসিকেও বমি হতে পারে।
গর্ভাবস্থার উন্নত পর্যায়ে এটিও একটি সাধারণ ঘটনা। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে যখন পেটের এবং খাদ্যনালীর মধ্যে ভাল্বের পেশীগুলি শিথিল হয়ে যায়, তখন এটি পেটের অ্যাসিডগুলিকে খাদ্যনালীতে ফিরিয়ে দেয়। এছাড়াও, জরায়ুর আকার ধীরে ধীরে বাড়ার সাথে সাথে এটি পেটের উপর চাপ বাড়ায়, অ্যাসিডকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়। তখন বমি বমিভাব হতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খেলে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যার ফলস্বরূপ, বমি বমি ভাব এবং বমিও হতে পারে।
খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে আপনি গর্ভবতী হন বা না হন বমি হবে; তবে আপনি আপনার শিশুকে বহন করার সময় এটি আরও গুরুতর এবং ক্ষতিকারক হতে পারে। আপনার খাবারে সংক্রামক জীবগুলি হল মূলত স্টমাক বাগ, যা খাবারের বিষক্রিয়ার দিকে পরিচালিত করে, যার ফলে আপনি বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া অনুভব করবেন।
বমিভাব প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার কারণেও হতে পারে, যা একটি জটিল অবস্থা, যা শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, বমি বমিভাব এমন একটি লক্ষণ যা কেবল অবস্থার খুব পরবর্তী পর্যায়ে ঘটে যা সাধারণত নিজে নিজেই সনাক্ত করা যায়।
গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বমি করা বিরল বা অস্বাভাবিক লক্ষণ নয়। যাইহোক, এটির কারণ হতে পারে এমন কোনও গুরুতর সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে এই অবস্থার পিছনে কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করতে হবে। যদি সকালের অসুস্থতা, খাদ্যজনিত বিষ, অ্যাসিডিটি ইত্যাদির মতো কারণে বমি হয়, তবে শিশুর কোনও ক্ষতি হবে না এবং সহজলোভ্য ওষুধগুলি এই জাতীয় সমস্যাগুলির চিকিত্সা করতে পারে। তবে, নিরাপদে থাকা এবং আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক এমন কোনও লক্ষণ অনুভব করলে বা কোনও উপসর্গের মুখোমুখি হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল।
আগে থেকে নেওয়া কিছু ছোট সাবধানতা বমি বমি ভাব এবং বমির লক্ষণগুলি হ্রাস করতে পারে, যদি তা পুরোপুরি না দূর করে। সুতরাং, যদি আপনি গর্ভাবস্থার ৮ম মাসে বা তার আশেপাশে বমি বমি ভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন, তবে আপনি বমি বমি ভাব দূরে রাখতে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন:
জল আপনাকে সতেজ বোধ করতে সহায়তা করে এবং আপনার অন্ত্রের গতিতে সামঞ্জস্য রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বমি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তবে একসাথে প্রচুর তরল পান করা এড়িয়ে চলুন; বরং কয়েক ঘন্টা পর পর এক বোতল জলে চুমুক দিন। আপনি যদি সাধারণ জলের স্বাদ পছন্দ না করেন, তবে এর স্বাদ উন্নত করতে আপনি সর্বদা এটিতে লেবুর রস বা ফলের রস যোগ করতে পারেন। আপনি নিজের তরল গ্রহণের সঠিক পরিমাণটি বজায় রেখেছেন তা নিশ্চিত করতে আপনি আইস চিপস বা পরিষ্কার ফলের রসও বেছে নিতে পারেন।
একজন গর্ভবতী মহিলাকে প্রায়শই “দুইজনের জন্য খাওয়ার” পরামর্শ দেওয়া হয়, যেহেতু তিনি তার মধ্যে শিশু বহন করছেন, তবে এটি সত্যিি প্রয়োজনীয় নয়। আপনার প্লেটে প্রচুর পরিমাণে খাবার আপনার ক্ষুধা নষ্ট করতে পারে, বিশেষত যদি আপনি ঘন ঘন বমি বমি করছেন। সুতরাং, একবারে খুব বেশি খাবেন না; পরিবর্তে, সারা দিন জুড়ে অল্প অল্প করে খাবার ভাগ করে নিন। কম খাওয়া, তবে ঘন ঘন খাওয়া উচিত, কারণ এটি মসৃণ হজম ক্ষমতা নিশ্চিত করে। যদি উগ্র র্গন্ধযুক্ত খাবারগুলি বমি বমি ভাব শুরু করে, আপনি এমন খাবারগুলি বেছে নিতে পারেন যা ঘরের তাপমাত্রায় খাওয়া যেতে পারে (কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই)।
একটি সঠিক ডায়েট খাবারে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে বা পেটে কোন ধরণের সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে।
খাওয়ার পরেই সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় যাওয়ার চেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটা বা বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি নিশ্চিত করে যে হজমের প্রক্রিয়াটি শীঘ্র এবং আরও ভালভাবে সঞ্চালিত হয়।
আপনার গর্ভাবস্থা জুড়ে প্রচুর বিশ্রাম পান, এটি রাতে একটি ভাল ঘুমের মধ্য দিয়েই হোক বা সারাদিন যখন তখন হালকা ঘুমের মাধ্যমেই হোক (তবে খাওয়ার ঠিক পরেই নয়, আগেই বলা হয়েছে!)। এটি গর্ভবতী অবস্থায় আপনার প্রচুর সমস্যা দূর করবে, বমি বমি ভাবও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব খুব অস্বাভাবিক বা অসাধারণ কিছু নয়। তবুও, যদি আপনি উপরের ব্যবস্থাগুলি চেষ্টা করার পরেও গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে বমি বমি ভাব অনুভব করেন, তবে আপনাকে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।