যখন কোনও মহিলা জানতে পারেন যে তিনি গর্ভবতী,তার ডায়েট 180 ডিগ্রী পরিবর্তন হয়ে যায়।আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন,আপনারও অবশ্যই আপনার ডায়েট পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করা উচিত,তাই নয় কি?আপনার ডায়েটে কি কি প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি আনা উচিত সে সম্পর্কে আপনি অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করবেন।আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অবশ্যই আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি খাওয়ারই পরমর্শ দেবেন।তিনি আবার হয়ত আপনাকে ড্রাই ফ্রুট এবং বাদাম খাওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকতে পারেন।এই নিবন্ধটিতে আমরা আখরোটের বিষয়ে আলোচনা করব।বহু গর্ভবতী মহিলাই গর্ভাবস্থায় তাদের নিজেদের এবং তাদের সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য আখরোটের পুষ্টিকর উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন নন।সুতরাং আসুন,গর্ভাবস্থায় আখরোটের উপকারিতাগুলির দিকে একবার দেখে নেওয়া যাক।
ওয়াল নাট যা বাংলায় আখরোট নামে পরিচিত,অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ।আখরোট মধ্যস্থ শাঁসটি মানুষের মস্তিষ্কের অনুরূপ দেখতে হয়।আখরোট কেবল মস্তিষ্কের অনুরূপ দেখতেই হয় না এটি আবার মস্তিষ্কের যথাযথ কার্যকারিতাতেও সহায়তা করে থাকে।এটি ছাড়াও গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার অন্যান্য আরও অনেক সম্ভাব্য উপকারিতা আছে।
এটি বিশ্বাস করা হয় যে গর্ভাবস্থায় আখরোট বাদাম খাওয়া মায়েদের মধ্যে অ্যালার্জির সম্ভাবনা আছে এরকম শিশু জন্মদানের সম্ভাবনা কম হয়ে থাকে।এই সুস্বাদু এবং মুখরোচক আখরোট বাদামের মধ্যে আবার প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে,যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভীষণ মাত্রায় উপকারী।গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতাগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
এখন আপনি আখরোটের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতন,তাই আসুন গর্ভাবস্থায় এগুলি খেলে তা কীভাবে আপনাকে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে আরও জেনে নেওয়া যাকঃ
1.আখরোটগুলি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ যা আপনার অনাগত শিশুটির চোখ এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
2.আখরোটে রয়েছে উদ্ভিজ্জ স্টেরল যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আপনার দেহে ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বৃদ্ধি করে।
3.মাঝারি পরিমাণে আখরোট খাওয়া গর্ভাবস্থায় সন্তোষজনক লিপিড প্রোফাইল বজায় রাখতে সহায়তা করে।
4.আখরোট তেল সারা দেহের রক্তবাহের রেখায় উপস্থিত এন্ডোথেলিয়াল কোষগুলির কার্যকারিতা সংরক্ষণে উপকারী বলে জানা যায়।এই কোষগুলি রক্তবাহের নমনীয়তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে।সুতরাং নিয়মিত আখরোট সেবনের দ্বারা রক্তবাহের প্রদাহগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
5.আখরোট রক্তবাহকে শিথিল করার কারণে সেগুলি আবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
6.আখরোট প্রোটিন এবং ফাইবারের একটি ভাল উৎস,যার উভয়েই একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
7.আখরোট বাদামে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।আখরোট বাদামের উপরে আচ্ছাদিত পাতলা বাদামী আস্তরণটি সমেত বাদামগুলি খাওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।এর কারণ হল আখরোট বাদামে পাওয়া 90% অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলিই এর উপরে আচ্ছাদিত পাতলা আস্তরণের মধ্যেই ঘনিভূত থাকে।
8.আখরোট মধ্যস্থ এর কপার উপাদানটি ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে থাকে।
9.এগুলির মধ্যে আবার পলিফেনল এবং কপার রয়েছে যা ক্যান্সার এবং মুক্ত মূলক থেকে ক্ষতি হওয়া রোধ করতে পারে।
10.প্রসবের পরে মায়েদেরকে প্রসব পরবর্তী হয়ে থাকা ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপকে দূরে ঠেলে রাখার জন্য আখরোট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।আখরোটের আলফা–লিনোলেনিক অ্যাসিড উপাদানটি প্রসবোত্তর মানসিক চাপ এবং হতাশা,ম্যানিক–ডিপ্রেশনাল সাইকোসিস এবং এমনকি স্মৃতিভ্রংশের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভাল।সুতরাং,আপনি প্রসবের পরে আখরোট বাদাম খাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন।
11.আখরোটগুলি আবার মেলাটোনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে। মেলাটোনিন ঘুমকে প্ররোচিত করে,এবং আখরোট খাওয়া বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে,ভীষণ উপকারী হয়ে উঠতে পারে কারণ যেহেতু এই সময় ঘুম একটা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে।
12.আখরোটগুলি আপনার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সম্পূর্ণবোধ হওয়ার মত অনুভূতি ধরে রাখতে পারে এবং পুনরায় খাই–খাই ব্যাপারটি থেকে বিরত রাখতে পারে।যা আপনার একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।
13.আখরোট মধ্যস্থ ভিটামিন E কোষের ঝিল্লির গঠণ বজায় রাখতে এবং কোষগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।এছাড়াও এটি আবার শিশুর ফুসফুসের বিকাশে এবং অ্যাসথেমা ও অন্যান্য শ্বাস–প্রশ্বাসের সমস্যাগুলির ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে।
14.আখরোটে কপার বা তামা থাকে যা লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়।এটি আবার কলাগুলির মেরামতে এবং শর্করার ভাঙনেও সহায়তা করে থাকে।
15.শিশুর হাড় এবং তরুনাস্থির বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন পুষ্টিকর উপাদান হল ম্যাঙ্গানিজ।সারাদিনের প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণের প্রায় অর্ধেকটাই সরবরাহ করা যেতে পারে একবার আখরোট পরিবেশন করার মাধ্যমে।
আপনি যাতে আখরোট খেতে পারেন তার অনেকগুলি উপায় আছে।সেগুলি পৃথকভাবে শুধু শুধুই খাওয়া যেতে পারে,আবার সূক্ষ্ম আকারে কুঁচিকুঁচি করে কেটে নিয়েও খেতে পারেন।এছাড়াও এগুলিকে আবার বিভিন্ন খাদ্যপদে যেমন বেক করা খাদ্যদ্রব্যগুলিতে, মাছ,মাংস,সবজি এবং ফ্রুট স্যালাডের সাথে যোগ করেও খাওয়া যেতে পারে।গর্ভাবস্থায় ওষুধ সেবন সবসময় গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারার কারণে মহিলারা আবার আখরোটগুলিকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার ক্ষেত্রে একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে সেবন করে থাকেন।আপনি আপনার ডায়েটে নিম্নলিখিত উপায়গুলিতে আখরোট সংযুক্ত করতে পারেনঃ
যদিও গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়া যেতে পারে কিন্তু তাই বলে অতিরিক্ত মাত্রায় সেগুলি খাওয়া আপনার উচিত নয়।যে কোনও কিছুরই আধিক্য ক্ষতিকারক হয়ে থাকে এবং আখরোটের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।আপনি গর্ভাবস্থায় আখরোট খেতে পারেন যতক্ষণ সেগুলি সংযমের সাথে খাবেন ততক্ষণই।গর্ভাবস্থাকালে দিনে 30 গ্রামের বেশি আখরোট খাওয়ার সুপারিশ করে হয় না।এর কারণ হল অত্যধিক পরিমাণে আখরোট খেলে তা মা এবং তার পাশাপাশি তাঁর অনাগত শিশুটির ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এখানে কিছু সম্ভাব্য সমস্যাগুলির উল্লেখ করা হল যেগুলি হয়ত বেড়ে উঠতে পারে যদি আপনি গর্ভাবস্থায় অত্যধিক আখরোট খেয়ে থাকেন–
আপনার যদি বাদামজনিত অ্যালার্জি,বিশেষ করে আখরোট বাদামে অ্যালার্জি থেকে থাকে তবে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এবং এমনকি প্রসবের পরেও আখরোট খাওয়া থেকে আপনার বিরত থাকা উচিত।কিন্তু আপনার যদি আখরোটে অ্যালার্জি না থাকে তবে আপনি সেগুলিকে পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন।অনেক মহিলা বিশ্বাস করেন যে,গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়া নিরাপদ নয় এবং সেটির কারণে শিশুদের মধ্যে বাদামজনিত অ্যালার্জির প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যেতে পারে।তবে এটি শুধুমাত্রই একটি ভ্রান্ত ধারণা।গর্ভাবস্থায় বাদাম সেবন করলে তা কখনই শিশুর মধ্যে বাদামজনিত অ্যালার্জির ঝুঁকির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে না।গর্ভাবস্থায় বাদাম বর্জন করে চলা মহিলাদের জন্ম দেওয়া শিশুদের মধ্যেও অনেক সময় বাদামজনিত অ্যালার্জি বিকাশ পেতে পারে।সুতরাং,আপনার বাচ্চার মধ্যে বাদামজনিত অ্যালার্জি বিকাশ পাবে কি পাবে না তা আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটের উপর নির্ভর করবে না।
এখন আপনি আখরোটের প্রচুর স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি সম্পর্কে সচেতন,তাই সেগুলি খেতে আর ইতস্তত করবেন না।আখরোটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে কোনওরকম চিন্তা ব্যতীতই আপনি প্রতিদিন 2-3 টি আখরোট খেতে পারেন।যতদিন আপনি সেগুলিকে পরিমিত পরিমাণে খাবেন আপনার কোনওরকম সমস্যা হবে না।তবে আখরোট কেনার সময়,সেগুলি যাতে তার বহিরাবণ যুক্ত সম্পূর্ণ গোটা এবং পাতলা খোলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে সেই ব্যাপারটি মাথায় রাখা নিশ্চিত করে নিন।আখরোটের অন্তরস্থ শাঁসালো বাদামটি কোনও রকম গাঢ় দাগযুক্ত হলে এবং বিস্বাদ হয়ে থাকলে সেগুলি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখুন!