গর্ভাবস্থায় আপনার সেবন করা যেকোনও খাবার শুধুমাত্র আপনার স্বাস্থ্যের উপরেই নয় তার সাথে আপনার গর্ভস্থ ছোট্টটির স্বাস্থ্যের উপরেও প্রভাব ফেলে।আলু হল কোনও গর্ভবতী মহিলার জন্য ডায়াটরি ফাইবার বা খাদ্যগত তন্তু, বিভিন্ন ভিটামিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের এক সমৃদ্ধ উৎস।অতি মাত্রায় গ্রহণের ফলে দেখা দিতে পারে এমন কোনও সম্ভাব্য খারাপ প্রভাব এড়ানোর জন্য সংযমের সাথে আপনার এটি গ্রহণ করা উচিত।
আলু এমন কিছু পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ যা গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজন, সুতরাং গর্ভাবস্থায় আপনি যদি আলু খাওয়ার জন্য আকুল হয়ে ওঠেন, সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিন্তে তা কিছুটা খেতে পারেন।তবে সেটি খাওয়ার আগে একবার আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে নেওয়াই সবচেয়ে ভাল।আলুর কিছু উপকারিতার কথা এখানে উল্লেখ করা হলঃ
হজম এবং অ্যাসিডিটি বা অম্লতাজনিত সমস্যা আছে যাদের, তাদের জন্য আলু ভীষণভাবে উপকারী।সেদ্ধ আলু পরিবেশন গ্যাসট্রিক অ্যাসিডিটি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।এছাড়াও এটি খাওয়া যেমন সহজ, তেমনি হজম করাও সহজ।
আলু মধ্যস্থ ভিটামিনগুলি ক্ষত নিরাময়ে এবং অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।এছাড়াও এগুলি অন্যান্য খাদ্য থেকে আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
ভ্রূণের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য ফোলিক অ্যাসিড ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য।গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়েই ফোলেট সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি গ্রহণ করলে তা গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
আলু প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটে পূর্ণ এবং সেটি শক্তির একটা বেশ ভাল উৎস হিসেবে কাজ করে।তবে আলু এবং অন্যান্য স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারগুলি থেকে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া রোধ করতে ব্যায়াম করা এবং সক্রিয় থাকাটা জরুরী।
চোখের তলা ফুলে ওঠা, যা গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা সাধারণ একটা ব্যাপার– তা চিকিৎসায় আলু সাহায্য করতে পারে।আপনার চোখের উপর 10-15 মিনিটের জন্য কিছুটা আলু থেঁতো রাখলে তার শীতল প্রভাবটি পাওয়া যায় যা চোখের ফুলোভাবটি থেকে মুক্তি দেয়।
আলুর খোসায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ হ্রাস করে এবং হার্ট স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ কমানোর জন্য পরিচিত।
গর্ভাবস্থায় আপনার খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে যত্ন নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর আহারগুলি গ্রহণ করার ব্যাপারটি আপনার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।যদিও আলু বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কিছু ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।আর সেই সকল ঝুঁকিগুলির কিছু নিম্নে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
গর্ভাবস্থায় আলুর চিপস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না, যেহেতু এটা প্রচুর তেলে ভাজা হয়, যা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর।এটি আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে অথবা আপনার মধ্যে কিছু অস্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।সুতরাং গর্ভাবস্থায় বেশি তেলে ভাজা, মাখন কিম্বা চীজ দিয়ে আলু বেক করার মত রান্না পদ্ধতিগুলি আপনার এড়িয়ে চলাই উচিত।আলুকে তেলের মধ্যে কড়া করে ভাজা কিম্বা বেক করার পরিবর্তে বরং সেগুলিকে সেদ্ধ করুন বা ভাপিয়ে নিন এবং তার স্বাদকে বাড়িয়ে তোলার জন্য এর মধ্যে কিছু ভেষজ মশলা যোগ করুন।
আলুর মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে স্টার্চ বা শ্বেতসার থাকে, যা খুব দ্রুত দেহের মধ্যে শোষিত হয়ে যায়।এটি গ্লুকোজের বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।অতএব, অত্যধিক আলু গ্রহণের ফলে সম্ভবত গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
আলু কেনার সময় সকলেরই সে ব্যাপারে একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।আলু কেনার ক্ষেত্রে সেগুলির খারাপ প্রভাবগুলি এড়ানোর জন্য এমন কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলি আপনার বিবেচনা করা প্রয়োজন।আপনি যে আলুগুলি বেছে নেবেন সেগুলি হওয়া উচিতঃ
ভালভাবে রান্না করে সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে যখন আলু সেবন করা হয় তখন তা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভীষণভাবে উপকারী হয়ে ওঠে।আলু রান্না করার কয়েকটি স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি হলঃ
উপরিল্লিখিত তালিকার ধারণাগুলি থেকে এখানে কয়েকটি রেসিপি দেওয়া হল, যেগুলি আপনি আলু দিয়ে তৈরী করার চেষ্টা করতে পারেনঃ
এখানে এমন একটি স্বাস্থ্যকর ক্ষুধা–বর্ধক খাদ্যের রেসিপি দেওয়া হল যা আপনার গর্ভাবস্থাকালীন খাদ্য–বাসনাকে চরিতার্থ করতে পারে।
উপকরণ
প্রণালী
এই সুস্বাদু রেসিপিটি প্রস্তুত করা খুবই সহজ এবং সকলেই এটির স্বাদ আনন্দের সাথে উপভোগ করতে পারে।
উপকরণ
প্রণালী
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আলু বহুবিধ স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদানে পরিপূর্ণ এবং সেটিকে গর্ভাবস্থার ডায়েট থেকে কখনই বাদ দেওয়া উচিত নয়।ভ্রূণের সার্বিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্যও আলু স্বাস্থ্যকর, কিন্তু তা অবশ্যই সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে গ্রহণ করে উচিত।তাছাড়াও এই সময় ভাজা আলুগুলি পরিহার করা এবং অতিরিক্ত মাত্রায় সেটি সেবন করা এড়িয়ে চলাই সর্বোত্তম, কারণ এটি স্থূলতা, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এবং গর্ভাবস্থার অন্যান্য জটিলতার মত সমস্যাগুলির কারণ হয়ে উঠতে পারে।তাই ঠিক কতটা পরিমাণ এবং কীভাবে গ্রহণ করাটা আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে সে ব্যাপারে একজন ডায়াটেশিয়ানের মতামত নিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।