গর্ভাবস্থা তার সাথে করে প্রচুর উত্তেজনাময় মুহূর্তের পাশাপাশি যত্ন নেওয়ার মত শারীরিক সমস্যার একটি বিস্তৃত তালিকাও নিয়ে আসতে পারে।গর্ভাবস্থায় আপনার দেহের মধ্যে একটি নতুন জীবনের সঞ্চার,বৃদ্ধি,বিকাশের সহিত সমন্বয় সাধনের জন্য নানাবিধ হরমোনের পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনগুলিও হয়ে চলে।শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে রক্তচাপও পরিবর্তিত হয়ে থাকে।যাইহোক,ভ্রূণের সুস্বাস্থ্যের জন্য,সমগ্র গর্ভাবস্থাকাল জুড়ে গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবে কিছু ক্ষেত্রে,রক্ত প্রবাহের মাত্রা বিঘ্নিত হতে পারে কিছু নির্দিষ্ট কারণে,যেমন মানসিক চাপ,বয়স অথবা কঠোর ক্রিয়াকলাপ।এগুলি আপনার রক্তচাপের মাত্রা উন্নীত করতে পারে যার পরিণামে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থার শুরুতে,যেকোনও মহিলার দেহে বিভিন্ন হরমোন এবং শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলি সংঘটিত হয়ে থাকে।গর্ভাবস্থায় প্রভাবিত হতে পারে এরকম একটি বিষয় হল রক্তচাপ।গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের ভিত্তিতে আপনি হয়ত আপনার স্বাভাবিক রক্তচাপে কখনও উত্থান অথবা পতন লক্ষ্য করতে পারেন।এই পরিবর্তনটি সাধারণত পূর্ব গর্ভাবস্থাকালীন স্তরে পুনরায় ফিরে আসে আপনার শিশুর জন্মদানের পরবর্তীতে।
গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ পরিবর্তনের মাত্রাটি নির্ভর করে গর্ভবতী মহিলার দেহে উপস্থিত রক্তের পরিমাণের উপর।এই পর্যায়ে গর্ভবতী মহিলাদের দেহে রক্তের পরিমাণ প্রায় 45% মত বেড়ে যায়,যা পরিবর্তিত হয়ে হৃদযন্ত্রের উপর একটি অতিরিক্ত বোঝা চাপায়,কারণ এই বর্ধিত পরিমাণ রক্ত হৃদপিন্ডকে অতিরিক্তভাবে পাম্প করে সারা দেহে ছড়িয়ে দিতে হয়।হৃদপিন্ডের কার্যকারিতাকে সমর্থন করতে,হৃদযন্ত্রের বাম নিলয়,যা মূখ্য পাম্প করার কাজটি করে,সেটি সাময়িকভাবে আকারে বড় এবং পুরু হয়ে ওঠে।সুতরাং সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থাতেই আপনার রক্তচাপের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।উচ্চ রক্তচাপ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে এবং তার জন্য আপনার প্রয়োজন অবিলম্বে চিকিৎসা,যত্ন এবং নিয়মিত নজরদারি।
আপনার ধমনীর প্রাচীর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় গর্ভাবস্থার উচ্চ রক্তচাপকে রক্ত দ্বারা প্রয়োগ করা শক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।প্রতিটি হৃদস্পন্দনই ধমনীগুলিতে হৃদপিণ্ডটির রক্ত পাম্প করার প্রক্রিয়াটিকে নির্দেশ করে,যা শরীরের আরও বাকী অংশেও পৌঁছায়।সাধারণত ধমনীর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট হারে রক্ত প্রবাহিত হয়।তবে গর্ভাবস্থায় আপনার দেহের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে যখন এই স্বাভাবিক হারটি বিঘ্নিত হয়,তখন তা রক্তচাপের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বা কমে যাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে।যখন স্বাভাবিকের তুলনায় উচ্চ মাত্রায় ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়,তখন তা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে ওঠে।
গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।এটি লক্ষ্য করা গেছে যে প্রায় 8% মহিলাই তাদের গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ অনুভব করে থাকেন।
গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করার এবং কোনও রকম অস্বাভিকতা ধরা পড়লে তা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করার দৃঢ় সুপারিশ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে করা হয়।এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপজনিত ব্যাধিগুলির চারটি প্রকারভেদ রয়েছেঃ
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের সপ্তাহগুলিতে রক্তচাপ সাধারণত কমে যায়।সুতরাং গর্ভাবস্থার প্রথম 20 সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনও গর্ভবতী মহিলার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে,তবে সেটি প্রাক–বিদ্যমান হাইপারটেনশন হিসেবে বিবেচিত হয়।এটি দীর্ঘস্থায়ী হাইপারটেনশনের একটি ব্যাপার এবং ডাক্তারবাবু মাকে অবিলম্বে রক্তচাপের ওষুধের মধ্যে রাখেন।
গর্ভাবস্থাকালীন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থার প্রায় 20 তম সপ্তাহের মধ্যেই বিকাশ পেতে পারে।এটি যে প্রসবের পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান হয়ে যায় সেটি আপনি লক্ষ্য করতে পারেন।এই উচ্চ রক্তচাপের সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাটি হল এটি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রসবের দিকে পরিচালিত করতে এবং শ্রমকে প্রণোদিত করতে পারে।
অতিরিক্ত আরোপিত প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হল এমন এক ধরণের প্রিক্ল্যাম্পসিয়া যেটি বিকাশ পায় যখন কোনও গর্ভবতী মহিলার মধ্যে ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকে।মারাত্মক দীর্ঘস্থায়ী হাইপারটেনশন বা প্রাক–বিদ্যমান রেনাল এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি থাকে।দীর্ঘস্থায়ী হাইপারটেনশনে আক্রান্ত প্রায় 25% মহিলার মধ্যেই এই সুপারইম্পোজড বা অতিরিক্ত আরোপিত প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বিকাশ করে।যখন কারুর মধ্যে অস্বাভাবিক মাত্রায় লিভারের উৎসেচকগুলি বা প্রোটিনিউরিয়ার হঠাৎ (প্রস্রাবে প্রোটিনের স্তর) বৃদ্ধি অথবা রক্তচাপের সন্ধান পাওয়া যায় তখন রোগ নির্ণয়টি পরিষ্কার হয়।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিনিউরিয়া (প্রস্রাবে প্রোটিনের স্তর) উপস্থিতির সাথে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের উপস্থিতি হিসাবে প্রিক্ল্যাম্পসিয়াকে আখ্যায়িত করা যেতে পারে,যা সাধারণত গর্ভধারণের 20 সপ্তাহ পরে বিকাশ লাভ করে।গর্ভাবস্থাকালীন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতির দ্বারা হয় না–এই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রিক্ল্যাম্পসিয়াকে গর্ভাবস্থাকালীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে পৃথক করা যেতে পারে।এটি প্রায়শই লিভার, কিডনি বা মস্তিষ্কের মত অন্যান্য অঙ্গগুলির ক্ষতির সাথে যুক্ত।অবিলম্বে এটির চিকিৎসাজনিত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন কারণ এটিকে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে তা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
মহিলাদের প্রথম গর্ভাবস্থায় গর্ভাবস্থা–প্ররোচিত হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ অনুভব করাটা সবচেয়ে সাধারণ একটি ব্যাপার,সেই সাথে আবার যেসকল মহিলাদের ভাই–বোন বা মা–বাবাদের মধ্যে এই একই শর্তটি বিদ্যমান ছিল বা আছে তাদেরও এটির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।যদিও গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সঠিক কারণটি ঠিক জানা যায় নি,তবে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কিছু সম্ভাব্য কারণ আছে,যেগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
রক্তচাপের পাঠগুলি নেওয়া ছাড়াও, নীচে বর্ণিত লক্ষণগুলিও একটি উচ্চ রক্তচাপকে নির্দেশ করতে পারঃ
দুটি মানে সাধারণত রক্তচাপের মাত্রাটি নির্ধারিত হয়–সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক। সিস্টোলিক মানটি হল উপরের সংখ্যাটি,যেটি হৃদপিণ্ড যখন কার্যকর ভাবে ধমনীর মধ্যে রক্ত পাম্প করে তার চাপ নির্ধারণ করে।আর ডায়াস্টোলিক মানটি হল নিচের সংখ্যাটি যেটি হৃদস্পন্দনের মাঝে হৃদযন্ত্রটি স্থির অবস্থায় থাকার সময় ধমনীর মধ্যস্থ চাপকে নির্দেশ করে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন(AHA) অনুযায়ী,120/80 mmHg একটি স্বাভাবিক রক্তচাপের পাঠের ইঙ্গিত দেয়।রক্তচাপ পরিমাপের ক্ষেত্রে 140/90 mmHg এর বেশি পাঠ দিলে তা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হিসেবে বিবেচিত হয়।গর্ভাবস্থায় আপনার ডাক্তারের কাছে প্রতিটি সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রেই আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে,আপনার ডাক্তারেওবাবু হয়ত আপনাকে দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপের একাধিকবার বিভিন্ন পাঠ নেওয়ার পরামর্শ দেবেন,আপনার রক্তচাপের মাত্রাটি উত্থান–পতনগুলি একটি পরীক্ষার মধ্যে রাখার জন্য।
যখন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের প্রসঙ্গ আসে,সেক্ষেত্রে একথা মনে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ যে,প্রতিরোধ নিরাময়ের চেয়ে সর্বদা ভাল পন্থা।এর কারণ হল হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ অসংখ্য ঝুঁকির দাবী রাখে।
গর্ভাবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ বিকাশের মত ঝুঁকির কারণগুলি
গর্ভাবস্থায় হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলির মধ্যে অন্তর্ভূক্তঃ
140/90 – 149/99 mmHg এর পরিসরের মধ্যে হালকা রক্তচাপের সহিত থাকা মহিলাদের সাধারণত একটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা বজায় থাকে।তবে তাদের নিয়মিতভাবেই রক্তচাপের মাত্রা নিরীক্ষণ করা প্রয়োজন।উচ্চ রক্তচাপ যত তীব্র হয় জটিলতা বিকাশের ঝুঁকিও ততই বাড়তে থাকে।রক্তচাপের মাত্রা উচ্চ হওয়ার বেশ কিছু পরিণতি হল নিম্নরূপঃ
এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে অমরা জরায়ু থেকে অকালে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।এর ফলে মারাত্মক রক্তপাত হতে পারে,যা মা এবং সন্তান উভয়ের ক্ষেত্রেই জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
এটি প্রায়শই মাঝেমধ্যে দেখা যায় যে,তীব্র হাইপারটেনশনের পরিণামে অমরায় রক্ত প্রবাহের পরিমাণ কমে যেতে।এর ফলস্বরূপ,গর্ভস্থ শিশুটি কম মাত্রায় অক্সিজেন এবং পুষ্টি পেয়ে থাকে।এটি ভ্রূণের বৃদ্ধিকে(ইন্ট্রাউটেরাইন বা আন্তঃদেশীয় বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা) ধীরসম্পন্ন বা সীমিত করে তুলতে পারে।এর ফলে আবার এমনকি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অপরিণত অথবা কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে,যেখানে গর্ভস্থ শিশুটি হয়ত গর্ভাবস্থার 37 সপ্তাহের আগেই জন্মগ্রহণ করতে পারে।এটি আবার কিছু মারাত্মক ক্ষেত্রে মৃত সন্তানের জন্মের মত অন্যান্য জটিলতারও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপকে যদি চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয়,তবে সেটি মস্তিষ্ক,ফুসফুস,বৃক্ক,লিভার এবং হৃদপিণ্ডের মত অঙ্গাণুগুলির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়া ভবিষ্যতে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য মূলত রক্তচাপের সেই সকল ওষুধগুলিই দেওয়া হয়ে থাকে যেগুলি গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানে রয়েছে বলে বিবেচিত। এছাড়াও আপনি আবার আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলি প্রয়োগের বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারেনঃ
উচ্চ পরিমাণে সোডিয়াম বা লবণ গ্রহণও আবার আপনার রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।এক্ষেত্রে,প্রতিদিন আপনার লবণ গ্রহণের পরিমাণ 1 চা–চামচের মধ্যেই সীমিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রাথমিকভাবে একজন ডাক্তারবাবুকে দেখানোর জন্য আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তুলুন।আগে থেকে আপনার রক্তচাপের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন হলে,তা আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করতে পথ দেখাবে এবং একটি সুরক্ষিত এবং নিরাপদ উপায়ে গর্ভাবস্থার পথে যাত্রা করতে সহায়তা করবে।
আপনার রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ হেতু আপনি যে কোনওরকম ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি সেবন করবেন না সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।কোন ওষুধগুলি আপনার জন্য নিরাপদ সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আপনি আপনার ওষুধগুলিকে আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।উচ্চ রক্তচাপের জন্য আপনি যদি ইতিমধ্যেই ওষুধের কোর্সের মধ্যে থাকেন,সেগুলি আপনার গর্ভাবস্থায় চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।এই সময়ে আপনার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত এই একই সমস্যার জন্য একটি নিরাপদ ওষুধের কোর্স সেট করা নির্ধারণ করতে পারেন।
যে মুহূর্তে আপনি একজন মা হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন,একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন এবং একটি অনুশীলন প্রণালী শুরু করুন।চলাফেরা ও নড়াচড়া করুন কারণ একভাবে উপবিষ্ট থাকলে তা গর্ভাবস্থায় আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।যখন আপনার একটি স্বাস্থ্যকর বডি মাস ইন্ডেক্স থাকবে তখনই আপনার গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয়।
আপনার এবং তার সাথে আপনার অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ধূমপান এবং অ্যালকোহল হিতকারী নয়।এছাড়াও এগুলি আপনার রক্তচাপের উপর কোনও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
প্রসব পূর্ববর্তী চেক–আপগুলি করানোর ক্ষেত্রে আপনার নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করা উচিত যাতে আপনার রক্তচাপের কোনওরকম আকস্মিক বৃদ্ধি সম্পর্কে আপনি ভালভাবে সচেতন হতে পারেন।
গর্ভবতী হওয়ার পূর্বে কিম্বা যখন আপনি কোনও সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করেন, একটি ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা খুবই প্রয়োজন।এই সময় নিয়ম করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানগুলি গ্রহণের পাশাপাশি আপনার ওজনটিও পরীক্ষা করা উচিত।উচ্চ রক্তচাপের বিকাশ স্ট্রোক অথবা কিডনির ব্যাধির মত আরও অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা বিকাশের ঝুঁকি প্ররোচিত করতে পারে।তাই এক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করার বিষয়টিকে আপনি সুনিশ্চিত করুনঃ
গর্ভাবস্থায় সেবন করা যেকোনও ওষুধই মা এবং গর্ভস্থ ভ্রূণ উভয়ের উপরেই প্রভাব ফেলে।এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট ওষুধ আছে যেগুলি অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।ওভার দ্য কাউন্টার যেকোনও ওষুধের ব্যবহার হয়ত গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে।আপনার হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে অবগত হওয়া মাত্র যত শীঘ্র সম্ভব আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।
বাড়িতেই মাঝে মধ্যে আপনার রক্তচাপটি নিরীক্ষণ করা উচিত আর আপনি যদি বারংবার রক্তচাপের কোনও বর্ধিত মাত্রা লক্ষ্য করে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবুকে কল করা উচিত।আপন যদি প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার নিম্নলিখিত কোনও লক্ষণের মুখমুখি হয়ে থাকেন,অবিলম্বে আপনার চিকিৎসাজনিত পরিচর্যা গ্রহণ করা প্রয়োজনঃ
আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং তার সাথে উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকে,সেক্ষেত্রে মনের ভিতরে এ ব্যাপারে একাধিক প্রশ্ন জেগে ওঠাটাই স্বাভাবিক।এখানে সেরকমই কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং সেগুলির উত্তর দেওয়া হলঃ
হ্যাঁ,আপনি আপনার সন্তানকে স্তন পান করাতে পারেন,এমনকি যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে তা সত্ত্বেও।যদিও রক্তচাপের জন্য সেবন করা ওষুধগুলি মায়ের দুধে স্থানান্তরিত হতে পারে,এক্ষেত্রে এমন বিশেষ কয়েকটি ডাইইউরেটিক ওষুধ আছে যেগুলি স্তন পান করানোর সময় নিরাপদ বলে বিবেচিত।এ ব্যাপারের জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।
ন্যাশনাল হাই ব্লাড প্রেসার এডুকেশন প্রোগ্রাম (NHBPEP) অনুসারে,প্রিক্ল্যাম্পসিয়া সাধারণত মহিলাদের মধ্যে কোনওরকম হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত সমস্যা অথবা দির্ঘস্থায়ী হাইপারটেনশনকে বাড়িয়ে তোলে না।তবে এমন কিছু ক্ষেত্রও আছে যেখানে জীবনের পরবর্তীতে স্ট্রোক,উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য হৃদ রোগের ঝুঁকিকে দ্বিগুণ করে তোলার জন্য প্রিক্ল্যাম্পসিয়া পরিচিত।অতএব আপনার এবং আপনার সন্তানের সুরক্ষার স্বার্থে সময় মত গর্ভাবস্থাকালীন যত্ন নেওয়ার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হয়।
পরিশেষে সিদ্ধান্ত
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।তাই এটি সুপারিশ করা হয় যে,আপনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন এমনকি যখন আপনি গর্ভধারণের পরিকল্পনা করে থাকেন তখনও।নিয়মিত আপনার BP নিরীক্ষণ করুন এবং উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলির দিকে একটু খেয়াল রাখুন।আপনার এবং সন্তানের সুস্বাস্থ্যের পথে উচ্চ রক্তচাপ আসে কিনা তা নিশ্চিত করতে আপনার ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে তাঁর সাথে সলা পরামর্শ করুন।