রক্তবর্ণ চক্ষু ‘কনজাঙ্কটিভাইটিস’ নামে পরিচিত এবং একটি সংক্রামক ব্যাধি,যা গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে।চোখের মধ্যে লালচে ভাব এবং অস্বস্তি হওয়ার পাশাপাশি রক্তবর্ণ চক্ষু আবার যৌন সংক্রমণ অথবা শারীরিক সংস্পর্শের কারণেও হয়ে থাকতে পারে।গর্ভাবস্থায় ‘রক্তবর্ণ চক্ষু’ অথবা ‘কনজাঙ্কটিভাইটিস’ সম্পর্কে আপনার যা কিছু জানা প্রয়োজন এখানে তার সব কিছু দেওয়া হল।
কনজাঙ্কটিভাইটিস হল এমন একটি অবস্থা যা আপনার চোখের বহির্ভাগের সাদা অংশ সহ চোখের পাতার অভ্যন্তরে নিচের অংশকে প্রভাবিত করে।গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এটি অত্যন্ত সাধারণ একটি সংক্রমণ হওয়ার কারণে এবং দীর্ঘ সময় ব্যাপী দৃষ্টি ব্যহত হওয়া অথবা চোখে ক্ষতি হওয়ার মত কোনও কারণ না থাকার জন্য কনজাঙ্কটিভাইটিসে সাধারণত কোনও উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ার কারণ নেই। কনজাঙ্কটিভাইটিসকে আবার ‘রক্তবর্ণ চক্ষু’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয় এবং মোটামুটি এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।
যদি আপনার চোখ হলুদ পিচুটির সাথে লালচে দেখায় এবং তার সাথে ফুলে থাকে,তবে এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত কনজাঙ্কটিভাইটিসের উদাহরণ।
ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়ে থাকে চোখে ভাইরাসসমূহের সংক্রমণের কারণে।এটি উভয় চোখকেই প্রভাবিত করতে পারে এবং তার সাথে যুক্ত হয় লালচে ভাব এবং চুলকানি।এই ক্ষেত্রে চোখ থেকে কিছুটা পিচুটি নির্গত হতে পারে।
ঋতুজনিত অ্যালার্জি হওয়া হল একটি সাধারণ ঘটনা এবং গর্ভাবস্থায় কনজাঙ্কটিভাইটিস হওয়ার জন্য এটি দায়ী হয়ে উঠতে পারে।এটি সাধারণত বসন্ত কালে হয়ে থাকে এবং আপনি লক্ষ্য করবেন যে আপনার চোখগুলি লাল হয়ে ওঠে,চুলকায় এবং বিনা কারণেই জল পড়তে থাকে।
যদি বালি,ময়লা,ধূলো অথবা যেকোনও বহিরাগত ধূলিকণা আপনার চোখের পাতার ভিতরে প্রবেশ করে,তবে এই কারণে আপনার চোখ চিঁড়ে যেতে,যন্ত্রণা হতে,জল পড়তে এবং লালচে হয়ে যেতে দেখতে পারেন।
আপনার নিজের চোখ খুব বেশী রগড়াণর ফলে সেটি চিঁড়ে যেতে পারে এবং লাল হয়ে ওঠে।সাধারণত একটা চোখেই প্রভাব পড়ে এবং প্রকৃতই যন্ত্রণা দায়ক হয়ে ওঠে।
যৌনবাহিত সংক্রমণগুলি(STI) ব্যক্তিদের মধ্যে কনজাঙ্কটিভাইটিস সংক্রমণটিকে প্রেরণ করে।
কারুর ঘনিষ্ঠ হলে অথবা এমনকি কনজাঙ্কটিভাইটিসে সংক্রামিত ব্যক্তিকে স্পর্শ করার ফলেও সংক্রমণটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
এটি মহিলাদের মধ্যে হয়ে থাকা কনজাঙ্কটিভাইটিসের একটি বিরল কারণ,যা অন্তঃকোষীয় অঙ্গাণু ক্ল্যামাইডিয়াল ট্র্যাকোম্যাটির সাথে সম্পর্কিত।চোখের লালচে ভাব অন্যান্য কারণের থেকে গভীর হয় এবং নিম্ন টার্সেল কনজাঙ্কটিভিটার উপর ফলিক্যলগুলিকে উত্থিত হতে দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় রক্তবর্ণ চক্ষুর সাধারণ উপসর্গগুলি হলঃ
গর্ভাবস্থায় কনজাঙ্কটিভাইটিসের চিকিৎসা বিকল্পগুলি হল-
আপনার ডাক্তারবাবু কনজাঙ্কটিভাইটিসের ধরণ নির্ধারণ করতে এবং উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকগুলি নির্বাচন করার জন্য আপনার চোখ পরীক্ষা করবেন। প্রেসক্রিপশনে লেখা হয় এমন অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ডাক্তারবাবুর দ্বারা সুপারিশ করা উচিত যেহেতু এমন কিছু ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলি ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে,সেই কারণে আপনি অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুকে জানান যে আপনি গর্ভবতী।যদি আপনি গর্ভধারণের জন্য চেষ্টা চালান তবে সেক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
এগুলি সাধারণত ব্যাকটেরিয়াজনিত কনজাঙ্কটিভাইটিসের চিকিৎসাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।ক্ল্যামাইডিয়া কনজাঙ্কটিভাইটিসের বিরুদ্ধে খুব বেশী কার্যকর নয়।তবে আইড্রপগুলিকে সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতেই ব্যবহার করা উচিত।
অকুলার বা দৃষ্টি সংক্রান্ত ওষুধগুলিকে গর্ভাবস্থায় কনজাঙ্কটিভাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এ সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য,আপনার ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করে নিন কারণ অকুলার বা দৃষ্টি সংক্রান্ত চিকিৎসাগুলি করা হয়ে থাকে পরিস্থিতির ভিত্তির উপর নির্ভর করে।
গর্ভাবস্থায় রক্তবর্ণ চক্ষুর প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলি হল-
উষ্ণ কমপ্রেস চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার উপসর্গগুলি দূর করে এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়।এটি প্রদাহ হ্রাস করে এবং গর্ভাবস্থায় রক্তবর্ণ চক্ষুর চিকিৎসায় উচ্চ মাত্রায় কার্যকর।
আপনার চোখ পরিষ্কার করতে এবং যেকোনও ধূলিকণা অথবা চোখের পক্ষে উত্তেজক পদার্থকে অপসারিত করতে আপনি গোলাপ জলকে একটি প্রতিষেধক আইড্রপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
ফুটন্ত জলের মধ্যে বেশ কিছু ম্যাচা গ্রিন টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখুন,এরপর সেগুলিকে ঠাণ্ডা হতে দিন এবং সংক্রমিত চোখের উপর প্রয়োগ করুন।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের দ্বারা সর্বদা আপনার হাতগুলিকে পরিষ্কার রাখুন।এই সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব এবং বিস্তারকে প্রতিরোধ করতে প্রতিদিন নিজেকে শারীরিকভাবে পরিষ্কার রাখার বিষয়টিকে নিশ্চিত করুন।
হাফ চিমটে গোলমরিচ গুঁড়ো নিয়ে সেটিকে কিছুটা মধুর সাথে ভাল ভাবে মিশ্রিত করুন এবং সেটিকে আপনার চোখে প্রয়োগ করুন।আপনি একটা পার্থক্য বোধ করবেন।
গর্ভবতী মহিলাদের ব্যবহারযোগ্য একটি হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার হল ইউফ্র্যাসিয়া 30. এটি বড়ি রূপে পাওয়া যায় এবং বেশ কার্যকর হয় যখন এটির 5 টি করে বড়ি দিনে দুই বার করে 10 দিন সময় ব্যাপী খাওয়া হয়।
বুকের দুধে একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকে যেটি রক্তবর্ণ চক্ষুর ব্যাকটেরিয়াকে আপনার চক্ষু শ্লেষ্মার উপরিতলে প্রসারিত হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করে।এটি বিশেষ করে কনজাঙ্কটিভাইটিসের বিরুদ্ধে কার্যকর।
সিলভার বা রূপার দ্রবণ অথবা কলয়ডীয়াল সিলভার গর্ভাবস্থায় চোখের সংক্রমণগুলির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।এর অয়েনমেন্ট বা মলম সংস্করণটি বেশীরভাগ মা এবং চিকিৎসকরা পছন্দ করে থাকেন।
আইব্রাইট টি-এর মত ভেষজ চা-টি কনজাঙ্কটিভাইটিস নিরাময়ে বিশেষভাবে কার্যকর।যারা এই চা পান করতে পছন্দ করেন না তাদের জন্য আইব্রাইট ক্যাপসুলগুলি সহজলভ্য।
আপনার চোখগুলিকে সামান্য লবণ জলের দ্রবণ দ্বারা ধুয়ে নেওয়া হল কনজাঙ্কটিভাইটিসের জন্য অন্য আরেকটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার।
শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে কিন্তু তাজা কাঁচা ঠাণ্ডা আলু কনজাঙ্কটিভাইটিসের কারণে হয়ে থাকা যন্ত্রণা প্রশমনের ক্ষেত্রে কার্যকর।
কনজাঙ্কটিভাইটিসের চিকিৎসায় একটি ঠাণ্ডা কমপ্রেস বেশ কার্যকর।এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করতে প্রতিটি চোখের জন্য পৃথক পৃথক ওয়াশক্লথ ব্যবহার করার ব্যাপারটিকে সুনিশ্চিত করুন।
তুলসী-এর নিরাময় বৈশিষ্ট্যাবলী এবং ছত্রাক, ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পরিচিত।তুলসী পাতাগুলিকে পরিষ্কার জলে ভাল করে ধুয়ে নিয়ে ফোটানো জলের মধ্যে 10 মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন এবং এই জলটিকে এবার একটি আই ওয়াশ বা চক্ষু পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করুন অথবা একটি পরিষ্কার তুলোর বলকে এর মধ্যে ভিজিয়ে নিয়ে সেটিকে চোখের উপর প্রয়োগ করুন।
আপনার চোখে কনজাঙ্কটিভাইটিস লক্ষ্য করার পর প্রদাহ হ্রাস করার জন্য আপনার চোখ এবং চোখের পাতায় অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করুন।
দুই টেবল-চামচ হলুদ গুঁড়ো নিয়ে সেটিকে এক কাপ ফুটানো জলের মধ্যে ঢেলে সেটিকে ভাল করে মিশিয়ে নিন।এবার একটি ওয়াশক্লথ বা তুলোর প্যাডের সাহায্যে এই মিশ্রণটিকে আপনার চোখে ধীরে ধীরে প্রয়োগ করুন।
আপনি গর্ভাবস্থায় রক্তবর্ণ চক্ষু প্রতিরোধ করতে পারেন নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে-
কনজাঙ্কটিভাইটিসের চিকিৎসায় অ-ফার্মোকলজিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির ব্যবহার পছন্দ করা হয় কারণ এগুলি গর্ভাবস্থায় কনজাঙ্কটিভাইটিসের বিপপদগুলিকে প্রতিরোধ করে।সুতরাং হ্যাঁ,যদি আপনি এর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকস অথবা প্রেসক্রিপশনে নির্ধারিত ওষুধগুলি ব্যবহার করে থাকেন,কোন রাসায়নিকগুলি আপনার ভ্রূণে প্রবেশ করছে তার উপর নির্ভর করে এটি আপনার গর্ভাবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে।
সময় পেলে কনজাঙ্কটিভাইটিস স্বাভাবিকভাবেই চলে যায় এবং সাধারণত এটি কোনও উদ্বেগের কারণ নয়।যদি এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে সেটি একইভাবে হয়ে থাকতে লক্ষ্য করে থাকেন,তবে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসাজনিত পরামর্শের জন্য কথা বলুন।